Ajker Patrika

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

নিরঙ্কুশ জয়ে ফিরলেন ট্রাম্প

জাহীদ রেজা নূর, নিউইয়র্ক থেকে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরই সমর্থকদের সামনে হাজির হন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প, রানিংমেট জে ডি ভ্যান্সসহ ঘনিষ্ঠরা। গতকাল ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ কনভেনশন সেন্টারে। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরই সমর্থকদের সামনে হাজির হন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প, রানিংমেট জে ডি ভ্যান্সসহ ঘনিষ্ঠরা। গতকাল ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচ কনভেনশন সেন্টারে। ছবি: এএফপি

অনেকেই বলছিলেন এবার কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল জানতে। এত দ্রুত ফল বের হবে, কে তা ভাবতে পেরেছিল? সব হিসাব-নিকাশ আর শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফিরলেন হোয়াইট হাউসে। আইনসভার দুই কক্ষ সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদও গেল ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের হাতে। ফলে রিপাবলিকান পার্টি বলতে গেলে এবার নিজেদের মতো করে দেশ শাসন করতে পারবে। কংগ্রেসে বিল পাস করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না ট্রাম্পের।

সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৭৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করে ফেলেছেন। কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি ইলেকটোরাল ভোট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোটের প্রয়োজন। ট্রাম্পের ঝুলিতে পড়েছে ৭ কোটি ১৭ লাখের বেশি ভোট। আর কমলা পেয়েছেন ৬ কোটি ৬৬ লাখের বেশি ভোট। যদিও গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা পর্যন্ত অ্যারিজোনা, নেভাডা, আলাস্কা, মিশিগান ও মেইন অঙ্গরাজ্যের ফলাফল ঘোষণা বাকি ছিল। অবশ্য মেইন বাদে বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোয় ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন।

এদিকে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও রিপাবলিকানদের জয়জয়কার। সেখানে ৫২টি আসন রিপাবলিকানদের দখলে গেছে। ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন ৪২টি আসন। ফল ঘোষণা বাকি ছয়টির। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে অন্তত ৫০টি আসন প্রয়োজন।

প্রতিনিধি পরিষদও রিপাবলিকানদের দখলে যাবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রিপাবলিকানরা ২০৪টি আসনে জয় পেয়েছে। আর ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ১৮২টি। ৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যা-গরিষ্ঠতা পেতে একটি দলকে অন্তত ২১৮টি আসন পেতে হয়।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের পেছনে রয়েছে বাইডেন আমলে জীবনযাত্রার চড়া ব্যয়, নারীদের ভোট প্রত্যাশার চেয়ে কম পাওয়া, গাজা যুদ্ধের জন্য অনেক মুসলিম ভোট হারানো ইত্যাদি কারণ। ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়ায় অনেক মার্কিন নাগরিকই বড় বড় শহর ছেড়ে অপেক্ষাকৃত ছোট শহরের দিকে চলে যাচ্ছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাওয়া মার্কিন নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ক্ষমতার পরিবর্তন চাইছিলেন। পাশাপাশি কেউ কেউ এমনও মনে করছেন, ১৯২০ সালে জাতীয় নির্বাচনে মেয়েদের ভোটাধিকার অনুমোদন করা যুক্তরাষ্ট্র এখনো হয়তো নারী প্রেসিডেন্টের জন্য তৈরি নয়।

নির্বাচনের ফল আসতে শুরুর কিছুক্ষণ পরই কমলা হ্যারিসের পরাজয় স্পষ্ট হতে থাকে। এ সময় ভেঙে পড়েন তাঁর অনেক সমর্থক। গত মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে। ছবি: এএফপি
নির্বাচনের ফল আসতে শুরুর কিছুক্ষণ পরই কমলা হ্যারিসের পরাজয় স্পষ্ট হতে থাকে। এ সময় ভেঙে পড়েন তাঁর অনেক সমর্থক। গত মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে। ছবি: এএফপি

ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘গার্ডিয়ান’ এর মূল্যায়ন–ট্রাম্পের খামখেয়ালি ধরনের নেতৃত্বের কৌশল এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং-উনের মতো কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন রাজধানীতে সতর্কতার ঘণ্টা বাজাবে। মার্কিন দেশের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে এবার সত্যিই কতটা বা কী ধরনের পরিবর্তন আসে, সেদিকেই সবার নজর থাকবে।

গতকাল বুধবারই জার্মান গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা বলেছেন, সাধারণ মানুষ স্বল্পমেয়াদি সমস্যার কথা ভেবে ভোট দেয়, তাতে দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্বপূর্ণ সংকটের অবসান হয় না। ট্রাম্পকে ভোট দিলে তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই পরিবর্তন আনবে না, ইউরোপের জন্যও তা সংকট সৃষ্টি করবে।

জয় অনেকটাই নিশ্চিত হওয়ার পর ট্রাম্প ফ্লোরিডায় উৎফুল্ল সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমেরিকা আমাদের পক্ষে নজিরবিহীন ও জোরদার রায় দিয়েছে।... এটি হবে আমেরিকার স্বর্ণযুগ।’

৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প হতে যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বয়সে নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর আগে জো বাইডেন ৭৭ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবার ফৌজদারি অপরাধে আদালতে দোষী সাব্যস্ত প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা এখন যুদ্ধহীন দেশ দেখতে চায়। ট্রাম্পের গত মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র কোনো যুদ্ধে জড়ায়নি। যুদ্ধ মানেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার অপচয়, আর নিহত সেনার কফিনের সারি। এটা বোঝে মার্কিনরা। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে ব্যাপক সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া এবং হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান বিষয়ে অনেক মার্কিন নাগরিক নাখোশ ছিলেন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বিজয় এক চমকপ্রদ রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনেরই নজির। কংগ্রেস ভবনে নিজের সমর্থকদের হামলার কলঙ্কের কালো ছায়ার মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউস ছেড়েছিলেন তিনি। সেই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চার বছর পর মার্কিন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু সেই হোয়াইট হাউসে ফিরছেন তিনি।

ভোটের রাতে কমলা প্রথাগত ভাষণ দেবেন না—এই ঘোষণা থেকেই বোঝা গিয়েছিল ডেমোক্র্যাটদের মনোভাব। ট্রাম্পের জয়ের আভাস ক্রমেই বেশি করে স্পষ্ট হতে থাকলে নির্বাচনী কার্যালয় ছেড়ে যেতে শুরু করেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা-কর্মীরা।

ভোটের দিনের ছবি
৫ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে যখন নিউইয়র্কের রাস্তায় বের হয়েছিলাম, তখন রাস্তাঘাট ছিল বেশ সুনসান। কুইন্স ভিলেজ এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, ভোটাররা আসছেই না। লাইনে কেউ দাঁড়িয়ে নেই। তবে কিছুক্ষণ ভোটকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই দেখতে পেলাম, ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন ভোটাররা। নানা বর্ণের নানা বয়সের মানুষ তারা।

এরপর গেলাম ব্রাইটন বিচে। বহুদূরের পথ। আটলান্টিক পারের ব্রাইটন বিচ এলাকাটি মূলত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা অভিবাসী মানুষের বসতি। অনেক জরিপেই জানা গেছে, এই এলাকায় ট্রাম্পের পক্ষেই বেশি ভোট পড়বে। আর যাঁরা ইউক্রেন থেকে এসেছেন, তাঁরা ভোট দেবেন কমলা হ্যারিসকে।

বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন
ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই তাঁকে অভিনন্দন জানানো শুরু করেছেন বিশ্বনেতারা। এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন। চীন সরকার অভিনন্দন জানালেও দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সরাসরি কিছু বলেননি। আর রাশিয়া বলেছে, ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানানোর পরিকল্পনা তাদের আপাতত নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত