Ajker Patrika

ইসমাইলিয়া মুসলিমদের নেতা আগা খান মারা গেছেন

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ২৭
প্রিন্স করিম আগা খান। ছবি: সংগৃহীত
প্রিন্স করিম আগা খান। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে ইসমাইলিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা ধনকুবের প্রিন্স করিম আগা খান মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তাঁর দাতব্য সংস্থা আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রিন্স করিম আগা খান ছিলেন ইসমাইলিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ৪৯ তম বংশানুক্রমিক ইমাম। এই সম্প্রদায়ের দাবি আগা খানের পরিবার মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) সরাসরি বংশধর। আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, তিনি পর্তুগালের লিসবনে পরিবারের সদস্য বেষ্টিত অবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে মৃত্যুবরণ করেন।

সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করা প্রিন্স করিম আগা খান ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। তবে তিনি বসবাস করতেন ফ্রান্সের একটি প্রাসাদে। ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। আগা খান ছিলেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর মা প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

রাজা তাঁর দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত বন্ধুর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত এবং তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করছেন।

আগা খানের দাতব্য সংস্থা উন্নয়নশীল বিশ্বে শত শত হাসপাতাল, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে। তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। বাহামাসে তাঁর একটি ব্যক্তিগত দ্বীপ, একটি সুপার ইয়ট ও একটি ব্যক্তিগত জেট বিমান আছে।

আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা মহামান্যর পরিবার এবং বিশ্বব্যাপী ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’ এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ চালিয়ে যাব যাতে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী ধর্ম বা উৎসের পার্থক্য না করে ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নত করা যায়।’

ইসমাইলিয়ারা মুসলিমদের একটি উপ শাখা। বিশ্বব্যাপী এই গোষ্ঠীর অনুসারী দেড় কোটি। যার মধ্যে পাকিস্তানে ৫ লাখ ইসমাইলি বাস করেন। এ ছাড়া, ভারত, আফগানিস্তান ও আফ্রিকাতেও তাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।

প্রিন্স করিম আগা খান ১৯৫৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তাঁর দাদার উত্তরসূরি হিসেবে ইসমাইলিয়া মুসলিমদের ইমামের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাব অনুসারে, তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই সম্পদকে আরও বৃদ্ধি করেছিল তাঁর বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ঘোড়দৌড় প্রজনন।

করিম আগা খান যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ডের অন্যতম শীর্ষ ঘোড়দৌড় মালিক ও প্রজননকারী হয়ে ওঠেন এবং বিশ্বের একসময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত ও মূল্যবান ঘোড়া শেরগারকে প্রতিপালন করেন। শেরগার ১৯৮১ সালে এপসম ডার্বি জিতেছিল, তবে দুই বছর পর আয়ারল্যান্ডে ঘোড়াটিকে অপহরণ করা হয় এবং আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রিন্স ছিলেন আগা খান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁর নামে করাচিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির আগা খান ইসলামিক স্থাপত্য কর্মসূচি পরিচালিত হয়। আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার দিল্লির হ‌ুমায়ূনের সমাধি সংরক্ষণ প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এ ছাড়া, প্রতি বছর আগা খান আর্কিটেকচার পুরস্কার প্রদান করা হয়।

তিনি ইস্ট ও সেন্ট্রাল আফ্রিকার বৃহত্তম স্বাধীন গণমাধ্যম সংস্থা নেশন মিডিয়া গ্রুপেরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ প্রিন্স করিম আগা খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন ‘এক দূরদর্শী, বিশ্বাসী ও উদার মনের মানুষ এবং এক অসাধারণ নেতা।’

ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ভারতে হলেও পরে পূর্ব আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে বড় সম্প্রদায়ে পরিণত হয় তারা। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের তত্ত্বাবধায়ককে (আগা খানকে) তাঁদের আয়ের সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ শতাংশ দান করাকে কর্তব্য বলে মনে করে।

ভ্যানিটি ফেয়ারকে ২০১২ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে করিম আগা খান বলেছিলেন, ‘আমরা সম্পদ সঞ্চয়কে কোনো মন্দ বিষয় বলে মনে করি না। ইসলামি নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী, যদি আল্লাহ আপনাকে সমাজে সৌভাগ্যবান ও সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে স্থান দেন, তবে সমাজের প্রতি আপনার নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে।’

ইসমাইলি সম্প্রদায়ের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়, করিম আগা খান ১৯৩৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভার কাছে ক্র্যু-দ্য-জ্যঁতোদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন জোয়ান ইয়ার্ড-বুলার ও আলি খানের সন্তান এবং শৈশবের একটি অংশ কাটিয়েছেন কেনিয়ার নাইরোবিতে। সেখানে তাঁর নামে একটি হাসপাতাল রয়েছে।

স্থাপত্য ও নকশার প্রতি গভীর দৃষ্টিভঙ্গি আগা খানকে স্থাপত্য পুরস্কার প্রবর্তন করতে এবং এমআইটি ও হার্ভার্ডে ইসলামি স্থাপত্য বিষয়ে কর্মসূচি চালু করতে অনুপ্রাণিত করে। তিনি বিশ্বব্যাপী বহু প্রাচীন ইসলামি স্থাপত্যকীর্তির পুনরুদ্ধার করেছেন। আগা খান দীর্ঘ সময় ফ্রান্সে বসবাস করেছেন এবং গত কয়েক বছর ধরে পর্তুগালে বসবাস করছিলেন। তাঁর উন্নয়ন নেটওয়ার্ক ও ফাউন্ডেশন সুইজারল্যান্ডভিত্তিক।

আগা খানকে লিসবনে সমাহিত করা হবে, তবে তারিখ প্রকাশ করা হয়নি। তিনি তিন পুত্র, এক কন্যা এবং বেশ কয়েকজন নাতি-নাতনির উত্তরাধিকার রেখে গেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতেও বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করে।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপি শাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালায় এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেয়। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপি শাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তর চেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত