Ajker Patrika

সিরিয়ায় বাশারের পতনের ১ বছর: স্বপ্ন কিছুটা সত্যি, এখনো অনেক কাজ বাকি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উমাইয়া স্কোয়ারে বাশার আল–আসাদের পতনের এক বছর পূর্তির অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ছবি: এএফপি
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উমাইয়া স্কোয়ারে বাশার আল–আসাদের পতনের এক বছর পূর্তির অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ছবি: এএফপি

সিরিয়ার জনগণ স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের অপসারণের প্রথম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে রাস্তায় নেমে এসেছেন। দীর্ঘ প্রায় চৌদ্দ বছরের যুদ্ধের ধাক্কা সামলে উঠে দেশটি যত এগোচ্ছে, ততই যেন পরিস্থিতি আরও ভালো হয়ে ওঠার নতুন আশা দেখছেন নাগরিকেরা।

সোমবার গোটা দেশ জুড়ে শহরে শহরে আতশবাজি আর পতাকার ঝলকানি দেখা গেল। বাশার বিরোধীরা মাত্র এগারো দিনের ঝটিকা অভিযানের পর আসাদ রাজবংশের তিপ্পান্ন বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। যার এক বছর পূর্তি হলো গতকাল। দামেস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা সাবেক শাসনকে উৎখাত করার জন্য সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন।

আল–শারা বললেন, ‘ইতিহাসের এই কেন্দ্রে আপনারা যাঁরা আজ উপস্থিত, তাঁরা সাহস আর বীরত্বের এক নতুন গল্প রচনা করছেন। আজ আমরা স্বৈরাচার আর একনায়কত্বের শৃঙ্খল থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করার প্রথম বছর পূর্ণ করলাম, দেশকে আবারও তার মহত্ত্বের জায়গায় ফিরিয়ে এনেছি। মাথা উঁচু করে দাঁড়ান আপনারা। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা আমাদের স্বদেশ হারিয়েছিলাম, যখন এই চক্রটি তার সভ্যতা, ইতিহাস আর ঐতিহ্য কেড়ে নিতে চেয়েছিল।’

এর আগে, বার্ষিকী স্মরণে সামরিক পোশাকে আল-শারা উমাইয়া মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের পথে বাধা দিতে পারবে না, সে যত বড় বা ক্ষমতাশালীই হোক না কেন। আমরা সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—আমরা এমন এক শক্তিশালী সিরিয়া আবার গড়ে তুলব যা তার বর্তমান আর অতীতের যোগ্য। এমন এক সিরিয়া যা নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াবে এবং মানুষের মধ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে।’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দামেস্ক এবং হামা, হোমস ও দেইর আজ–জোরসহ বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, বাশার আল–আসাদের পতনের পর নতুন সরকার নাগরিকদের জন্য মৌলিক পরিষেবা প্রদানে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গত জুনে এক প্রেসিডেনশিয়াল ডিক্রি অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম মাসিক বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। যার ফলে গত পনেরো বছরে প্রথমবারের মতো আলেপ্পো, হোমস এবং দামেস্কের মতো প্রধান শহরগুলো পরীক্ষামূলকভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে শুরু করেছে।

সিরিয়ার জনগণের মনে অন্ধকার স্মৃতি রেখে যাওয়া সেদনায়া, মেজেহ সামরিক কারাগার, এবং খাতিবের মতো জেলখানাগুলোকেও পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে আল-জাজিরার প্রতিনিধি আসসেদ বেইগ আলেপ্পো থেকে জানালেন, গোটা জাতি আনন্দের মেজাজে রয়েছে, মানুষজন রাস্তায় নেমে উল্লাস করছে, গান গাইছে, পতাকা ওড়াচ্ছে, তবুও ‘অনেক কাজ বাকি।’

তিনি জানান, ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিরোধী যোদ্ধা আর আসাদসমর্থক বাহিনীর মধ্যে ভাগ হয়ে থাকা আলেপ্পো শহরটি ‘ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’ এবং ‘পুনর্গঠন ও মেরামতের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ হবে।’ বেইগ বলেন, ‘সে কারণেই সরকার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের দিকে বিনিয়োগের আশায় তাকিয়ে আছে, এই দেশকে, বিশেষ করে আলেপ্পোকে পুনর্গঠনে সাহায্য করার জন্য। কারণ এখানে লড়াই ছিল খুবই ভয়ংকর।’

এদিকে, লাখ লাখ শরণার্থী এবং প্রবাসী এক বছর আগে রাশিয়া পালিয়ে যাওয়া আসাদের পতনের পর দেশে ফিরে জীবন নতুন করে গোড়ার সিদ্ধান্তটি নিয়ে দোটানায় আছেন। ২০১১ সালের মার্চে আসাদের বিরুদ্ধে প্রধানত নিরস্ত্র অভ্যুত্থান হিসেবে শুরু হওয়া যুদ্ধ দ্রুতই এক পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে রূপ নেয়, যাতে প্রাণ হারান কয়েক লাখ মানুষ। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অভিবাসন সংকটেরও জন্ম দেয়; যুদ্ধের চরম সময়ে, ২০২১ সালে, জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় আটষট্টি লাখ সিরিয়ান দেশ ছেড়ে যে যেখানে পেরেছেন আশ্রয় খুঁজেছিলেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে সাত লাখ বিরাশি হাজারেরও বেশি সিরিয়ার অন্য দেশ থেকে ফিরেছেন। ফিরে আসার সংখ্যা বাড়লেও, সীমিত চাকরির সুযোগ আর জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনে বাধা দিচ্ছে। অনেকের জন্য আবাসন এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে, ফলে ফিরে আসা মানুষজন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি কিংবা দামি ভাড়া বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

সিরিয়ার তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তনের ব্যাপারে বিশেষভাবে আশাবাদী, তবে আরও বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং অর্থনীতিকে চাঙা করে তোলার প্রয়োজনীয়তা জরুরি। মাহা খলিল নামে এক তরুণী শিক্ষার্থী আল-জাজিরাকে বলেন, ‘স্বপ্নের কেবল কিছুটা সত্যি হয়েছে। আমরা বিজয়ী হয়েছি, কিন্তু বছর, বাড়িঘর, আর সন্তানদের হারিয়েছি। আসল গল্পটা এখন শুরু। আমরা আশা করি পুনর্গঠন করতে পারব, কিন্তু যুবকেরা বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবছে। আর যাঁরা বিদেশে আছেন, তাঁরা ফিরে আসতে ভয় পাচ্ছেন।’

বাশার আল–আসাদের পতনের বার্ষিকী উপলক্ষে সিরিয়া আন্তর্জাতিক সমর্থনও পেয়েছে। জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস সিরিয়ার রাজনৈতিক উত্তরণ নিশ্চিত করার জন্য সংস্থার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই বার্ষিকীতে, আমরা এক লক্ষ্য নিয়ে ঐক্যবদ্ধ—শান্তি ও সমৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করা এবং একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, ঐক্যবদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সিরিয়ার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার নতুন করে জানানো।’

থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরাক, সিরিয়া ও লেবানন প্রকল্পের পরিচালক হেইকো উইমেন আল-জাজিরাকে বললেন, আল-শারার আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়াটা ‘এক অভাবনীয় সাফল্য’ হলেও, সরকারকে এবার দেশের অভ্যন্তরের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। উইমেন বললেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সরকারের উচিত হবে প্রধানত অর্থনীতি পুনর্গঠনের দিকে নজর দেওয়া, ‘যেটাতে সময় লাগবেই, কারণ মূলধন ও বিনিয়োগ সতর্ক থাকে, যা হওয়া উচিত।’ তিনি আরও যোগ করেন, সরকারের উচিত ‘রাজনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্যকে পুনরুজ্জীবিত করা।’

বহু বছর ধরে সিরিয়ার নেতারা ক্ষমতা ‘একচেটিয়াভাবে’ নিজেদের হাতে রাখতে অভ্যস্ত ছিলেন, কিন্তু এখন যেহেতু তাঁরা সমস্ত নাগরিককে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছেন, তাই এই পদ্ধতি আর চলবে না। উইমেন বললেন, ‘সিরিয়ার প্রত্যেক মানুষকে নিশ্চিত হতে হবে যে, যে দেশটি গড়া হচ্ছে, সেখানে তাদেরও মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে—এবং তাদেরও একটা জায়গা থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুল্ক ক্ষতি পোষাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকেরা ভর্তুকি পাচ্ছেন ১২ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প জানান, শুল্ক আয় থেকেই এই ১২ বিলিয়ন ডলারের তহবিলে অর্থের যোগান দেওয়া হবে। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
ট্রাম্প জানান, শুল্ক আয় থেকেই এই ১২ বিলিয়ন ডলারের তহবিলে অর্থের যোগান দেওয়া হবে। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

কৃষি আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই সঙ্গে তিনি জানান, মার্কিন কৃষকদের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকিও রেখেছেন তিনি। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। অন্য দেশের সুরক্ষামূলক কৃষি নীতির সমালোচনা করে এই ঘোষণা দেন তিনি। ট্রাম্প জানান, শুল্ক আয় থেকেই এই ১২ বিলিয়ন ডলারের তহবিলে অর্থের যোগান দেওয়া হবে।

ট্রাম্প বলেন, ‘এই সহায়তা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এর সহায়তায় তারা এ বছরও ফসল বাজারে আনতে পারবে এবং আগামী বছরের ফসলের প্রস্তুতিও করতে পারবে। পাশাপাশি মার্কিন ভোক্তাবাজারে পণ্যের দাম কমানোর প্রচেষ্টায়ও কাজে আসবে।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘কৃষকেরা সাহায্য চায় না। তারা চায় সমান সুযোগের মাঠ। আমরা কৃষকদের এত শক্তিশালী করব যে এটি কৃষকদের জন্য স্বর্ণযুগের মতো হবে।’

কৃষি সচিব ব্রুক রোলিন্স জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য ‘ব্রিজ পেমেন্ট’ হিসেবে ১১ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে, যা এককালীন। বাকি তহবিল অন্যান্য ফসলের জন্য পরবর্তীতে নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী দেওয়া হবে।

এই অর্থ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানান রোলিন্স। তিনি বলেন, কত অর্থের জন্য আবেদন করতে পারবেন তা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কৃষকদের জানানো হবে।

চীন ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে কৃষি আমদানি নিয়ে বাণিজ্য বিরোধ এবং একটি অস্থির শুল্ক প্রক্রিয়ার প্রভাবের কারণে যে ক্ষতি তা পোষাতে এই তহবিল দেওয়া হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এখন যাচাই করছে, এই শুল্ক প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের আওতায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অতিক্রম করছে কি না।

তবে চীন সম্প্রতি আবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কেনা শুরু করেছে। এর আগে তারা আর্জেন্টিনার মতো অন্যান্য উৎপাদক থেকে সরবরাহ নিয়েছিল। গত অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। ওই চুক্তির ফলে মূলত শুল্কের হার পুনর্নির্ধারিত হয়। বিনিময়ে বেইজিং অবৈধ ফেন্টানিল চালানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।

তবে ট্রাম্প এখনো শুল্ক নীতিকে অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং এটি নিয়ে প্রশংসাবাক্য উচ্চারণ করেন। কৃষকদের সমস্যার কারণ হিসেবে এ বিষয়টির কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘তারা আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানি, পানি এবং অগণিত কৃষিজীবনের অপরিহার্য জিনিসপত্রের ক্রমাগত সীমাবদ্ধতার কারণে পীড়িত হয়েছে।’

উল্লেখ্য, সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শাসনামলে মুদ্রাস্ফীতি ৪৮ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যা ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এক বছর ধরে হ্রাস পেতে শুরু করে।

২০১৮ সালে প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধের সময় কৃষকদের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। এই তহবিল তারই পুনরাবৃত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেবরের পর এবার গাঁজাসহ গ্রেপ্তার মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর ভাই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অনিল বাগরি ও পঙ্কজ সিংহের কাছ থেকে ৪৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি
অনিল বাগরি ও পঙ্কজ সিংহের কাছ থেকে ৪৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি

৪৬ কেজি গাঁজাসহ ভারতের মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী প্রতিমা বাগরির ভাই অনিল বাগরিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ মামলায় আরও এক অভিযুক্ত পঙ্কজ সিংহকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের সাটনা জেলায় মাদক পাচারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, অনিল বাগরি ও পঙ্কজ সিংহের কাছ থেকে ৪৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা গাঁজার মূল্য ৯ লাখ ২২ হাজার রুপি। পঙ্কজের মারৌনহা গ্রামের বাড়িতে ধানের বস্তার ভেতর গাঁজাগুলো লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। পাচারে ব্যবহৃত গাড়িটি আরেক অভিযুক্ত শৈলেন্দ্র সিংহ রাজাওয়াতের। তিনি বর্তমানে পলাতক।

এ ঘটনার কয়েকদিন আগে প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা বাগরির দেবর শৈলেন্দ্র সিংহকে উত্তর প্রদেশের বান্দায় ১০.৫ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এরই মধ্যে এনডিপিএস আইনের আরেক মামলায় বান্দা কারাগারে আছেন শৈলেন্দ্র। এর আগে সাটনায় প্রায় ৫.৫ কোটি টাকার কফ সিরাপ পাচার চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

মাদক মামলায় ভাই ও দেবরের গ্রেপ্তারের ঘটনায় মন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রভাব, তদারকি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খাজুরাহোতে মন্ত্রী প্রতিমা বাগরিকে সাংবাদিকেরা এ অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি বলেন, ‘জবরদস্তি কি বাত কিউ কারতে হো তুমলোগ?’ অর্থাৎ তোমরা অকারণে এসব কথা বলো কেন?

এই ঘটনার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিরোধী দলগুলো তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে।

ক্লিপটি পোস্ট করে কংগ্রেস লিখেছে, ‘মাদক পাচার মামলায় গ্রেপ্তার ভাইয়ের সম্পর্কে প্রশ্ন করায় দেখুন মন্ত্রীর রাগ! বিজেপি সরকারের মন্ত্রীদের স্বজনেরা এখন প্রকাশ্যেই পাচারে ধরা পড়ছে। মুখ্যমন্ত্রী, আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করুন— রাজ্যকে আর কতটা অপরাধের গভীরে ঠেলে দেওয়া হবে?’

সাটনা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার সকালে পঙ্কজ সিংহের মারৌনহা গ্রামের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। ধানের স্তরের নিচে লুকানো চারটি বড় বস্তার মধ্যে ৪৮টি গাঁজার প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পঙ্কজ পুলিশকে জানান, অনিল বাগরি ও শৈলেন্দ্র সিংহ রাজাওয়াত তাঁকে এগুলো রাখতে দিয়েছিল।

এমডিপিএস আইনের তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের ১২ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভার্চুয়াল কাপলিং: তারহীন স্বয়ংক্রিয় ট্রেন-নিয়ন্ত্রণ সিস্টেমের সফল প্রয়োগ চীনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীন মালবাহী ট্রেন একযোগে একটি সমন্বিত তারহীন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালনার নতুন প্রযুক্তির সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
চীন মালবাহী ট্রেন একযোগে একটি সমন্বিত তারহীন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালনার নতুন প্রযুক্তির সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

আরও একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য পেল চীন। দেশটি তারহীন এক স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে একাধিক মালবাহী ট্রেনকে একই লাইনে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে একযোগে চালিয়েছে। গত সোমবার চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ার বাওশেন রেলপথে এই পরীক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন হয়।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, পাঁচ হাজার টন ওজনের সাতটি ট্রেন একই সঙ্গে একটি রেলপথে চলেছিল এবং তারা গতিশীলভাবে নিজেদের মধ্যেকার দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করছিল। এর ফলে নতুন করে রেলপথ পাতার প্রয়োজন কমবে এবং অর্থও সাশ্রয় হবে।

এই ট্রেন বহর নিয়ন্ত্রণ করতে যে তারহীন ব্যবস্থাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা তৈরি করেছে চায়না শেনহুয়া এনার্জি। এটি রাষ্ট্রায়ত্ত খনি ও জ্বালানি সংস্থা সিএইচএন এনার্জির একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। চিনা সংস্থাটি যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তা গাড়িতে ব্যবহৃত জনপ্রিয় ‘অ্যাডভান্সড ড্রাইভার-অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম বা এডিএএস’—এর মতোই। এই প্রযুক্তিটি ‘অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কন্ট্রোল’-এর সঙ্গে ব্যবহার করা হয়, যা গাড়িকে গতিশীলভাবে গতি সামঞ্জস্য করতে সাহায্য করে।

সাধারণ রেল পরিচালন ব্যবস্থায়, নিরাপত্তার খাতিরে ট্রেনগুলোকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয়। দ্রুতগামী (বা এক্সপ্রেস) এবং ভারী ট্রেনের ক্ষেত্রে, ঠিকমতো ব্রেক করার জন্য এই দূরত্ব আরও বেশি রাখতে হয়। কিন্তু চিনের এই ‘ভার্চুয়াল কাপলিং’ ব্যবস্থাটি হয়তো সেই দূরত্ব কমাতে সাহায্য করবে। কারণ, এই ব্যবস্থায় ট্রেনগুলো গতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ব্রেকিং ক্ষমতাকে মেপে নিতে পারে।

এক বিবৃতিতে সিএইচএন এনার্জি বলেছে, ‘ট্রেন-থেকে-ভূমি এবং ট্রেন-থেকে-ট্রেন যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে এই প্রযুক্তি আপেক্ষিক গতি এবং চরম দূরত্বকে একত্রিত করে একটি দ্বি-মাত্রিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে। এর ফলে কাছাকাছি থাকা ট্রেনগুলো গতিশীলভাবে কাজ করতে পারে।’

এই নতুন ব্যবস্থাটির দৌলতে নতুন লাইন না বাড়িয়েও আরও বেশি মালগাড়ি চালানো সম্ভব হবে। পরীক্ষামূলক দৌড়ে, মালগাড়িগুলোর সম্মিলিত পণ্য বহন ক্ষমতা ছিল ৩৫ হাজার টন এবং এগুলো পৃথকভাবে চলা ট্রেনের চেয়ে অনেক কাছে থেকে চলেছে।

নিরাপদ, সুলভ এবং পরিবেশবান্ধব সুবিধার জন্য চীন মালগাড়ির নেটওয়ার্ক বাড়াতে বিস্তর বিনিয়োগ করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পত্রিকা চায়না ডেইলির মতে, এই বছরের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে চীন তিন বিলিয়ন টনের বেশি পণ্য পরিবহন করেছে মালগাড়ি দিয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘাত, নিহত ৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বহর নিয়ে যাচ্ছে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপি
সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় ভারী অস্ত্রশস্ত্রের বহর নিয়ে যাচ্ছে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দুই দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তে আবারও সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, তারা তাদের ভূখণ্ড থেকে কম্বোডিয়ার সেনাদের উৎখাত করার ব্যবস্থা নিচ্ছে। সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, এখন পর্যন্ত ৭ জন নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

উভয় পক্ষই এই সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে। এই সংঘাতের ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল তা বানচাল হয়ে গেল। এর আগে, গত জুলাই মাসে দুই দেশই পাঁচ দিনের লড়াইয়ের জড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক প্রাণহানি এবং বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার রাতভর সংঘর্ষে দুই সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর ফলে, সেখানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। এই লড়াইয়ে এক থাই সেনার মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে এক বিবৃতিতে থাই নৌবাহিনী বলেছে, উপকূলীয় প্রদেশ ত্রাতে থাই ভূখণ্ডের ভেতরে কম্বোডিয়ার সেনাদের উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে। তাদের বিতাড়িত করতে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে। যদিও বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি।

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত সোমবার গভীর রাতে বলেছেন, থাইল্যান্ডের ‘নিজ সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার অজুহাতে বেসামরিক গ্রামগুলোতে আক্রমণ করতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করা উচিত নয়।’ এর আগে কম্বোডিয়া জানিয়েছিল, তাদের বাহিনী সুদীর্ঘ আক্রমণের মুখে পড়লেও তারা কোনো পাল্টা আঘাত করেনি।

থাই নৌবাহিনী বলেছে, কম্বোডিয়ার সীমান্তে সেনারা তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে, তারা স্নাইপার ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করছে, সুরক্ষিত অবস্থানগুলো আরও উন্নত করছে এবং ট্রেঞ্চ বা পরিখা খনন করছে। তারা মনে করে এই সব কার্যকলাপ ‘থাইল্যান্ডের সার্বভৌমত্বের প্রতি একটি প্রত্যক্ষ ও গুরুতর হুমকি।’

গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ৪৮ জন নিহত হয় এবং ৩ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়। তখন ট্রাম্প মধ্যস্থতা করে যুদ্ধবিরতি ঘটিয়েছিলেন। সে সময় থাইল্যান্ড পাঁচটি সীমান্ত প্রদেশ থেকে ৪ লাখ ৩৮ হাজার সাধারণ নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছিল। কম্বোডিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। থাই সেনাবাহিনী বলেছিল, তাদের ১৮ জন সেনা আহত হয়েছে এবং কম্বোডিয়ার সরকার জানিয়েছে নয়জন সাধারণ নাগরিক আহত হয়েছেন।

থাইল্যান্ড আর কম্বোডিয়া এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাদের ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থল সীমান্তের অনির্ধারিত স্থানগুলোতে সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিবাদ করে আসছে। প্রাচীন মন্দির নিয়ে চলা বিতর্ক প্রায়ই জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা বাড়িয়েছে এবং মাঝে মাঝে সশস্ত্র সংঘাতের জন্ম দিয়েছে, যার মধ্যে ২০১১ সালের এক সপ্তাহব্যাপী মারাত্মক সংঘাতও রয়েছে।

মে মাসে এক সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনার মৃত্যুর পর উত্তেজনা আবার বাড়ে। উভয় পক্ষই সীমান্তে প্রচুর সেনা জড়ো করে এবং এর ফলে কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া ও সশস্ত্র সংঘর্ষের দিকে পরিস্থিতি গড়ায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত