Ajker Patrika

বাংলা ভাষা নিয়ে কিছু কথা

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮: ২৪
বাংলা ভাষা নিয়ে কিছু কথা

প্রথম পর্ব
আজকের লেখাটি একটু বড় হবে। ১৫ দিন পর এই লেখার দ্বিতীয় পর্বটিও পড়তে অনুরোধ করব পাঠককে। সামগ্রিকভাবে যেকোনো ভাষার বাঁচা-মরা, বাঁচার লড়াই নিয়ে আলোকপাত থাকবে দ্বিতীয় পর্বে। আর সেই পর্বে প্রবেশের জন্যই আজকের এ পর্বটি।

ভাষা আন্দোলনের কথা বলতে গেলেই আমরা নির্দিষ্ট কিছু মুখস্থ শব্দ উচ্চারণ করি। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে বাঙালি, এ কথারই পুনরাবৃত্তি করতে থাকি। ভাষার মর্যাদা রক্ষার কথা বলি। কিন্তু মূলত ভাষা ও ভাষার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা কমই হয়। সে কারণে একটু ভিন্নভাবে ভাষা নিয়ে ভাবার চেষ্টা থাকবে এই লেখায়।

আমি তখন সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছি পড়াশোনার জন্য। মস্কো থেকে ট্রেনে চব্বিশ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছি ক্রাসনাদার শহরে। এই শহরের কৃষি ইনস্টিটিউটটি বিশ্বের সেরা কৃষি ইনস্টিটিউটের একটি (এখন তা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে)। সেই শহরেই প্রস্তুতিপর্বে শুরু হলো রুশ ভাষা শিক্ষা।

পৃথিবীর বিভিন্ন অলিগলি থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে তখন শিক্ষার্থীরা আসত। উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো শিক্ষার্থীকেই অর্থ খরচ করতে হতো না, প্রতিজন শিক্ষার্থীই সেখানে স্টাইপেন্ড বা স্কলারশিপ পেত। তাতে নির্বিঘ্নে মাস চালানোর খরচ মিটে যেত। বিশ্বের প্রতিটি দেশের মানুষের মনে সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে শ্রদ্ধা জাগবে, এই শিক্ষার্থীরাই দেশে ফিরে নিজ দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুক্ত হবে, এ রকম একটা সুদূরপ্রসারী ইচ্ছে ছিল সোভিয়েত ভাবনায়, তবে পড়াশোনার নামে ফাঁকিবাজি করেনি তারা। সেরা শিক্ষকদের নিয়ে তৈরি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেরা পাঠদানের চেষ্টায় ত্রুটি ছিল না।

বিদেশি ছাত্রদের জন্য এক বছর রুশ ভাষা শেখার জন্য ছিল প্রিপারেটরি ফ্যাকাল্টি। বিভিন্ন ভাষাভাষীর শিক্ষার্থীরা সেখানেই পড়ত। ক্লাস শুরু হওয়ার পর আড্ডা হতো কখনো কখনো। নানা দেশের ছেলেমেয়েরা সেই আড্ডায় অংশ নিত। আমি একসময় লক্ষ করলাম, আফ্রিকার ছেলেরা কি দ্রুত ইংরেজি বলে যাচ্ছে! তখনো রুশ ভাষা ঠিকভাবে শেখা হয়নি বলে কথার আদান-প্রদান হতো ইংরেজিতে।

যারা ফরাসি বা স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলত, তারা আলাদাভাবে আড্ডা দিত। এই আপাতবিচ্ছিন্নতা কেটে গিয়েছিল রুশ ভাষায় একটু একটু করে কথা বলা শুরু হলে। শিক্ষার্থীরা তখন রুশ ভাষাতেই ভাবের আদান-প্রদান করতে পারত।

২. আফ্রিকান ছেলেমেয়েরা কীভাবে এত সুন্দর ইংরেজি বলে, সেটা আমার জন্য ছিল বিস্ময়ের ব্যাপার। এ বিষয়টি নিয়ে আমি রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল হককে একটি চিঠি লিখেছিলাম। প্রশ্ন রেখেছিলাম, ‘কীভাবে আফ্রিকার ছেলেরা এত দ্রুত ইংরেজি বলতে পারে, আমি পারি না। আমিই কি ভাষা আয়ত্ত করিনি বলে পিছিয়ে পড়েছি?’

এর উত্তরে একটি অসাধারণ চিঠি লিখেছিলেন ওয়াহিদুল হক। তিনি জানিয়েছিলেন উপনিবেশীয় শোষণের কথা। বলেছিলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো যখন এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় উপনিবেশ বানিয়েছে, তখন সেই সব দেশ থেকে তাদের সংস্কৃতি, ভাষা, জীবনব্যবস্থা সমূলে উৎপাটন করার চেষ্টা করেছে। কোথাও কোথাও সফল হয়েছে, কোথাও কোথাও হয়নি।

আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকার বেশির ভাগ দেশ থেকে আচরিত ভাষা হটিয়ে দিয়েছে, সংস্কৃতির মূল উপড়ে ফেলেছে। ভারতবর্ষে এ কাজটি করতে তারা এক শ ভাগ সফল হয়নি। চাপিয়ে দেওয়া ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আপস করতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিজ ভাষা, নিজ সংস্কৃতি ধরে রাখতে পেরেছে ভারতবর্ষের লোকেরা। আফ্রিকার বহু দেশের মানুষ এখন মাতৃভাষায় কথা বলতে পারে না। তারা কথা বলে ইংরেজি অথবা ফরাসি ভাষায়। লাতিন আমেরিকার বিশাল অংশে তো স্প্যানিশই হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রভাষা।

ওয়াহিদুল হকের চিঠিখানা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, ভাষা ও সংস্কৃতি-প্রশ্নে আমাদের যে উত্তরাধিকার, তা খুবই ঋদ্ধ। আমরা নিজের ভাষায় নিজেকে প্রকাশ করতে পারি, এ-ও টিকে থাকার সংগ্রামে একটি বড় অর্জন। ভাষা শিক্ষার প্রতি আমার আগ্রহ এতটাই বেড়েছিল যে আমি তখন আমার পড়ালেখার বিষয় পরিবর্তন করে কুবান রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ভাষা ও সাহিত্য’ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম।
ভাষার আগ্রাসনকে তখন থেকেই গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করি।

৩. ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা ভাষা নিয়ে অতিমাত্রায় সচেতন হয়ে উঠি। ভাষা নিয়ে এমন সব কথা বলি, যা অর্থহীন। যেমন ভাষা আন্দোলনটি কেন হয়েছিল, সে কথা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলেন, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াই ছিল ভাষা আন্দোলন। কেউ কেউ বলেন, জনসংখ্যার বিচারে বাংলায় কথা বলত পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ। তাই উর্দুকে হটিয়ে দিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার লড়াই ছিল ভাষা আন্দোলন।

দুটো ভাবনাই ভুল। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করার বিষয়টি খুবই ধোঁয়াটে। যে বাঙালি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করবে, তারা ইতিহাসের একটা বড় সময় ধরেই বাংলায় নিজেকে প্রকাশ করতে চায়নি। বাংলাকে ভেবেছে নিম্নশ্রেণির মানুষের ভাষা। হিন্দু অভিজাত বাঙালি ভেবেছে, ধর্ম ও উচ্চ সাহিত্যের জন্য সংস্কৃত ভাষাই তাদের ভাবপ্রকাশের একমাত্র ভাষা। বাংলায় তা রচনা করা সম্ভব নয়। মুসলমান তো ভেবে এসেছে আরবি বা ফারসির উত্তরাধিকার তারা। বাংলা হচ্ছে হিন্দুয়ানি ভাষা। এই ভাষায় কেন করা হবে সাহিত্য রচনা? বাংলা সম্পর্কে বাঙালি হিন্দু-মুসলমানের এই দ্বিধা ছিল। কিন্তু একটা সময়ে এসে হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাকে নিজ ভাষা হিসেবে মেনে নেয়। বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়ের মনের দ্বিধা কাটতে আরও সময় লেগেছিল।

বাঙালি মুসলমানের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, ধর্ম ও সংস্কৃতির ফারাক। বাস করছে এই মাটিতে, কিন্তু মনে লালন করছে আরব দেশকে—এই দ্বিধা বরাবর বাঙালি অভিজাত মুসলমানকে বাংলা সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ করে রেখেছে। অনভিজাত বাঙালিরাই কিন্তু মধ্যযুগে দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে বাংলার চর্চা শুরু করেছিল। এই ঐতিহাসিক সত্যকে মনে রাখলে বাংলা ভাষার সংগ্রামের বিষয়টি বোঝা সহজ হবে।

হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের গরিব মানুষের কাছে বাংলাই ছিল মাতৃভাষা। ফলে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য তখন কোনো আন্দোলন ছিল না। বাংলাতেই তো তাদের জীবনযাপন, তাই নতুন করে তা আদায় করার কিছু নেই। আন্দোলন হলো রাষ্ট্রভাষা নিয়ে, মাতৃভাষা নিয়ে নয়। পাকিস্তান সৃষ্টির আগে যখন এই বিচিত্র রাষ্ট্রটির সরকারি বা প্রশাসনিক ভাষা কী হবে, তা নিয়ে বিতর্ক উঠল, তখনই উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলো রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। পূর্ব বাংলার মানুষ প্রতিবাদ করেছিল। তারা আন্দোলনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিল, রাষ্ট্রভাষা হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে বাংলার।

দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তরও রয়েছে প্রথম প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই। পূর্ব বাংলা বলেনি, শুধু বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, সেটাই ছিল এই আন্দোলনের সারমর্ম। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, ভাষা আন্দোলন ছিল মূলত পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার আন্দোলন। মাতৃভাষার অধিকার নয়, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা অর্জনই ছিল মুখ্য। বাংলা রাষ্ট্রভাষা হলে আমাদের মাতৃভাষা অনায়াসে তার মর্যাদা পাবে।

এরই সূত্র ধরে আমরা বলতে পারি, আমাদের ভাষা আন্দোলন আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গিয়েছে সত্য, কিন্তু ভাষা প্রসঙ্গটির যে ব্যাপ্তি, তার কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা খুব কমই হয়েছে। আমরা আমাদের অঙ্গীকারগুলো কতটা রক্ষা করেছি, সে প্রশ্ন উঠলে লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার উপক্রম হবে।

৪. ওপরের আলোচনাটিকে বিচ্ছিন্ন আলোচনা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত যোগ করলে আমরা বুঝতে পারব, বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনায় রয়েছে গলদ। ওয়াহিদুল হক উপনিবেশীকরণের সময় দখলকৃত কোনো দেশের জাতীয় ভাষাগুলোকে যেভাবে হটিয়ে দেওয়ার কথা শুনিয়েছিলেন, সেভাবে হয়তো এখন আর ভাষা তার জায়গা হারাচ্ছে না, কিন্তু ভাষার ওপর ভাষার আগ্রাসন এখনো চলছে।

দুটো প্রসঙ্গ আনব ভেবে দেখার জন্য। বাংলা ছাড়াও আমাদের এ দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আরও কিছু ভাষা রয়েছে। সেই ভাষাব্যবহারকারীদের সংখ্যা কমছে। বাংলা ভাষা ছাড়া উচ্চশিক্ষার উপায় নেই বলে সেই ভাষাগুলোর বেশির ভাগেরই উন্নতি হচ্ছে না।

একটা ভাষার লিখিত রূপ ও তার সাহিত্য না থাকলে, সেই ভাষা ধীরে ধীরে অবসিত হতে থাকে। ভাষা আন্দোলন রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন ছিল বটে, কিন্তু প্রশ্নটিকে আরও প্রসারিত করলে দেখা যাবে, মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টিও আন্দোলনের মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল এবং তা শুধু বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে নয়। দেশে প্রচলিত সব ভাষার মর্যাদা রক্ষার দায় রয়েছে ভাষা আন্দোলনের। সেটা কীভাবে রক্ষা হচ্ছে, তা দেখা দরকার।

দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি বাংলা ভাষা নিয়েই। উচ্চশিক্ষায় ইংরেজির দাপট এখনো এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, ওই ভাষাটা না জানলে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকেই বেশির ভাগ বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া যাবে না, এমনকি উচ্চশিক্ষিত হওয়া যাবে না। বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের যে মমত্ব নেই, সেটা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। এ বিষয়টি নিয়েই আমরা পরবর্তী পর্বে আলোচনা করব।

লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত