Ajker Patrika

অস্ট্রেলিয়ায় এইচএসসি পরীক্ষা, কেন্দ্রের বাইরে নেই অভিভাবকদের ভিড়বাট্টা

ফজলুল বারী, অস্ট্রেলিয়া থেকে
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১৫: ২৫
অস্ট্রেলিয়ায় এইচএসসি পরীক্ষা, কেন্দ্রের বাইরে নেই অভিভাবকদের ভিড়বাট্টা

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসসহ বিভিন্ন রাজ্যে আজ বুধবার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষার মতো এমন দিনে স্কুলের বাইরে অভিভাবকদের ভিড়বাট্টা এখানে নেই। কাজপাগল মানুষের দেশের বেশির ভাগ অভিভাবকের অত সময়ও নেই। ছাত্রছাত্রীরা অন্য স্বাভাবিক দিনগুলোর মতোই স্কুলের শেষ পরীক্ষায় অংশ নিতে গেছেন। বাংলাদেশের মতো দেশের অভিভাবকেরাই হয়তো এমন দিনে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে নামিয়ে দিয়েছেন অথবা পরীক্ষা শেষে বাসায় নিয়ে এসেছেন। 

ব্রিটিশ কারিকুলামের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের মতো এ দেশের হাইস্কুল দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে কলেজ ওয়ান ও কলেজ টুতে সাজানো হয়। তাই হাইস্কুল শেষেই এ দেশের ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যান। বাংলাদেশে বাংলা বিষয় দিয়ে যেমন পাবলিক পরীক্ষা শুরু হয়, এ দেশের প্রথম দিনের পরীক্ষার বিষয়বস্তু ছিল ইংরেজি। 

অস্ট্রেলিয়ার এই পরীক্ষা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীনের কিছু স্কুলেও আজ শুরু হয়েছে। এবার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে প্রায় ৭০ হাজার ছাত্রছাত্রী এই পরীক্ষা দিচ্ছেন। 

শিক্ষাব্যবস্থাটি দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হওয়ায় অভিভাবকদের উদ্বেগ এখানে বাংলাদেশের মতো নয়। স্কুল পর্যন্ত এখানে পড়াশোনা ফ্রি। তাই পরীক্ষার ফিসহ নানা কিছু চিন্তার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। ২৩ নভেম্বর এই পরীক্ষা শেষ হবে। ফলাফল বেরোবে ১৪ ডিসেম্বর। সেদিন থেকে স্কুলগুলোও ক্রিসমাস-গ্রীষ্মের লম্বা ছুটিতে চলে যাবে। 

এইচএসএসি পরীক্ষার কোর্স নম্বরের ৫০ ভাগ ছাত্রছাত্রী স্কুলের ক্লাস শেষেই অর্জন করেছেন। পরীক্ষা হচ্ছে বাকি ৫০ ভাগ নম্বরের। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগাম ভর্তির কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ডাক্তারি তথা মেডিসিনের মতো বিষয়গুলোর চূড়ান্ত সুযোগ নির্ভর করবে এইচএসসির চূড়ান্ত ফলাফলের ওপর। ডাক্তারি পড়ার জন্য এ দেশে আলাদা মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশলী হওয়ার জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। প্রচলিত পাবলিক বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই এসবের বিভাগ রয়েছে। 

শুধু ডাক্তারি বা প্রকৌশল বিষয়েই পড়তে হবে এমন হাহাকারও এখানকার ছাত্রছাত্রীদের মধ্য নেই। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী স্কুল শেষে বিভিন্ন কাজের বাজারে চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল টার্গেট বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিদেশি ছাত্রছাত্রী। 

স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বা উচ্চতর পড়াশোনা নিয়েও কোনো উদ্বেগ নেই অভিভাবকদের। কারণ, এসব পড়াশোনার ব্যয় সরকার দেবে ফি হেল্প নামের শিক্ষা বৃত্তির মাধ্যমে। প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর ট্যাক্স ফাইল নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এরই মাঝে তৈরি হয়ে গেছে। এসব অ্যাকাউন্টের অনুকূলে শিক্ষা ঋণ সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে যাবে। কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পর সরকার বেতন থেকে কিস্তি করে কেটে নিয়ে যাবে শিক্ষা ঋণের টাকা। 

মা-বাবা পড়াশোনার খরচ দেবেন এমন ধারণা প্রচলিত নয়। ছাত্রছাত্রীদের সিংহভাগই এ দেশে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজও করেন। কাজ না করলে সরকার তাঁদের অস্টাডি, ইয়ুথ অ্যালাউন্স নামের ভাতা দেয়। ছাত্রছাত্রীরা আইনত সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারেন না। 

এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের মিন্স লেবার সরকার জানিয়েছে, বাজেটে তারা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় এবার রেকর্ড বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে রাজ্যের ৯৫ হাজার শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ করা হয়েছে। ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে ওয়েস্টার্ন সিডনি স্কুলগুলো তৈরি ও আপগ্রেড করতে। আর রাজ্যের গ্রাম অঞ্চলগুলোর স্কুলগুলো আপগ্রেড করতে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে৷ 

নিউ সাউথ ওয়েলস এডুকেশন স্ট্যান্ডার্ডস অথোরিটির সাইবার, তথ্য নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি প্রোগ্রাম, এজেন্সির নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য খরচ করা হচ্ছে ৪৫ মিলিয়ন ডলার। 

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স বুধবার পরীক্ষা শুরুর আগে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজ আমাদের এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রত্যেকের জন্য, যাঁরা তাদের পরীক্ষায় বসে আছেন, আমি আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা করছি। আপনি এই পরীক্ষার সময়কালে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যবাসী আপনার পেছনে রয়েছে।’ 

ডেপুটি প্রিমিয়ার এবং শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘এটি আমাদের সিনিয়র স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় মুহূর্ত এবং এর জন্য তারা কয়েক মাস, এমনকি কয়েক বছর কাটিয়েছে প্রস্তুতির জন্য। 

ডেপুটি প্রিমিয়ার এবং শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘২০২৩ সালের এইচএসসি ক্লাসের প্রতি আমার বার্তা হলো, আপনার ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখুন, আপনি যা শিখেছেন, তার প্রতিফলন করুন এবং আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিটি পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করুন। নিয়মিত ডাউন টাইমের সঙ্গে আপনার পরীক্ষা ও অধ্যয়নের সময়সূচিতে ভারসাম্য বজায় রাখুন, বন্ধু ও প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং প্রচুর ঘুমাবেন।’ 

ডেপুটি প্রিমিয়ার বিশেষ করে অভিভাবক ও শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেছেন, ‘যারা আমাদের এইচএসসি শিক্ষার্থীদের এই মাইলফলক পৌঁছানোর জন্য সমর্থন করেছেন; সন্তানদের এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শেখার প্রতি অনুপ্রাণিত, শিক্ষিত ও লালন-পালন করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।’ 

রাজ্যের প্রধান শিক্ষা নির্বাহী কর্মকর্তা পল মার্টিন বলেছেন, এইচএসসি একটি বড় অপারেশন এবং এটি স্কুল, শিক্ষক ও পরীক্ষাকর্মীদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করে ৷ আগামী ১৮ দিনের মধ্যে আমরা পরীক্ষা সম্পন্ন করব ৷ এনএসডব্লিউ প্রিন্সিপাল, শিক্ষক এবং স্কুল স্টাফসহ স্কুলের সবাইকে ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৭
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত