Ajker Patrika

ভারত-পাকিস্তান

পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা

  • রাতে কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে বিস্ফোরণের শব্দ, জম্মুতে ব্ল্যাকআউট।
  • বুধবার ভারতের ২৯টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের।
ভারতীয় ড্রোন ভূপতিত হওয়ার পর রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়াম-সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত একটি রেস্তোরাঁ। গতকাল রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় করেন স্থানীয়রা। ছবি: এএফপি
ভারতীয় ড্রোন ভূপতিত হওয়ার পর রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়াম-সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত একটি রেস্তোরাঁ। গতকাল রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় করেন স্থানীয়রা। ছবি: এএফপি

উপমহাদেশের পারমাণবিক শক্তিধর দুই বৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বেড়েই চলেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানে ভারতের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং কাশ্মীর সীমান্তে দুই পক্ষের গোলাগুলির পর গত বুধবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের কয়েকটি জায়গায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ভারত। আর গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরজুড়ে বেজে ওঠে সতর্কসংকেত। অন্ধকারাচ্ছন্ন ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয় জম্মু। সতর্কসংকেত বেজেছে ভারতের পাঞ্জাবেও।

এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে ড্রোন হামলায় লাহোরে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করার দাবি করে ভারত। তবে পাকিস্তান এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, তারা ভারতের ২৯টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে ভারত ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ভারত অভিযোগ করেছে, বুধবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ভারতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ওই রাতে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলিও হয়েছে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলা হয়। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত। তবে পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ওই হামলার পর প্রায় দুই সপ্তাহ টানটান উত্তেজনার মধ্যে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায় ভারত। দেশটির দাবি, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতীয় বাহিনী বেসামরিক বাড়িঘর ও মসজিদে হামলা চালিয়েছে। দেশটি আরও দাবি করেছে, তারা চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান দিয়ে তাড়া করে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে তিনটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান, একটি মিগ-২৯ এবং অন্যটি সুখোই-৩০। এ বিষয়ে ভারতের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আসেনি।

এদিকে পাকিস্তান বলেছে, ভারতের হামলায় দেশটিতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে, আহত হয়েছেন ৫৭ জন। অন্যদিকে ভারতের সেনাবাহিনী বলেছে, পাকিস্তানের গোলার আঘাতে দেশটিতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের হামলার পর বুধবার পাকিস্তানে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তাঁর দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ‘প্রতিশোধ নিতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ’ নেওয়ার নির্দেশ দেন। এদিকে হামলার আগে ও পরে ভারত দেশজুড়ে যুদ্ধ পরিস্থিতির মহড়া চালিয়েছে। পাশাপাশি সর্বদলীয় বৈঠক করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সতর্কসংকেত

বিবিসি জানায়, পাকিস্তানি বাহিনী জম্মু-কাশ্মীরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। জম্মু বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বিস্ফোরকবাহী এসব ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত হেনেছে। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে কাশ্মীরজুড়ে বেজে উঠেছে সতর্কসংকেত, সক্রিয় হয়েছে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জম্মুতে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে, বেজে চলেছে সতর্কসংকেত। ওই শহরে বিদ্যুৎ নেই। ফলে রাতে শহরটি পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, জম্মু বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তিনি বিমানবন্দর ও আশপাশে ১৬টি বস্তু পড়তে দেখেছেন। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছিল তখন।

ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্র নিশ্চিত করেছে, জম্মুতে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় কাশ্মীরের জম্মু ও উদামপুর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটে ভারতের তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) সেনাবাহিনী বলেছে, হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হুমকি ‘মোকাবিলা’ করা হয়েছে।

জম্মুতে পুলিশ স্থানীয়দের উদ্দেশে বাড়িঘরের আলো নিভিয়ে সবাইকে ঘরের ভেতরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। অপ্রয়োজনে কোনো যানবাহনে ভ্রমণ এড়াতে এবং আতঙ্কিত না হতেও পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।

এদিকে সিএনএন জানায়, পাঞ্জাব পুলিশ সূত্র বলেছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী পাঞ্জাবের ওপর দিয়ে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। পাঠানকোটের জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার দলজিন্দর সিং ডিলন বলেন, পাকিস্তানের দিক থেকে গোলাগুলি হচ্ছে। তবে ড্রোন না অন্য কিছুর হামলা হচ্ছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা বলা যাচ্ছে না।

এর আগে ভারত সরকার গতকাল অভিযোগ করে, বুধবার দিবাগত রাতভর পাকিস্তানি বাহিনী ভারতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। জবাবে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে ভারতে ২১টি বিমানবন্দর আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তান ড্রোন পাঠিয়ে ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ভারতের বেশ কয়েকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার চেষ্টা করেছে। তবে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর, পাঞ্জাবের অমৃতসর, লুধিয়ানা ও চণ্ডীগড় এবং গুজরাটের ভুজ।

ভারত আরও অভিযোগ করেছে, কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) ওপার থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাগুলির হার বেড়ে গেছে।

সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের গুলিবিনিময়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত নিজ বাড়ির সামনে এক কিশোর। গতকাল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি সীমান্ত এলাকায়। ছবি: এএফপি
সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের গুলিবিনিময়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত নিজ বাড়ির সামনে এক কিশোর। গতকাল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি সীমান্ত এলাকায়। ছবি: এএফপি

লাহোর ও আজাদ কাশ্মীরে ভারতের হামলা

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, পাকিস্তানি বাহিনী গতকাল এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তারা ভারতের ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এগুলো ইসরায়েলের তৈরি হ্যারোপ ড্রোন। বিবৃতিতে পাকিস্তানির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘গত রাতে (বুধবার দিবাগত রাত) ভারত বেশ কয়েকটি স্থানে ড্রোন পাঠিয়ে আবারও আগ্রাসন চালিয়েছে। লাহোরে চার সেনাসদস্য আহত হয়েছেন।’ পাকিস্তান বলেছে, ড্রোন হামলায় সিন্ধু প্রদেশে একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, হামলার সময় লাহোরজুড়ে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করাচি বিমানবন্দর বন্ধ রাখে। রাজধানী ইসলামাবাদ ও লাহোরেও কিছু সময়ের জন্য বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল গতকাল।

বিবিসি জানায়, ভারত সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা পাকিস্তানের কয়েক জায়গায় আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার ও ব্যবস্থায় হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় লাহোরে একটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে।

তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আফিস বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে দাবি করেছেন, ভারতের ড্রোন হামলায় লাহোরে কোনো সামরিক স্থাপনা কিংবা আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরিফ চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ভারত পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিলম-ঝিলম জলবিদ্যুৎকেন্দ্রেও হামলা চালিয়েছে। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা অভিযোগ। ভারত কেবল সন্ত্রাসী অবকাঠামোয় আঘাত হেনেছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তানি বাহিনী ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঁচে শিখ সম্প্রদায়ের লোকজনকে লক্ষ্য করে গোলা ছুড়ছে। পাকিস্তানের গোলা সেখানকার গুরদোয়ারা জেলায় আঘাত হেনেছে। ওই হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন।

ভারতে সর্বদলীয় বৈঠক

বিবিসি জানায়, ভারতে গতকাল সর্বদলীয় বৈঠক করেছে সরকার। সংসদবিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় বিরোধী রাজনীতিকেরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরামর্শ দেন।

বৈঠক শেষে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘সরকার বলেছে, জাতীয় স্বার্থে কিছু বিষয় গোপন রাখতে হচ্ছে। আমরা (সব বিরোধীরা) বলেছি, আমরা সরকারের সঙ্গে আছি।’

অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেজাদুল মুসলিমিন পার্টির প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেন, তিনি সরকারকে জঙ্গিগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্সের (টিআরএফ) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে টিআরএফ। ভারতের দাবি, টিআরএফ জাতিসংঘঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি শাখা।

যে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব

সিএনএন জানায়, পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় গতকাল দাবি করেছে, কাশ্মীরে তাদের গোলার আঘাতে সীমান্তের ওপারে ৪০-৫০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার স্কাই নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা তাদের (ভারত) সামরিক স্থাপনা উড়িয়ে দিয়েছি।’ বিবিসি জানায়, এসব দাবির বিষয়ে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি কোনো জবাব দেননি।

ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাকিস্তানের দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সরাসরি জবাব দেননি। শুধু বলেছেন, উপযুক্ত সময়ে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হবে।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) পাকিস্তানের ঋণের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আজ শুক্রবার আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তোলা হবে বলে ব্রিফিংয়ে জানান বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, আইএমএফে ভারতের নির্বাহী পরিচালক ওই ঋণের বিষয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরবেন।

উত্তেজনা নিরসনে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ

দুই বৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে আন্তর্জাতিক উদ্যোগও থেমে নেই। এর মধ্যে আলোচনার জন্য ভারতে পৌঁছেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারতের হামলার আগের দিন তিনি পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানে তিনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল ইরান।

এদিকে ভারতে পৌঁছেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর। কোনো আগাম ঘোষণা না দিয়েই তিনি গতকাল নয়াদিল্লি সফরে গেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

এদিকে বুধবার অনেকটা উষ্মা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা দেখতে চাই, তারা (ভারত ও পাকিস্তান) থেমেছে।’ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে জাতিসংঘও একই আহ্বান জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৭
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত