Ajker Patrika

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন /রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে গিয়ে সিআইএ উপপরিচালকের ছেলে নিহত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ১৭
মাইকেল গ্লস। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মাইকেল গ্লস। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর উপপরিচালকের ছেলে! কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে না শুনতে? কিন্তু এটা কোনো কল্পকাহিনি নয়, সত্য ঘটনা। ওই তরুণ যুদ্ধক্ষেত্রেই নিহত হয়েছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে মাইকেল গ্লস নামের ওই তরুণের মৃত্যু হয় বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এক শীর্ষ কর্মকর্তার ছেলে ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করার সময় নিহত হয়েছেন। স্বাধীন রুশ গণমাধ্যমের তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। এটি এক অস্বাভাবিক ঘটনা। কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে—যার মা সিআইএর উপপরিচালক—রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রাণ হারালেন, সেই কাহিনি জানিয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন।

নিহত যুবক মাইকেল আলেকজান্ডার গ্লস। বয়স হয়েছিল ২১ বছর। পারিবারিক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, ৪ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ‘পূর্ব ইউরোপে’ তাঁর মৃত্যু হয়। গ্লসের মা জুলিয়েন গ্যালিনা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিআইএর ডিজিটাল উদ্ভাবন বিভাগের উপপরিচালক নিযুক্ত হন। মাইকেলের বাবা-মা দুজনই সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন।

মাইকেল গ্লস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অ্যাকাউন্টে নিজেকে ‘বহু মেরুকরণ বিশ্বের সমর্থক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি বাড়ি থেকে পালিয়েছি, বিশ্ব ঘুরেছি। আমি ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করি। আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি।’ তাঁর পেজে রাশিয়া ও ফিলিস্তিনের পতাকাও ছিল।

রুশ ইনভেস্টিগেটিভ ওয়েবসাইট ‘আই-স্টোরিজ’ জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরকারী ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি বিদেশির মধ্যে গ্লস একজন। ফাঁস হওয়া একটি ডেটাবেইস থেকে জানা যায়, তিনি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো আই-স্টোরিজকে বলেছে, গ্লসকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ফ্রন্টলাইনের কঠোর লড়াইয়ের জন্য রুশ সেনাবাহিনীর একটি ‘অ্যাসল্ট ইউনিটে’ পাঠানো হয়েছিল। সেই ইউনিটের সঙ্গে পরিচিত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, গ্লসকে সোলেদার শহরের কাছে ইউক্রেনীয় অবস্থানগুলোতে হামলা চালানোর জন্য পাঠানো একটি রুশ ‘এয়ারবোর্ন রেজিমেন্টে’ মোতায়েন করা হয়েছিল।

গ্লসের পরিবার তাদের শোকবার্তায় তাঁর ‘মহৎ হৃদয় এবং যোদ্ধা আত্মার’ কথা উল্লেখ করেছে। তাঁরা লিখেছে, ‘মাইকেল তাঁর নিজস্ব বীরের জীবনযাত্রা তৈরি করেছিল। দুঃখজনকভাবে সে ৪ এপ্রিল পূর্ব ইউরোপে নিহত হয়।’ তবে শোকবার্তায় রাশিয়া বা ইউক্রেন এবং তাঁর মৃত্যুর পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইকেল গ্লস লিঙ্গসমতা ও পরিবেশবাদী প্রতিবাদী গোষ্ঠীগুলোতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ‘রেইনবো ফ্যামিলি’ নামে একটি বামপন্থী পরিবেশবাদী প্রতিবাদী গোষ্ঠীতে যোগ দেন। ২০২৩ সালে তিনি তুরস্কের হাতায় প্রদেশে ভূমিকম্পের পর ত্রাণকাজেও সহায়তা করেছিলেন। ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং গাজার যুদ্ধ নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্রমশ ক্ষুব্ধ হচ্ছিলেন।

তুরস্কে থাকাকালে গ্লস রাশিয়ায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে শুরু করেন। এক পরিচিত ব্যক্তি আই-স্টোরিজকে বলেন, ‘সে সাধারণত ফিলিস্তিন নিয়ে ভিডিও দেখত এবং আমেরিকার ওপর খুব ক্ষুব্ধ ছিল। সে রাশিয়ায় যাওয়ার কথা ভাবতে শুরু করে। সে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চেয়েছিল। তবে আমার মনে হয় সে ষড়যন্ত্রতত্ত্বের ভিডিওর মাধ্যমে খুব প্রভাবিত হয়েছিল।’

রাশিয়ার ভিসা পাওয়ার পর তিনি দেশটি ভ্রমণ করেন। এরপর মস্কোতে পৌঁছে তাঁর নথিপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। আই-স্টোরিজের প্রাপ্ত ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁকে একটি রুশ প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তিনি মূলত নেপালি চুক্তিভিত্তিক সৈন্যদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেন। তালিকাভুক্তির তিন মাস পর তাঁকে ইউক্রেনে একটি অ্যাসল্ট ব্যাটালিয়নের সদস্য হিসেবে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে অবগত কয়েকজন আই-স্টোরিজকে জানিয়েছেন, মাইকেল যুদ্ধ করতে আগ্রহী ছিলেন না। তবে তিনি আশা করেছিলেন, সেনাবাহিনী তাঁকে রাশিয়ান পাসপোর্ট পেতে এবং সে দেশে থাকতে সাহায্য করবে।

গ্লসের মৃত্যুর কারণ বা পরিস্থিতি এখনো জানা যায়নি। তাঁর এক বন্ধু বলেছেন, রুশ সরকার তাঁর পরিবারকে মৃত্যুর খবর জানিয়েছে, তবে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি। বন্ধুটি লিখেছেন, ‘ঘোষণা করা হয়েছিল যে, সে ইউক্রেনের সীমানার মধ্যে মারা গেছে। সে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল কি না, আমরা জানি না। তারা অন্য কোনো বিস্তারিত তথ্য দেয়নি।’ রুশ কর্তৃপক্ষ গ্লসের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করেছিল কি না বা তার মায়ের পরিচয় জানত কি না, তা স্পষ্ট নয়। এই প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য গার্ডিয়ান সিআইএর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে এখনো কোনো মন্তব্য পায়নি।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন, পরিস্থিতি নিয়ে যা বলছে রাজনৈতিক দল ও উপদেষ্টারা

‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’ লেখা পোস্টটি সরিয়ে ফেললেন ফয়েজ তৈয়্যব

দেশে ফিরলেন আওয়ামী লীগ নেতা, বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার

পার্লামেন্টে জুতায় বিয়ার ঢেলে পান করে রাজনীতিকে বিদায় জানালেন এমপি

চিকিৎসকের ছুরিকাঘাতে আহত তরুণ মারা গেছেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত