ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত বাংলা সাহিত্যের মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রাচীনতম শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কবিতার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ‘স্যাকুলার শিক্ষাব্যবস্থায় নবম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে কবি শাহ মুহাম্মদ সগীরের “বন্দনা” কবিতার প্রথম দুই লাইন বাদ দিয়ে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কবিতাটির প্রথম দুই লাইন, “প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার।”’
ফেসবুকে ভাইরাল এমন একটি পোস্ট শেয়ার করেছে ‘Tasbeeh’ নামের ১ লাখ ৫৬ হাজার ফলোয়ারের একটি পেজ। পোস্টটি শেয়ার করে পেজটি লেখা হয়েছে, ‘কী ভয়ংকর প্রতারণা! বর্তমানে পাঠ্যপুস্তক ভারত থেকে ছাপানো হয়। আমি ছেলেবেলায় কবিতাটা যেভাবে পড়েছি, সেটার প্রথম দুই লাইন ওরা কেটে দিয়েছে।’
‘বাঁশের কেল্লা’ নামের আরেকটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘বন্দনা’ কবিতার পাঠ্যবইয়ের ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘কবিতার প্রথম দুই লাইন গেল কোথায়? প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার।।’
দাবিটি যেভাবে ছড়াল
দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে ফেসবুকে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ‘নূরে আলম মাসুদ’ নামের একটি পেজে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। গতকাল শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ৪৩ মিনিটে পেজটিতে শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কবিতার পাঠ্যবইয়ের ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘ক্লাস নাইন টেন–এর বাংলা বই। ছোটবেলায় আমরাও এটা পড়েছি। আমরা ভাবতাম, কবিতা শুরুই হয়েছে বোধ হয় “দ্বিতীয়ে প্রণাম করো” এই কথা দিয়ে। কিন্তু একদিন ভাবলাম, দ্বিতীয়তে যদি বাবা–মাকে প্রণাম করতে হয়, তাহলে প্রথমে কাকে প্রণাম করতে হবে? কবি সেইটা লেখে নাই কেন? আসলে কবি লিখেছে, “প্রথমে প্রণাম করি এক করতার (স্রষ্টা)। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার।।” কিন্তু পাঠ্যক্রমকে সেক্যুলারাইজ করার অংশ হিসেবে আল্লাহকে সেজদা করার কথাটা বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা ঘটেছে বহুযুগ আগেই। ঠিক কত বছর আগে, কার হাত দিয়ে, তা অবশ্য জানি না।’
তবে পেজটি থেকে আজ শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পোস্টটি সম্পাদনা করে লেখা হয়, ‘ক্লাস নাইন টেনের বাংলা বই। ছোটবেলায় আমরাও এটা পড়েছি। আমরা ভাবতাম, কবিতা শুরুই হয়েছে বোধহয় “দ্বিতীয়ে প্রণাম করো” এই কথা দিয়ে। কিন্তু একদিন ভাবলাম, দ্বিতীয়তে যদি বাবা–মাকে প্রণাম করতে হয়, তাহলে প্রথমে কাকে প্রণাম করতে হবে? কবি সেইটা লেখে নাই কেন? আসলে কবি লিখেছে, “প্রথমে প্রণাম করো পরবর্দিগার (পরওয়ারদিগার)। যে আল্লা বকশিন্দা খোদা করিম ছত্তার।।” এটা হলো কবিতার প্রথম সেকশন “আল্লাহ ও রসুল বন্দনা” থেকে। দ্বিতীয় সেকশন হলো, “মাতাপিতা ও গুরুজন বন্দনা।” কিন্তু পাঠ্যক্রমকে সেক্যুলারাইজ করার অংশ হিসেবে “আল্লাহ ও রসুল বন্দনা” গোটা সেকশনটাই বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।’
অর্থাৎ নূরে আলম মাসুদ নামের পেজটি প্রথমে দাবি করে, ‘বন্দনা’ কবিতাটির প্রথম দুই লাইন ‘প্রথমে প্রণাম করি এক করতার (স্রষ্টা)। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার।’ পরে এই দাবি সংশোধন করে লেখা হয় এই দুই লাইন নয়, ‘বন্দনা’ কবিতার প্রথম অংশ— ‘প্রথমে প্রণাম করো পরবর্দিগার (পরওয়ারদিগার)। যে আল্লা বকশিন্দা খোদা করিম ছত্তার।’ ...পাঠ্যক্রমকে ‘সেক্যুলারাইজ’ করার অংশ হিসেবে এটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
আসলে কী ছিল পাঠ্যপুস্তকে?
দাবিগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে নবম–দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক খুঁজে দেখে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পৃষ্ঠাটিতে বইয়ের সংস্করণ উল্লেখ আছে ২০২১। এই সূত্রে এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে ২০২১ সালের নবম–দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাংলা সাহিত্য বইটি বের করা হয়। বইটির ১৮৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কবি শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কবিতাটি আছে। বইয়ের ছবির সঙ্গে ফেসবুকে ভাইরাল পৃষ্ঠার মিল আছে। অর্থাৎ কবিতাটি মা–বাবাকে প্রণাম করতে বলার মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
কবিতাটির পাঠ পরিচিতিতে বলা আছে, শাহ মুহম্মদ সগীরের ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্যের ‘বন্দনা’ পর্ব থেকে গৃহীত এই কবিতাংশ ‘বন্দনা’ নামে সংকলিত হয়েছে। ‘বন্দনা’ পর্ব যথেষ্ট বড়, এখানে শুধু গুরুজনদের প্রতি ‘বন্দনা’র অংশটুকু স্থান পেয়েছে। কবি তাঁর মূল কাব্যের প্রারম্ভে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রশংসা করেছেন। সংকলিত এই কবিতাংশে জন্মদাতা পিতা–মাতার ও জ্ঞানদাতা শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। পিতামাতা অশেষ দুঃখ কষ্ট স্বীকার করে পরম যত্নে সন্তানকে বড় করে তোলেন। শিক্ষক জ্ঞানদান করে তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। তাই তাঁদের প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। কবি তাঁর কাব্য রচনায় সাফল্য লাভের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক সম্পাদিত শাহ মুহম্মদ সগীর বিরচিত ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্য থেকে পাঠ্যপুস্তকে পাঠ পরিচিতির এই তথ্যের সত্যতা রয়েছে। বইটির ১১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ইউসুফ জোলেখা কবিতাটি পাওয়া যায়। কবিতাটির ‘বন্দনা’ পর্ব তিনটি অংশে বিভক্ত। প্রথম পর্বে আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) বন্দনা করা হয়েছে, এখানে পঙক্তি আছে ৩৬টি। দ্বিতীয় পর্বে মা–বাবা ও গুরুজনের বন্দনা করা হয়েছে এবং তৃতীয় পর্বে রাজ প্রশস্তি বা রাজার প্রশংসা করা হয়েছে। এই দুই পর্বের মোট পঙক্তি ৪২টি।
বইয়ে কবিতাটির পরেই মহাকবি আলাওলের ‘হামদ’ কবিতাটি আছে। কবিতাটি কবি আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যের শুরুতে মহান আল্লাহর প্রশংসাসূচক পংক্তি রয়েছে। ‘হামদ’ কবিতাটির শুরুর লাইনগুলো হলো, ‘বিছমিল্লা প্রভুর নাম আরম্ভ প্রথম। আদ্যমূল শির সেই শোভিত উত্তম॥ প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভু জীবদানে স্থাপিল সংসার।’
নতুন পাঠ্যক্রমে ‘বন্দনা’ কবিতাটি নেই
ফেসবুকের পোস্টগুলোতে প্রচারিত দাবির সূত্রে এনসিটিবির ২০২৪ সালের নতুন পাঠ্যক্রমের নবম শ্রেণির বাংলা বইটিতে ‘বন্দনা’ কবিতাটি আছে কি না খুঁজে দেখা হয়। ২০২৩ সাল থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ১ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হয়। ২০২৪ সাল থেকে ২য়, ৩য়, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এতে দেখা যায়, নবম শ্রেণির বাংলা বইয়ে মোট ৭টি কবিতা আছে। এই কবিতাগুলোর মধ্যে ‘বন্দনা’ কবিতাটি নেই। এ ছাড়া অন্যান্য শ্রেণির বাংলা বইয়েও কবিতাটি পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কবিতাটি পুরোনো পাঠ্যপুস্তকে ছিল। বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রমের বাংলা বইয়ে কবিতাটি নেই।
বাদ দেওয়া হয়েছে দাবিকৃত অংশটি কোন কবিতার?
জাতীয় শিক্ষক বাতায়নের ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ‘প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার’ লাইন দুটি শাহ মুহাম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ কবিতার বলে দাবি করা হয়েছে। যেমন, ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক বাতায়নে কবিতাটি নিয়ে একটি কনটেন্ট পোস্ট করেন সহকারী শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম প্রধান। ওই পোস্টে তিনি পংক্তিগুলোকে ‘বন্দনা’ কবিতার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন।
২০২১ সালের নবম–দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক সূত্রে জানা যায়, ‘প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার’ লাইন দুটি মহাকবি আলাওলের ‘হামদ’ কবিতার অংশ। কবিতাটি আলাওলের পদ্মাবতী কাব্য থেকে নেওয়া।
তথ্যটির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে বাংলা ১৩৩৮ সালে প্রকাশিত পদ্মাবতী বইটি খুঁজে পাওয়া যায়। বইটি ছাপা ও প্রকাশ হয় হবিবী প্রেস থেকে। বইটির শুরুতেই ‘হামদো খোদা’ কবিতার শুরুতেই ‘বিছমিল্লা প্রভুর নাম আরম্ভ প্রথমে। আদ্য মুল শ্রীর সেই শোভিত উত্তমে। প্রথমে প্রণাম করি এক করতার॥ যেই প্রভু জীবদানে স্থাপিল সংসার’ পংক্তিগুলো আছে। অপরদিকে শাহ মুহাম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ কবিতা শুরু হয়েছে ‘প্রথম প্রণাম করোঁ পরবর্দিগার। যে আল্লা বকশিন্দা খোদা করিম ছত্তার’ পংক্তি দিয়ে।
অর্থাৎ ‘প্রথমে প্রণাম করি এক করতার॥ যেই প্রভু জীবদানে স্থাপিল সংসার’ পংক্তি দুটি কবি আলাওলের। আর আগের পাঠ্যপুস্তকে শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কাব্যের অংশ বিশেষ থেকে আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) বন্দনার অংশটি বাদ দেওয়ার তথ্যও সঠিক নয়। বরং কবিতার মাঝের অংশ বিশেষ পাঠপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পাঠ পরিচিতিতে স্পষ্ট করা হয়েছে।
পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত বাংলা সাহিত্যের মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রাচীনতম শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কবিতার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ‘স্যাকুলার শিক্ষাব্যবস্থায় নবম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে কবি শাহ মুহাম্মদ সগীরের “বন্দনা” কবিতার প্রথম দুই লাইন বাদ দিয়ে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কবিতাটির প্রথম দুই লাইন, “প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার।”’
ফেসবুকে ভাইরাল এমন একটি পোস্ট শেয়ার করেছে ‘Tasbeeh’ নামের ১ লাখ ৫৬ হাজার ফলোয়ারের একটি পেজ। পোস্টটি শেয়ার করে পেজটি লেখা হয়েছে, ‘কী ভয়ংকর প্রতারণা! বর্তমানে পাঠ্যপুস্তক ভারত থেকে ছাপানো হয়। আমি ছেলেবেলায় কবিতাটা যেভাবে পড়েছি, সেটার প্রথম দুই লাইন ওরা কেটে দিয়েছে।’
‘বাঁশের কেল্লা’ নামের আরেকটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘বন্দনা’ কবিতার পাঠ্যবইয়ের ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘কবিতার প্রথম দুই লাইন গেল কোথায়? প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার।।’
দাবিটি যেভাবে ছড়াল
দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে ফেসবুকে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ‘নূরে আলম মাসুদ’ নামের একটি পেজে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। গতকাল শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ৪৩ মিনিটে পেজটিতে শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কবিতার পাঠ্যবইয়ের ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘ক্লাস নাইন টেন–এর বাংলা বই। ছোটবেলায় আমরাও এটা পড়েছি। আমরা ভাবতাম, কবিতা শুরুই হয়েছে বোধ হয় “দ্বিতীয়ে প্রণাম করো” এই কথা দিয়ে। কিন্তু একদিন ভাবলাম, দ্বিতীয়তে যদি বাবা–মাকে প্রণাম করতে হয়, তাহলে প্রথমে কাকে প্রণাম করতে হবে? কবি সেইটা লেখে নাই কেন? আসলে কবি লিখেছে, “প্রথমে প্রণাম করি এক করতার (স্রষ্টা)। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার।।” কিন্তু পাঠ্যক্রমকে সেক্যুলারাইজ করার অংশ হিসেবে আল্লাহকে সেজদা করার কথাটা বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা ঘটেছে বহুযুগ আগেই। ঠিক কত বছর আগে, কার হাত দিয়ে, তা অবশ্য জানি না।’
তবে পেজটি থেকে আজ শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পোস্টটি সম্পাদনা করে লেখা হয়, ‘ক্লাস নাইন টেনের বাংলা বই। ছোটবেলায় আমরাও এটা পড়েছি। আমরা ভাবতাম, কবিতা শুরুই হয়েছে বোধহয় “দ্বিতীয়ে প্রণাম করো” এই কথা দিয়ে। কিন্তু একদিন ভাবলাম, দ্বিতীয়তে যদি বাবা–মাকে প্রণাম করতে হয়, তাহলে প্রথমে কাকে প্রণাম করতে হবে? কবি সেইটা লেখে নাই কেন? আসলে কবি লিখেছে, “প্রথমে প্রণাম করো পরবর্দিগার (পরওয়ারদিগার)। যে আল্লা বকশিন্দা খোদা করিম ছত্তার।।” এটা হলো কবিতার প্রথম সেকশন “আল্লাহ ও রসুল বন্দনা” থেকে। দ্বিতীয় সেকশন হলো, “মাতাপিতা ও গুরুজন বন্দনা।” কিন্তু পাঠ্যক্রমকে সেক্যুলারাইজ করার অংশ হিসেবে “আল্লাহ ও রসুল বন্দনা” গোটা সেকশনটাই বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।’
অর্থাৎ নূরে আলম মাসুদ নামের পেজটি প্রথমে দাবি করে, ‘বন্দনা’ কবিতাটির প্রথম দুই লাইন ‘প্রথমে প্রণাম করি এক করতার (স্রষ্টা)। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার।’ পরে এই দাবি সংশোধন করে লেখা হয় এই দুই লাইন নয়, ‘বন্দনা’ কবিতার প্রথম অংশ— ‘প্রথমে প্রণাম করো পরবর্দিগার (পরওয়ারদিগার)। যে আল্লা বকশিন্দা খোদা করিম ছত্তার।’ ...পাঠ্যক্রমকে ‘সেক্যুলারাইজ’ করার অংশ হিসেবে এটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
আসলে কী ছিল পাঠ্যপুস্তকে?
দাবিগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে নবম–দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক খুঁজে দেখে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পৃষ্ঠাটিতে বইয়ের সংস্করণ উল্লেখ আছে ২০২১। এই সূত্রে এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে ২০২১ সালের নবম–দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাংলা সাহিত্য বইটি বের করা হয়। বইটির ১৮৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কবি শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কবিতাটি আছে। বইয়ের ছবির সঙ্গে ফেসবুকে ভাইরাল পৃষ্ঠার মিল আছে। অর্থাৎ কবিতাটি মা–বাবাকে প্রণাম করতে বলার মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
কবিতাটির পাঠ পরিচিতিতে বলা আছে, শাহ মুহম্মদ সগীরের ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্যের ‘বন্দনা’ পর্ব থেকে গৃহীত এই কবিতাংশ ‘বন্দনা’ নামে সংকলিত হয়েছে। ‘বন্দনা’ পর্ব যথেষ্ট বড়, এখানে শুধু গুরুজনদের প্রতি ‘বন্দনা’র অংশটুকু স্থান পেয়েছে। কবি তাঁর মূল কাব্যের প্রারম্ভে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রশংসা করেছেন। সংকলিত এই কবিতাংশে জন্মদাতা পিতা–মাতার ও জ্ঞানদাতা শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। পিতামাতা অশেষ দুঃখ কষ্ট স্বীকার করে পরম যত্নে সন্তানকে বড় করে তোলেন। শিক্ষক জ্ঞানদান করে তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। তাই তাঁদের প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। কবি তাঁর কাব্য রচনায় সাফল্য লাভের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক সম্পাদিত শাহ মুহম্মদ সগীর বিরচিত ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্য থেকে পাঠ্যপুস্তকে পাঠ পরিচিতির এই তথ্যের সত্যতা রয়েছে। বইটির ১১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ইউসুফ জোলেখা কবিতাটি পাওয়া যায়। কবিতাটির ‘বন্দনা’ পর্ব তিনটি অংশে বিভক্ত। প্রথম পর্বে আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) বন্দনা করা হয়েছে, এখানে পঙক্তি আছে ৩৬টি। দ্বিতীয় পর্বে মা–বাবা ও গুরুজনের বন্দনা করা হয়েছে এবং তৃতীয় পর্বে রাজ প্রশস্তি বা রাজার প্রশংসা করা হয়েছে। এই দুই পর্বের মোট পঙক্তি ৪২টি।
বইয়ে কবিতাটির পরেই মহাকবি আলাওলের ‘হামদ’ কবিতাটি আছে। কবিতাটি কবি আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যের শুরুতে মহান আল্লাহর প্রশংসাসূচক পংক্তি রয়েছে। ‘হামদ’ কবিতাটির শুরুর লাইনগুলো হলো, ‘বিছমিল্লা প্রভুর নাম আরম্ভ প্রথম। আদ্যমূল শির সেই শোভিত উত্তম॥ প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভু জীবদানে স্থাপিল সংসার।’
নতুন পাঠ্যক্রমে ‘বন্দনা’ কবিতাটি নেই
ফেসবুকের পোস্টগুলোতে প্রচারিত দাবির সূত্রে এনসিটিবির ২০২৪ সালের নতুন পাঠ্যক্রমের নবম শ্রেণির বাংলা বইটিতে ‘বন্দনা’ কবিতাটি আছে কি না খুঁজে দেখা হয়। ২০২৩ সাল থেকে দেশে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ১ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হয়। ২০২৪ সাল থেকে ২য়, ৩য়, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এতে দেখা যায়, নবম শ্রেণির বাংলা বইয়ে মোট ৭টি কবিতা আছে। এই কবিতাগুলোর মধ্যে ‘বন্দনা’ কবিতাটি নেই। এ ছাড়া অন্যান্য শ্রেণির বাংলা বইয়েও কবিতাটি পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কবিতাটি পুরোনো পাঠ্যপুস্তকে ছিল। বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রমের বাংলা বইয়ে কবিতাটি নেই।
বাদ দেওয়া হয়েছে দাবিকৃত অংশটি কোন কবিতার?
জাতীয় শিক্ষক বাতায়নের ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ‘প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার’ লাইন দুটি শাহ মুহাম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ কবিতার বলে দাবি করা হয়েছে। যেমন, ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক বাতায়নে কবিতাটি নিয়ে একটি কনটেন্ট পোস্ট করেন সহকারী শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম প্রধান। ওই পোস্টে তিনি পংক্তিগুলোকে ‘বন্দনা’ কবিতার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন।
২০২১ সালের নবম–দশম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক সূত্রে জানা যায়, ‘প্রথমে প্রণাম করি এক করতার। যেই প্রভুর জীবদানে স্থাপিলা সংসার’ লাইন দুটি মহাকবি আলাওলের ‘হামদ’ কবিতার অংশ। কবিতাটি আলাওলের পদ্মাবতী কাব্য থেকে নেওয়া।
তথ্যটির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে বাংলা ১৩৩৮ সালে প্রকাশিত পদ্মাবতী বইটি খুঁজে পাওয়া যায়। বইটি ছাপা ও প্রকাশ হয় হবিবী প্রেস থেকে। বইটির শুরুতেই ‘হামদো খোদা’ কবিতার শুরুতেই ‘বিছমিল্লা প্রভুর নাম আরম্ভ প্রথমে। আদ্য মুল শ্রীর সেই শোভিত উত্তমে। প্রথমে প্রণাম করি এক করতার॥ যেই প্রভু জীবদানে স্থাপিল সংসার’ পংক্তিগুলো আছে। অপরদিকে শাহ মুহাম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ কবিতা শুরু হয়েছে ‘প্রথম প্রণাম করোঁ পরবর্দিগার। যে আল্লা বকশিন্দা খোদা করিম ছত্তার’ পংক্তি দিয়ে।
অর্থাৎ ‘প্রথমে প্রণাম করি এক করতার॥ যেই প্রভু জীবদানে স্থাপিল সংসার’ পংক্তি দুটি কবি আলাওলের। আর আগের পাঠ্যপুস্তকে শাহ মুহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কাব্যের অংশ বিশেষ থেকে আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) বন্দনার অংশটি বাদ দেওয়ার তথ্যও সঠিক নয়। বরং কবিতার মাঝের অংশ বিশেষ পাঠপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পাঠ পরিচিতিতে স্পষ্ট করা হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে ময়ূখ রঞ্জন ঘোষের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ফলকের সামনে অবস্থানরত ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, ‘রিপাবলিক টিভির ময়ুখ রঞ্জন ঘোষ জয়ের বন্ধু! গুজব লীগের গোমর ফাঁস’।
৩ দিন আগেগতকাল শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২.০’ নামের একটি কনসার্টে অংশ নেন আতিফ। এই কনসার্টে আতিফ আসলামের সঙ্গে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে দেখা গেছে দাবিতে একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
৫ দিন আগে‘তাপসী তাবাসসুম উর্মি (Tapashee Tabassum Urmi)’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হয়, এটি আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত কনসার্টে আসা দর্শকদের মারামারির ভিডিও। এটি আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৮ লাখ ২০ হাজারের বেশি দেখা হয়েছে, শেয়ার হয়েছে...
৫ দিন আগেগতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে ফেসবুক পেজে এক ভিডিও পোস্টে দাবি করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘ইউনূস হটাও আন্দোলনে উত্তাল চট্টগ্রাম’। আজ শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার বার...
৬ দিন আগে