Ajker Patrika

দ্য ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন /রোহিঙ্গাদের দৃষ্টিতে অং সান সু চি কেমন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৫, ২০: ২৫
অং সান সু চি। ছবি: এএফপি
অং সান সু চি। ছবি: এএফপি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির এখন কক্সবাজারে। সেই শিবিরের অন্ধকারাচ্ছন্ন বাঁশের ঘরে বসে রোহিঙ্গা মুসলিমেরা অং সান সু চির প্রতি ঘৃণা অনুভব করবেন—এমনটাই স্বাভাবিক। কারণ পাঁচ বছর আগে মিয়ানমারের তৎকালীন এই নেত্রী আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার নয় বলে দাবি করেছিলেন। তাঁর ওই বক্তব্য বিশ্বজুড়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল।

বর্তমানে অং সান সু চি নিজেও কারাবন্দী। এ অবস্থায় বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সু চির প্রতি কী ধারণা রাখেন—সেই বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছিল যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট। এই অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে কিছু চমকপ্রদ তথ্যও।

এ ক্ষেত্রে ৩৪ বছর বয়সী আজিজুর রহমানের কথাই বলা যাক সবার আগে। বর্তমানে শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করা এই রোহিঙ্গা যুবক সু চিকে প্রকৃত শত্রু হিসেবে দেখেন না। তাঁর মতে, সু চি তো কখনো প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেনই না; বরং সেনাবাহিনীর পুতুল ছিলেন তিনি।

আজিজুর মনে করেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং মোঘ বাঘি (আরাকান আর্মি) রোহিঙ্গাদের আসল শত্রু।

২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা আজিজুর এখন কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে কমিউনিটি লিডার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সু চির কারামুক্তি হলে হয়তো তাঁর বিবেক জাগ্রত হবে এবং তিনি রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলবেন।

রোহিঙ্গাদের প্রতি সু চির নীরবতা

২০১৭ সালের সামরিক নিপীড়নের সময় সু চি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক আদালতে তিনি দাবি করেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনা ছিল অভ্যন্তরীণ সংঘাত। তিনি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগকে অপূর্ণাঙ্গ ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেন। তাঁর এই বক্তব্যে কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক রোহিঙ্গা ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর, রোহিঙ্গাদের মধ্যে সু চির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা বদলেছে। তারা মনে করছেন, সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে তিনি নিজেও এখন অত্যাচারের শিকার।

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মনে করেন, সু চির মুক্তি হলে হয়তো তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতি তাঁর আগের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবেন। ৭৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী উম্মে হানি বলেন, ‘তিনি (সু চি) ক্ষমতায় থাকার সময় রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলতে পারেননি, কারণ আসল ক্ষমতা ছিল সেনাবাহিনীর হাতে।’

৩৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ শাকির বলেন, ‘মিয়ানমারের আসল অপরাধী মিন অং হ্লাইং। সু চির মুক্তি হলে তিনি হয়তো স্বীকার করবেন যে, রোহিঙ্গারা কোনো সহিংসতা করেনি, বরং তা করেছে সেনাবাহিনী।’

অতীতের প্রতিশ্রুতি ও বর্তমান অবস্থা

রোহিঙ্গাদের আশা ছিল, সু চি ক্ষমতায় এসে তাঁদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেবেন। সু চির বাবা মিয়ানমারের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা জেনারেল অং সান একসময় রোহিঙ্গাদের ‘আমাদের নিজস্ব জনগণ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সামরিক শাসকেরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়।

তবে ৬০ বছর বয়সী আব্দুল করিম মনে করেন, সু চি তাঁর পিতার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁকে (সু চি) ভোট দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের ও বিশ্বকে হতাশ করেছেন।’

২০১৭ সালে সামরিক নিপীড়নের পর থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বেশির ভাগই এখন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে। এই শিবিরগুলোর পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এর মধ্যে সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে, তারা রোহিঙ্গাদের খাদ্য রেশন কমিয়ে দেবে। এই সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আরও অপুষ্টি সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এই যুদ্ধে দেশটির সামরিক বাহিনী বহু এলাকা হারিয়েছে। বিশেষ করে, রাখাইন রাজ্য। এ অবস্থায় অনেক রোহিঙ্গা এখনো মিয়ানমারে ফেরার স্বপ্ন দেখেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তারা আশাহত।

সু চির মুক্তি দাবি

কক্সবাজার শিবিরের শরণার্থীরা মনে করেন, সু চি নিজেও সেনাবাহিনীর শিকার। উম্মে হানি বলেন, ‘মিয়ানমারের ইতিহাসে সু চির নাম যেমন লেখানো হয়েছে, তেমনই সেনাবাহিনী বারবার তা মুছে দিয়েছে। শান্তি ফেরাতে হলে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে।’

শরণার্থী নেতা নূর হাশিম বলেন, ‘সু চি আমাদের মতোই সামরিক বাহিনীর শিকার। তাঁকে মুক্তি দেওয়া উচিত, যেন তিনি তাঁর শেষ দিনগুলো পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত