Ajker Patrika

কট্টর বাম থেকে রক্ষণশীল ‘বরিসের মস্তিষ্ক’ হয়ে ওঠা শ্রমিককন্যা মুনিরা মির্জা

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০: ০৪
কট্টর বাম থেকে রক্ষণশীল ‘বরিসের মস্তিষ্ক’ হয়ে ওঠা শ্রমিককন্যা মুনিরা মির্জা

ডাউনিং স্ট্রিট থেকে যে পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী পদত্যাগ করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম মুনিরা মির্জা। বরিস জনসনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন তিনি। বিরোধী লেবার পার্টির নেতা স্যার কেয়ার স্টারমারকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার পরও ক্ষমা না চাওয়ায় জনসনের ওপর ক্ষুব্ধ তিনি। পদত্যাগপত্রে সে বিষয়টিই স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন। 

 ১৪ বছর ধরে বরিস জনসনের পাশে ছিলেন মুনিরা মির্জা। লন্ডনের মেয়র, ব্রেক্সিটের শীর্ষ প্রচারক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার এই দীর্ঘ যাত্রায় বরিসকে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মোক্ষম পরামর্শের উৎস ছিলেন। সেই সঙ্গে বরিসকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো মেরুদণ্ডও ছিল তাঁর। 

এই ঘনিষ্ঠতা ও রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার কারণে মুনিরা মির্জা ‘বরিসের মস্তিষ্ক’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। অথচ শৈশব থেকে তারুণ্য পর্যন্ত রক্ষণশীলদের কাছ থেকে একশ হাত দূরে ছিলেন। সক্রিয় কমিউনিস্ট কর্মী ছিলেন তিনি। 

ওল্ডহামে বেড়ে ওঠা এক কারখানা শ্রমিকের মেয়ে মুনিরা। এখন তাঁর বয়স ৪৩ বছর। সেই মুনিরা ওল্ড ইটোনিয়ার বরিস জনসনের কাছে একেবারে ভিন্ন পটভূমি নিয়ে এভাবে হাজির হবেন তা হয়তো কেউ কল্পনা করেননি কখনো! 

ক্ষমতাবান ব্যক্তির উপদেষ্টা বলতে সাধারণত যে ছবি মানুষের চোখে ভেসে ওঠে মুনিরা তেমনটি ছিলেন না। তিনি অলক্ষ্যে থাকতেই পছন্দ করেন। ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টি করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে থাকা প্রধানমন্ত্রী জনসনের উপদেষ্টার পদ ছাড়ার পরপরই আলোচনায় এসেছেন মুনিরা মির্জা। জনসনের ঘনিষ্ঠ হলেও তাঁকে নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেন না তিনি। তবে ২০১৮ সালে জনসনের পক্ষে একটা নিবন্ধ লিখেছিলেন। বোরকা পরা মুসলিম নারীদের ‘ডাক বাক্সের মতো দেখায়’ এমন মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন বরিস জনসন। তাঁর বিরুদ্ধে ‘ইসলামভীতির’ অভিযোগ আনা হয়েছিল। 

১৪ বছর ধরে বরিস জনসনের সঙ্গে কাজ করছেন মুনিরাওই সময় কনজারভেটিভ পার্টির ওয়েবসাইটে মুনিরা মির্জা লিখেছিলেন, ‘তিনি (বরিস জনসন) ইসলাম এবং ইসলামি সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক বেশি জানেন। যেসব রাজনীতিবিদ এখন তাঁকে আক্রমণ করার জন্য লাইন ধরেছেন তাঁদের চেয়ে এসব বিষয়ে তাঁর জানাশোনা বেশি।’ 

সম্প্রতি হাউস অব কমনসে স্যার কেয়ার স্টারমারকে একহাত নেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। তিনি দাবি করেন, পাবলিক প্রসিকিউশনের সাবেক পরিচালক লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টারমার শিশু যৌন নিপীড়ক স্যার জিমি স্যাভিলের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমন একটা নির্জলা মিথ্যা দাবির পরও জনসন কিন্তু ক্ষমা চাননি। এটি মেনে নিতে পারেননি মুনিরা। এবার আর নিজের বসকে রক্ষা করার মতো কোনো কারণ খুঁজে পাননি তিনি। 

পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘এটি রাজনীতির স্বাভাবিক কোনো খোঁচা ছিল না; এটি ছিল শিশু যৌন নির্যাতনের একটি ভয়াবহ মামলার বিষয়ে অনুপযুক্ত এবং পক্ষপাতমূলক বক্তব্য।’ 

তবে নানামুখী চাপে হতাশায় আচ্ছন্ন জনসনের জন্য অনেক প্রশংসা ও ভালোবাসা যে এখনো পুষে রেখেছেন সেটিও উল্লেখ করেছেন মুনিরা। তিনি লিখেছেন, ‘আপনি অনেক ভালো মানুষ। আপনার অনেক বিরোধী কখনোই সেটা বুঝতে পারবে না। এটা খুবই দুঃখজনক যে আপনি বিরোধী দলের নেতার বিরুদ্ধে একটি কটূক্তিমূলক অভিযোগ করে নিজেকে ছোট করেছেন।’ 

লকডাউন চলাকালীন পার্টি করা নিয়ে ব্রিটেনজুড়ে চলমান ক্ষোভের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিট থেকে পদত্যাগ করা অন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তুলনায় মুনিরা মির্জা জনসনের একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। 

ক্ষমতাবান বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের সাধারণত নিঃসঙ্গ মানুষ বলেই মনে করা হয়। হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও মুনিরা মির্জার চলে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন অনেকে। রাজনীতি পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ডাউনিং স্ট্রিটের একটি রক্ষণশীল দুনিয়া থেকে একটি ‘স্বাধীন কণ্ঠস্বর’ চলে গেল। 

 ১৯৭৮ সালে পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যে আসেন মুনিরা মির্জার বাবা-মা। এখানেই তাঁর জন্ম হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পড়াশোনা করার আগে বেশ নামি স্কুলে পড়েছেন। সেখানে থাকাকালীন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। কিন্তু বয়স বছর কুড়ির সময় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়েন। কট্টর বামদের মধ্যে মুক্তচিন্তার অভাব আছে বলে মনে হয়েছে তাঁর। এই ভাবনা থেকে বাম আন্দোলন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। ওই সময়টাতে একটি আদর্শিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছেন মুনিরা। 

কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডি সম্পন্ন করার পর থিংক ট্যাংক পলিসি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। কনজারভেটিভ মাইকেল গভ, ফ্রান্সিস মাউড এবং নিক বোলস এই থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। 

মুনিরা মির্জার এই বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জনসনের নজর কেড়েছিল। লন্ডনের মেয়র থাকাকালে মুনিরাকে শিল্প উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন। টেট গ্যালারি এবং রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টসে ছিল তাঁর কাজ। পরে তাঁকে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে ডেপুটি মেয়র পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। 

১০নং ডাউনিং স্ট্রিটের পলিসি ইউনিটের প্রধান মুনিরা মির্জা। ১৩ নভেম্বর, ২০২০মুনিরা মির্জা কখনো জনসনের পক্ষ ত্যাগ করেননি। ২০১৯ সালে জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মুনিরাকে ডাউনিং স্ট্রিটের নীতি-কৌশল ইউনিটের প্রধান করা হয়। 

মুনিরা কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সে নির্বাচনে রক্ষণশীলদের ভূমিধস বিজয় হয়। উত্তর ইংল্যান্ড এবং মিডল্যান্ডসে লেবার পার্টির ঐতিহ্যবাহী বহু আসন ছিনিয়ে নেয় কনজারভেটিভরা। 

এই বিশাল রাজনৈতিক উচ্চতায় ওঠার পর মাত্র দুই বছরের কিছু বেশি সময় পরেই ডাউনিং স্ট্রিট ত্যাগ করলেন মুনিরা মির্জা। সে অর্থে কোনো ক্ষোভ নিয়ে যাচ্ছেন না তিনি। শুধু লেবার নেতা স্যার কেয়ারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে অনুশোচনা ও হতাশা থেকে জনসনকে ছেড়ে গেলেন মুনিরা। 

পদত্যাগপত্রে তেমনটিই লিখেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে লোকে সরি বললেও ক্ষমা করা হয় না—এটার আমি প্রশংসা করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, এটিই সঠিক কাজ। আপনার জন্য হয়তো এটা খুব বেশি দেরি বলে বিবেচিত হয়নি। কিন্তু আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি যে, আমার জন্য এরই মধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত