আসিফ

একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
এক শ বছর আগে আইনস্টাইন বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ কোনো শিক্ষার্থীকে জ্ঞানী করে তোলা নয়, সমাজের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতা করে চলার মানসিকতা নিয়ে বড় করে তোলা।’ আবার জগদীশচন্দ্র বসু বলেছেন, ‘সবার একজন হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’ তাহলে সমাজ থেকে সহমর্মিতা, সহনশীলতা, নমনীয়তা মানুষের মধ্য থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে কেন?
১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড বর্ষণ শুরু হয়েছে। কোনোভাবেই বৃষ্টি থামছে না। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বড় আকারের একটা বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময়ই আইনস্টাইনের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ‘সময়ের প্রহেলিকা’ শিরোনামে একটি বক্তৃতা ঢাকা পরমাণু শক্তি কমিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় আমার এক শুভানুধ্যায়ী বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীনের অনুরোধে বিজ্ঞান লেখক আবদূল্লাহ আল-মুতীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সেই মোতাবেক খ্যাতনামা এই বিজ্ঞান লেখকের বাসায় এক দুপুরে যাওয়া হয়। বাসায় যাওয়ার পর তাঁর আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
সচিব পর্যায়ে চাকরি করার পরও তাঁর রুমে কোনো বিলাসিতার আড়ম্বরতা চোখে পড়েনি। বই দিয়ে ঠাসা মাঝারি আকৃতির একটি রুম। সেখানেই বসার ব্যবস্থা। পড়াশোনা, সে-সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন তা বোঝা গেল। কুশলাদি জানার পর তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতে থাকলেন; বিশেষ করে পত্র-পত্রিকায় লেখা ও টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক শ্রোতাদের নানা প্রতিক্রিয়া। এ রকম একটা প্রাসঙ্গিক জায়গা ধরে বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীন বলে উঠলেন, ‘আচ্ছা স্যার, তাহলে তো পাবলিক অনুষ্ঠানগুলোও খুব জরুরি।’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই। তবে এটি অথেনটিক হতে হবে।’
কিন্তু এই অথেনটিকের বিচার করবে কে? বই পড়া, ডকুমেন্টারি দেখা এবং সে-সম্পর্কে আলোচনা করাও তো একধরনের মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চার একটা পথ হতে পারে। এটা শুধু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করবেন, এমন তো কোনো কথা হতে পারে না। যে কেউ তো তা করতে পারেন। তা না হলে জ্ঞানের বিস্তার ঘটবে কেমন করে, গণমুখী চর্চাই বা হবে কেমন করে?
তা ছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াবেন এবং ডিগ্রি প্রদান করবেন? জ্ঞানচর্চার সঙ্গে যুক্ত হবেন না, সমাজের অন্যান্য প্রবাহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটাবেন না?
লেখা বা কথা বলার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কৌতূহল জাগানো আর আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো। সেটা কোন পথে বিস্তার ঘটাবে, আলোচনার প্রকৃতিই তা বলে দিতে পারে। আর অন্যান্য মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা যুক্ত হলে সেটা কতটা সংগতিপূর্ণ হবে, তারও একটা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে সঠিকপথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এর জন্যও একটা পেশাদারি থাকা উচিত।
পৃথিবীতে একসময় প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চা ছিল না। ক্রমে ক্রমে অপ্রাতিষ্ঠানিক লোকজ ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এটি গড়ে উঠেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা অর্জিত জ্ঞানকে কাঠামো দিয়েছিল, ধাপে ধাপে এগোনোর শক্তি দিয়েছিল। এটা ডকুমেন্টেশন এবং সংরক্ষণের সুবিধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু নতুন নতুন চিন্তা ও ধারণার উদ্ভব ঘটাতে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চাকে বন্ধ করতে বলেনি। এটা বন্ধ হলে একটা পর্যায়ে নতুন চিন্তার উদ্ভব ও বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং একই গোলকধাঁধায় ধাক্কা খাবে। এ জন্য কৌতূহল সৃষ্টি এবং বারবার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঠিক পথ ধরে সত্যকে উদ্ঘাটন করা উচিত। এটা কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা নিয়ম মেনে হতে পারে না। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত নিজস্ব চর্চার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চার সংযোগ সেতু তৈরি করা। এটা সহনশীলতা, নমনীয়তার পাশাপাশি বোঝাপড়ার বিস্তার ঘটাবে। আবদূল্লাহ আল-মুতী যে স্বগতোক্তি করলেন, তা অবশ্য ঠিক। ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তিনি এসেছিলেন বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এবং উৎফুল্ল চিত্তে বিদায় নিয়েছিলেন।
প্লেটোর একাডেমি ছিল পৃথিবীর প্রথম দিকের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। আর পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার। যদিও সেগুলো বর্তমানের মতো কাঠামোগত প্রতিষ্ঠান ছিল না। আর পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম অপ্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের বিস্তার ঘটতে শুরু করে। যৌথতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো চলত। পরে ব্যক্তিমালিকানার ধারণা উদ্ভাবের পর বিশেষ করে জ্ঞানীদের মধ্যেও জীবন যাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন অনুভূত হয়। সে কারণে তাঁদের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য একটা আর্থিক ব্যাপার দরকার হয়ে পড়ে। তবে তাদের সরাসরি লাভ-ক্ষতির হিসাবের মধ্যে থাকা উচিত নয়, তাতে বাজে প্রভাব দেখা দিতে পারে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজকে দীর্ঘমেয়াদি সুফলের বিবেচনায় রাখা দরকার। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজে পালিত হয়নি।
পাওয়া-না পাওয়ার টানাপোড়েনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানুষগুলো বিপথগামী যে হয়ে পড়েছেন, তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। ফলে একধরনের দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক দূষণ তৈরি হয়েছে। বিষয়টা এতই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে শিক্ষা ও বাণিজ্যের পার্থক্যও তাঁদের কাছে অনুভূত হয় না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিংশ শতাব্দীর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারটা এতটা কেন্দ্রীভূতরূপে ছিল না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জ্ঞানী লোকেরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষায় অধিকতর সচেষ্ট ছিলেন। সামগ্রিকতার রক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক পাহারাদারির দরকার পড়ত না। কেননা তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক, অর্থাৎ সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্রীভূত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখা দিতে শুরু করে। এ সময়েই বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক। অর্থের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে ব্যবসায়িক চিন্তার ব্যাপক প্রভাব, যাকে বহুজাতিক সংস্কৃতিও বলা যায়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনিয়ম হতো না, এমন নয়। তবে দুই নম্বরিটা ছিল প্রধানত সুলভে সম্মান পাওয়ার উপায়। কিন্তু বহুজাতিক নৈতিকতার সরাসরি প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাভ-ক্ষতির নির্মম হিসাব ঢুকে পড়ে। যার এখন বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা, সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ফলে দেশে তো সেই অর্থে গবেষণামূলক বিজ্ঞান পত্রিকা নেই বললেই চলে। তা ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের ‘নেচার’ ও ‘সায়েন্স’-এর মতো পত্রিকাগুলোতে ছাপানো গবেষণাপত্র দেখলেই বোঝা যায় বেশির ভাগেরই কোনো ফলোআপ নেই। ছাপা হয় আর হারিয়ে যায়। কেউ আর মনে রাখে না।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকাগুলোতে ভুল স্বীকার করে গবেষণাপত্র প্রত্যাহারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। একাডেমি থেকে সামাজিক প্রবাহ বা অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিজ্ঞানকে আত্মোপলব্ধির জায়গায় নিতে পারছে না। নিচ্ছে কৌশল এবং লাভ-ক্ষতির জায়গা থেকে। সরাসরি লাভ-ক্ষতির কথা বিবেচনা না করে ব্রিটিশরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল বেশ কিছু দিন আগেও। সে জায়গাটাও এখন পড়তির দিকে। আর আমাদের দেশ তো সে রকম জায়গায় আসতেই পারেনি।
অথচ শিক্ষা মানে জীবনকে মহা বৈশ্বিক দৃষ্টিতে দেখার প্রণোদনা, মানুষের প্রতি মানুষের মমতা আর বৈচিত্র্যময় বিশাল কর্মক্ষেত্র। যেখানে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে। তারই প্রতিফলন আজকের পৃথিবীতে দেখার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষায় কখনো এ কথাগুলো সেভাবে বলা হয়নি বা বলতে দেওয়া হয়নি। সবকিছু নেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো অর্থে। বিজ্ঞান সব সময় দেখিয়েছে বিশ্বজগতের সবকিছু কী প্রবলভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর আমরা নিয়েছি কৌশল ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে। তাহলে বিশ্বের কাছ থেকে মানবিকতা, সহমর্মিতা কেন আশা করব?
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত

একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
এক শ বছর আগে আইনস্টাইন বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ কোনো শিক্ষার্থীকে জ্ঞানী করে তোলা নয়, সমাজের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতা করে চলার মানসিকতা নিয়ে বড় করে তোলা।’ আবার জগদীশচন্দ্র বসু বলেছেন, ‘সবার একজন হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’ তাহলে সমাজ থেকে সহমর্মিতা, সহনশীলতা, নমনীয়তা মানুষের মধ্য থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে কেন?
১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড বর্ষণ শুরু হয়েছে। কোনোভাবেই বৃষ্টি থামছে না। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বড় আকারের একটা বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময়ই আইনস্টাইনের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ‘সময়ের প্রহেলিকা’ শিরোনামে একটি বক্তৃতা ঢাকা পরমাণু শক্তি কমিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় আমার এক শুভানুধ্যায়ী বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীনের অনুরোধে বিজ্ঞান লেখক আবদূল্লাহ আল-মুতীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সেই মোতাবেক খ্যাতনামা এই বিজ্ঞান লেখকের বাসায় এক দুপুরে যাওয়া হয়। বাসায় যাওয়ার পর তাঁর আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
সচিব পর্যায়ে চাকরি করার পরও তাঁর রুমে কোনো বিলাসিতার আড়ম্বরতা চোখে পড়েনি। বই দিয়ে ঠাসা মাঝারি আকৃতির একটি রুম। সেখানেই বসার ব্যবস্থা। পড়াশোনা, সে-সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন তা বোঝা গেল। কুশলাদি জানার পর তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতে থাকলেন; বিশেষ করে পত্র-পত্রিকায় লেখা ও টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক শ্রোতাদের নানা প্রতিক্রিয়া। এ রকম একটা প্রাসঙ্গিক জায়গা ধরে বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীন বলে উঠলেন, ‘আচ্ছা স্যার, তাহলে তো পাবলিক অনুষ্ঠানগুলোও খুব জরুরি।’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই। তবে এটি অথেনটিক হতে হবে।’
কিন্তু এই অথেনটিকের বিচার করবে কে? বই পড়া, ডকুমেন্টারি দেখা এবং সে-সম্পর্কে আলোচনা করাও তো একধরনের মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চার একটা পথ হতে পারে। এটা শুধু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করবেন, এমন তো কোনো কথা হতে পারে না। যে কেউ তো তা করতে পারেন। তা না হলে জ্ঞানের বিস্তার ঘটবে কেমন করে, গণমুখী চর্চাই বা হবে কেমন করে?
তা ছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াবেন এবং ডিগ্রি প্রদান করবেন? জ্ঞানচর্চার সঙ্গে যুক্ত হবেন না, সমাজের অন্যান্য প্রবাহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটাবেন না?
লেখা বা কথা বলার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কৌতূহল জাগানো আর আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো। সেটা কোন পথে বিস্তার ঘটাবে, আলোচনার প্রকৃতিই তা বলে দিতে পারে। আর অন্যান্য মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা যুক্ত হলে সেটা কতটা সংগতিপূর্ণ হবে, তারও একটা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে সঠিকপথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এর জন্যও একটা পেশাদারি থাকা উচিত।
পৃথিবীতে একসময় প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চা ছিল না। ক্রমে ক্রমে অপ্রাতিষ্ঠানিক লোকজ ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এটি গড়ে উঠেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা অর্জিত জ্ঞানকে কাঠামো দিয়েছিল, ধাপে ধাপে এগোনোর শক্তি দিয়েছিল। এটা ডকুমেন্টেশন এবং সংরক্ষণের সুবিধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু নতুন নতুন চিন্তা ও ধারণার উদ্ভব ঘটাতে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চাকে বন্ধ করতে বলেনি। এটা বন্ধ হলে একটা পর্যায়ে নতুন চিন্তার উদ্ভব ও বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং একই গোলকধাঁধায় ধাক্কা খাবে। এ জন্য কৌতূহল সৃষ্টি এবং বারবার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঠিক পথ ধরে সত্যকে উদ্ঘাটন করা উচিত। এটা কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা নিয়ম মেনে হতে পারে না। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত নিজস্ব চর্চার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চার সংযোগ সেতু তৈরি করা। এটা সহনশীলতা, নমনীয়তার পাশাপাশি বোঝাপড়ার বিস্তার ঘটাবে। আবদূল্লাহ আল-মুতী যে স্বগতোক্তি করলেন, তা অবশ্য ঠিক। ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তিনি এসেছিলেন বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এবং উৎফুল্ল চিত্তে বিদায় নিয়েছিলেন।
প্লেটোর একাডেমি ছিল পৃথিবীর প্রথম দিকের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। আর পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার। যদিও সেগুলো বর্তমানের মতো কাঠামোগত প্রতিষ্ঠান ছিল না। আর পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম অপ্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের বিস্তার ঘটতে শুরু করে। যৌথতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো চলত। পরে ব্যক্তিমালিকানার ধারণা উদ্ভাবের পর বিশেষ করে জ্ঞানীদের মধ্যেও জীবন যাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন অনুভূত হয়। সে কারণে তাঁদের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য একটা আর্থিক ব্যাপার দরকার হয়ে পড়ে। তবে তাদের সরাসরি লাভ-ক্ষতির হিসাবের মধ্যে থাকা উচিত নয়, তাতে বাজে প্রভাব দেখা দিতে পারে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজকে দীর্ঘমেয়াদি সুফলের বিবেচনায় রাখা দরকার। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজে পালিত হয়নি।
পাওয়া-না পাওয়ার টানাপোড়েনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানুষগুলো বিপথগামী যে হয়ে পড়েছেন, তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। ফলে একধরনের দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক দূষণ তৈরি হয়েছে। বিষয়টা এতই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে শিক্ষা ও বাণিজ্যের পার্থক্যও তাঁদের কাছে অনুভূত হয় না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিংশ শতাব্দীর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারটা এতটা কেন্দ্রীভূতরূপে ছিল না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জ্ঞানী লোকেরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষায় অধিকতর সচেষ্ট ছিলেন। সামগ্রিকতার রক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক পাহারাদারির দরকার পড়ত না। কেননা তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক, অর্থাৎ সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্রীভূত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখা দিতে শুরু করে। এ সময়েই বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক। অর্থের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে ব্যবসায়িক চিন্তার ব্যাপক প্রভাব, যাকে বহুজাতিক সংস্কৃতিও বলা যায়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনিয়ম হতো না, এমন নয়। তবে দুই নম্বরিটা ছিল প্রধানত সুলভে সম্মান পাওয়ার উপায়। কিন্তু বহুজাতিক নৈতিকতার সরাসরি প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাভ-ক্ষতির নির্মম হিসাব ঢুকে পড়ে। যার এখন বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা, সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ফলে দেশে তো সেই অর্থে গবেষণামূলক বিজ্ঞান পত্রিকা নেই বললেই চলে। তা ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের ‘নেচার’ ও ‘সায়েন্স’-এর মতো পত্রিকাগুলোতে ছাপানো গবেষণাপত্র দেখলেই বোঝা যায় বেশির ভাগেরই কোনো ফলোআপ নেই। ছাপা হয় আর হারিয়ে যায়। কেউ আর মনে রাখে না।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকাগুলোতে ভুল স্বীকার করে গবেষণাপত্র প্রত্যাহারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। একাডেমি থেকে সামাজিক প্রবাহ বা অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিজ্ঞানকে আত্মোপলব্ধির জায়গায় নিতে পারছে না। নিচ্ছে কৌশল এবং লাভ-ক্ষতির জায়গা থেকে। সরাসরি লাভ-ক্ষতির কথা বিবেচনা না করে ব্রিটিশরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল বেশ কিছু দিন আগেও। সে জায়গাটাও এখন পড়তির দিকে। আর আমাদের দেশ তো সে রকম জায়গায় আসতেই পারেনি।
অথচ শিক্ষা মানে জীবনকে মহা বৈশ্বিক দৃষ্টিতে দেখার প্রণোদনা, মানুষের প্রতি মানুষের মমতা আর বৈচিত্র্যময় বিশাল কর্মক্ষেত্র। যেখানে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে। তারই প্রতিফলন আজকের পৃথিবীতে দেখার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষায় কখনো এ কথাগুলো সেভাবে বলা হয়নি বা বলতে দেওয়া হয়নি। সবকিছু নেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো অর্থে। বিজ্ঞান সব সময় দেখিয়েছে বিশ্বজগতের সবকিছু কী প্রবলভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর আমরা নিয়েছি কৌশল ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে। তাহলে বিশ্বের কাছ থেকে মানবিকতা, সহমর্মিতা কেন আশা করব?
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
আসিফ

একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
এক শ বছর আগে আইনস্টাইন বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ কোনো শিক্ষার্থীকে জ্ঞানী করে তোলা নয়, সমাজের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতা করে চলার মানসিকতা নিয়ে বড় করে তোলা।’ আবার জগদীশচন্দ্র বসু বলেছেন, ‘সবার একজন হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’ তাহলে সমাজ থেকে সহমর্মিতা, সহনশীলতা, নমনীয়তা মানুষের মধ্য থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে কেন?
১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড বর্ষণ শুরু হয়েছে। কোনোভাবেই বৃষ্টি থামছে না। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বড় আকারের একটা বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময়ই আইনস্টাইনের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ‘সময়ের প্রহেলিকা’ শিরোনামে একটি বক্তৃতা ঢাকা পরমাণু শক্তি কমিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় আমার এক শুভানুধ্যায়ী বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীনের অনুরোধে বিজ্ঞান লেখক আবদূল্লাহ আল-মুতীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সেই মোতাবেক খ্যাতনামা এই বিজ্ঞান লেখকের বাসায় এক দুপুরে যাওয়া হয়। বাসায় যাওয়ার পর তাঁর আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
সচিব পর্যায়ে চাকরি করার পরও তাঁর রুমে কোনো বিলাসিতার আড়ম্বরতা চোখে পড়েনি। বই দিয়ে ঠাসা মাঝারি আকৃতির একটি রুম। সেখানেই বসার ব্যবস্থা। পড়াশোনা, সে-সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন তা বোঝা গেল। কুশলাদি জানার পর তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতে থাকলেন; বিশেষ করে পত্র-পত্রিকায় লেখা ও টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক শ্রোতাদের নানা প্রতিক্রিয়া। এ রকম একটা প্রাসঙ্গিক জায়গা ধরে বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীন বলে উঠলেন, ‘আচ্ছা স্যার, তাহলে তো পাবলিক অনুষ্ঠানগুলোও খুব জরুরি।’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই। তবে এটি অথেনটিক হতে হবে।’
কিন্তু এই অথেনটিকের বিচার করবে কে? বই পড়া, ডকুমেন্টারি দেখা এবং সে-সম্পর্কে আলোচনা করাও তো একধরনের মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চার একটা পথ হতে পারে। এটা শুধু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করবেন, এমন তো কোনো কথা হতে পারে না। যে কেউ তো তা করতে পারেন। তা না হলে জ্ঞানের বিস্তার ঘটবে কেমন করে, গণমুখী চর্চাই বা হবে কেমন করে?
তা ছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াবেন এবং ডিগ্রি প্রদান করবেন? জ্ঞানচর্চার সঙ্গে যুক্ত হবেন না, সমাজের অন্যান্য প্রবাহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটাবেন না?
লেখা বা কথা বলার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কৌতূহল জাগানো আর আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো। সেটা কোন পথে বিস্তার ঘটাবে, আলোচনার প্রকৃতিই তা বলে দিতে পারে। আর অন্যান্য মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা যুক্ত হলে সেটা কতটা সংগতিপূর্ণ হবে, তারও একটা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে সঠিকপথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এর জন্যও একটা পেশাদারি থাকা উচিত।
পৃথিবীতে একসময় প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চা ছিল না। ক্রমে ক্রমে অপ্রাতিষ্ঠানিক লোকজ ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এটি গড়ে উঠেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা অর্জিত জ্ঞানকে কাঠামো দিয়েছিল, ধাপে ধাপে এগোনোর শক্তি দিয়েছিল। এটা ডকুমেন্টেশন এবং সংরক্ষণের সুবিধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু নতুন নতুন চিন্তা ও ধারণার উদ্ভব ঘটাতে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চাকে বন্ধ করতে বলেনি। এটা বন্ধ হলে একটা পর্যায়ে নতুন চিন্তার উদ্ভব ও বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং একই গোলকধাঁধায় ধাক্কা খাবে। এ জন্য কৌতূহল সৃষ্টি এবং বারবার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঠিক পথ ধরে সত্যকে উদ্ঘাটন করা উচিত। এটা কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা নিয়ম মেনে হতে পারে না। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত নিজস্ব চর্চার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চার সংযোগ সেতু তৈরি করা। এটা সহনশীলতা, নমনীয়তার পাশাপাশি বোঝাপড়ার বিস্তার ঘটাবে। আবদূল্লাহ আল-মুতী যে স্বগতোক্তি করলেন, তা অবশ্য ঠিক। ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তিনি এসেছিলেন বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এবং উৎফুল্ল চিত্তে বিদায় নিয়েছিলেন।
প্লেটোর একাডেমি ছিল পৃথিবীর প্রথম দিকের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। আর পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার। যদিও সেগুলো বর্তমানের মতো কাঠামোগত প্রতিষ্ঠান ছিল না। আর পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম অপ্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের বিস্তার ঘটতে শুরু করে। যৌথতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো চলত। পরে ব্যক্তিমালিকানার ধারণা উদ্ভাবের পর বিশেষ করে জ্ঞানীদের মধ্যেও জীবন যাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন অনুভূত হয়। সে কারণে তাঁদের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য একটা আর্থিক ব্যাপার দরকার হয়ে পড়ে। তবে তাদের সরাসরি লাভ-ক্ষতির হিসাবের মধ্যে থাকা উচিত নয়, তাতে বাজে প্রভাব দেখা দিতে পারে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজকে দীর্ঘমেয়াদি সুফলের বিবেচনায় রাখা দরকার। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজে পালিত হয়নি।
পাওয়া-না পাওয়ার টানাপোড়েনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানুষগুলো বিপথগামী যে হয়ে পড়েছেন, তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। ফলে একধরনের দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক দূষণ তৈরি হয়েছে। বিষয়টা এতই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে শিক্ষা ও বাণিজ্যের পার্থক্যও তাঁদের কাছে অনুভূত হয় না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিংশ শতাব্দীর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারটা এতটা কেন্দ্রীভূতরূপে ছিল না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জ্ঞানী লোকেরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষায় অধিকতর সচেষ্ট ছিলেন। সামগ্রিকতার রক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক পাহারাদারির দরকার পড়ত না। কেননা তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক, অর্থাৎ সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্রীভূত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখা দিতে শুরু করে। এ সময়েই বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক। অর্থের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে ব্যবসায়িক চিন্তার ব্যাপক প্রভাব, যাকে বহুজাতিক সংস্কৃতিও বলা যায়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনিয়ম হতো না, এমন নয়। তবে দুই নম্বরিটা ছিল প্রধানত সুলভে সম্মান পাওয়ার উপায়। কিন্তু বহুজাতিক নৈতিকতার সরাসরি প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাভ-ক্ষতির নির্মম হিসাব ঢুকে পড়ে। যার এখন বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা, সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ফলে দেশে তো সেই অর্থে গবেষণামূলক বিজ্ঞান পত্রিকা নেই বললেই চলে। তা ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের ‘নেচার’ ও ‘সায়েন্স’-এর মতো পত্রিকাগুলোতে ছাপানো গবেষণাপত্র দেখলেই বোঝা যায় বেশির ভাগেরই কোনো ফলোআপ নেই। ছাপা হয় আর হারিয়ে যায়। কেউ আর মনে রাখে না।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকাগুলোতে ভুল স্বীকার করে গবেষণাপত্র প্রত্যাহারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। একাডেমি থেকে সামাজিক প্রবাহ বা অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিজ্ঞানকে আত্মোপলব্ধির জায়গায় নিতে পারছে না। নিচ্ছে কৌশল এবং লাভ-ক্ষতির জায়গা থেকে। সরাসরি লাভ-ক্ষতির কথা বিবেচনা না করে ব্রিটিশরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল বেশ কিছু দিন আগেও। সে জায়গাটাও এখন পড়তির দিকে। আর আমাদের দেশ তো সে রকম জায়গায় আসতেই পারেনি।
অথচ শিক্ষা মানে জীবনকে মহা বৈশ্বিক দৃষ্টিতে দেখার প্রণোদনা, মানুষের প্রতি মানুষের মমতা আর বৈচিত্র্যময় বিশাল কর্মক্ষেত্র। যেখানে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে। তারই প্রতিফলন আজকের পৃথিবীতে দেখার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষায় কখনো এ কথাগুলো সেভাবে বলা হয়নি বা বলতে দেওয়া হয়নি। সবকিছু নেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো অর্থে। বিজ্ঞান সব সময় দেখিয়েছে বিশ্বজগতের সবকিছু কী প্রবলভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর আমরা নিয়েছি কৌশল ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে। তাহলে বিশ্বের কাছ থেকে মানবিকতা, সহমর্মিতা কেন আশা করব?
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত

একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
এক শ বছর আগে আইনস্টাইন বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ কোনো শিক্ষার্থীকে জ্ঞানী করে তোলা নয়, সমাজের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতা করে চলার মানসিকতা নিয়ে বড় করে তোলা।’ আবার জগদীশচন্দ্র বসু বলেছেন, ‘সবার একজন হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’ তাহলে সমাজ থেকে সহমর্মিতা, সহনশীলতা, নমনীয়তা মানুষের মধ্য থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে কেন?
১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড বর্ষণ শুরু হয়েছে। কোনোভাবেই বৃষ্টি থামছে না। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বড় আকারের একটা বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময়ই আইনস্টাইনের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ‘সময়ের প্রহেলিকা’ শিরোনামে একটি বক্তৃতা ঢাকা পরমাণু শক্তি কমিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় আমার এক শুভানুধ্যায়ী বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীনের অনুরোধে বিজ্ঞান লেখক আবদূল্লাহ আল-মুতীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সেই মোতাবেক খ্যাতনামা এই বিজ্ঞান লেখকের বাসায় এক দুপুরে যাওয়া হয়। বাসায় যাওয়ার পর তাঁর আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
সচিব পর্যায়ে চাকরি করার পরও তাঁর রুমে কোনো বিলাসিতার আড়ম্বরতা চোখে পড়েনি। বই দিয়ে ঠাসা মাঝারি আকৃতির একটি রুম। সেখানেই বসার ব্যবস্থা। পড়াশোনা, সে-সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন তা বোঝা গেল। কুশলাদি জানার পর তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতে থাকলেন; বিশেষ করে পত্র-পত্রিকায় লেখা ও টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক শ্রোতাদের নানা প্রতিক্রিয়া। এ রকম একটা প্রাসঙ্গিক জায়গা ধরে বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীন বলে উঠলেন, ‘আচ্ছা স্যার, তাহলে তো পাবলিক অনুষ্ঠানগুলোও খুব জরুরি।’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই। তবে এটি অথেনটিক হতে হবে।’
কিন্তু এই অথেনটিকের বিচার করবে কে? বই পড়া, ডকুমেন্টারি দেখা এবং সে-সম্পর্কে আলোচনা করাও তো একধরনের মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চার একটা পথ হতে পারে। এটা শুধু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করবেন, এমন তো কোনো কথা হতে পারে না। যে কেউ তো তা করতে পারেন। তা না হলে জ্ঞানের বিস্তার ঘটবে কেমন করে, গণমুখী চর্চাই বা হবে কেমন করে?
তা ছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াবেন এবং ডিগ্রি প্রদান করবেন? জ্ঞানচর্চার সঙ্গে যুক্ত হবেন না, সমাজের অন্যান্য প্রবাহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটাবেন না?
লেখা বা কথা বলার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কৌতূহল জাগানো আর আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো। সেটা কোন পথে বিস্তার ঘটাবে, আলোচনার প্রকৃতিই তা বলে দিতে পারে। আর অন্যান্য মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা যুক্ত হলে সেটা কতটা সংগতিপূর্ণ হবে, তারও একটা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে সঠিকপথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এর জন্যও একটা পেশাদারি থাকা উচিত।
পৃথিবীতে একসময় প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চা ছিল না। ক্রমে ক্রমে অপ্রাতিষ্ঠানিক লোকজ ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এটি গড়ে উঠেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা অর্জিত জ্ঞানকে কাঠামো দিয়েছিল, ধাপে ধাপে এগোনোর শক্তি দিয়েছিল। এটা ডকুমেন্টেশন এবং সংরক্ষণের সুবিধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু নতুন নতুন চিন্তা ও ধারণার উদ্ভব ঘটাতে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চাকে বন্ধ করতে বলেনি। এটা বন্ধ হলে একটা পর্যায়ে নতুন চিন্তার উদ্ভব ও বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং একই গোলকধাঁধায় ধাক্কা খাবে। এ জন্য কৌতূহল সৃষ্টি এবং বারবার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঠিক পথ ধরে সত্যকে উদ্ঘাটন করা উচিত। এটা কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা নিয়ম মেনে হতে পারে না। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত নিজস্ব চর্চার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চার সংযোগ সেতু তৈরি করা। এটা সহনশীলতা, নমনীয়তার পাশাপাশি বোঝাপড়ার বিস্তার ঘটাবে। আবদূল্লাহ আল-মুতী যে স্বগতোক্তি করলেন, তা অবশ্য ঠিক। ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তিনি এসেছিলেন বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এবং উৎফুল্ল চিত্তে বিদায় নিয়েছিলেন।
প্লেটোর একাডেমি ছিল পৃথিবীর প্রথম দিকের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। আর পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার। যদিও সেগুলো বর্তমানের মতো কাঠামোগত প্রতিষ্ঠান ছিল না। আর পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম অপ্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের বিস্তার ঘটতে শুরু করে। যৌথতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো চলত। পরে ব্যক্তিমালিকানার ধারণা উদ্ভাবের পর বিশেষ করে জ্ঞানীদের মধ্যেও জীবন যাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন অনুভূত হয়। সে কারণে তাঁদের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য একটা আর্থিক ব্যাপার দরকার হয়ে পড়ে। তবে তাদের সরাসরি লাভ-ক্ষতির হিসাবের মধ্যে থাকা উচিত নয়, তাতে বাজে প্রভাব দেখা দিতে পারে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজকে দীর্ঘমেয়াদি সুফলের বিবেচনায় রাখা দরকার। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজে পালিত হয়নি।
পাওয়া-না পাওয়ার টানাপোড়েনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানুষগুলো বিপথগামী যে হয়ে পড়েছেন, তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। ফলে একধরনের দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক দূষণ তৈরি হয়েছে। বিষয়টা এতই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে শিক্ষা ও বাণিজ্যের পার্থক্যও তাঁদের কাছে অনুভূত হয় না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিংশ শতাব্দীর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারটা এতটা কেন্দ্রীভূতরূপে ছিল না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জ্ঞানী লোকেরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষায় অধিকতর সচেষ্ট ছিলেন। সামগ্রিকতার রক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক পাহারাদারির দরকার পড়ত না। কেননা তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক, অর্থাৎ সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্রীভূত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখা দিতে শুরু করে। এ সময়েই বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক। অর্থের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে ব্যবসায়িক চিন্তার ব্যাপক প্রভাব, যাকে বহুজাতিক সংস্কৃতিও বলা যায়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনিয়ম হতো না, এমন নয়। তবে দুই নম্বরিটা ছিল প্রধানত সুলভে সম্মান পাওয়ার উপায়। কিন্তু বহুজাতিক নৈতিকতার সরাসরি প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাভ-ক্ষতির নির্মম হিসাব ঢুকে পড়ে। যার এখন বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা, সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ফলে দেশে তো সেই অর্থে গবেষণামূলক বিজ্ঞান পত্রিকা নেই বললেই চলে। তা ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের ‘নেচার’ ও ‘সায়েন্স’-এর মতো পত্রিকাগুলোতে ছাপানো গবেষণাপত্র দেখলেই বোঝা যায় বেশির ভাগেরই কোনো ফলোআপ নেই। ছাপা হয় আর হারিয়ে যায়। কেউ আর মনে রাখে না।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকাগুলোতে ভুল স্বীকার করে গবেষণাপত্র প্রত্যাহারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। একাডেমি থেকে সামাজিক প্রবাহ বা অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিজ্ঞানকে আত্মোপলব্ধির জায়গায় নিতে পারছে না। নিচ্ছে কৌশল এবং লাভ-ক্ষতির জায়গা থেকে। সরাসরি লাভ-ক্ষতির কথা বিবেচনা না করে ব্রিটিশরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল বেশ কিছু দিন আগেও। সে জায়গাটাও এখন পড়তির দিকে। আর আমাদের দেশ তো সে রকম জায়গায় আসতেই পারেনি।
অথচ শিক্ষা মানে জীবনকে মহা বৈশ্বিক দৃষ্টিতে দেখার প্রণোদনা, মানুষের প্রতি মানুষের মমতা আর বৈচিত্র্যময় বিশাল কর্মক্ষেত্র। যেখানে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে। তারই প্রতিফলন আজকের পৃথিবীতে দেখার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষায় কখনো এ কথাগুলো সেভাবে বলা হয়নি বা বলতে দেওয়া হয়নি। সবকিছু নেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো অর্থে। বিজ্ঞান সব সময় দেখিয়েছে বিশ্বজগতের সবকিছু কী প্রবলভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর আমরা নিয়েছি কৌশল ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে। তাহলে বিশ্বের কাছ থেকে মানবিকতা, সহমর্মিতা কেন আশা করব?
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
১৬ নভেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
১৬ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
১৬ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
১৬ নভেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫