আলমগীর আলম
আধুনিক সমাজে আমাদের একধরনের ব্যস্ততা আছে, তাড়া আছে। কোনো কিছুতেই যেন সময় হয়ে উঠছে না আমাদের। প্রতিদিন রান্না করার বিষয়টিও সেই সময়সংকটের মধ্যে পড়েছে। ফলে এখন এক দিনেই বেশি রান্নার পর একাধিক দিন গরম করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। অথচ রান্না করা খাবার পুনরায় গরম করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এগুলো প্রধানত নির্ভর করে খাবারের ধরন, সংরক্ষণের পদ্ধতি এবং পুনরায় গরম করার ওপর।
খাবার পুনরায় গরম করলে কী হতে পারে
রান্না করা খাবার পুনরায় গরম করে খেলে প্রথমে যে ক্ষতিটা হয়, তা হলো পুষ্টিগুণের হেরফের। ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (যেমন বি১, বি১২) এবং কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বারবার গরম করলে নষ্ট হতে পারে। খাবারগুলোর প্রোটিনের গঠন বদলে যেতে পারে। ফলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
» পালংশাক ও সবুজ শাকসবজিতে উচ্চমাত্রার নাইট্রেট থাকে। এগুলো পুনরায় গরম করলে নাইট্রাইট ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর নাইট্রোসামাইনসে রূপান্তর হতে পারে। এটি বিশেষত শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
» রান্নার পর আলু ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দিলে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম নামের ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যেতে পারে। এগুলো খাবারে মারাত্মক বিষ তৈরি করে। গরম করার পরও এই টক্সিন নষ্ট হয় না।
» মুরগির মাংস সঠিকভাবে গরম না করলে সালমোনেলা বা ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে পারে। বারবার গরম করলে ডেঞ্জার জোন এসব তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বাড়ে।
» বারবার গরম করলে ডিমের প্রোটিন শক্ত হয়ে হজমে অসুবিধা তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া ডিম দিয়ে তৈরি খাবার ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া বাড়ে।
» অলিভ অয়েলের মতো কম স্মোক পয়েন্টযুক্ত তেলে রান্না করা খাবার পুনরায় গরম করলে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালস ও অক্সিডাইজড যৌগ তৈরি হতে পারে। এগুলো শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে।
» পালংশাক কিংবা মেথির মতো উচ্চ নাইট্রেটযুক্ত শাকসবজি পুনরায় গরম করলে নাইট্রাইটে রূপান্তরিত হতে পারে। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের কার্যকারিতা কমতে পারে।
» পুনরায় বেশি গরম করে খাওয়া খাবার হলো ভাত। এটি অনেকক্ষণ রেখে দিলে ব্যাসিলাস সেরিয়াস ব্যাকটেরিয়া বাড়তে পারে। গরম করলেও এটি ধ্বংস হয় না। এর ফলে বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে।
» তেল বা চর্বিযুক্ত যেকোনো খাবার বারবার গরম করলে অক্সিডাইজড ফ্যাট তৈরি হয়। এটি হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
খাবার ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে অর্থাৎ, ফ্রিজে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না রাখলে সালমোনেলা এবং ই. কোলাইয়ের মতো ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করে। খাবার পুনরায় গরম করলে কিছু ব্যাকটেরিয়া মরলেও তাদের টক্সিন থেকে যেতে পারে, যা পেটের সমস্যা তৈরি করে। প্লাস্টিকের পাত্রে মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করলে বিপিএ বা ফথালেটের মতো রাসায়নিক খাবারে মিশতে পারে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বারবার গরম করলে খাবারের আর্দ্রতা কমে যায়, স্বাদ নষ্ট হয় বা টেক্সচার শক্ত ও শুষ্ক হয়ে যায়।
সুরক্ষার উপায়
» খাবার রান্নার দুই ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজে রাখা খাবার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
» বারবার গরম করা এড়ানোর জন্য খাবার একবারই গরম করুন।
» ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খাবার গরম করুন, যাতে ব্যাকটেরিয়া মরে যায়।
» মাইক্রোওয়েভে কাচ বা সিরামিকের পাত্র ব্যবহার করুন।
» ঝুঁকিপূর্ণ খাবারের বিষয়ে সচেতন হোন। পালংশাক, মাশরুম, ডিম বা সামুদ্রিক খাবার সতর্কতার সঙ্গে গরম করুন।
নিরাপদ ও ভালো খাবার খাওয়ার উপায় হলো প্রয়োজনীয় পরিমাণে রান্না করা, যাতে সেগুলো পুনরায় গরম করে খেতে না হয়। পুষ্টি চাহিদা পূরণে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন রান্না করে খেয়ে ফেলা। বিশেষ করে শিশুদের পেটের অবস্থা অনেক বেশি সংবেদনশীল। ফলে শিশুদের পেটের সমস্যা এখন সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। এটি তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পুষ্টিহীনতা তৈরি করে। তাই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস বাদ দিয়ে নিজের পরিবারের সবার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন।
পরামর্শ দিয়েছেন: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
আধুনিক সমাজে আমাদের একধরনের ব্যস্ততা আছে, তাড়া আছে। কোনো কিছুতেই যেন সময় হয়ে উঠছে না আমাদের। প্রতিদিন রান্না করার বিষয়টিও সেই সময়সংকটের মধ্যে পড়েছে। ফলে এখন এক দিনেই বেশি রান্নার পর একাধিক দিন গরম করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। অথচ রান্না করা খাবার পুনরায় গরম করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এগুলো প্রধানত নির্ভর করে খাবারের ধরন, সংরক্ষণের পদ্ধতি এবং পুনরায় গরম করার ওপর।
খাবার পুনরায় গরম করলে কী হতে পারে
রান্না করা খাবার পুনরায় গরম করে খেলে প্রথমে যে ক্ষতিটা হয়, তা হলো পুষ্টিগুণের হেরফের। ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (যেমন বি১, বি১২) এবং কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বারবার গরম করলে নষ্ট হতে পারে। খাবারগুলোর প্রোটিনের গঠন বদলে যেতে পারে। ফলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
» পালংশাক ও সবুজ শাকসবজিতে উচ্চমাত্রার নাইট্রেট থাকে। এগুলো পুনরায় গরম করলে নাইট্রাইট ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর নাইট্রোসামাইনসে রূপান্তর হতে পারে। এটি বিশেষত শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
» রান্নার পর আলু ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দিলে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম নামের ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যেতে পারে। এগুলো খাবারে মারাত্মক বিষ তৈরি করে। গরম করার পরও এই টক্সিন নষ্ট হয় না।
» মুরগির মাংস সঠিকভাবে গরম না করলে সালমোনেলা বা ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে পারে। বারবার গরম করলে ডেঞ্জার জোন এসব তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বাড়ে।
» বারবার গরম করলে ডিমের প্রোটিন শক্ত হয়ে হজমে অসুবিধা তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া ডিম দিয়ে তৈরি খাবার ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া বাড়ে।
» অলিভ অয়েলের মতো কম স্মোক পয়েন্টযুক্ত তেলে রান্না করা খাবার পুনরায় গরম করলে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালস ও অক্সিডাইজড যৌগ তৈরি হতে পারে। এগুলো শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে।
» পালংশাক কিংবা মেথির মতো উচ্চ নাইট্রেটযুক্ত শাকসবজি পুনরায় গরম করলে নাইট্রাইটে রূপান্তরিত হতে পারে। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের কার্যকারিতা কমতে পারে।
» পুনরায় বেশি গরম করে খাওয়া খাবার হলো ভাত। এটি অনেকক্ষণ রেখে দিলে ব্যাসিলাস সেরিয়াস ব্যাকটেরিয়া বাড়তে পারে। গরম করলেও এটি ধ্বংস হয় না। এর ফলে বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে।
» তেল বা চর্বিযুক্ত যেকোনো খাবার বারবার গরম করলে অক্সিডাইজড ফ্যাট তৈরি হয়। এটি হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
খাবার ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে অর্থাৎ, ফ্রিজে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না রাখলে সালমোনেলা এবং ই. কোলাইয়ের মতো ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করে। খাবার পুনরায় গরম করলে কিছু ব্যাকটেরিয়া মরলেও তাদের টক্সিন থেকে যেতে পারে, যা পেটের সমস্যা তৈরি করে। প্লাস্টিকের পাত্রে মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করলে বিপিএ বা ফথালেটের মতো রাসায়নিক খাবারে মিশতে পারে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বারবার গরম করলে খাবারের আর্দ্রতা কমে যায়, স্বাদ নষ্ট হয় বা টেক্সচার শক্ত ও শুষ্ক হয়ে যায়।
সুরক্ষার উপায়
» খাবার রান্নার দুই ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজে রাখা খাবার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
» বারবার গরম করা এড়ানোর জন্য খাবার একবারই গরম করুন।
» ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খাবার গরম করুন, যাতে ব্যাকটেরিয়া মরে যায়।
» মাইক্রোওয়েভে কাচ বা সিরামিকের পাত্র ব্যবহার করুন।
» ঝুঁকিপূর্ণ খাবারের বিষয়ে সচেতন হোন। পালংশাক, মাশরুম, ডিম বা সামুদ্রিক খাবার সতর্কতার সঙ্গে গরম করুন।
নিরাপদ ও ভালো খাবার খাওয়ার উপায় হলো প্রয়োজনীয় পরিমাণে রান্না করা, যাতে সেগুলো পুনরায় গরম করে খেতে না হয়। পুষ্টি চাহিদা পূরণে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন রান্না করে খেয়ে ফেলা। বিশেষ করে শিশুদের পেটের অবস্থা অনেক বেশি সংবেদনশীল। ফলে শিশুদের পেটের সমস্যা এখন সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। এটি তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পুষ্টিহীনতা তৈরি করে। তাই অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস বাদ দিয়ে নিজের পরিবারের সবার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন।
পরামর্শ দিয়েছেন: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
প্রিয়জনকে হারানোর মতো মানসিক ধাক্কা বা বড় কোনো দুঃসংবাদ পাওয়ার পর অনেকেই বুক ধড়ফড়ানি ও শ্বাসকষ্টে ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি ‘ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম’ বা টাকোৎসুবো কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামে পরিচিত।
১ দিন আগেযুগ পাল্টেছে, বদলেছে আমাদের চারপাশের সবকিছু—বাড়ি হয়েছে বিশাল, টিভির পর্দা হয়েছে চওড়া, গাড়ি হয়েছে ভারী। তবে এই ‘বড়’ হওয়ার হাওয়ায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাবারের পরিমাণ এবং আমাদের কোমরের মাপও।
২ দিন আগেশুঁটকির নমুনায় মিলেছে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান। একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
২ দিন আগেসহকারী অধ্যাপক পদে সুপারনিউমারারি পদোন্নতির হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভুক্তের পরেও ৩৩তম বিসিএসের স্বাস্থ্য ক্যাডারের (বিসিএস) দেড় হাজারের অধিক চিকিৎসককে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘোষিত সুপারনিউমারারি পদোন্নতিতে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
৩ দিন আগে