Ajker Patrika

যৌন হয়রানি ও আমাদের সমাজ

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ০৯ মে ২০২২, ১০: ৩৮
যৌন হয়রানি ও আমাদের সমাজ

ধর্ষণ বিষয়টি কি খেলো হয়ে গেছে আমাদের সমাজে? আমরা কি ধর্ষণ বিষয়ে নতুন কোনো মূল্যবোধ তৈরি করছি? যে মূল্যবোধের জেরে ধর্ষক সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখার পথ খুঁজে পাবে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’—এই মতবাদে যারা বিশ্বাসী, তাদের জন্য কিন্তু ধর্ষণের একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলা হচ্ছে। এই কুকর্ম সম্পাদন করা মানুষটিকে কী করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তারও বেশ কিছু আলামত দেখতে পাচ্ছি। এ কারণেই এ বিষয়ে লেখা দরকার। লেখার উদ্দেশ্য হলো, বিষয়টিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো। যেভাবে ধর্ষণের পর বিয়ের ব্যবস্থা করে খুশি হচ্ছে মানুষ, তাতে যে আশঙ্কার জন্ম হচ্ছে মনে, সে কথাও বলতে হবে।

দুই.
নারী নির্যাতক একধরনের মানুষকে সহজেই শনাক্ত করা যায়।

হঠাৎ নানাভাবে একগাদা টাকা যদি চলে আসে কারও হাতে, তাহলে সে মানুষ ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করে। ব্যাংকঋণ নিয়ে হোক, অন্য কোনো ব্যবসার মাধ্যমে হোক, আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠলে সেই মানুষের মনে বেশ কিছু ‘খায়েশ’-এর জন্ম হয়। বহুকাল আগে থেকেই এ ধরনের পুরুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল মদ, নারী, জুয়া। সেই ঐতিহ্যবাহী পথটিই এখনকার সদ্য ধনী হওয়া মানুষেরাও ব্যবহার করে।

আশঙ্কা বাড়ে তাদের সন্তানদের নিয়ে। কাঁচা টাকার মধ্যে বসবাস করতে করতে তারা মনে করে, সবকিছুই টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব। তখন এই টাকার আবর্তে ফেলেই তারা ‘নারী শিকারে’ প্রবৃত্ত হয়।

পাকিস্তান আমলে ২২ পুঁজিপতির কথা শোনা যেত। এখন পুঁজিপতির সংখ্যা অগুনতি। তাঁদের অনেকেই ব্যাংকঋণ নিয়ে পুঁজিপতি হয়েছেন। সেই ঋণ কারও কারও ক্ষেত্রে হাজার কোটি টাকার ওপরে।

সমাজে বা দেশের অর্থনীতিতে পুঁজি যখন যথেচ্ছভাবে ঘুরে বেড়ায়, তখন স্থিতিশীলতা আসার আগপর্যন্ত লুটপাট চলে। এ বহু পুরোনো কথা। বলা হয়ে থাকে, লুণ্ঠনকারী দুর্বৃত্তরা টাকার বিছানায় স্থিত হয়ে বসার পরই কেবল তাঁরা তাঁদের সম্পদের একটি অংশ মানবকল্যাণের জন্য ব্যয় করে থাকেন। তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম সেই লুটপাটের কালিমা থেকে মুক্ত হতে চায় এবং জনকল্যাণকর আরও অনেক কাজ করে।

আমাদের পুঁজিপতিদের সন্তানদের কেউ কেউ সে পথে হাঁটেন বটে, কিন্তু তাঁদের অনেককেই দেখা যায় বিভ্রান্তির পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁদের চোখে কোনো মেয়ে পড়লে তাঁরই অনুগত সভাসদদের দ্বারা মেয়েটাকে ছলে-বলে-কৌশলে হুজুরের কাছে হাজির করা হয়।

এটা সমাজের ওপরদিককার ঘটনা। মাঝে মাঝে কোনো মেয়ে কাউকে দোষারোপ করে আত্মহত্যা করলে কিংবা কোনো হোটেলে পার্টি করার ছলে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করলেই কেবল এ ধরনের ঘটনা আমজনতার সামনে আসে। নইলে সবার অগোচরে এই যৌনাচার চলতেই থাকে।

তিন.
তার মানে এই নয় যে পয়সাকড়িওয়ালা, সমাজের ওপরমহলেই এই অনাচার চলছে। ধর্ষণ, যৌন হয়রানির ব্যাপারটা যেকোনো সাধারণ অফিসেও ঘটতে পারে। ঘটছেও। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটতে পারে, ঘটছেও। ঘটতে পারে যেকোনো মাদ্রাসায়, ঘটছেও। সাংবাদিকদের মধ্যে যৌন নির্যাতক নেই? আছে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো নম্বর পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে কিংবা খারাপ নম্বর দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের কেউ কেউ তাঁদের ছাত্রীদের ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এ রকম অভিযোগ অনেক।

সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিষ্ঠিত শিক্ষকের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তাঁরই এক ছাত্রী। এই শিক্ষক কিছুকাল আগে ছিলেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। যৌন হয়রানির অভিযোগ এবারই প্রথম ওঠেনি তাঁর নামে। কিন্তু এবার ফেঁসে গেলেন তিনি। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর সত্য হলে বিভাগটির একাডেমিক সভায় তাঁর কৃতকর্মের কারণে তাঁকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগটি কতটা গুরুতর, তা বোঝা যাবে এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে একাডেমিক কমিটির আরও কিছু সিদ্ধান্ত থেকে। এই অধ্যাপককে একাডেমিক সভায় ডাকা হবে না, তাঁর নামে বরাদ্দকৃত কক্ষ বাতিল করা হবে। সহজ করে বললে, ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষার হলে উপস্থিত থাকা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা, এমফিল-পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধান, পরীক্ষা কমিটির কাজে অংশ নেওয়া থেকে তিনি বিরত থাকবেন।

সেই সভায় উল্লিখিত অধ্যাপক ক্ষমাপ্রার্থনা ও করুণাভিক্ষা করেন। সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, ‘ক্ষমাপ্রার্থনা ও করুণাভিক্ষার ঘটনায় অপরাধ স্বীকারের মাধ্যমে বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।’

কিন্তু প্রকাশ্যে সেই অধ্যাপক বলেছেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক।

সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককেও অতিসম্প্রতি বরখাস্ত করা হয়েছে যৌন হয়রানির অভিযোগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ জন শিক্ষার্থী তাঁর নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।

একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার পর বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ থেকে যখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল না, তখন সেই ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এরপর বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিভাগের চেয়ারম্যান বিষয়টি ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেল’-এ পাঠালে সেই সেল শিক্ষককে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অপসারণের জন্য সুপারিশ করে। তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।

এই হলো শৈলচূড়া। খোঁজ নিলে এ রকম ঘটনা কত যে মিলবে, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।

শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক। তাঁর কাছে নিরাপদ থাকবে শিক্ষার্থী। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সে জায়গাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জাহীদ রেজা নূরচার.
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও নিরাপদ নয়। একসময় হয়তো মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে তা লুকিয়ে রাখা হতো। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এখন জানা হয়ে গেছে, মাদ্রাসায় যৌন নির্যাতন চলে। কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসার শিক্ষকদের কারও কারও আচরণ এতটাই ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে যে তাতে এই শঙ্কা হয়, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে কি না।

ঢাকার খুব কাছের একটি জেলার এক মাদ্রাসার একজন শিক্ষক গত বছরের দ্বিতীয় ভাগে মাদ্রাসার নয় বছর বয়সী এক ছেলেকে নিজ ঘরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। কাউকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেন। কিন্তু ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষণের সত্যতা পায়।

দক্ষিণের একটি জেলায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকেও একজন মাদ্রাসার শিক্ষক ধর্ষণ করেন। ঢাকার অদূরে গোমতী নদীর তীরে নয় বছর বয়সী এক ছেলেকে ধর্ষণ করেছেন আরেকজন মাদ্রাসাশিক্ষক। গুগলে খুঁজতে গেলে মাদ্রাসাশিক্ষক কর্তৃক শিশু ধর্ষণের এত বেশি খবর পাওয়া যাবে যে মাদ্রাসায় শিশুশিক্ষার পাশাপাশি এসব অরাজকতার কথা ভেবে বিমূঢ় হয়ে যাবে মন।

পাঁচ.
সাংবাদিকদের নিয়েও যৌন নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদপত্রে। প্রচারিত হয়েছে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। টেলিভিশন মাধ্যমের একজন বড় কর্তা এবং বড় সাংবাদিক নেতাকে তো যৌন হয়রানির অভিযোগে একটি টিভি চ্যানেল থেকে বরখাস্তও করা হয়েছে। তাঁর বিচারের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও হয়েছিল। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে চাকরি করতে গিয়ে নারীরা যৌন হয়রানির মুখোমুখি হন, সে রকম খবরও প্রকাশিত হয় বিস্তর। সংবাদমাধ্যমে নীতি-নৈতিকতার যে পরিবেশ থাকা দরকার, কিছু মানুষের অনৈতিক আচরণের কারণে তা আর থাকে না। তখন গোটা প্রতিষ্ঠান নিয়েই মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম হয়।

মুশকিল হলো, এসব অভিযোগের পর যে বিচার হওয়া দরকার, সেই বিচারের যে শাস্তি হওয়া দরকার, তা হয় না বলেই পরবর্তীকালে নতুন নতুন নেতারা যৌন হয়রানি করে যেতে পারেন।

ছয়.
নতুন আরেক বাস্তবতা আমাদের শিহরিত করে। দেখা যাচ্ছে, কেউ ধর্ষণ করার পর ধর্ষণের শিকারকে বিয়ে করে তাঁর অপরাধ ঢেকে ফেলছেন। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতারাও। তাঁরা হয়তো ভাবছেন, একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের মধুর সমাপ্তি ঘটাচ্ছেন তাঁরা।

কিন্তু একটা অপরাধকে ঢেকে দেওয়ার এই প্রবণতা মারাত্মক কোনো ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। এমন ঘটনাও রয়েছে, যেখানে চিহ্নিত চার ধর্ষকের মধ্যে একজনকে বিয়ে করতে বলা হয়েছে ধর্ষণের শিকার নারীকে।

ধর্ষণের অপরাধ কি আপসযোগ্য? একেবারেই নয়। এই অপরাধ আপসযোগ্য হলে ভবিষ্যতে যে ঘটনা ঘটবে, তা বলে রাখি।

যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীকে দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হন, সেই নারী যদি সেই পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক করতে না চান, তাহলে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হতে পারে এবং ধর্ষণের পর সেই বদমাশটা মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাইতে পারে। সমাজপতিরা উল্লাস করতে করতে দেনমোহর ধার্য করে চার হাতের মিলন ঘটিয়ে দিতে পারেন!

ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকারের বিয়ে মেনে নিলে কী রকম অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, সেটা কি ভেবে দেখছে কেউ?

সাত.
যা বলা হলো, তা শৈলচূড়ার উপরিভাগমাত্র। সমাজের সর্বক্ষেত্রেই এই ধর্ষণকামী মানসিকতা বেড়ে উঠছে। যৌন হয়রানি ঠেকানোর জন্য যে পারিবারিক, সামাজিক শিক্ষা দরকার, স্কুলে লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে যে সচেতনতা গড়ে দেওয়া দরকার, তা আমাদের নেই। আমরা একেবারেই সচেতন নেই। বিপদ যতক্ষণ নিজের ঘরে এসে কড়া না নাড়ে, ততক্ষণ আমরা কেউ তা নিয়ে ভাবি না।

এই উদাসীনতা একটি জাতিকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। কবে আর সজাগ হব আমরা?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত