Ajker Patrika

যেভাবে বায়ুদূষণ ভারতীয়দের কাশির সিরাপে আসক্ত করে তুলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশির সিরাপের প্রতি ভারতীয়দের আসক্তি রয়েছে। ছবি: এএফপি
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশির সিরাপের প্রতি ভারতীয়দের আসক্তি রয়েছে। ছবি: এএফপি

সেপ্টেম্বরের শুরুতে মধ্যপ্রদেশের ছোট এক শহরে একের পর এক শিশুর মৃত্যুর খবরে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এক মাসের মধ্যে ২০ শিশুর মৃত্যু, যাদের সবার বয়স এক থেকে ছয় বছর, তাদের সবাই একটি সাধারণ কাশির সিরাপ খেয়েছিল। ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে পানীয় জল পরীক্ষা থেকে শুরু করে এর জন্য মশা দায়ী কি না—সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেছিলেন কর্মকর্তারা। তারপর জানা যায়, ওই শিশুদের কিডনি ফেল করেছিল।

এর কয়েক সপ্তাহ পরে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর চেন্নাইয়ের একটি সরকারি পরীক্ষাগার যে বিষয়টি নিশ্চিত করে, তা ছিল আরও ভয়াবহ। পরীক্ষাগারে পাঠানো সিরাপের নমুনায় পাওয়া যায় ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল—একটি বিষাক্ত রাসায়নিক, যা কোনো ওষুধে থাকা নিষিদ্ধ। এই রাসায়নিক গ্রহণে সাধারণত কিডনি অকেজো হয়ে যায়।

ভয়াবহতা এখানেই শেষ নয়। পাশের রাজ্য রাজস্থানে দুই শিশুর মৃত্যু হয় স্থানীয়ভাবে তৈরি ডেক্সট্রোমেথরফ্যান সিরাপ খাওয়ার পর—যা অল্পবয়সী শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

তবে ভারতের জন্য এটি কোনো নতুন ঘটনা নয়। বিগত কয়েক বছরে ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল মেশানো কাশির সিরাপে মারা গেছে অসংখ্য শিশু। ২০২৩ সালে এমন সিরাপের কারণে গাম্বিয়ায় ৭০ শিশু এবং উজবেকিস্তানে ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৯ সালের শেষ থেকে ২০২০ সালের শুরুর মধ্যে জম্মুতে অন্তত ১২ শিশুর মৃত্যু ঘটে একই কারণে।

বিষাক্ত কাশির সিরাপের কারণে সন্তান হারান এক পিতা। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
বিষাক্ত কাশির সিরাপের কারণে সন্তান হারান এক পিতা। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

প্রতিবারই এমন দুর্ঘটনার পর দেশজুড়ে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি আসে, কিন্তু কিছুদিন পর আবারও বাজারে ফিরে আসে সেই সিরাপ। কারণ, দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এখনো দুর্বল, জটিল ও খণ্ডিত। শত শত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উৎপাদক অনুমোদন ছাড়াই বাজারে সিরাপ বিক্রি করছে, যার বড় অংশই প্রেসক্রিপশন ছাড়া সহজলভ্য।

সাম্প্রতিক মৃত্যুর পর ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসকদের সতর্ক করে জানিয়েছে, শিশুদের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ ‘যুক্তিসংগত ব্যবহার’ করতে হবে। সিরাপের নমুনা জব্দ, বিক্রি স্থগিত ও তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যা শুধু অতিরিক্ত প্রেসক্রিপশন নয়, বরং গোটা ওষুধ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার অকার্যকারিতা। মার্কেট রিসার্চ ফিউচারের হিসাবে, ভারতের কাশির সিরাপের বাজার ২০২৪ সালের ২৬২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩৫ সালে ৭৪৩ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। অর্থাৎ বছরে প্রায় ১০ শতাংশ হারে বাড়বে।

২০২৩ সালে ভারতীয় কাশির সিরাপ সেবনে গাম্বিয়ায় ৭০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ছবি: এএফপি
২০২৩ সালে ভারতীয় কাশির সিরাপ সেবনে গাম্বিয়ায় ৭০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। ছবি: এএফপি

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই বাজার বাড়বে কেন? ভারতীয়রা কি কাশির সিরাপের আসক্ত?

কাশির সিরাপকে সাধারণত ‘দ্রুত আরামদায়ক সমাধান’ হিসেবে বাজারজাত করা হয়। এগুলোতে চিনি, রং ও ঘ্রাণের সঙ্গে বিভিন্ন অ্যান্টিহিস্টামিন, ডিকনজেস্ট্যান্ট ও এক্সপেকটোরেন্ট মেশানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কেউ কফ শুষ্ক করতে, কেউ কফ ঢিলা করতে, কেউ আবার কাশি দমন করতে এই সিরাপ ব্যবহার করে। কিন্তু বাস্তবে এসব সিরাপ বেশির ভাগ সময় সামান্য আরাম ছাড়া তেমন কোনো চিকিৎসাগত ফল দেয় না।

মুম্বাইয়ের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রাজারাম ডি খারে বলেন, ‘বেশির ভাগ শিশুর কাশি হয় ভাইরাসের কারণে, যা এক সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজে সেরে যায়। কোনো সিরাপ এতে তেমন প্রভাব ফেলে না। মাঝে মাঝে ঘুমের সমস্যা হলে আমি হালকা সিরাপ দিই, শুধু আরামের জন্য।’

বায়ুদূষণ, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও কাশির সিরাপে আসক্তি

এর বড় কারণ, ভারতের প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা—বিশেষ করে ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে। দূষণ ও ধুলাবালির কারণে ক্রমবর্ধমান কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যার চিকিৎসায় এসব সিরাপ ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।

আরও বড় সমস্যা হচ্ছে, তথাকথিত গ্রামীণ চিকিৎসক বা আরএমপিরা। তাঁরা আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ ছাড়াই চিকিৎসা দেন। দেশের গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রাথমিক চিকিৎসা তাঁদের হাতেই হয়।

পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ড্রাগ এক্সিকিউটিভ দিনেশ ঠাকুর বলেন, গ্রামের মানুষ স্থানীয় দোকানদার বা তথাকথিত চিকিৎসকদের কাছেই যান, ধরে নেন, তাঁরা ফার্মাসিস্ট। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশই প্রশিক্ষণবিহীন।

শুধু গ্রাম নয়, বড় শহরেও একই প্রবণতা দেখা যায়। পার্থক্য শুধু, শহরে ওষুধের মান কিছুটা ভালো।

আরও একটি কারণ, উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের চাপ। উত্তর প্রদেশের শিশু বিশেষজ্ঞ কফিল খান বলেন, শিশুর কাশি বা ঠান্ডা কয়েক দিনে না কমলে বাবা-মায়েরা নতুন চিকিৎসক দেখেন, যিনি প্রায়শই এমন সিরাপ লিখে দেন।

কফিল খান জানান, অনেক এমডি (ডক্টর অব মেডিসিন) শিশুরোগ বিশেষজ্ঞও দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে অ্যামব্রোক্সল সিরাপ দেন, যা ফুসফুসে কফ জমিয়ে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তিনি বলেন, এটি কফ ভাঙার জন্য তৈরি, কিন্তু দুই বছরের নিচের বাচ্চারা থুতু ফেলতে পারে না, ফলে শ্লেষ্মা ফুসফুসে চলে গিয়ে নিউমোনিয়া হয়। কিন্তু তবুও এটি প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে।

তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কাশির সিরাপে কোডিন নামের একধরনের মাদক ব্যবহার করা হয়। এটি হালকা ওপিওয়েড শ্রেণির মাদক, যা উচ্চমাত্রায় নিলে উচ্ছ্বাস বা নেশার অনুভূতি দেয় এবং আসক্তির ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে বড়রা দীর্ঘদিন এই সিরাপ খেলে এতে আসক্ত হয়ে পড়েন।

তাই কাশির সিরাপের বেপরোয়া ব্যবহার বন্ধ করার জন্য ভারতে একটি স্পষ্ট নীতির প্রয়োজন। সে সঙ্গে প্রয়োজন চিকিৎসক ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভাড়াটে চোরদের নিয়ে ষাঁড় চুরি করছিলেন স্ত্রী, বাধা দেওয়ায় স্বামীকে হত্যা: পুলিশ

দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারের দায়িত্ব নিল সরকার

হাদি হত্যা মামলা: ফয়সালদের ৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েল আর ‘কখনোই গাজা ত্যাগ করবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল আর ‘কখনোই গাজা ত্যাগ করবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। সেই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে অবৈধ বসতিগুলো পুনরায় স্থাপনের ধারণার কথাও বিবেচনা করছেন। তাঁর এই মন্তব্য ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে, যা কাৎজকে তাঁর দাবি থেকে কিছুটা পিছিয়ে আসতে বাধ্য করেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে সৌদ আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাইত আল বসতিতে ১, হাজার ২০০ নতুন ঘর নির্মাণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সময় মন্ত্রী এই বক্তব্য দেন। বক্তৃতায় কাৎজ ২০০৫ সালে ইসরায়েল কর্তৃক পরিত্যক্ত উত্তর গাজার বসতিগুলো পুনর্নির্মাণের অঙ্গীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা গাজার অনেক গভীরে আছি এবং আমরা কখনোই গাজা ছেড়ে যাব না, এমন কিছু ঘটবে না।’

কাটজ আরও যোগ করেন, ‘সময় এলে, আমরা উত্তর গাজায় উচ্ছেদ হওয়া সম্প্রদায়গুলোর জায়গায় নাহাল আউটপোস্ট (সামরিক-কৃষি ফাঁড়ি) স্থাপন করব।’

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ইসরায়েল এবং ইসরায়েল-অধিকৃত উভয় অঞ্চলে দেশটির সৈন্যরা যে ধরনের সামরিক-কৃষি ফাঁড়ি স্থাপন করেছিল, মন্ত্রী মূলত সেই ধরনের আউটপোস্টের কথা উল্লেখ করছিলেন। এই আউটপোস্টগুলোর অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী বেসামরিক বসতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, গাজায় পুনরায় বসতি স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা পশ্চিম জেরুজালেমের নেই। কাৎজের এই বক্তব্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার সঙ্গেও সরাসরি সংঘাত তৈরি করে, যা যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিতে প্রবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। মার্কিন পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলোতে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি ছিটমহল থেকে প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ইসরায়েল গাজা দখল বা অ্যানেক্স (সংযুক্ত) করবে না।’

ইসরায়েলি মন্ত্রীর এই বক্তব্য বিভিন্ন মহলের সমালোচনা কুড়িয়েছে। সমালোচকরা কাৎজের বিরুদ্ধে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি ‘সঙ্কটময়’ মুহূর্তে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবজ্ঞা করার অভিযোগ তুলেছেন। সাবেক চিফ অব স্টাফ গাদি আইজেনকোট এক্সে লিখেছেন, ‘সরকার যখন এক হাতে ট্রাম্প পরিকল্পনার পক্ষে ভোট দিচ্ছে, তখন অন্য হাতে তারা গাজা উপত্যকায় বিচ্ছিন্ন বসতি স্থাপনের রূপকথা বিক্রি করছে।’

এই ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে কাৎজ তাঁর মন্তব্য থেকে কিছুটা পিছু হটেছেন। তাঁর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ‘গাজা উপত্যকায় বসতি স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই’ এবং দাবি করা হয়েছে যে, মন্তব্যগুলো ‘শুধুমাত্র নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে’ করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভাড়াটে চোরদের নিয়ে ষাঁড় চুরি করছিলেন স্ত্রী, বাধা দেওয়ায় স্বামীকে হত্যা: পুলিশ

দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারের দায়িত্ব নিল সরকার

হাদি হত্যা মামলা: ফয়সালদের ৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুরস্কে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে লিবিয়ার ‘জাতীয় ঐক্যের সরকারের’ সেনাপ্রধান নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনারেল হাদ্দাদ। ছবি: সংগৃহীত
জেনারেল হাদ্দাদ। ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার কাছে এক বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ নিহত হয়েছেন। ব্যক্তিগত জেটে করে একটি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই এই দুর্ঘটনা ঘটে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় বিমানটিতে থাকা সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আরও চারজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং তিনজন ক্রু সদস্য ছিলেন।

তুর্কি কর্মকর্তারা আল–জাজিরাকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে, যান্ত্রিক ত্রুটিকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দিবেইবাহ সেনাপ্রধান আল-হাদ্দাদ এবং অন্য চার কর্মকর্তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, প্রতিনিধি দলটি দেশে ফেরার পথে এই ‘মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’ ঘটে।

তিনি বলেন, ‘এই বিশাল ট্র্যাজেডি জাতি, সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা এমন কিছু মানুষকে হারিয়েছি যারা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে দেশের সেবা করেছেন এবং তারা শৃঙ্খলা, দায়িত্ব ও জাতীয় অঙ্গীকারের এক অনন্য উদাহরণ ছিলেন।’

আল-হাদ্দাদ ছিলেন পশ্চিম লিবিয়ার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার। ২০১১ সালে ন্যাটো সমর্থিত বিদ্রোহে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে বিভক্ত লিবিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য জাতিসংঘ-মধ্যস্থতায় চলমান প্রচেষ্টায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।

দুর্ঘটনায় নিহত অন্য চার কর্মকর্তা হলেন—লিবিয়ার পদাতিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আল-ফিতুরি ঘারিবিলা; সামরিক উৎপাদন কর্তৃপক্ষের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ আল-কাতাউই; সেনাপ্রধানের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাবি দিয়াব এবং সেনাপ্রধানের কার্যালয়ের সামরিক আলোকচিত্রী মুহাম্মদ ওমর আহমেদ মাহজুব।

ত্রিপোলিতে অবস্থিত জাতিসংঘ-স্বীকৃত ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিটি—জিএনইউ’ বা জাতীয় ঐক্যের সরকার দেশজুড়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং সব ধরনের সরকারি অনুষ্ঠান ও উদযাপন স্থগিত থাকবে।

তুর্কি কর্মকর্তাদের মতে, দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের প্রতিরক্ষা আলোচনায় অংশ নিতে লিবীয় প্রতিনিধি দলটি আঙ্কারায় ছিল।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে জানান, আল-হাদ্দাদকে বহনকারী বিমানটি স্থানীয় সময় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮ টা ১০ মিনিটে আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর প্রায় ৪০ মিনিট পর রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

তিনি বলেন, আঙ্কারার হ্যায়মানা জেলার কেসিককাভাক গ্রামের কাছে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। ইয়ারলিকায়া আরও জানান, দাসো ফ্যালকন–৫০ মডেলের জেটটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে হ্যায়মানার ওপর দিয়ে উড্ডয়নকালে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানিয়েছিল।

তুর্কি প্রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিকেশন অফিসের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান জানান, বিমানটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কথা জানিয়ে জরুরি অবতরণের অনুরোধ করেছিল। বিমানটিকে পুনরায় এসেনবোগা বিমানবন্দরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সেখানে অবতরণের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। তবে জরুরি অবতরণের জন্য নিচে নামার সময়ই বিমানটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

স্থানীয় টেলিভিশনে প্রচারিত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হ্যায়মানার রাতের আকাশে হঠাৎ একটি বিস্ফোরণের মতো আলো জ্বলে ওঠে।

তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইলমাজ তুনচ জানিয়েছেন, আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয় এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

আল–জাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে একজন তুর্কি কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে লিবীয় সেনাপ্রধানের বিমান দুর্ঘটনায় নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক কারণ হিসেবে যান্ত্রিক ত্রুটিকেই দায়ী করা হচ্ছে।’

লিবিয়ার সরকার (জিএনইউ) জানিয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্তে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করার জন্য লিবিয়া থেকে একটি দল আঙ্কারায় পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভাড়াটে চোরদের নিয়ে ষাঁড় চুরি করছিলেন স্ত্রী, বাধা দেওয়ায় স্বামীকে হত্যা: পুলিশ

দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারের দায়িত্ব নিল সরকার

হাদি হত্যা মামলা: ফয়সালদের ৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিনপন্থী প্ল্যাকার্ড হাতে এবার লন্ডনে গ্রেপ্তার গ্রেটা থুনবার্গ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে গ্রেপ্তার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে (২৩ ডিসেম্বর) লন্ডনের ফেনচার্চ স্ট্রিটে একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি মাটিতে বসে একটি প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশন বন্দীদের সমর্থন করি। আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি।’

পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেটা থুনবার্গের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডের বার্তাটি সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০০-এর ১৩ ধারায় নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থন প্রকাশের শামিল।

এর আগে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরও দুই কর্মীকে ‘অপরাধমূলক ক্ষতিসাধনের’ অভিযোগে আটক করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্স নামের ওই ভবনের সামনের অংশে লাল রং ছিটিয়ে দেন। পুলিশ জানায়, হাতুড়ি ও লাল রং ব্যবহার করে ভবনটির ক্ষতি করা হয়েছে।

‘প্রিজনার্স ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি প্রচারগোষ্ঠী জানিয়েছে, অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্সকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারক এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখাকে বিমা সেবা দিচ্ছিল। সংগঠনটি আরও জানায়, প্যালেস্টাইন অ্যাকশন-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বন্দী বর্তমানে অনশন কর্মসূচিতে রয়েছেন। মোট ৮ জন বন্দী অনশন শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে দুজন ৫২ তম দিনে পৌঁছেছেন এবং তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আশঙ্কাজনক। গুরুতর ঝুঁকির কারণে তিনজন অনশন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেটা থুনবার্গকে পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে আগামী মার্চ মাসে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। তবে অধিকারকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন—গত এক বছরে হাজারো মানুষ ‘আই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করলেও, গ্রেটার ক্ষেত্রেই কেন সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা হলো।

এদিকে অনশনরত বন্দীদের পরিবার ও সমর্থকেরা ব্রিটেনের বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, অনশন সংকট নিরসনে বৈঠক না করে সরকার নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন করছে। গ্রেটা থুনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তিসংগত এই দাবিগুলো মেনে নিলে বন্দীদের মুক্তির পথ তৈরি হবে। গণহত্যা থামাতে যারা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করছে, রাষ্ট্রের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’

উল্লেখ্য, এর আগে অ্যালিয়াঞ্জ ও অ্যাভিভা নামে দুটি বড় বিমা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখার সঙ্গে তাদের বিমা চুক্তি বাতিল করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি অস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে চাপ বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভাড়াটে চোরদের নিয়ে ষাঁড় চুরি করছিলেন স্ত্রী, বাধা দেওয়ায় স্বামীকে হত্যা: পুলিশ

দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারের দায়িত্ব নিল সরকার

হাদি হত্যা মামলা: ফয়সালদের ৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রেড স্কয়ারে কেন গায়ে আগুন দিলেন রুশ প্রতিরক্ষা কারখানার মালিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার বিখ্যাত রেড স্কয়ার। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার বিখ্যাত রেড স্কয়ার। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার ৭৫ বছর বয়সী বিজ্ঞানী ভ্লাদিমির আর্সেনেভ কেন মস্কোর রেড স্কয়ারে নিজের ওপর আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দেশটির প্রতিরক্ষা খাতের তীব্র চাপেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন আর্সেনেভ।

আর্সেনেভ মূলত মস্কো-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ভোলনা সেন্ট্রাল সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর প্রধান। এই প্রতিষ্ঠানটি এমন সব হেলমেট রেডিও কন্ট্রোল ডিভাইস উপাদান করে, যেগুলো যুদ্ধ ক্ষেত্রে ট্যাংক ক্রুরা ব্যবহার করেন।

২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের সময় আর্সেনেভের কোম্পানিতে একের পর এক প্রতিরক্ষা আদেশ আসতে থাকে। কিন্তু সেই আদেশগুলো তাঁর কাছে বিষের মতো জটিল ও বিপজ্জনক ছিল বলে জানিয়েছেন রয়টার্সকে। তাঁকে উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে হয়েছিল এবং আদেশ অনুযায়ী রেডিও ডিভাইস কন্ট্রোলগুলো রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সময়সীমা এবং মূল্যে ডেলিভারি দিতে হয়েছিল। ব্যর্থতার কোনো সুযোগ ছিল না।

এদিকে ২০২৩ সালের বসন্তে আর্সেনেভের কারখানা উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ে এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। সংস্থাটি তখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। এ অবস্থায় ২০২৪ সালে ২৬ জুলাই মস্কোর রেড স্কয়ারে যান আর্সেনেভ। ক্রেমলিনের বাইরেই সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা লেনিনের সমাধির কাছে নিজের শরীরে তিনি আগুন ধরিয়ে দেন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় পরে তিনি কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন।

আর্সেনেভ বলেন, ‘আমাদের কাজ ঠিকঠাক চলছে, আমরা আদেশ পূরণ করছি, তারপরও কেন আমরা ডুবে যাচ্ছি। সম্ভবত সমস্যা আছে।’ শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর ক্রেমলিন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আর্সেনেভের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে ওই ঘটনায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের চাপ স্পষ্ট হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় অন্তত ৩৪ জনকে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা আদেশে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ১১ জনই কোম্পানির প্রধান।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন—ক্রেমলিনের নীতি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রোস্টেকের মাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, উদ্ভাবন ও আধুনিকীকরণের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। রেডিও কন্ট্রোল ডিভাইস উৎপাদনের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল আর্সেনেভের প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা এবং সরকারের সঙ্গে মূল্য নিয়ে দর-কষাকষি কোম্পানিটিকে আর্থিক সংকটে ফেলে। একপর্যায়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অক্ষম এই প্রতিষ্ঠানটি মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পে চাপের উদাহরণ আরও দেখা যায় দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভের বক্তব্যে। ২০২৩ সালের মার্চে শিল্প নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি স্তালিনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন একটি টেলিগ্রাম পড়ে শোনান, যেখানে সময়মতো অস্ত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ কোম্পানিকে ‘গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।

চিকিৎসার মধ্যে থেকেও আর্সেনেভকে এখনো তাঁর দায়িত্ব পালন করে যেতে হচ্ছে। তবে আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণই এখন তাঁর দিনের প্রধান কাজ। এ ছাড়া রেড স্কয়ারের মতো সংবেদনশীল স্থানে অনুমোদনহীন প্রতিবাদ করার জন্য তাঁকে বিপুল পরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে।

এই ঘটনাটি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পে প্রশাসনিক চাপ, সময়সীমার বাধ্যবাধকতা, আর্থিক অস্থিতিশীলতা ও আমলাতন্ত্রের চরম বাস্তবতা তুলে ধরেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভাড়াটে চোরদের নিয়ে ষাঁড় চুরি করছিলেন স্ত্রী, বাধা দেওয়ায় স্বামীকে হত্যা: পুলিশ

দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারের দায়িত্ব নিল সরকার

হাদি হত্যা মামলা: ফয়সালদের ৮ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত