Ajker Patrika

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন /সৌদি আরবে পুরুষের ‘অবাধ্য’ হলে নারীর যে পরিণতি হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমের একটি শহরে দ্বিতল ভবনের জানালার কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছেন কালো আবায়া পরা এক তরুণী। পরবর্তী ছবিতে দেখা যায়, একদল পুরুষ তাঁকে ক্রেনের সাহায্যে নিচে নামিয়ে আনছেন। ওই তরুণীর পরিচয় জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ‘অবাধ্যতা’, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক অথবা পরিবারের অনুমতি ছাড়াই বাড়ি ছাড়ার কারণে ‘দার আল-রায়া’ নামক নারীদের জন্য নির্জন এক আটক কেন্দ্রে বন্দী ছিলেন। এই কেন্দ্রগুলোতে পরিবারের কিংবা স্বামীর রোষে পড়ে নির্বাসিত নারীদের ‘সংশোধনের’ জন্য রাখা হয়।

এটি ছিল বিরল এক দৃশ্য—যেখানে জনসমক্ষে ধরা পড়ল সেই শত শত সৌদি তরুণী ও নারীদের বাস্তবতা, যাদের ওই সব সংশোধনাগারে আটকে রাখা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে বাহ্যিকভাবে ‘আশ্রয়কেন্দ্র’ বা সংশোধনাগার বলা হলেও বাস্তবে সেগুলোকে বন্দিশিবির বা ‘নরক’ বলে অভিহিত করেছেন অনেকে। সেখানে রয়েছে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় শিক্ষা, নির্জনতা, বাইরে যোগাযোগের নেই অনুমতি, এমনকি প্রতি সপ্তাহে একবার করে মারা হয় চাবুক।

সেখানকার অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার চেষ্টা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বছরের পর বছর ধরে নারীরা সেখানে আটক থাকেন। বের হতে পারবেন না পরিবার বা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া।

লন্ডনে অবস্থানরত সৌদি মানবাধিকারকর্মী মরিয়ম আলদোসারি বলেন, ‘একজন তরুণী ততক্ষণ সেখানে থাকবে, যতক্ষণ না সে সমাজের প্রচলিত নিয়ম মেনে নিতে রাজি হয়।’

খেয়াল করুন, সৌদি আরব এখন যখন পুরুষদের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের সংস্কারপ্রবণ দেশ হিসেবে তুলে ধরছে। ঠিক এর বিপরীতে, দেশটির নারীরা যাঁরা একটু অধিক অধিকার ও স্বাধীনতার দাবি তুলছেন, তাঁদের ভাগ্য জুটেছে গৃহবন্দিত্ব, কারাবাস কিংবা নির্বাসন। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই ‘সংশোধনাগার’ বা দার আল-রায়া মূলত নারীদের নিয়ন্ত্রণ ও শাস্তি দেওয়ার এক গোপন কারাগার।

ষাটের দশকে দেশজুড়ে গড়ে ওঠা এসব ‘সংশোধনাগার’ সম্পর্কে সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ‘বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত’ নারীদের আশ্রয়স্থল। সেখানে মানসিক চিকিৎসক ও পরামর্শদাতাদের সহায়তায় নারীদের পরিবারে ফিরিয়ে নেওয়ার উপযোগী করে তোলা হয়।

কিন্তু এই ব্যবস্থাকে চরম নির্যাতনমূলক বলে অভিহিত করেছেন সারা আল-ইয়াহিয়া। তিনি এসব সংশোধনাগার বিলুপ্ত করার আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সারা বলেন, এসব কেন্দ্রে পৌঁছেই নারীদের দেহতল্লাশির পাশাপাশি কুমারীত্ব পরীক্ষা করা হয়। ঘুমানোর আগে দেওয়া হয় ঘুমের ওষুধ।

তিনি বলেন, ‘তারা এটিকে সেবাকেন্দ্র বা সংশোধনাগার বললেও এটা একপ্রকার জেলখানা। সেখানে মেয়েরা নাম ধরে নয়, নম্বর ধরে পরিচিত। যেমন নম্বর ৩৫, সামনে এসো। কেউ যদি নিজের পারিবারিক নাম বলে, তাহলে তাকে চাবুক মারা হয়। নামাজ না পড়লেও চাবুক মারা হয়। আর যদি কোনো নারীর সঙ্গে একা দেখা যায়, তাহলে বলা হয় সে সমকামী। তারপর শুরু হয় নির্যাতন। প্রহরীরা মজা করে দাঁড়িয়ে দেখে নারীদের চাবুক মারা।’

৩৮ বছর বয়সী ইয়াহিয়া বর্তমানে নির্বাসনে আছেন। তিনি বলেন, মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই তাঁর বাবা তাঁকে দার আল-রায়ার ভয়ে ভীত করে তুলেছিলেন। সারা বলেন, ‘যদি আমি তাঁর যৌন নির্যাতন মেনে না নিতাম, তাহলে তিনি বলতেন—তোমাকে ওইখানে (দার আল-রায়া) পাঠিয়ে দেব।’

তিনি আরও জানান, এসব কেন্দ্রের ভয়ে অনেকে নির্যাতনের শিকার হলেও ঘর ছাড়তে ভয় পান। সারা বলেন, ‘আমি একজন নারীকে চিনি, যিনি পারিবারিক সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা একজন নারীকে সাহায্য করেছিলেন। এই অপরাধে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সৌদি আরবে কাউকে আশ্রয় দেওয়া—‘যদি সে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়’, তাহলে সেটি অপরাধ।’

আরও ভীতিকর তথ্য জানিয়ে ইয়াহিয়া বলেন, ‘যদি কেউ পরিবারের সদস্য দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয় বা গর্ভবতী হয়, তাহলে পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য তাঁকেই দার আল-রায়ায় পাঠানো হয়।’

২৫ বছর বয়সী আমিনা (ছদ্মনাম) বলেন, বাবার নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে তিনি মধ্য সৌদি আরবের বুরাইদাহ শহরের একটি সংশোধনাগারে আশ্রয় নেন। কিন্তু সেখানে গিয়েই তিনি আরেক ভিন্ন রকম নির্যাতনের মুখোমুখি হন।

আমিনা বলেন, ‘ভবনটি ছিল পুরোনো ও ধ্বংসপ্রায়। আর এর কর্মীরা ছিলেন নির্দয় ও অমানবিক।’ তিনি আরও জানান, যখন নিজের কষ্টের কথা তাদের বলা হয়, তাদের কাছে সেটা তুচ্ছ মনে হয়েছিল। তারা বলেছিল, ‘অনেকেই তোমার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। তাদেরকে ঘরেই শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। তুমি এখানে আসতে পেরেছ, তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করো।’

পরদিন ওই সংশোধনাগারের কর্মীরা তাঁর বাবাকে ডেকে আনেন। এরপর উভয়ের কাছ থেকে ‘শর্ত’ লিখে নিতে বলা হয়। আমিনা বলেন, ‘আমি লিখি, আমাকে যেন মারধর না করা হয়, জোর করে বিয়ে না দেওয়া হয় এবং আমাকে কাজ করতে দেওয়া হয়। আর আমার বাবা লিখলেন, আমাকে সবার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না এবং সব সময় সঙ্গে একজন পুরুষ সঙ্গী সঙ্গে থাকতে হবে। আমি ভয়ে স্বাক্ষর করি—এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।’

বাড়ি ফেরার পর, আমিনার ওপর আবার নির্যাতন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, ‘নিজেকে একা আর অসহায় মনে হতো। আমার জীবনের যেন কোনো মূল্য নেই। মনে হতো, আমি যদি মরে যাই, কেউ কিছু বলবে না।’

শামস (ছদ্মনাম) নামের আরেক তরুণী বলেন, ‘আমি তখন ১৬, আমাদের স্কুলে এক নারীকে নিয়ে আসা হয়। তিনি দার আল-রায়ায় ছিলেন। তিনি বললেন, তিনি এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করেছিলেন। নীতি পুলিশেরা তাঁকে ধরে এবং তাঁর বাবার কাছে এই কথা স্বীকার করতে বাধ্য করে। গর্ভবতী হওয়ার পর পরিবার তাঁকে আর বাড়িতে থাকতে দেয়নি। এদিকে ছেলেটিও তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন তাকে পাঠানো হয় ওই সংশোধনাগারে। তিনি আমাদের বললেন, যদি কোনো নারী সম্পর্ক করে বা যৌন সম্পর্ক করে, তাহলে সে সস্তা হয়ে যায়। পুরুষদের জন্য সমাজে সবকিছু জায়েজ হলেও নারী আজীবন সস্তাই রয়ে যায়।’

লায়লা (ছদ্মনাম) নামের এক নারী বলেন, তিনি বাবা ও ভাইদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন। এরপর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের অধিকারের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। এটা জানাজানি হলে তাঁর পরিবার দাবি করে, সে পরিবারকে ‘লজ্জায় ফেলেছে’। তাঁকে পাঠানো হয় দার আল-রায়ায়, সেখান থেকে মুক্তি পান কেবল তখনই, যখন তাঁর বাবা অনুমতি দেন। অথচ তাঁর বাবাই ছিলেন সেই নির্যাতনকারী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সৌদি মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘এই নারীদের পাশে কেউ নেই। কোনো অপরাধ না করেও তারা বছরের পর বছর ধরে আটক থাকতে পারে। এই জায়গা থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায়—পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি, বিয়ে কিংবা আত্মহত্যার চেষ্টা।’

আরেক নির্বাসিত মানবাধিকারকর্মী ফাওজিয়া আল-ওতাইবি বলেন, ‘এই সংশোধনাগারগুলো নিয়ে কেউ কথা বলে না, কেউ টুইট করে না। কেউ জানতেও চায় না—আপনি কোথায় গেলেন। তারা ভিকটিমদেরই লজ্জা দেয়।’

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সৌদি সরকার যদি সত্যিই নারীদের অধিকার রক্ষা করতে চায়, তাহলে এ ধরনের সংশোধন কেন্দ্রগুলো বিলুপ্ত করে প্রকৃত নিরাপদ সংশোধনাগার গড়ে তুলতে হবে। নির্বাসনে থাকা একজন সৌদি নারী বলেন, ‘অনেক নারীর পরিবার ভালো—তারা নির্যাতন করে না। কিন্তু বহু নারী কঠিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বাস করে, চুপচাপ সব নির্যাতন সহ্য করে। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলো সেই নির্যাতনকে বৈধতা দেয়।’

সৌদি মানবাধিকার সংস্থা এএলকিউএসটি বলছে, দার আল-রায়া হলো এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান, যা সৌদি সরকারের নারীবান্ধব ভাবমূর্তির সঙ্গে একেবারে সাংঘর্ষিক। সংস্থাটির ক্যাম্পেইন কর্মকর্তা নাদিন আবদুল আজিজ বলেন, ‘যদি তারা সত্যিই নারীর অগ্রগতি চায়, তাহলে এই বৈষম্যমূলক প্রথাগুলো বিলুপ্ত করে প্রকৃত নিরাপত্তা প্রদানকারী আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।’

এ বিষয়ে সৌদি সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, নারীদেরকে সহিংসতা থেকে রক্ষায় বিশেষায়িত কেন্দ্র রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে জোর করে আটক রাখা বা নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা। এগুলো আটক কেন্দ্র নয়। নারীরা চাইলে স্কুল, কাজ কিংবা অন্য যেকোনো ব্যক্তিগত কারণে বের হতে পারেন। এর জন্য পরিবার বা অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন নেই।’

কিন্তু সৌদি আরবের নির্বাসিত বাসিন্দা ও অধিকারকর্মীদের বর্ণনায় এটিই প্রমাণিত হয়, কথিত ‘সংশোধনাগার’গুলো আসলে নারীদের দমন করার এক নির্মম স্থানে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০ বছর অন্ধকারে বন্দী, মৃত্যুর হুমকিতে থেমে যাওয়া শৈশব-কৈশোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এনডিটিভি
ছবি: এনডিটিভি

পৃথিবী যখন খেলায় মত্ত, তখন তিনি বন্দী ছিলেন অন্ধকারে। ছয় বছর বয়সে ঘরবন্দী হওয়া লিসা ২০ বছর পর সেই দরজা পেরিয়ে বাইরে এলেও আলো দেখার ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন।

কিছু গল্প ক্ষতের মতো করে উন্মোচিত হয়। কিছু শৈশব যেন কোনোদিনই শুরু হয় না। লিসার জীবন তেমনই এক গল্প। নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া এক শৈশবের, পরিস্থিতিতে মুছে যাওয়া এক শিশুর এবং এক নারীর।

যে বয়সে শিশুরা বর্ণমালা শেখে, ছত্তিশগড়ের বাস্তার জেলার বাকাওয়ান্দ গ্রামের বাসিন্দা লিসা তখন ভয়কে জানছিলেন। ছয় বছর বয়সেই তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বাইরের জগতের সব শব্দ। বাড়ির দরজা শুধু খাবারের জন্য খুলত, জীবনের জন্য নয়। ২০ বছর পর কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে খুঁজে পায়, তখন তাঁর চোখে নয়, স্মৃতিতেও ছিল শুধু অন্ধকার।

ছায়াই ছিল তাঁর পরিচয়। কথোপকথন বলতে ছিল শুধু দরজার নিচ দিয়ে ঠেলে দেওয়া থালাবাটির শব্দ। দুই দশক ধরে বন্দিদশার পর এখন তিনি নিজের নামে সাড়া দিতেও হিমশিম খান।

লিসার বন্দিত্ব শুরু হয়েছিল না লোহার শিক দিয়ে, না শিকল দিয়ে—শুরু হয়েছিল আতঙ্ক দিয়ে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। সেই কথায় আতঙ্ক এত গভীর হয়, তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন নীরবতায়। এরই মধ্যে মারা যান তাঁর মা। কৃষক বাবা হয়ে পড়েন দুর্বল ও আতঙ্কিত। কোনো সহায়তা নেই, নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই, কারও কাছে ভরসা চাওয়ার নেই। তাই তিনি এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা মেয়ের জীবনের পরবর্তী ২০ বছর নির্ধারণ করে দেয়।

তিনি মেয়েকে মাটির ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বলেন, অন্ধকারই তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। জানালাবিহীন একটি ঘরই হয়ে ওঠে তাঁর পৃথিবী। না সূর্যের আলো। না কোনো কথা। না কোনো মানুষের স্পর্শ।

শুধু দরজায় রেখে যাওয়া এক প্লেট খাবার আর প্রতিদিন একটু একটু করে সংকুচিত হয়ে যাওয়া জীবনের প্রতিধ্বনি।

যে ব্যবস্থা তাঁকে রক্ষা করবে ভাবা হয়েছিল, তা-ই শেষমেশ তাঁকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয়।

সমাজকল্যাণ দপ্তরের দল যখন কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে, তারা দেখতে পায় এক নারীকে, যাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক আলো থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে লিসার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাঁর মানসিক বিকাশও গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। আচরণ বয়সের তুলনায় অনেক কম বয়সী শিশুর মতো। প্রতিটি শব্দে ভয় পান। যেকোনো স্পর্শে চমকে ওঠেন।

উদ্ধারের পর লিসাকে নিয়ে যাওয়া হয় জগদলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিস্তারিত পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, লিসার শৈশব থেমে যায় প্রবল ট্রমায় আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবন গঠিত হয়েছে ইন্দ্রিয়ের বঞ্চনায়।

সমাজকল্যাণ দপ্তর পুরো ঘটনায় এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।

কর্তৃপক্ষ লিসার পরিবার ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে—কেন তিনি ২০ বছর ধরে বন্দী ছিলেন এবং এই বন্দিত্ব আইনবহির্ভূত আটক হিসেবে বিবেচিত হবে কি না।

জেলার প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে, লিসার বাবা কি ভয়ে ও অজ্ঞতার কারণে স্কুল, পঞ্চায়েত বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাননি?

লিসা বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের এক আশ্রমে আছেন, যেখানে সেবাকর্মী ও কাউন্সেলররা তাঁকে নতুন করে জীবন খুঁজে পেতে সহায়তা করছেন।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্ডিগোর ফ্লাইট বিপর্যয়: পানি–খাবারহীন অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা হাজারো যাত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় বারো ঘণ্টা ধরে যাত্রীরা নিজেদের মালপত্র হাতে পেতে রীতিমতো সংগ্রাম করছেন। খাবার–পানির কোনো ব্যবস্থা নেই, আর ইন্ডিগোর কাউন্টারগুলি ফাঁকা। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বিমান সংস্থা সংস্থা ইন্ডিগোর পরিচালনগত ত্রুটির কারণে পাঁচ শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে এমন বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে, দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাজার হাজার স্যুটকেস পড়ে আছে। বহু যাত্রী মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর কেউ কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এক যাত্রী ইন্ডিগোর এই ব্যর্থতাকে ‘মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে এনডিটিভিকে জানান, বারো ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি বিমান সংস্থাটির কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট জবাব পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এখানে। প্রতিবার তারা বলছেন এক ঘণ্টা দেরি, দু–ঘণ্টা দেরি। আমরা একটা বিয়েতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আমাদের মালপত্র পর্যন্ত হাতে নেই। ইন্ডিগোর কর্মীরা আমাদের কিছু বলছেন না। এই মুহূর্তে এটি সবচেয়ে খারাপ বিমান সংস্থা। আমি বুঝি না কেন তারা নতুন যাত্রী নিচ্ছে আর মালপত্র জমিয়ে রাখছেন।’

আরেক যাত্রী জানালেন যে তিনি গতকাল দুপুর থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘তারা বারবার ফ্লাইট পিছিয়ে দিচ্ছে। ইন্ডিগোর তরফ থেকে আমরা কোনো স্পষ্ট খবর পাচ্ছি না।’ আরেক যাত্রী বলেন, ‘খুবই মানসিক চাপের বিষয় এটা। চৌদ্দ ঘণ্টা ধরে আমি বিমানবন্দরে বসে আছি। খাবার বা অন্য কিছুর জন্য কোনো কুপন নেই। আমার কানেকটিং ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, কিন্তু কর্মীরা কোনো স্পষ্ট জবাব দিচ্ছেন না। এমন জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কর্মীদের বিন্দুমাত্র প্রশিক্ষণ নেই।’

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। আটকা পড়া যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছিলেন। কারণ তাদের কোনো খাবার বা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। একদল যাত্রী প্রতিবাদস্বরূপ একটি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট পর্যন্ত আটকে দিয়েছিলেন।

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরের এক যাত্রী বলেন, ‘আমার ফ্লাইট গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা ছিল। আমি আমার সহকর্মীকে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছাই। আমাদের বলা হয়েছিল যে ফ্লাইট সময়মতো চলবে। এখন আমরা এখানে বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আছি। ইন্ডিগো আমাদের কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। তারা শুধু বলে চলেছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য দেরি হচ্ছে। আমাদের কোনো স্পষ্ট খবর, খাবার বা পানি দেওয়া হয়নি। ইন্ডিগোর সাড়া একেবারেই যাচ্ছেতাই। এখানে বয়স্ক মানুষ আছেন, যাদের বিশেষ দায়বদ্ধতা আছে, তাদের জন্য কোনো সমাধান নেই। এটা খুবই হাস্যকর।’

গোয়া বিমানবন্দরে একদল যাত্রী হতাশায় ভেঙে পড়েন। এক ভিডিওতে দেখা যায় তারা ইন্ডিগোর কর্মীদের লক্ষ্য করে চিৎকার করছেন। পরিস্থিতি সামলাতে বহু পুলিশ কর্মীকেও সেখানে দেখা যায়। চেন্নাই বিমানবন্দরে শত শত যাত্রী আটকা পড়েছেন। সেখানে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) ইন্ডিগোর যাত্রীদের প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। বিশাখাপত্তম বিমানবন্দরে কমপক্ষে ঊনপঞ্চাশটি বহির্গমন ও তেতাল্লিশটি ইনকামিং ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগোর এই পরিচালনগত ত্রুটি আজ চতুর্থ দিনের মতো চলছে। কুড়ি বছরের পুরোনো এই বিমান সংস্থাটি ক্রু-সংকট ও প্রযুক্তিগত সমস্যাসহ একাধিক কারণে পাঁচ শ পঞ্চাশটিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করার রেকর্ড তৈরি করেছে। এর মধ্যে মুম্বাই বিমানবন্দরে এক শ চারটি, দিল্লি বিমানবন্দরে দু শ পঁচিশটি, বেঙ্গালুরুতে এক শ দু'টি এবং হায়দরাবাদে বিরানব্বইটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ভূপাল বিমানবন্দরেও কমপক্ষে পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগো স্বীকার করেছে যে তারা নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রু-এর প্রয়োজনীয়তা ভুলভাবে আন্দাজ করেছিল এবং পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল, যার ফলস্বরূপ শীতকালীন আবহাওয়া ও যানজটের সময়ে পর্যাপ্ত ক্রু-এর অভাব দেখা দিয়েছে। বিমান সংস্থাটি সতর্ক করেছে, সময়সূচি স্বাভাবিক করার চেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানিয়েছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে তারা আরও বিঘ্ন এড়াতে ফ্লাইট পরিচালন কমিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের বলেছেন যে পরিচালন স্বাভাবিক করা এবং সময়ানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনা ‘সহজ লক্ষ্য হবে না।’ বিমান সংস্থাটি গত রাতে তাদের গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের কাছে নতুন করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘গত দুই দিন ধরে ইন্ডিগোর নেটওয়ার্ক এবং পরিচালন ব্যবস্থায় ব্যাপক বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের সব গ্রাহক এবং শিল্প স্টেকহোল্ডারদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ তারা আরও যোগ করেছে, ‘ইন্ডিগো এই বিলম্বের প্রভাব কমাতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে ও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২১
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন বাহিনীর প্রধান হয়েই পাকিস্তানকে ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছানোর ঘোষণা আসিম মুনিরের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৬
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছেন, পাকিস্তান এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আওয়াইন-ই-সদরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিম মুনির বলেন, ‘সবই তো ঠিক আছে, আপনাদের চোখের সামনেই তো সব। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, আর এখন থেকে পাকিস্তান আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।’ তাঁর এই মন্তব্য এল ঠিক এমন এক সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি নোট প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাতে সেনাপ্রধান মুনিরকে পাকিস্তানের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। এরপরই প্রেসিডেন্ট এই অনুমোদন দেন।

সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসেবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনীর প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে একটি অফিসের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিন বাহিনীর সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফের হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএর ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (১) এখন জানাচ্ছে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন [...], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফেরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসির মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনর্নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত