Ajker Patrika

বর্জ্যে ধ্বংস খাল, জীববৈচিত্র্য

আলী আকবর সাজু, ভালুকা
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ৩২
বর্জ্যে ধ্বংস খাল, জীববৈচিত্র্য

ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে লাউতি খাল। এক সময় এলাকার কৃষিসহ নানা কাজে এই খালের পানি ব্যবহার হলেও এখন দখলে, দূষণে বিপর্যস্ত। শিল্পকারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি খালে মিশে যাচ্ছে খীরু নদীতে।

হবিরবাড়ী, জামিরদিয়া ও কাশর গ্রামের ডাইং কারখানা থেকে দূষিত পানি লাউতি খাল ও খীরু নদীতে পড়ায় মাছসহ ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ফসল। এরপরও দখল-দূষণ রোধে কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লাউতি খালের উভয় পাড়ের ফসলি জমির মাটিতে কালো রঙের প্রলেপ লেগে থাকে। দূষিত পানি লাগলে হাত-পাসহ শরীরে চুলকানি শুরু হয়। নানা ধরনের চর্মরোগের আক্রান্ত হতে হয় সংশ্লিষ্টদের। অনেক সময় জমিতে চাষের জন্য শ্রমিক পাওয়া যায় না। অথচ উভয় পাড়ের প্রায় ১৫ কিলোমিটারজুড়ে ফসলি জমিতে সেচ দিতে ব্যবহার করা হয় খালের পানি।

কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, আগে এই খালের পানি সেচ দিয়ে ধান খেত প্রস্তুত করা হতো। এখন কারখানার বিষাক্ত পানি সেচ দিতে ভয় লাগে। এই পানির কারণে শরীরে চুলকানি ও চর্মরোগ হয়। তবুও নিরুপায় হয়ে এই পানি দিয়ে বোরো আবাদ করতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, ৯০-এর দশকে উপজেলায় শিল্প কারখানা গড়ে ওঠা শুরু হয় এবং ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ওই সব কারখানার দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি লাউতির খালে পড়ে। জমিতে ফসল উৎপাদনের তাগিদে কৃষক বাধ্য হয়ে ওই পানি দিয়েই সেচ দিচ্ছে। অনেক সময় ধানের গাছ ভালো হলেও চিটা হয়ে যায়। অপরদিকে দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্যের পানি খেয়ে মারা যায় গরু-ছাগলসহ গবাদিপশু ও পাখি। এ ছাড়া লাউতি খালের বাসিন্দারাও দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ।

এদিকে এসব এলাকার শিশুরা পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, অধিকাংশ কারখানায় ইটিপি থাকলেও তা সচল না রেখে অপরিশোধিত বর্জ্য পানি সরাসরি খালে ও জলাশয়ে ফেলা হয়। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্যসচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল বলেন, হবিরবাড়ীর লাউতি, বিলাইজুড়ি, কাঠালীর বেতিয়া হাঙ্গুন সংযোগ খাল দিয়ে খীরু নদীতে ডাইং কারখানার দূষিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এটাকে পরিবেশের জন্য নৈরাজ্য উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করে বলেন, পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই ডাইং কারখানাগুলো সরাসরি বর্জ্য ফেলছে নদীতে। বর্জ্য পানি ইটিপির মাধ্যমে পরিশোধন করে নদীতে ফেলা হলে তা কৃষিকাজে সেচ উপযোগী হবে। দেশি মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন জাহান বলেন, শিল্প-কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি ধানের জমিতে ব্যবহার করলে ধানগাছ অতি দ্রুত বেড়ে যায়। তবে ধানের থোড় বের হওয়ার পর তা মরে চিটা হয়। বর্জ্য মিশ্রিত পানি পরিশোধন করে নদীতে ফেলা জরুরি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা খাতুন বলেন, কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি লাউতি খাল দিয়ে খীরু নদীতে প্রবাহিত হয়। ওই দূষিত পানির দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ