Ajker Patrika

পশ্চিমবঙ্গের ভোটার জুলাই আন্দোলনে, ভারতে বিজেপি শিবিরে হইচই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, ১৪: ৪০
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গণমাধ্যম নিউটন দাসের এই ছবি প্রকাশ করেছে। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গণমাধ্যম নিউটন দাসের এই ছবি প্রকাশ করেছে। ছবি: সংগৃহীত

আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এবার একটি নতুন বিতর্ক সামনে এসেছে, যা নিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী নিউটন দাস। অভিযোগ উঠেছে, তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশের কোটাবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের একজন নিবন্ধিত ভোটার।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গণমাধ্যম নিউটন দাসের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। ভাইরাল হওয়া এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নিউটন দাস গত জুলাই (২০২৪) মাসে ঢাকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে লাঠি হাতে পতাকা নাড়ছেন। ওই আন্দোলনই শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণ হয়েছিল। তাই বাংলার বিরোধী দল বিজেপি প্রশ্ন তুলছে—বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে একজন ব্যক্তি কীভাবে ভারতের ভোটার হতে পারেন?

নির্বাচনী তথ্য অনুযায়ী, নিউটন দাস কাকদ্বীপের একজন ভোটার, যা মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় পড়ে। ২০১৪ সাল থেকে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) প্রার্থী মন্ত্রুরাম পাখিরাকে ভোট দিয়েছিলেন, যিনি বর্তমানে কাকদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক।

নিউটন দাস বলেছেন, ২০১৭ সালে তাঁর ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তাঁকে একটি নকল কার্ড পেতে সাহায্য করেছিলেন।

বিজেপি এই ঘটনাকে ‘প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছে। দলের নেতারা বলছেন, ঢাকার বিক্ষোভে নিউটনের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকাভুক্তিতে ব্যাপক অনিয়ম রয়েছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে তুলে ধরেছেন। তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশি নাগরিকেরা জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে ভারতীয় ভোটার তালিকায় নাম ঢোকাচ্ছেন।

তবে এই বিতর্ককে ভুল-বোঝাবুঝি বলছেন নিউটন দাস। তিনি দাবি করেছেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি বানানো এবং তিনি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন শুধু সম্পত্তির উত্তরাধিকারসংক্রান্ত কিছু বিষয় সমাধান করতে। একটি ভিডিওবার্তায় তিনি বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশে ছিলাম, তবে শুধু জমিসংক্রান্ত কারণে। আমার আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। সবটাই পরিস্থিতিগত ছিল।’

কিন্তু নিউটনের বড় ভাই তপন দাস নিশ্চিত করেছেন, নিউটন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, তাঁদের বাবা-মা ভারতীয় নাগরিক ছিলেন না এবং নিউটন ‘বাংলাদেশেরও ভোটার’।

বিতর্কের আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে নিউটন দাসের সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিহাস। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সক্রিয় যোগাযোগ রয়েছে। তাঁকে কাকদ্বীপ এলাকার একজন পরিচিত যুবনেতা দেবাশীষ দাসের সঙ্গে জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে এবং কেক কাটতে দেখা গেছে।

দেবাশীষ দাস তাঁদের পরিচয় স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁরা স্কুলের বন্ধু ছিলেন এবং ২০২১ সালে তাঁদের আবার দেখা হয়। তবে তিনি নিউটনের সীমান্ত পারের কার্যকলাপ সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।

বিজেপি এই ইস্যুতে পূর্ণ উদ্যমে আক্রমণ শুরু করেছে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের কড়া সমালোচনা করে অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের মদদে পশ্চিমবঙ্গে ‘অনুপ্রবেশ শিল্প’ চলছে। সুকান্ত মজুমদার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘এটা শুধু একজন নিউটনকে নিয়ে নয়। তার মতো হাজার হাজার মানুষ আছে—যারা বাংলাদেশি নাগরিক, কিন্তু ভারতীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে এবং তৃণমূলের ধসে পড়া কাঠামোকে রক্ষা করছে।’

সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী অনুপ্রবেশকে তাঁর তোষণ রাজনীতির অংশ করে তুলেছেন। এই ধরনের ‘ভোটার’’ ও লাঠিধারী দুষ্কৃতকারীদের সমর্থনে তিনি পশ্চিমবঙ্গ শাসন করছেন না—তিনি একটি বৃহত্তর বাংলাদেশ তৈরির নকশা করছেন।

এই বিতর্ক ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী আলো রানী সরকারের অতীতের একটি ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। আলো রানী সরকার পরে একজন বাংলাদেশি নাগরিক বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন।

কাকদ্বীপের পঞ্চায়েত সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন, নিউটনের নাম ভোটার তালিকায় আছে। তবে তাঁর বাংলাদেশি পরিচয় সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানেন না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্থানীয় কর্মকর্তারা এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, নিউটনের বিরুদ্ধে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, যদিও বিজেপি বিষয়টি নিয়ে জনসমক্ষে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। সূত্রটি বলেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো তেমন কিছু নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত