Ajker Patrika

ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ক্ষুব্ধ, হতাশ ও দ্বিধাগ্রস্ত ইউক্রেনের সৈন্যরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে দ্বিধাগ্রস্ত ইউক্রেনের সেনারা। ছবি: বিবিসি
ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবে দ্বিধাগ্রস্ত ইউক্রেনের সেনারা। ছবি: বিবিসি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের খসড়া শান্তি প্রস্তাব ইউক্রেনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এই প্রস্তাব নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা ইউক্রেনীয় সৈন্যদের কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ হতাশ, আবার কেউ কেউ দীর্ঘ লড়াইয়ে ক্লান্ত হয়ে যেভাবেই হোক একটি সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইমেইলের মাধ্যমে ফ্রন্টলাইনের ছয় সৈন্যের সঙ্গে কথা বলে এই ধরনের মনোভাবের কথা জানতে পেরেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া মূল খসড়াটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে এখনো আলোচনা চলমান রয়েছে। তবে এই প্রস্তাবনাটিকে সরাসরি ‘বাজে প্রস্তাব’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত সেনা ইয়ারোস্লাভ। তিনি বলেন, ‘এটি কেউই সমর্থন করবে না।’

শুটসার নামে ইউক্রেনের এক সামরিক চিকিৎসক ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবটিকে ‘অবমাননাকর ও গুরুত্বহীন’ বলেছেন। তবে ‘স্নেক’ ছদ্মনামের এক সৈন্য মত দিয়েছেন, ‘নিদেনপক্ষে কোনো না কোনো বিষয়ে এখন সমঝোতায় পৌঁছানোর সময় এসেছে।’

ভূখণ্ড ছাড়ার প্রস্তাব

খসড়া প্রস্তাবে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো ডনবাস অঞ্চলের সম্পূর্ণ অংশ রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া। গত এক মাসেই ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে আরও ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা হারিয়েছে। বর্তমানে কিয়েভ ডনবাসের মাত্র ১৫ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

‘স্নেক’ বলেন, ‘ওরা চাইলে নিয়ে যাক। শহর-গ্রাম প্রায় ফাঁকা। আমরা মানুষের জন্য নয়, শুধু মাটির জন্য লড়ছি, আর এতে মানুষ মরছে।’

ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফের কর্মকর্তা আন্ড্রি মন্তব্য করেছেন, ডনবাস ছেড়ে দেওয়া ‘বেদনাদায়ক’ হলেও সামরিকভাবে তা ধরে রাখা হয়তো আর সম্ভব নয়। তবে ২০১৮ সাল থেকে থেকে যুদ্ধরত মাতরোস মনে করেন, এমন হলে তা সব ত্যাগ ও সংগ্রামকে শূন্যে পরিণত করবে এবং হাজারো প্রাণহানির অবমূল্যায়ন হবে।

সেনাবাহিনী সংকোচন

শান্তি প্রস্তাবের খসড়ায় ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে ৬ লাখ সদস্যে সীমিত রাখার প্রস্তাব রয়েছে—যা আগের তুলনায় বড় হলেও বর্তমানে ৮ লাখের বেশি সৈন্যধারী একটি বাহিনী বড় ধরনের কাটছাঁটের মুখোমুখি হবে। এ ক্ষেত্রে স্নেক মনে করেন, যুদ্ধ শেষে দেশ পুনর্গঠনে অনেক সৈন্যের প্রয়োজন হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকলে অত বড় বাহিনী রাখার দরকার নেই। আন্ড্রিও বলেন, ‘মানুষ ক্লান্ত, পরিবারের কাছে ফিরতে চায়।’ তবে শুটসার এতে রাজি নন, তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীই পরাজয় থেকে রক্ষা করছে।’

নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে ইউক্রেনকে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা খোলা রাখা হয়েছে। ভবিষ্যৎ হামলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিলেও বিস্তারিত অস্পষ্ট।

এই বিষয়ে ইউক্রেনের বাহিনীর ড্রোন অপারেটর ইয়েভহেন মনে করেন, নিরাপত্তার জন্য বিদেশি সৈন্য মোতায়েন করাই সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা। তবে আন্ড্রি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী সহায়তা দিতে পারবে না ইউরোপের দেশগুলো। আর শুটসার মনে করেন, মার্কিন কর্তৃপক্ষ যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও কথা বলছে, সেটাও নির্ভরযোগ্য নয়।

নতুন নির্বাচন

যুদ্ধ শেষ হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবটিকে অনেক সৈন্য সমর্থন করছেন। দুর্নীতির অভিযোগে সরকারের প্রতি অনাস্থা বাড়ায় স্নেক, মারিনসহ অনেকে মনে করেন সরকারকে নির্বাচন প্রয়োজনের বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ