Ajker Patrika

নজিরবিহীন বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে ভোগান্তিতে ২ লাখ যাত্রী, অবশেষে চালু হিথ্রো বিমানবন্দর

আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫, ১২: ০৯
লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফের ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ চালু হয়েছে। ছবি: এএফপি
লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফের ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ চালু হয়েছে। ছবি: এএফপি

লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নিকটবর্তী একটি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের কারণে ‘নজিরবিহীন’ বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের পর বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে। আজ শনিবার পরিষেবা পুরোপুরি চালু হওয়ার আশা করা হচ্ছে। শুক্রবার দিনভর বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় ২ লাখ যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ঘটনার সূত্রপাত স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। সেদিন পশ্চিম লন্ডনের হেইসের নর্থ হাইড পাওয়ার প্ল্যান্টে আগুন লাগার পর হিথ্রো বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট দেখা দেয়। এতে হিথ্রোগামী সব ফ্লাইট ইউরোপের অন্যান্য বিমানবন্দরে অবতরণের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহী থমাস ওল্ডবাই আটকে পড়া যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, এই বিপর্যয় ‘আমাদের বিমানবন্দরের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা’। তিনি জানিয়েছেন, যাত্রীদের সুবিধা শতভাগ নিশ্চিত করতে না পারায় কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

লন্ডন পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, আগুন লাগার ঘটনাটি সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে না। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে ‘বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিশন সরঞ্জামের’ ওপর নজর দেওয়া হবে।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ঘোষণা করেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের দূরপাল্লার আটটি ফ্লাইট হিথ্রো থেকে ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছে এবং তারা ‘গ্রাহকদের বিষয়টি জানাতে জরুরিভাবে যোগাযোগ করছে।’ পরিবহন বিভাগ জানিয়েছে, ভিড় কমাতে রাতের ফ্লাইটের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধও সাময়িকভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে।

থমাস ওল্ডবাই জানিয়েছেন, একটি ব্যাক-আপ ট্রান্সফরমার ব্যর্থ হওয়ার কারণে নিরাপত্তা পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিমানবন্দরের পুরো সিস্টেম বন্ধ করতে হয়েছিল, যাতে অবশিষ্ট দুটি উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনর্গঠন করে বিমানবন্দর চালানোর মতো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করা যায়।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, এয়ার কানাডা, ইউনাইটেড এয়ারলাইনসসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনস হিথ্রো থেকে এবং সেখানে নির্ধারিত ফ্লাইট পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র বলেছেন, ঘটনার পর যেসব ফ্লাইট ইউরোপের অন্যান্য বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছিল, সেখান থেকে যাত্রীদের ফিরিয়ে আনার দিকে নজর দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

ঘটনার বিষয়ে ওল্ডবাই বলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, এটি বড় ধরনের এটি ঘটনা। এটি কোনো ছোট আগুন নয়। আমরা একটি মাঝারি আকারের শহর চলতে পারে এমন পরিমাণ বিদ্যুৎ হারিয়েছি। আমাদের ব্যাকআপ সিস্টেমগুলো কাজ করলেও সেগুলো আসলে পুরো বিমানবন্দর চালানোর জন্য তৈরি করা হয়নি।’

হিথ্রোর পাওয়ার সিস্টেমে কোনো দুর্বল জায়গা আছে কি না, জানতে চাইলে ওল্ডবাই বলেন, ‘আপনি তা বলতেই পারেন, তবে অবশ্যই কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা থেকে আমরা সব সময় নিজেদের শতভাগ রক্ষা করতে পারি না এবং এ ঘটনা ছিল সেগুলোরই একটি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি নজিরবিহীন।’ আজ শনিবার বিমানবন্দর পুরোপুরি সচল হবে বলেও জানান তিনি।

হিথ্রো যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম বিমানবন্দর। এখানে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৩০০টি ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত বছর ৮৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন যাত্রী এই বিমানবন্দর হয়ে যাতায়াত করেছেন।

বিমানবন্দরের পাশে পুড়ে যাওয়া সেই বিদ্যুৎ স্টেশন। ছবি: এএফপি
বিমানবন্দরের পাশে পুড়ে যাওয়া সেই বিদ্যুৎ স্টেশন। ছবি: এএফপি

ব্রিটিশ পরিবহনমন্ত্রী হেইডি আলেক্সান্ডার বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা ‘তাঁদের পরিকল্পনা দ্রুত কার্যকর করেছেন এবং তাঁরা আমাদের জরুরি প্রতিক্রিয়া প্রদানকারী এবং এয়ারলাইন অপারেটরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করেছেন।’

এর আগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে জরুরি পরিষেবাগুলো প্রথম ঘটনাস্থলে যায়। সেই সময়ে বিমানবন্দরটি অবতরণের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১২০টি ফ্লাইট হয় অন্য কোনো বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়, নয়তো যেখান থেকে এসেছিল সেখানেই ফেরত পাঠানো হয়।

লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড (এলএফবি) জানিয়েছে, আগুন নেভানোর জন্য ১০টি ফায়ার ইঞ্জিন এবং প্রায় ৭০ জন দমকলকর্মী পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এলএফবি জানিয়েছে, ২৫ হাজার লিটার দাহ্য শীতল তরলযুক্ত একটি ট্রান্সফরমার এই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে।

এ দুর্ঘটনায় বিমানবন্দরসহ এই এলাকার ৬৫ হাজারের বেশি বাড়িঘর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল বলে ন্যাশনাল গ্রিড জানিয়েছে। শুক্রবার দুপুর ২টা নাগাদ বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল

দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে—অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার কবলেও পড়েছিলেন। তবে সৌভাগ্য এই যে, দুই ঘটনায়ই তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন!

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে আহত অস্ত্রোভস্কি একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী। রক্তে ভেজা শরীর ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো অবস্থায় তিনি অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। চারদিকে শিশু, বৃদ্ধ, পরিবার—সবাই আনন্দ করছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। চারদিকে গুলির শব্দ, মানুষ দৌড়াচ্ছে, লুকোচ্ছে—পুরো জায়গা জুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক।’

অস্ত্রোভস্কি জানান, কোন দিক থেকে গুলি আসছিল, তা কেউ বুঝতে পারছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি এক বন্দুকধারী চারদিকে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। শিশুদের মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছি, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের আহত হতে দেখেছি—এটা ছিল এক রক্তাক্ত বিভীষিকা।’

অস্ত্রোভস্কি এটাও জানান, তিনি ১৩ বছর ইসরায়েলে ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। তাঁর ভাষায়, ‘সেই ঘটনার পর আবার এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। কখনো ভাবিনি অস্ট্রেলিয়ায়, তাও আবার বন্ডাই বিচের মতো জায়গায় এমন কিছু ঘটবে।’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকা উদ্‌যাপনের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘চানুকাহ বাই দ্য সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মাঝেই এই হামলা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পবেল প্যারেড এলাকায় একটি গাড়ি থেকে নেমে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই উৎসবের আনন্দ রূপ নেয় বিভীষিকায়। পর্যটন এলাকা জুড়ে একের পর এক গুলির শব্দ শোনা যায়।

ঘটনাস্থলে বহু মানুষকে আহত অবস্থায় ঘাসের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের একজনকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপরজন আহত অবস্থায় আটক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৩
বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৬
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে গিয়ে ন্যাটো জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি জানান—ন্যাটো সদস্যপদের বদলে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে সেটিকে একটি সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গ্যারান্টি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই পথে সমর্থন না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। তাঁর ভাষায়—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।

এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। কারণ দেশটির সংবিধানেই ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি রাশিয়ার যুদ্ধলক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ বাহিনী। তবে বর্তমানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের দখলও নিতে চাইছে। তবে মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড় না দিতে এখনো অনড় রয়েছে ইউক্রেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বার্লিনে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রায় চার বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের অবসানে অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—ইউক্রেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে একটি ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না।

ইউরোপীয় মিত্ররা এই সময়টিকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ‘সংকটজনক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিসেবা অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনের জনগণের ওপর সর্বোচ্চ ক্ষতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত