Ajker Patrika

ভারতীয় কাশির সিরাপে গাম্বিয়ায় ৬৬ শিশুর মৃত্যু, প্রমাণ মিলেছে দূষণের

আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ২৩: ১৯
ভারতীয় কাশির সিরাপে গাম্বিয়ায় ৬৬ শিশুর মৃত্যু, প্রমাণ মিলেছে দূষণের

কাশির সিরাপ সেবনে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় ৬৬টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসব চারটি ব্র্যান্ডের ওষুধ দেশটি আমদানি করেছে ভারতের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে।

বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে গাম্বিয়ার পুলিশ। ভারত সরকারও সন্দেহের তালিকায় থাকা চারটি ব্র্যান্ডের প্রস্তুতকারক ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, এই ঘটনায় দেশটির মেডিসিন কন্ট্রোল এজেন্সি এবং আমদানিকারকদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট অ্যাডামা ব্যারো বলেছেন, তদন্তে যেই দায়ী চিহ্নিত হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এই ঘটনা নিয়ে গাম্বিয়ার সাধারণ জনগণও ক্ষুব্ধ। তবে কে দায়ী সেটি চিহ্নিত করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

এর মধ্যে গত বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ওই চারটি ব্র্যান্ডের কাশির সিরাপ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করেছে। সিরাপগুলো গত জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে কিডনি জটিলতা এবং শিশুদের মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে জানানো হয়েছে।

সন্তান হারানো বাবা-মায়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সিরাপ সেবনের পর তাঁদের বাচ্চা প্রস্রাব করা বন্ধ করে দেয়। অবস্থা দ্রুতই খারাপ হতে থাকে। বহু চেষ্টা করেও তাঁরা সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি।

যেসব সিরাপের ব্যাপারে সন্দেহ করা হচ্ছে সেগুলো হলো—প্রোমেথাজিন ওরাল সলিউশন, কফেক্সমালিন বেবি কফ সিরাপ, মেকফ বেবি কফ সিরাপ এবং ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ। ভারতীয় কোম্পানি মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস এই সিরাপগুলো তৈরি করে। ডব্লিউএইচও বলছে, কোম্পানিটি এসব ওষুধের ব্যাপারে নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ভারত সরকারও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তবে বিবিসির পক্ষ থেকে ফার্মাটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সাড়া দেয়নি।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই নিউজকে মেইডেনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তাঁরা হতবাক এবং দুঃখিত। সংস্থাটি বলেছে, ভারতীয় স্বাস্থ্য প্রোটোকল অনুসরণ করেই তারা এই ওষুধ প্রস্তুত করেছে। তদন্তের ব্যাপারে তারা সরকারকে সহযোগিতা করছেন।

গাম্বিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং রেড ক্রস কর্মীরা এখন দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তাঁরা ফার্মেসি এবং বাজারে গিয়ে এই কোম্পানির সিরাপ এবং অন্যান্য ওষুধের সন্ধান করছেন।

রেড ক্রসের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, এ পর্যন্ত ১৬ হাজারটিরও বেশি পণ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো ধ্বংস করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

গাম্বিয়া একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ গত জুলাইয়ের শেষ নাগাদ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে তীব্র কিডনি ব্যথার সমস্যা শনাক্ত করে। এরপর ঘটনা বাড়তেই থাকে। তখন ডব্লিউএইচও সেখানে হস্তক্ষেপ আসে।

গাম্বিয়ার সরকার তখন থেকে সমস্ত প্যারাসিটামল সিরাপ ব্যবহার স্থগিত করেছে। এর পরিবর্তে ট্যাবলেট ব্যবহার করার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেছে।

সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর থেকে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তবে এরপরও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৬ শিশুর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাম্বিয়ার স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিচালক মুস্তাফা বিট্টে।

মুস্তাফা বিবিসিকে বলেছেন, ওষুধগুলো নিরাপদ কি না তা পরীক্ষা করার জন্য সক্ষম পরীক্ষাগার বর্তমানে গাম্বিয়াতে নেই। নমুনা সংগ্রহ করে তাঁরা বিদেশে পাঠিয়েছেন। একটি মান-নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার নির্মাণে অর্থায়ন পেতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলছে বলেও জানান মুস্তাফা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, যে ওষুধগুলোর নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এতে অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল এবং ইথিলিন গ্লাইকোল দূষণ রয়েছে।

এই রাসায়নিকগুলো বিষাক্ত। এগুলোর প্রভাবে পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, প্রস্রাব বন্ধ হওয়া, মাথাব্যথা, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন এবং তীব্র কিডনি ব্যথা এবং চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে মৃত্যুও হতে পারে।

গাম্বিয়ার স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিচালক মুস্তাফা বলেন, নমুনাগুলোতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ডায়রিয়া এবং বমি হতে পারে।

গত বুধবার জেনেভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস গেব্রেইসুস বলেছেন, ‘এই শিশুদের মৃত্যু তাদের পরিবারের জন্য যে কতটা হৃদয়বিদারক!’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভারতের সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন ইঙ্গিত দিয়েছে, এই ওষুধের প্রস্তুতকারক শুধু গাম্বিয়াতে সন্দেহজনক দূষিত ওষুধ সরবরাহ করেছে। জাতিসংঘের এই স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ই-মেইল উদ্ধৃত করে এ তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডব্লিউএইচও বলেছে, এই ওষুধের প্রভাব সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ ওই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি একই দূষিত উপাদান (কাঁচামাল) অন্যান্য পণ্য (ওষুধ) তৈরিতেও ব্যবহার করে থাকতে পারে। সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়েছে এবং একাধিক দেশে রপ্তানিও হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনে এক সন্তান নীতির প্রবক্তার মৃত্যু, শ্রদ্ধার চেয়ে সমালোচনাই বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৬
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

চীনে বিতর্কিত এক সন্তান নীতির প্রবক্তা পেং পেইইউনের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীতিটি ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা গেছে। গত রোববার বেইজিংয়ে ৯৬তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে পেংয়ের মৃত্যুতে চীনাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা নেতিবাচক।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং পেইইউনকে নারী ও শিশুবিষয়ক কাজে ‘একজন অসাধারণ নেতা’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি।

তবে চীনের জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইট ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হতে না পারা শিশুরা ওপারে নগ্ন দেহে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনে দম্পতিদের কেবল একটি সন্তান নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা কার্যকর করতে স্থানীয় কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণ করতে বাধ্য করতেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় বেইজিং এই এক সন্তান নীতি চালু করেছিল।

এর ফলে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ থাকার পর চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়ে এবং গত বছর টানা তৃতীয়বারের মতো জনসংখ্যা পড়তির দিকে ছিল।

ওয়েইবোতে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যদি এই নীতি অন্তত ১০ বছর আগে শেষ করা হতো, তাহলে চীনের জনসংখ্যা আজ এভাবে ধসে পড়ত না!’

গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমে ১৩৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামনের বছরগুলোতে এই নিম্নগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।

জনসংখ্যার নীতিনির্ধারক হিসেবে পেং জোর দিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকায়। একসময় চীনের গ্রামগুলোতে বড় পরিবার গড়ে তোলা দম্পতিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, যাতে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা তাঁদের দেখাশোনা করতে পারে। এ ছাড়া বংশ রক্ষার জন্য ছেলেসন্তানের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় মেয়েশিশুদের অবহেলা, এমনকি কন্যা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটত।

ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ওই শিশুগুলো যদি জন্ম নিত, তাহলে আজ তাদের বয়স প্রায় ৪০ হতো—জীবনের সেরা সময়।’

২০১০-এর দশকে এসে পেং প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান বদলান এবং বলেন, এক সন্তান নীতি শিথিল করা উচিত। বর্তমানে বেইজিং কমে যাওয়া জন্মহার বাড়াতে শিশু পরিচর্যা ভর্তুকি, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও করছাড়ের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ায় বিষ্ণুমূর্তি গুঁড়িয়ে দিল থাই সেনারা, ভারতের তীব্র নিন্দা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৫
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

কম্বোডিয়ায় হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতের জেরে থাই সেনাবাহিনী এটি ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় সম্প্রতি নির্মিত একটি হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতার ঐতিহ্যের অংশ। এই ধরনের কাজ সারা বিশ্বের অনুসারীদের মনে আঘাত দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কম্বোডিয়ার প্রেহ বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা জানান, ২০১৪ সালে নির্মিত মূর্তিটি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার সীমানায় ছিল। তিনি এই ঘটনাকে প্রাচীন ও পবিত্র স্থাপত্যের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও চলতি মাসে পুনরায় সংঘাত শুরু হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পদের বিনাশ রোধ করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত