Ajker Patrika

পিএসসির ভাইভা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন জরুরি

ফাতিহুল কাদির সম্রাট
পিএসসির ভাইভা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন জরুরি

চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ভাইভা বা ইন্টারভিউ। ইন্টারভিউ নিয়ে রসপরিহাসভরা সিনেমা-নাটক-সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে অনেক। ইন্টারভিউর নামে কখনো হয় স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা, কখনো হয় নিষ্ঠুর রসিকতা। ইন্টারভিউয়ে এসে অসংখ্য চাকরিপ্রার্থীর আশা-ভরসা উবে যায়।

ভাইভার নামে যা হয় তার একটি রসঘন বর্ণনা পাওয়া যায় কথাশিল্পী সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘ইন্টারভ্যু’ নামক রম্যরচনায়। ফারসি ভাষার শিক্ষক নিয়োগের সেই ভাইভা বোর্ডের অন্যতম সদস্য ছিলেন মুজতবা আলী নিজে। প্রার্থীদের ফারসিজ্ঞান পরখের বদলে বোর্ড সদস্যরা নিজেদের ইংরেজি সাহিত্যের পাণ্ডিত্য ফলাতে অবান্তর সব প্রশ্নের অবতারণা করতে থাকেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জব্দ করতে পকেটে রাখা একটি চিরকুট ধরিয়ে দেন এবং সেটাতে লেখা বিদঘুটে একটি কবিতাংশের অর্থোদ্ধার করতে বলেন। কবিতার মর্মোদ্ধার তো দূরের কথা, সরলপাঠেই প্রার্থীদের ত্রাহি অবস্থা হয়ে যায়।

আসলে চেয়ারম্যান সাহেবের ছিল পছন্দের এক প্রার্থী। তিনি সবাইকে জব্দ করেছিলেন যে কবিতা দিয়ে, সেটির ওপর পূর্বাহ্ণেই জোর তালিম দিয়ে এসেছিলেন নিজের পছন্দের প্রার্থীকে। ফলে সেই দুর্বোধ্য কবিতার লাইনগুলো শেখানো বুলির মতো হড়বড় করে আওড়ে যান সেই প্রার্থী। বোর্ড সদস্যদের অবশ্য সেই প্রার্থীর পারঙ্গমতার রহস্যভেদ করতে অসুবিধা হয়নি। ইন্টারভিউয়ের নামে প্রহসন আর প্রার্থীদের হেনস্তা দেখে বিরক্ত হয়ে লেখক সেদিন মনে মনে বলেছিলেন, ‘মারো ঝাড়ু, স্লা নোকরি ওর উসকি ইন্টারভ্যু পর।’

সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো এমন কথা আমি নিজেও বলেছিলাম বিসিএস পরীক্ষার ভাইভা দেওয়ার পর। ভাইভার সেই অভিজ্ঞতা আমি জীবনেও ভুলব না।

জীবনের প্রথম কোনো চাকরির ভাইভায় অবতীর্ণ হয়েছি। সরকারি কলেজে অধ্যাপনার চাকরি। তাই আমার মনঃসংযোগ নিবদ্ধ ছিল বাংলায়। প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমি ছিলাম বিবাহিত ও মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের। উচ্চশিক্ষা নিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে থেকে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়েছিলাম। ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, যিনি ছিলেন পিএসসির সদস্যও। বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল।

সালামপর্ব শেষ হলে মুখ খুললেন চেয়ারম্যান সাহেব নিজে। কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় পড়াশোনা করেছ, আনন্দমোহনে?’

প্রশ্নটি নয়, প্রশ্নে মিশে থাকা তাচ্ছিল্যের সুরটা আমার আত্মসম্মানে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আত্মশ্লাঘায় ভীষণভাবে আঘাত করল।

চেয়ারম্যান সাহেবের চোখে চোখ রেখে দৃঢ় গলায় বললাম, ‘সার্টিফিকেট দেখুন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।’ বোর্ডের অন্যতম একজন সদস্যকে দেখিয়ে বললাম, ‘আমি স্যারের ছাত্র।’

এবার তিনি টিটকারির মতো করে বলে উঠলেন, ‘ও, তুমি তো আবার বিবাহিত। প্রেমট্রেম করে বিয়ে করেছ নাকি? কী, শ্বশুরের টাকায় পড়াশোনা করেছ নাকি?’

আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে উত্তর দিলাম, ‘স্যার, শুধু বিবাহিত নই, আমার ছেলে স্কুলে যায়। শ্বশুরপক্ষের দেওয়া আংটি পর্যন্ত হাতে পরিনি। নিজের উপার্জনে আমি এমএ পাস করেছি, আমার স্ত্রীকেও এমএ পাস করিয়েছি।’

বিয়ের প্রসঙ্গটি টেনে তিনি বারবার কথা ঘোরালেন। আমি সত্য-মিথ্যার মিশেলে গল্প ফেঁদে উতরে যেতে চেষ্টা করলাম। এরপর তিনি আমার উপার্জনের উপায়, অর্থাৎ সাংবাদিকতা পেশার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে নিশ্চিত হতে চাইলেন একটি বিশেষ পত্রিকায় কাজ করেছি কি না, নিদেনপক্ষে সেই পত্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না। এরপর তিনি আমার হাতে মার্কার পেন ধরিয়ে দিয়ে কোরআন শরিফের একটি আয়াত বোর্ডে লিখতে বললেন। হোয়াইট বোর্ডের সামনে গিয়ে বললাম, ‘অনেক দিন চর্চা নেই। ভুল হয়ে যেতে পারে। কোরআনের আয়াত ভুল লেখা ঠিক নয়।’

এ নিয়ে তিনি আর জোরাজুরি করলেন না। এরপর বিষয়ভিত্তিক নানা প্রশ্ন করা হলো। সেখানে আমি নিজেকে যথেষ্ট সাবলীল প্রমাণ করতে সক্ষম হলাম। একপর্যায়ে একজন বোর্ড সদস্য চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ও কি যাবে, না আরও কিছু জিজ্ঞেস করবেন?’

চেয়ারম্যান সাহেব মুখ খানিকটা বিকৃত করে বললেন, ‘কী আর জিজ্ঞেস করব। ও তো আরবি-বাংলা কোনোটাই পারে না, যাক।’ মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে ঘরে ফেরার পথে সৈয়দ মুজতবা আলীর কথাগুলোর পুনরুক্তি করতে থাকলাম। পুরো ঘটনা জানার পর আমার স্ত্রী শুধু চরম লজ্জিত হলেন না; বরং নিজেকে ভীষণ অপরাধী মানতে শুরু করলেন।

তাঁর বিশ্বাস, আমার এই হেনস্তার কারণ বিয়ে এবং বিয়ের মূলে তিনি নিজে। ভাইভার সেই অভিজ্ঞতা আমাদের জীবন থেকে স্বস্তি কেড়ে নিয়েছিল বেশ কিছুদিনের জন্য। সেই ঘটনা আমাদের কাছে ভাইভার নামে মানসিক নিগ্রহেরই নামান্তর ছিল।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের দক্ষ কর্মী বাহিনী জোগান দিয়ে থাকে। উচ্চ বেকারত্বের এ দেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগপ্রত্যাশীদের আশা-ভরসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান এটি; বিশেষ করে ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগের একমাত্র মাধ্যম পিএসসি। সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি তার সুষ্ঠু কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা ধরে রেখেছে। বর্তমানে পিএসসি আস্থার জায়গাটাকে আরও সুসংহত করার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থার পাশাপাশি প্রত্যাশাও বেড়েছে।

আমরা জানি, পিএসসির নিয়োগ-প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা। কয়েক মাস আগে পত্রিকান্তরে জানা গিয়েছিল, নিয়োগ-প্রক্রিয়াকে অধিকতর নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করার স্বার্থে পিএসসি মৌখিক পরীক্ষাসংক্রান্ত বেশ কিছু অনুশাসন জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিএসসির এ সিদ্ধান্ত অবশ্যই ধন্যবাদযোগ্য। আশা করা যায়, এর ফলে ভাইভা নিয়ে প্রচলিত সব প্রশ্ন ও অভিযোগের অবসান ঘটবে।

গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক এখন থেকে বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা চাকরিপ্রার্থীদের বেশ কিছু বিষয়ে জানতে চাইবেন না বা কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না। যেমন প্রার্থীর জেলা কোনটি, ধর্ম কী, কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলেন ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রার্থীর ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে বা প্রার্থী অপমানিত বোধ করতে পারেন, এমন কথাও ভাইভায় না বলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীকে সম্ভ্রমাত্মক ‘আপনি’ সম্বোধনের কথাও বলা হয়েছে। এখন থেকে ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের সামনে প্রার্থীর রোল নম্বর ছাড়া আর কোনো তথ্য বা ডকুমেন্টস থাকবে না।

পিএসসির ভাইভা বোর্ডে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এবং হেনস্তা নিয়ে অভিযোগ এন্তার। চাকরিভাগ্যের শিকে ছিঁড়তে ব্যর্থ অনেকে আমৃত্যু ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের অভিসম্পাত করে যান। সব অভিযোগ যে সর্বাংশে সত্য তা যেমন বলা যাবে না, তেমনি অবান্তরও বলা যাবে না।রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে বিশেষ বিশেষ অঞ্চল বা জেলার প্রার্থীদের ভাগ্য বদল হয় এমন কথা বেশ প্রচলিত।

বেসরকারি ব্যাংকের চাকরিতে থিতু হওয়া আমি এমন একজনকে জানি, যিনি তিনবার বিসিএসের ভাইভা দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, তাঁর জন্ম যদি বিশেষ একটি জেলায় না হতো, তাহলে তিনি সরকারি চাকরি পেতেন। ভাইভা বোর্ডের কোনো কোনো সদস্য নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুকম্পাপ্রবণ হয়ে থাকেন বলেও জনধারণা প্রবল।

এই বাস্তবতায় ভাইভায় পরিবর্তনসংক্রান্ত পিএসসির সিদ্ধান্ত অনুসরণ বা বাস্তবায়ন করা জরুরি। এ প্রসঙ্গে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা পিএসসিকে এমন একটি স্থানে নিয়ে যেতে চাই যাতে এ নিয়ে মানুষের প্রশ্ন না থাকে। এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এরই অংশ হিসেবে ভাইভা বোর্ডের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। বোর্ডে প্রার্থীর রোল নম্বর ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। যাতে তাঁর ব্যক্তিগত কোনো তথ্য কোনো পরীক্ষককে প্রভাবিত করতে না পারে।’

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে পিএসসির কর্মকাণ্ড যে অনেক বেশি গতিশীল ও স্বচ্ছ, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ভাইভাসংক্রান্ত গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে পিএসসির প্রতি চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার নিরপেক্ষতা প্রশ্নাতীত বলে প্রমাণিত হবে।

লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত