Ajker Patrika

যে চার ক্ষেত্রে নারীরা শারীরিকভাবে পুরুষদের চেয়ে শক্তিশালী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৬: ২৭
সহনশীলতা, দ্রুত পুনরুদ্ধার, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা—এসব ক্ষেত্রেও নারীরা শারীরিকভাবে এগিয়ে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সহনশীলতা, দ্রুত পুনরুদ্ধার, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা—এসব ক্ষেত্রেও নারীরা শারীরিকভাবে এগিয়ে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

নারীর শারীরিক শক্তি নিয়ে প্রচলিত ধারণা বদলে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা পুরুষদের ছাপিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি একাধিক নারী ক্রীড়াবিদ এমন নজির স্থাপন করেছেন, যা কেবল ক্রীড়াঙ্গনের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এসব সাফল্য আমাদের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে বহু পুরোনো ধ্যানধারণার ভিতে নাড়া দিচ্ছে। এটি একধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, যা নতুনভাবে চিনিয়ে দিচ্ছে নারীর শরীর ও শক্তির প্রকৃত সক্ষমতাকে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টারা ডোয়ার অ্যাপালাচিয়ান ট্রেইল শেষ করেছেন মাত্র ৪০ দিন ১৮ ঘণ্টা ৬ মিনিটে, যা আগের রেকর্ডধারী পুরুষের চেয়ে ১৩ ঘণ্টা কম। একই বছর, অ্যারিজোনার অড্রে জিমেনেজ ইতিহাস গড়েছেন—ছেলেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই ডিভিশন-১ হাইস্কুল কুস্তি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ম্যারাথন, পাহাড়ে দৌড়, সাঁতার ও রক ক্লাইম্বিং—এসব খেলায় নারীরা নিয়মিতভাবে পুরুষদের চেয়ে ভালো করছেন।

গত বছর জাসমিন প্যারিস বিশ্বের অন্যতম কঠিন ১০০ মাইলের বার্কলে ম্যারাথন শেষ করেছেন ৬০ ঘণ্টারও কম সময়েই। একই সময়ে তিনি একজন স্তন্যদায়ী মায়ের ভূমিকাও পালন করেছেন।

এদিকে নদীপথে দীর্ঘ দূরত্ব সাঁতারে এখন নারীরা এতটাই এগিয়ে যে, তাদের কীর্তি অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে বার্বারা ‘বাবসি’ জ্যাঙ্গার্ল ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের এল ক্যাপিটান পর্বত অপ্রস্তুত অবস্থায় জয় করেছেন—এটাই প্রথমবার কেউ এমনটি করতে পেরেছেন। এই অর্জনগুলো শুধু শারীরিক নয়, সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেরও প্রতীক।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অনুশীলন বিজ্ঞানী স্ট্যাসি সিমস বলছেন, ‘৭০ বছর ঊর্ধ্ব নারীরাও এখন ডেডলিফট (ভারউত্তোলন) রেকর্ড গড়ছেন।’

সহনশীলতায় নারীর জয়

যখন ‘শক্তি’র কথা বলা হয়, তখন সাধারণত তা বোঝায় স্বল্প সময়ে সর্বোচ্চ গতি, যেখানে পুরুষদের দেহ কিছুটা এগিয়ে থাকে। তবে সহনশীলতা, দ্রুত পুনরুদ্ধার, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা—এসব ক্ষেত্রেও নারীরা শারীরিকভাবে এগিয়ে।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, প্রাচীন মানবসমাজে নারীরা শুধু গৃহস্থালি নয়, জীবনসংগ্রামের ময়দানেও ছিলেন সক্রিয়। তাঁরা নিয়মিতভাবে ভারী সামগ্রী বহন করতেন, শিকারের পেছনে হাঁটতেন এবং দৈনিক ৮ থেকে ১০ মাইল পথ অতিক্রম করতেন—অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়, পিরিয়ডের সময় বা শিশুকে কোলে নিয়েও।

অস্ট্রেলিয়ার পার্থের ইডিথ কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস বিজ্ঞান উপ-উপাচার্য সোফিয়া নিমফিয়াস বলেন, ‘নারীদের দেহ অধিক ক্লান্তি প্রতিরোধী।’

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়াম বিশেষজ্ঞ সান্দ্রা হান্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের পেশি দীর্ঘ সময় ধরে হালকা ভারে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে—যেখানে পুরুষেরা শুরুতেই শারীরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও, দীর্ঘ মেয়াদে নারীরাই এগিয়ে থাকেন। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, নারীরা শক্তির জন্য অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে চর্বি পোড়াতে পারদর্শী, যা দীর্ঘ সময় ধরে দেহকে শক্তি দেয়।

নারীদের শরীরে সাধারণত ‘স্লো-টুইচ’ মাংসপেশির পরিমাণ বেশি থাকে, যা ধীরগতির হলেও অধিক দক্ষ ও ক্লান্তিহীন। অন্যদিকে পুরুষদের দেহে ‘ফাস্ট-টুইচ’ মাংসপেশি বেশি, যা শক্তিশালী হলেও দ্রুত ক্লান্ত হয়।

দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং লড়াকু মনোভাব

নারীদের এই ধীরগতির পেশি শুধু সহনশীলতাই নয়, দ্রুত পুনরুদ্ধারের ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। ছোট আকারের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দ্রুতগতির দৌড় বা ভার উত্তোলনের পর নারীদের শরীর পুরুষদের তুলনায় দ্রুত সেরে ওঠে। ইস্ট্রোজেন হরমোন শরীরের প্রদাহ কমায় ও মাংসপেশি সারাতে সাহায্য করে—এটাই এই পার্থক্যের অন্যতম ব্যাখ্যা।

তবে, নারীরা নির্দিষ্ট কিছু ইনজুরির ঝুঁকিতে বেশি থাকেন—বিশেষ করে হাঁটু ও এসিএল ইনজুরিতে। এর পেছনে জৈবিক, হরমোনজনিত বা পুরুষদের উপযোগী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি দায়ী হতে পারে।

শারীরিক শক্তির পাশাপাশি মানসিক দৃঢ়তাও নারীর সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। স্ট্যানফোর্ডের ‘ফাস্টার’ প্রোগ্রামের পরিচালক এমিলি ক্রাউস বলেন, ‘নারীরা এমন এক মানসিক অবস্থায় যেতে পারেন, যা তাঁদের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার শক্তি দেয়।’

নারীর শরীরের চারটি অসাধারণ ক্ষমতা

১. ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা

নারীর দেহ নানা ধরনের ব্যথা সহ্য করে—পিরিয়ডের ব্যথা, সন্তান জন্মদানের যন্ত্রণা, পিঠে আঘাত বা হাড়ভাঙা যন্ত্রণা। এসব ব্যথা পরিমাপ করা কঠিন হলেও, অধিকাংশ গবেষণা একমত যে নারীরা ব্যথা পুরুষদের চেয়েও ভালোভাবে সহ্য করতে পারেন।

ক্রীড়াবিদেরা ব্যথা সহ্য করার সত্যিকারের পরিক্ষার্থী। বহু গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের তুলনায় ক্রীড়াবিদেরা ব্যথা বেশি সহ্য করতে পারেন, আর সেখানে নারী-পুরুষের তুলনায় নারী ক্রীড়াবিদদের সহ্যক্ষমতা কম নয় বরং অনেক সময় বেশি। যদিও নারীরা ব্যথা বেশি অনুভব করেন, তবু তারা তুলনামূলক ইনজুরি নিয়েও বেশি সময় ধরে খেলতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়ার পার্থের ইডিথ কোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস বিভাগের উপ-উপাচার্য সোফিয়া নিমফিয়াস বলেন, এটি আসলে জীববিজ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার মিশ্রণ। ১৯৮১ সালের একটি গবেষণায় স্পষ্ট বলা হয়, ‘নারী ক্রীড়াবিদদের ব্যথা সহ্যক্ষমতা এবং সহ্যসীমা সর্বোচ্চ।’

২. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা

মানুষসহ অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে নারীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা পুরুষের তুলনায় শক্তিশালী। এর পেছনে রয়েছে ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং নারীদের দুটি ‘এক্স’ ক্রোমোজোম, যা রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় বৈচিত্র্য ও শক্তি জোগায়।

২০০৯ সালের এক নিবন্ধে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন জীববিজ্ঞানী মার্লেন জুক লিখেছেন, ‘কে বেশি অসুস্থ হয়, এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই—প্রায় সব সময়ই তা পুরুষ।’

তবে এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। অধিক প্রতিরোধব্যবস্থার কারণে নারীরা অটোইমিউন রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এ যেন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজেদের শরীরই আঘাত পায়।

৩. স্থিতিস্থাপকতা

দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক পরিশ্রমে নারীদের শরীর কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘমেয়াদি ব্যায়ামের তথ্য অনুযায়ী, শারীরিক চাপ সামলাতে নারীর শরীর পুরুষের তুলনায় কম ক্ষয় হয়। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন ৪০ বছরের ওপরের ৩০০ জন অ্যাথলেটের রক্তনালির অবস্থা পরীক্ষা করে। এদের মধ্যে ছিলেন দীর্ঘ দৌড়বিদ, সাইক্লিস্ট, রোয়ার এবং সাঁতারু।

গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ অ্যাথলেটদের রক্তনালির বয়স বেড়ে হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে, কখনো কখনো ১০ বছর পর্যন্ত। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত ফল পাওয়া গেছে। তাদের রক্তনালি জৈবিকভাবে আরও তরুণ এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কম।

৪. দীর্ঘায়ু

মানবদেহের চূড়ান্ত পরীক্ষাই হলো জীবনকাল। আর সেখানে নারীরাই এগিয়ে। প্রায় প্রতিটি সমাজ ও প্রজাতিতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে।

এর কিছুটা ব্যাখ্যা আচরণগত। কারণ পুরুষ বেশি ঝুঁকি নেয়, নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে। তবে এটি মূলত জৈবিক। নারী রোগ, অপুষ্টি ও আঘাত থেকে পুরুষদের তুলনায় বেশি টিকে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের ওয়াই ক্রোমোজোম সময়ের সঙ্গে বেশি ক্ষয় হয়, যাকে বলা হয় ‘মোজাইক লস অব ওয়াই’। এই ক্ষয়ের সঙ্গে পুরুষদের হৃদ্‌রোগ, ক্যানসারসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি যুক্ত।

এ কারণে নারীর জীবনকাল সাধারণত পুরুষের থেকে দীর্ঘ হয়।

ঐতিহ্যগতভাবে আমরা শক্তিকে বোঝাই পুরুষের প্রাধান্যযুক্ত দক্ষতা—যেমন সর্বোচ্চ ওজন তোলা বা দ্রুততম দৌড়। অথচ যদি পরিমাপ হয় ধৈর্য, পুনরুদ্ধার, টিকে থাকার ক্ষমতা আর দীর্ঘায়ু দিয়ে—তাহলে সেই শক্তির সংজ্ঞায় নারীদেহই এগিয়ে থাকবে।

তবে এখনো নারীকে নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা পরিচালনা হয় না। তারা পুরুষের মতো প্রশিক্ষণ বা উৎসাহ পায় না। ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ক্রীড়া ও ব্যায়ামবিষয়ক গবেষণার মাত্র ৬ শতাংশ নারীর শরীর নিয়ে হয়েছে।

তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রেইনবো ডায়েট কী, সুস্বাস্থ্যের জন্য কেন দরকারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রঙিন খাবারে সাজানো প্লেট দেখতে আমাদের মন এমনিতেই খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ছবি: পেক্সেলস
রঙিন খাবারে সাজানো প্লেট দেখতে আমাদের মন এমনিতেই খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ছবি: পেক্সেলস

জীবনে রঙের অস্তিত্ব না থাকলে কেমন হতো? নির্জীব, একঘেয়ে কেমন যেন নিরানন্দ কিংবা নেই কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা। রঙিন কিছু দেখলেই আমাদের মন যেন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, খাবারের বেলায়ও এটি একই রকম সত্য।

রঙিন খাবারে সাজানো প্লেট দেখতে আমাদের মন এমনিতেই খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। খাবার দেখার ও ঘ্রাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মস্তিষ্ক হজমের প্রস্তুতির জন্য নানা সংকেত পাঠাতে শুরু করে।

তবে দেখতে সুন্দর তা ই নয়, রঙিন খাবারের প্লেট আসলে পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ বা এক শক্তিশালী ভাণ্ডার। ফলমূল ও শাকসবজিতে রঙের অস্তিত্ব জানান দেয় এসবে আছে উদ্ভিজ্জ রঞ্জক বা পিগমেন্ট— যার সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড ও অ্যান্থোসায়ানিন। এসব রঞ্জক ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট’ নামে পরিচিত।

আমাদের শরীর নিজে থেকে এসব ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট তৈরি করতে পারে না, অথচ নানা রোগ, প্রদাহ, সংক্রমণ এমনকি কিছু ধরনের ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দিতে এগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খাবারের প্রতিটি রং আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকার নিয়ে আসে চলুন জেনে নেওয়া যাক—

১. লাল রঙের খাবার: লাইকোপিনে ভরপুর

লাল রঙের ফল ও সবজিতে থাকে লাইকোপিন নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে কার্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর একটি।

রঙিন খাবারের প্লেট পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ বা এক শক্তিশালী ভাণ্ডার। ছবি: পেক্সেলস
রঙিন খাবারের প্লেট পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ বা এক শক্তিশালী ভাণ্ডার। ছবি: পেক্সেলস

যে কারণে লাল রঙের খাবার বেশি খাওয়া উচিত

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুপারস্টার: শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বা টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।

চোখের সুরক্ষা: এক গবেষণায় দেখা গেছে, লাইকোপিন চোখের ম্যাকুলা অংশের ক্ষয় ধীর করতে সাহায্য করে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক: প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে লাইকোপিন। এছাড়াও স্তন ক্যানসারের অগ্রগতিও ধীর করতে পারে।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে মস্তিষ্কের কোষকে সুরক্ষা দেয়।

হৃদ্স্বাস্থ্য: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়, যা হৃদ্রোগের বড় ঝুঁকির কারণ।

লাল রঙের খাবারের সেরা উৎস: টমেটো (রান্না করা বা ব্লেন্ড করা টমেটো সবচেয়ে বেশি কার্যকর), তরমুজ, লাল পেয়ারা, জাম্বুরা এবং লাল গাজর।

লাল রঙের ফল ও সবজিতে থাকে লাইকোপিন নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ছবি: পেক্সেলস
লাল রঙের ফল ও সবজিতে থাকে লাইকোপিন নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ছবি: পেক্সেলস

২. কমলা ও হলুদ রঙের খাবার: ত্বক, চোখ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বুস্টার

এই উজ্জ্বল রংগুলোর উৎস বিটা-ক্রিপ্টোজ্যানথিন নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ যৌগ, যা কোষের পারস্পরিক যোগাযোগ ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহায়তা করে।

উপকারিতা:

শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: বয়স দ্রুত বাড়ানো, প্রদাহ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্য দায়ী ফ্রি র‍্যাডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করে।

প্রো-ভিটামিন এ: শরীরে সহজে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়, যা চোখের দৃষ্টি ও সুস্থ ত্বকের জন্য অপরিহার্য।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ইমিউন কোষের গঠন ও কার্যকারিতা উন্নত করে। বিশেষ করে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসে, যেখানে ভিটামিন এ গ্রহণ তুলনামূলক কম হতে পারে, সেখানে এটি খুবই উপকারী।

সেরা উৎস: আম, পেঁপে, কমলা, কুমড়া, হলুদ ক্যাপসিকাম।

লাল-নীল-সবুজ রঙের পাশাপাশি ফ্যাকাশে বা বাদামি রঙের খাবারও খেতে হবে। ছবি: পেক্সেলস
লাল-নীল-সবুজ রঙের পাশাপাশি ফ্যাকাশে বা বাদামি রঙের খাবারও খেতে হবে। ছবি: পেক্সেলস

৩. সবুজ রঙের খাবার: ক্লোরোফিল ও ডিটক্সের জাদু

সবুজ খাবারের রং আসে ক্লোরোফিল থেকে। প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় সবুজ শাকসবজি শীর্ষে।

কেন সবুজ খাবার জরুরি?

বিটা-ক্যারোটিন: ধমনিতে চর্বি জমা (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস), ক্যানসার, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ও ডিএনএ ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক।

উচ্চ আঁশ (ফাইবার) : অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ভিটামিন কে ও পটাশিয়াম: রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সালফোরাফেন ও আইসোথায়োসায়ানেটস: শরীরের ডিটক্স প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে, কোলনের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

সেরা উৎস: পালং শাক, ব্রকলি, কেল, সজনে পাতা, মেথি শাক, সবুজ হার্বস, অ্যাসপ্যারাগাস, কিউই, বাঁধাকপি, অঙ্কুরিত বীজ (স্প্রাউটস) ও গ্রিন টি।

৪. নীল ও বেগুনি রঙের খাবার: অ্যান্থোসায়ানিনের শক্তি

অ্যান্থোসায়ানিন আছে এমন খাবারে এই রংগুলো থাকে। যা থেকে বুঝা যায় এ খাবারগুলো শক্তিশালী ফ্ল্যাভোনয়েড এবং প্রদাহনাশক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণে ভরপুর।

উপকারিতা:

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

হৃদ্স্বাস্থ্য: কোলেস্টেরল ও প্রদাহ কমায়, ধমনিতে প্লাক জমা রোধে সহায়ক।

মস্তিষ্কের সুরক্ষা: স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকারিতা উন্নত করে, ডিএনএ ক্ষতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা: ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ধীর বা বন্ধ করতে সহায়তা করতে পারে।

সেরা উৎস: ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, বেগুনি বাঁধাকপি, বেগুন, আঙুর, বরই, ডুমুর।

রঙিন ফলমূল ও শাকসবজিতে আছে ২ হাজারেরও বেশি উদ্ভিজ্জ রঞ্জক বা পিগমেন্ট। ছবি: পেক্সেলস
রঙিন ফলমূল ও শাকসবজিতে আছে ২ হাজারেরও বেশি উদ্ভিজ্জ রঞ্জক বা পিগমেন্ট। ছবি: পেক্সেলস

৫. সাদা ও বাদামি খাবার: নীরব চিকিৎসক

লাল-নীল-সবুজ এমন রঙিন খাবারের ভিড়ে কিন্তু ফ্যাকাশে বা বাদামি রঙের খাবারকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। কেন না এসব খাবারে রয়েছে অ্যালিসিন, কোয়ারসেটিন, ক্যাম্পফেরল মতো যৌগ। এগুলোর প্রতিটিই স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।

উপকারিতা:

অ্যালিসিন: এই উপাদানটি রসুনে থাকে। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কার্যকর, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

কোয়ারসেটিন: শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক, অ্যালার্জি এবং হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

ক্যাম্পফেরল: হৃদ্রোগ ও কিছু ধরনের ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয়।

সেরা উৎস: রসুন, পেঁয়াজ, ফুলকপি, মাশরুম ও মুলা।

আপনার প্রতিদিনের ‘রেইনবো ডায়েট’ সাজাতে পারেন যেভাবে—

১. আপনার প্লেটের অর্ধেক পূর্ণ করুন সবজি দিয়ে।

২. প্রতিদিন দুটি ফল খান।

৩. সর্বোচ্চ তাজা ও পুষ্টির জন্য মৌসুমি এবং স্থানীয় ফল ও সবজি বেছে নিন।

৪. প্রতিদিন একটি নতুন রঙের খাবার যোগ করুন।

৫. খাবার পরিকল্পনার সময় ক্যালরির পরিবর্তে রঙের দিকে মন দিন।

বিজ্ঞান বারবার প্রমাণ করেছে, যখন ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের কথা আসে, তখন সাপ্লিমেন্ট বা কৃত্রিম ওষুধের চেয়ে প্রাকৃতিক খাবার অনেক বেশি কার্যকর। প্রাকৃতিক খাবারে বিদ্যমান ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের যে সম্মিলিত শক্তি থাকে, কোনো ওষুধ বা পিল তা দিয়ে পূরণ হয় না। তাই প্রতিদিনের পুষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণে রঙকেই বেছে নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওজন কমাতে অনুপ্রেরণা ধরে রাখবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন কঠিন, সেই সিদ্ধান্তে দীর্ঘদিন অটল থাকা অনেকের ক্ষেত্রে আরও কঠিন। সঠিক অনুপ্রেরণা না থাকলে ওজন কমানো শুরু করাই কঠিন হয়ে পড়ে। আর শুরু করলেও মাঝপথে থেমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল অনুসরণ করলে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন সহজ হতে পারে।

নিজেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না ভাঙা

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া বেশ ভূমিকা রাখতে পারে। কেউ কেউ লিখিত পরিকল্পনা বা অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিদিনের লক্ষ্য ঠিক করেন। আবার কেউ জিমের সদস্যপদ বা ব্যায়াম ক্লাসে ভর্তি হয়ে নিজেকে দায়বদ্ধ করে তোলেন। এতে মাঝপথে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা কমে।

জীবনযাপনের সঙ্গে মানানসই পরিকল্পনা বেছে নেওয়া

যে ডায়েট বা ব্যায়াম পরিকল্পনা দীর্ঘদিন মেনে চলা সম্ভব নয়, তা এড়িয়ে চলা ভালো। অতিরিক্ত কঠোর নিয়ম অথবা সবকিছু একেবারে বাদ দেওয়ার মানসিকতা অনেক সময় উল্টো ফল বয়ে আনে। বরং ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ, খাবারের পরিমাণ কমানো, অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া এবং বেশি করে ফল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করার মতো অভ্যাসগুলো দীর্ঘ মেয়াদে উপকারী।

পছন্দের ব্যায়াম খোঁজা

ওজন কমাতে শারীরিক কার্যকলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে ব্যায়াম আপনার ভালো লাগে না, তা বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া কঠিন। হাঁটা, সাঁতার, নাচ, সাইক্লিং কিংবা জিম—যে ধরনের ব্যায়াম উপভোগ করেন, সেটিই বেছে নেওয়া ভালো।

যে বিষয়গুলো অনুপ্রেরণা জোগায়

ওজন কমানোর পুরো যাত্রায় শুধু শেষ লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে হতাশা আসতে পারে। তাই ছোট ছোট প্রক্রিয়াগত লক্ষ্য ঠিক করা জরুরি। যেমন সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েক দিন ব্যায়াম করা বা প্রতিটি খাবারে সবজি রাখা। এসব লক্ষ্য পূরণ হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। নিজের অগ্রগতি লিখে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। খাবার ও দৈনন্দিন অভ্যাসের হিসাব রাখলে কোথায় ভুল হচ্ছে কিংবা কোন অভ্যাস ওজন বাড়াচ্ছে, তা সহজে ধরা পড়ে।

সামাজিক সহায়তা এবং ইতিবাচক মনোভাব

পরিবার ও বন্ধুদের নিজের লক্ষ্য জানালে তারা মানসিক সমর্থন দিতে পারে। কেউ কেউ ওজন কমানোর সঙ্গী পেলে আরও অনুপ্রাণিত বোধ করে। পাশাপাশি নিজের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে কথা বলা এবং পরিবর্তনের প্রতি দৃঢ় মনোভাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

বাধা এলে যা করতে হবে

জীবনে নানা ধরনের চাপ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলে আবার সঠিক পথে ফেরা সহজ হয়। নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা না করে নিজের ভুল মেনে নেওয়া এবং নিজেকে ক্ষমা করাও অনুপ্রেরণা ধরে রাখতে সহায়ক।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাই সবচেয়ে বড় শক্তি। সবার অনুপ্রেরণার উৎস এক নয়। তাই নিজের জন্য কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে নেওয়াই হলো মূল চাবিকাঠি।

তবে ধৈর্য ধরুন, ছোট ছোট সাফল্য উদ্‌যাপন করুন

এবং প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে সংকোচ করবেন না। সঠিক পরিকল্পনা ও সমর্থন থাকলে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

সূত্র: হেলথ লাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে থাইরয়েড রোগীরা যা করবেন

ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম 
শীতে থাইরয়েড রোগীরা যা করবেন

থাইরয়েড হরমোন আমাদের গলার সামনে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একধরনের হরমোন কিংবা প্রাণরস। এটি গলার সামনে থেকে নিঃসৃত হলেও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো শরীরে কাজ করে।

হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ

  • ওজন বেড়ে যাওয়া
  • ঘুম কম হওয়া
  • শীত শীত ভাব
  • সন্তান ধারণে সমস্যা
  • বিষণ্নতা

শীতকালীন সবজি খাওয়ায় সতর্কতা

কাবেজ জাতীয় সবজি; যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুসপাতায় থাকে গয়ট্রোজেন নামে একধরনের উপাদান। এটি থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে বাধা দিয়ে থাকে। তাই যাঁদের হাইপোথাইরয়েড আছে, তাঁদের এসব সবজি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যাবে না। কিন্তু রান্না করে অল্প খাওয়া যাবে।

শীতকালে থাইরয়েড রোগীদের হরমোনের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত দুর্বল লাগে, ঠান্ডা ভাব এবং কাজের গতি ধীর হতে পারে।

শীতকালে থাইরয়েড রোগীদের করণীয়

গরম থাকার চেষ্টা করুন: জ্যাকেট কিংবা কম্বল ইত্যাদির মতো গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। গরম খাবার বেশি খেতে হবে; যেমন স্যুপ কিংবা চা।

ভিটামিন ‘ডি’ বাড়ান: সকাল ৯ থেকে ১০টার দিকে রোদে থাকার চেষ্টা করুন। ভিটামিন ‘ডি’ লেভেল বেশি কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।

খাদ্যাভ্যাস: পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ভিটামিন ‘সি ও বি’ সমৃদ্ধ এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।

মন নিয়ন্ত্রণ করুন: মুড সুইং খুবই সাধারণ বিষয় থাইরয়েড রোগীদের জন্য। তাই নিজের মন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন, কর্মঠ থাকুন, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। প্রয়োজনে লাইট থেরাপি নিতে পারেন।

শীতে থাইরয়েড রোগীদের ত্বকের যত্ন

থাইরয়েড রোগীদের ত্বক স্বভাবতই শুষ্ক থাকে। শীতকালে তা আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে। তাই শীতকালে গোসলের পর ময়শ্চারাইজার, লোশন কিংবা ক্রিম নিয়মিত ব্যবহার করুন। ত্বকে চুলকানি অথবা র‍্যাশ থাকলে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

নিয়মিত ফলোআপ

৩ থেকে ৬ মাস পরপর আপনার হরমোন ও থাইরয়েড, বিশেষত এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের মাত্রা কম কিংবা বেশি করা যাবে না।

এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল, কাকরাইল, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সবজির পুষ্টিগুণ পাওয়ার সঠিক উপায়

মো. ইকবাল হোসেন
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুষম খাবারের ৬টি উপাদানের অন্যতম ভিটামিন ও খনিজ লবণ। এগুলো আমাদের শরীরের চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। শরীরের একেকটি অঙ্গের সুরক্ষায় একেক ধরনের ভিটামিন প্রয়োজন হয়। যেমন চুল ও চোখের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘এ’, ত্বকের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘বি’ ও ‘সি’, হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ডি’ প্রয়োজন হয়। আবার ত্বক, চুল ও প্রজননতন্ত্রের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ই’-এর ভূমিকা অনেক বেশি। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন রকমের পেশি এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায় খনিজ লবণের ভূমিকা অনেক বেশি।

এই ভিটামিন ও খনিজ লবণগুলো আমরা প্রধানত শাকসবজি ও ফলমূল থেকে পেয়ে থাকি। কিন্তু কিছু অসাবধানতার ফলে শাকসবজি ও ফলমূলের পুষ্টির একটা বড় অংশ হারিয়ে যায়।

শাকসবজি কাটার পরে ধোয়া

আমরা ঐতিহ্যগতভাবে শাকসবজি কাটার পর পানি দিয়ে কয়েকবার ধুয়ে থাকি। এতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ‘বি ও সি’ পানির সঙ্গে মিশে শাকসবজির বাইরে চলে যায়। ফলে আমরা ওই শাকসবজি থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাই না। তাই সেগুলো কাটা বা খোসা ছাড়ানোর আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এতে ময়লা পরিষ্কারের পাশাপাশি সব পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকবে। শাকসবজি কাটার আগে বঁটি, ছুরি বা গ্রেটারও খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

অনেক সময় ধরে রান্না করা

শাকসবজি রান্নার নামে দীর্ঘ সময় আগুনের তাপে রাখা যাবে না। অল্প তাপেই শাকসবজিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মারা যায়। এগুলো যত কম সময় সেদ্ধ করা হবে, তত বেশি পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকবে। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করলে শাকসবজির প্রায় ৫০ শতাংশ পটাশিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এটি শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় খনিজ। ফলে অল্প আঁচে ভাপানো শাকসবজি খাওয়া ভালো।

শাকসবজির রং বজায় রাখুন

প্রতিটি শাকসবজির নিজস্ব রং বজায় রেখে রান্না করলে তার পুষ্টিগুণ বেশি বজায় থাকবে। যেমন গাজর রান্নার পর লাল রং, শিম রান্নার পর সবুজ রং কিংবা ফুলকপির সাদা রং বজায় থাকতে হবে। রান্না করতে গিয়ে শাকসবজির রং যত নষ্ট হবে, তার পুষ্টিগুণ তত বেশি নষ্ট হবে।

কাটার পর দ্রুত রান্না করুন

অনেক সময় রাতে শাকসবজি কেটে রেখে দেওয়া হয় সকালে রান্না করার জন্য। অথবা সকালে কেটে রাখি দুপুরে রান্না করার জন্য। এভাবে দীর্ঘ সময় কেটে রেখে দিলে শাকসবজির কাটা অংশ বাতাসের সংস্পর্শে এসে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুষ্টিগুণ নষ্ট করে। এভাবে কেটে রাখা শাকসবজিতে বিষক্রিয়াও হতে পারে। তাই এর সঠিক পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে রাতে কেটে না রেখে রান্নার আগে কেটে দ্রুত রান্না করুন।

ধারালো বঁটি বা ছুরি ব্যবহার করুন

শাকসবজি কাটার কাজে ধারালো বঁটি অথবা ছুরি ব্যবহার করতে হবে। ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে এগুলো কাটার পর অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে কেটে রাখা শাকসবজিতে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে।

বড় টুকরা করে কাটুন

সবজি ছোট টুকরা করে না কেটে যথাসম্ভব বড় টুকরা করে কাটবেন। ছোট টুকরা করে কাটলে তাপে বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। কিন্তু টুকরা বড় রাখলে বেশি তাপে রান্নায়ও ভেতরের পুষ্টিগুণ সহজে নষ্ট হয় না।

খোসাসহ রান্না করতে হবে

গাজর, পটোল, লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়ার মতো সবজিগুলো খোসাসহ রান্না করতে হবে। এসব সবজির খোসায়ও অনেক ভিটামিন ও মিনারেল থাকে।

ভাজা ভাজা করবেন না

শাকসবজি ভাজা ভাজা না করে রান্না করে খেলে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। প্রথমত ভাজা করতে হলে খুব ছোট টুকরা করে কাটতে হয়। দ্বিতীয়ত ভাজি করতে হলে দীর্ঘ সময় তাপে রাখতে হয়। এই দুটি বিষয় শাকসবজির পুষ্টিগুণ অনেক কমিয়ে দেয়। তাই এগুলো ঝোল করে রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত