চিররঞ্জন সরকার

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সুমন ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁর পরিবারের দাবি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তাঁকে তুলে নিয়ে গেছেন। তাঁর বোন সানজিদা ইসলাম গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী। তিনি জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যখন তাঁদের বাসায় যান, তখন বাইরে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠনের কিছু ব্যক্তি। ‘মায়ের কান্না’ ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি, কারাদণ্ডের শিকার ও চাকরিচ্যুত সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন।
এই ঘটনার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক বিরোধও চলছে।
প্রশ্ন উঠেছে কূটনীতিকদের অধিকারের সীমা নিয়ে। তাঁদের কর্মতৎপরতা নিয়ে। একজন রাষ্ট্রদূত বিদেশি নাগরিক। তিনি চাইলেই বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতার মতো চলাফেরা করতে পারেন না। ইচ্ছে হলেই কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পক্ষে বক্তব্য রাখতে পারেন না। আবার ইচ্ছে হলেই কোনো দলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন না। তাঁকে সব দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সমান সদ্ভাব নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দায়িত্ব পালনকারী অনেক কূটনীতিক ফ্রি-স্টাইলে চলেন, ফ্রি-স্টাইলে কথা বলেন। তাঁদের কথা ও তৎপরতা অনেক ক্ষেত্রেই সব রকম কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যায়।
এর জন্য অবশ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বই দায়ী। আমাদের দেশে বিরোধী দল নিজের শক্তির ওপর আস্থাশীল নয়। তারা কূটনীতিকদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি মনে করে। কূটনীতিকদের কাছে সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করে। সরকারও নিজেদের নানা দুর্বলতা ঢাকতে কূটনীতিকদের সমীহ করে চলে। ফলে কূটনীতিকেরা নিজেদের ‘নিধিরাম’ ভাবা শুরু করেন; যা কূটনীতির মূল দর্শনের সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়।
প্রসঙ্গত, ইংরেজি ‘ডিপ্লোমেসি’র বাংলা করা হয়েছে কূটনীতি। কূট শব্দটি বাংলা ভাষায় নেতিবাচক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। কূট মানে হচ্ছে কুটিল (কূটবুদ্ধি); জটিল, দুর্বোধ্য (কূটপ্রশ্ন) ; মিথ্যা, কপট, শঠ (কূটচরিত্র) ; জালিয়াতি, জোচ্চুরি, কারসাজি বা ঘোরপ্যাঁচযুক্ত (কূটচাল)। অভিধান মতে, কূটনীতি হচ্ছে কুটিল নীতি; কপটতা; কৌশলপূর্ণ রাজনীতি (প্রধানত এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের)। সেই দিক থেকে ‘ডিপ্লোমেসি’ শব্দের অর্থ হিসেবে কূটনীতি শব্দটি কিছুটা বেমানান। একজন মানুষ কূট হলেও হতে পারেন। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের নীতি কী করে কূট বা নেতিবাচক হয়?
কূটনীতির মানে যা-ই হোক না কেন, বর্তমান যুগ হচ্ছে কূটনীতির যুগ। সবকিছুতেই ‘কূটনীতি’ কথাটা ব্যবহার করা হয়। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যেমন কূটনৈতিক উদ্যোগের কথা বলা হয়, আবার করোনার টিকার জন্যও যথাযথ ‘কূটনৈতিক উদ্যোগের’ কথা বলা হয়। এভাবে তেল কূটনীতি, জল কূটনীতি, সমুদ্র কূটনীতি, টিকা কূটনীতি, অভিবাসন কূটনীতি, জলবায়ু কূটনীতি, বাণিজ্য কূটনীতি, অস্ত্র কূটনীতি ইত্যাদি নানা কূটনীতির কথা শোনা যায়। বর্তমানে কূটনীতির মারপ্যাঁচে যেমন এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে ঘায়েল করছে, আবার কূটনীতির জোরে সুবিধাও আদায় করছে।
কূটনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘ডিপ্লোমেসি’ শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘ডিপ্লোন’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। ‘ডিপ্লোন’ মানে হচ্ছে ভাঁজ করা। কাপড়চোপড় ভাঁজ করে রাখার মতো রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ককে ভাঁজ করে রাখা থেকেই কি এ শব্দের উৎপত্তি? হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই! কূটনীতি ব্যাপারটি অত্যন্ত পুরোনো। রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে সঙ্গে কূটনীতির ধারণাও এসেছে। প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। প্রয়োজনে সেই সব নগররাষ্ট্রের মধ্যে দূত বিনিময় হতো। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ভারতেও দূত বিনিময়ের রীতি প্রচলিত ছিল। পঞ্চদশ শতক থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রে দূতাবাস স্থাপন শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে, ফরাসিরা সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় আলোচককে বোঝার জন্য ‘কূটনীতিক’ (কূটনৈতিক) শব্দটি ব্যবহার শুরু করে।
আধুনিক বিশ্বে কূটনীতি বলতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থে সাহায্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক বোঝায়। কূটনীতির সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির সম্পর্ক নিবিড়। নিজ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নতি ও অন্যান্য প্রয়োজনে প্রতিটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করে। কূটনীতির মাধ্যমে সেই নীতি রূপায়িত হয়।
কূটনীতি আসলে সহজ নয়। এটা অত্যন্ত জটিল একটা কাজ। ইংরেজি ভাষায় ডিপ্লোমেসি শব্দটির একটি বহু প্রচলিত সংজ্ঞা পাওয়া যায়।সংজ্ঞাটি হলো, যখন তুমি লোকজনকে বোঝাতে পারো যে, যে জিনিসটা তুমি পাবে না, সেটা তুমি মোটেই চাও না—সেই কলাকৌশলের নামই ডিপ্লোমেসি। এই সংজ্ঞার মতো কূটনীতিও আসলে খুবই জটিল একটি কাজ। এর ভাব আলাদা, ভাষা আলাদা। উদ্দেশ্যও আলাদা।ফ্রান্সে প্রচলিত একটি কথা আছে, একজন নারীর সঙ্গে একজন ডিপ্লোম্যাটের পার্থক্য কী?
যদি কোনো নারী ‘না’ বলেন, তার মানে ‘হয়তো’, তিনি যদি ‘হয়তো’ বলেন, তাহলে তার মানে হচ্ছে ‘হ্যাঁ’, আর তিনি যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে তিনি কোনো নারীই নন!
ডিপ্লোম্যাটের ব্যাপারটা ঠিক বিপরীত। কোনো ডিপ্লোম্যাট যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তার মানে ‘হয়তো’, তিনি যদি ‘হয়তো’ বলেন, তাহলে তার মানে হচ্ছে ‘না’, আর তিনি যদি ‘না’ বলেন, তাহলে তিনি কোনো ডিপ্লোম্যাটই নন!
আসলে কূটনীতি হচ্ছে একধরনের আর্ট। একসময় কূটনীতি বলতে কেবল একটি দেশের লাভের কথা ভাবা হতো। বর্তমানে কূটনৈতিক সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে পরিচালনা করা হয়। আধুনিক যুগে বৈদেশিক সম্পর্ক চাট্টিখানি বিষয় নয়। সম্রাট আকবরের সময় অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো-মন্দে বিশেষ কিছু আসত-যেত না। কিন্তু একালে আসে-যায়। কূটনীতি একালে এক কঠিন বিষয়। ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কই হোক বা বন্ধুপ্রতিম সম্পর্কই হোক, মনে করার কারণ নেই যে সবাই সব সময় ভাইয়ের মতো মমতা মাখানো বা বন্ধুর মতো অন্তরঙ্গ আচরণ করবে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে। বৈদেশিক সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থনির্ভর। আমি তোমাকে দেব, তুমি আমাকে দেবে। দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রেম-প্রীতির ব্যাপার নয়; দেওয়া-নেওয়ার বিষয়; মর্যাদা ও স্বার্থরক্ষার বিষয়।
কূটনীতি আসলে কৌশলের খেলা। কূটনীতির ভাষাও তাই আলাদা। কূটনীতির ভাষা সাধারণ ভাষা থেকে খানিকটা ভিন্ন হয়ে থাকে, সেটা সবার জানা। আমরা অনেক সময় ‘কূটনীতির মারপ্যাঁচ’ শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকি। আপনি কিছুই বললেন না, নীরব থাকলেন—তাতেও কিন্তু আসল কথাটি বলা হয়ে যায়। আবার একটি বা দুটি শব্দ বললেন নিছক কৌতুকের ছলে, তাতেও কাজ হাসিল হয়ে যেতে পারে।
কূটনীতিতে কতগুলো শব্দ বহুল ব্যবহৃত। বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় সমার্থক সেই শব্দগুলো (জারগন) কূটনীতিকদের মুখস্থ। এই যেমন, বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু, সমঝোতা, কমফোর্ট জোন, ডায়ালগ, উইন-উইন পজিশন ইত্যাদি। এ ধরনের আরও কিছু শব্দ আছে, যার মূল সুর হলো সহযোগিতা। দ্বিপক্ষীয় হোক বা বহুপক্ষীয়, দ্বিরাষ্ট্রীয় হোক বা বহুরাষ্ট্রীয় অথবা জোটকেন্দ্রিক; কূটনীতি শুরু হয় সহযোগিতার নাম নিয়েই।
সহযোগিতার ইস্যু ছাড়াও কূটনীতিতে আরেকটি শব্দের বেশ কদর—‘বন্ধুত্ব’! মোটামুটি সব দেশের কূটনৈতিক পরিভাষায় এ শব্দটির গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ব্যবহার রয়েছে। কূটনৈতিক নীতিমালার বাইবেল হিসেবে পরিচিত ভিয়েনা কনভেনশনেও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই বন্ধুত্বের কথাই বারবার বলা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় তো বটেই, আঞ্চলিক জোটগুলোও বেশ কায়দা করে এবং নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ‘বন্ধুত্ব’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।
ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্চিল একসময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘কূটনীতি হলো এমন একটা আর্ট যে তুমি কাউকে জাহান্নামে যাও বলবে এমনভাবে, যেন সে তোমার কাছে এসে সেখানে যাওয়ার ঠিকানা খোঁজ করে।’ আর আড়াই হাজার বছর আগে চীনা সমর বিশেষজ্ঞ সান জু পরামর্শ দিয়েছিলেন, যুদ্ধের সর্বোত্তম পথ হলো, একটা গুলি খরচ না করেও শত্রুকে ঘায়েল করা।
আমাদের কূটনীতি যদিও সেই পর্যায়ে উপনীত হতে পারেনি। আমরা এখন পর্যন্ত বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, অভিন্ন স্বার্থ, শান্তি, কল্যাণ ইত্যাদি শব্দ নিয়েই নাড়াচাড়া করি। আমাদের কূটনৈতিক মান নিয়ে যেমন ভাবা দরকার, একই সঙ্গে আমাদের দেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের ভূমিকা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা দরকার।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সুমন ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁর পরিবারের দাবি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তাঁকে তুলে নিয়ে গেছেন। তাঁর বোন সানজিদা ইসলাম গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী। তিনি জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যখন তাঁদের বাসায় যান, তখন বাইরে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠনের কিছু ব্যক্তি। ‘মায়ের কান্না’ ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি, কারাদণ্ডের শিকার ও চাকরিচ্যুত সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন।
এই ঘটনার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক বিরোধও চলছে।
প্রশ্ন উঠেছে কূটনীতিকদের অধিকারের সীমা নিয়ে। তাঁদের কর্মতৎপরতা নিয়ে। একজন রাষ্ট্রদূত বিদেশি নাগরিক। তিনি চাইলেই বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতার মতো চলাফেরা করতে পারেন না। ইচ্ছে হলেই কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পক্ষে বক্তব্য রাখতে পারেন না। আবার ইচ্ছে হলেই কোনো দলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন না। তাঁকে সব দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সমান সদ্ভাব নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দায়িত্ব পালনকারী অনেক কূটনীতিক ফ্রি-স্টাইলে চলেন, ফ্রি-স্টাইলে কথা বলেন। তাঁদের কথা ও তৎপরতা অনেক ক্ষেত্রেই সব রকম কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যায়।
এর জন্য অবশ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বই দায়ী। আমাদের দেশে বিরোধী দল নিজের শক্তির ওপর আস্থাশীল নয়। তারা কূটনীতিকদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি মনে করে। কূটনীতিকদের কাছে সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করে। সরকারও নিজেদের নানা দুর্বলতা ঢাকতে কূটনীতিকদের সমীহ করে চলে। ফলে কূটনীতিকেরা নিজেদের ‘নিধিরাম’ ভাবা শুরু করেন; যা কূটনীতির মূল দর্শনের সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়।
প্রসঙ্গত, ইংরেজি ‘ডিপ্লোমেসি’র বাংলা করা হয়েছে কূটনীতি। কূট শব্দটি বাংলা ভাষায় নেতিবাচক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। কূট মানে হচ্ছে কুটিল (কূটবুদ্ধি); জটিল, দুর্বোধ্য (কূটপ্রশ্ন) ; মিথ্যা, কপট, শঠ (কূটচরিত্র) ; জালিয়াতি, জোচ্চুরি, কারসাজি বা ঘোরপ্যাঁচযুক্ত (কূটচাল)। অভিধান মতে, কূটনীতি হচ্ছে কুটিল নীতি; কপটতা; কৌশলপূর্ণ রাজনীতি (প্রধানত এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের)। সেই দিক থেকে ‘ডিপ্লোমেসি’ শব্দের অর্থ হিসেবে কূটনীতি শব্দটি কিছুটা বেমানান। একজন মানুষ কূট হলেও হতে পারেন। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের নীতি কী করে কূট বা নেতিবাচক হয়?
কূটনীতির মানে যা-ই হোক না কেন, বর্তমান যুগ হচ্ছে কূটনীতির যুগ। সবকিছুতেই ‘কূটনীতি’ কথাটা ব্যবহার করা হয়। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যেমন কূটনৈতিক উদ্যোগের কথা বলা হয়, আবার করোনার টিকার জন্যও যথাযথ ‘কূটনৈতিক উদ্যোগের’ কথা বলা হয়। এভাবে তেল কূটনীতি, জল কূটনীতি, সমুদ্র কূটনীতি, টিকা কূটনীতি, অভিবাসন কূটনীতি, জলবায়ু কূটনীতি, বাণিজ্য কূটনীতি, অস্ত্র কূটনীতি ইত্যাদি নানা কূটনীতির কথা শোনা যায়। বর্তমানে কূটনীতির মারপ্যাঁচে যেমন এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে ঘায়েল করছে, আবার কূটনীতির জোরে সুবিধাও আদায় করছে।
কূটনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘ডিপ্লোমেসি’ শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘ডিপ্লোন’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। ‘ডিপ্লোন’ মানে হচ্ছে ভাঁজ করা। কাপড়চোপড় ভাঁজ করে রাখার মতো রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ককে ভাঁজ করে রাখা থেকেই কি এ শব্দের উৎপত্তি? হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই! কূটনীতি ব্যাপারটি অত্যন্ত পুরোনো। রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে সঙ্গে কূটনীতির ধারণাও এসেছে। প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। প্রয়োজনে সেই সব নগররাষ্ট্রের মধ্যে দূত বিনিময় হতো। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ভারতেও দূত বিনিময়ের রীতি প্রচলিত ছিল। পঞ্চদশ শতক থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রে দূতাবাস স্থাপন শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে, ফরাসিরা সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় আলোচককে বোঝার জন্য ‘কূটনীতিক’ (কূটনৈতিক) শব্দটি ব্যবহার শুরু করে।
আধুনিক বিশ্বে কূটনীতি বলতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থে সাহায্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক বোঝায়। কূটনীতির সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির সম্পর্ক নিবিড়। নিজ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নতি ও অন্যান্য প্রয়োজনে প্রতিটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করে। কূটনীতির মাধ্যমে সেই নীতি রূপায়িত হয়।
কূটনীতি আসলে সহজ নয়। এটা অত্যন্ত জটিল একটা কাজ। ইংরেজি ভাষায় ডিপ্লোমেসি শব্দটির একটি বহু প্রচলিত সংজ্ঞা পাওয়া যায়।সংজ্ঞাটি হলো, যখন তুমি লোকজনকে বোঝাতে পারো যে, যে জিনিসটা তুমি পাবে না, সেটা তুমি মোটেই চাও না—সেই কলাকৌশলের নামই ডিপ্লোমেসি। এই সংজ্ঞার মতো কূটনীতিও আসলে খুবই জটিল একটি কাজ। এর ভাব আলাদা, ভাষা আলাদা। উদ্দেশ্যও আলাদা।ফ্রান্সে প্রচলিত একটি কথা আছে, একজন নারীর সঙ্গে একজন ডিপ্লোম্যাটের পার্থক্য কী?
যদি কোনো নারী ‘না’ বলেন, তার মানে ‘হয়তো’, তিনি যদি ‘হয়তো’ বলেন, তাহলে তার মানে হচ্ছে ‘হ্যাঁ’, আর তিনি যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে তিনি কোনো নারীই নন!
ডিপ্লোম্যাটের ব্যাপারটা ঠিক বিপরীত। কোনো ডিপ্লোম্যাট যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তার মানে ‘হয়তো’, তিনি যদি ‘হয়তো’ বলেন, তাহলে তার মানে হচ্ছে ‘না’, আর তিনি যদি ‘না’ বলেন, তাহলে তিনি কোনো ডিপ্লোম্যাটই নন!
আসলে কূটনীতি হচ্ছে একধরনের আর্ট। একসময় কূটনীতি বলতে কেবল একটি দেশের লাভের কথা ভাবা হতো। বর্তমানে কূটনৈতিক সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে পরিচালনা করা হয়। আধুনিক যুগে বৈদেশিক সম্পর্ক চাট্টিখানি বিষয় নয়। সম্রাট আকবরের সময় অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো-মন্দে বিশেষ কিছু আসত-যেত না। কিন্তু একালে আসে-যায়। কূটনীতি একালে এক কঠিন বিষয়। ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কই হোক বা বন্ধুপ্রতিম সম্পর্কই হোক, মনে করার কারণ নেই যে সবাই সব সময় ভাইয়ের মতো মমতা মাখানো বা বন্ধুর মতো অন্তরঙ্গ আচরণ করবে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে। বৈদেশিক সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থনির্ভর। আমি তোমাকে দেব, তুমি আমাকে দেবে। দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রেম-প্রীতির ব্যাপার নয়; দেওয়া-নেওয়ার বিষয়; মর্যাদা ও স্বার্থরক্ষার বিষয়।
কূটনীতি আসলে কৌশলের খেলা। কূটনীতির ভাষাও তাই আলাদা। কূটনীতির ভাষা সাধারণ ভাষা থেকে খানিকটা ভিন্ন হয়ে থাকে, সেটা সবার জানা। আমরা অনেক সময় ‘কূটনীতির মারপ্যাঁচ’ শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকি। আপনি কিছুই বললেন না, নীরব থাকলেন—তাতেও কিন্তু আসল কথাটি বলা হয়ে যায়। আবার একটি বা দুটি শব্দ বললেন নিছক কৌতুকের ছলে, তাতেও কাজ হাসিল হয়ে যেতে পারে।
কূটনীতিতে কতগুলো শব্দ বহুল ব্যবহৃত। বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় সমার্থক সেই শব্দগুলো (জারগন) কূটনীতিকদের মুখস্থ। এই যেমন, বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু, সমঝোতা, কমফোর্ট জোন, ডায়ালগ, উইন-উইন পজিশন ইত্যাদি। এ ধরনের আরও কিছু শব্দ আছে, যার মূল সুর হলো সহযোগিতা। দ্বিপক্ষীয় হোক বা বহুপক্ষীয়, দ্বিরাষ্ট্রীয় হোক বা বহুরাষ্ট্রীয় অথবা জোটকেন্দ্রিক; কূটনীতি শুরু হয় সহযোগিতার নাম নিয়েই।
সহযোগিতার ইস্যু ছাড়াও কূটনীতিতে আরেকটি শব্দের বেশ কদর—‘বন্ধুত্ব’! মোটামুটি সব দেশের কূটনৈতিক পরিভাষায় এ শব্দটির গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ব্যবহার রয়েছে। কূটনৈতিক নীতিমালার বাইবেল হিসেবে পরিচিত ভিয়েনা কনভেনশনেও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই বন্ধুত্বের কথাই বারবার বলা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় তো বটেই, আঞ্চলিক জোটগুলোও বেশ কায়দা করে এবং নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ‘বন্ধুত্ব’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।
ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্চিল একসময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘কূটনীতি হলো এমন একটা আর্ট যে তুমি কাউকে জাহান্নামে যাও বলবে এমনভাবে, যেন সে তোমার কাছে এসে সেখানে যাওয়ার ঠিকানা খোঁজ করে।’ আর আড়াই হাজার বছর আগে চীনা সমর বিশেষজ্ঞ সান জু পরামর্শ দিয়েছিলেন, যুদ্ধের সর্বোত্তম পথ হলো, একটা গুলি খরচ না করেও শত্রুকে ঘায়েল করা।
আমাদের কূটনীতি যদিও সেই পর্যায়ে উপনীত হতে পারেনি। আমরা এখন পর্যন্ত বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, অভিন্ন স্বার্থ, শান্তি, কল্যাণ ইত্যাদি শব্দ নিয়েই নাড়াচাড়া করি। আমাদের কূটনৈতিক মান নিয়ে যেমন ভাবা দরকার, একই সঙ্গে আমাদের দেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের ভূমিকা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা দরকার।
চিররঞ্জন সরকার

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সুমন ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁর পরিবারের দাবি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তাঁকে তুলে নিয়ে গেছেন। তাঁর বোন সানজিদা ইসলাম গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী। তিনি জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যখন তাঁদের বাসায় যান, তখন বাইরে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠনের কিছু ব্যক্তি। ‘মায়ের কান্না’ ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি, কারাদণ্ডের শিকার ও চাকরিচ্যুত সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন।
এই ঘটনার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক বিরোধও চলছে।
প্রশ্ন উঠেছে কূটনীতিকদের অধিকারের সীমা নিয়ে। তাঁদের কর্মতৎপরতা নিয়ে। একজন রাষ্ট্রদূত বিদেশি নাগরিক। তিনি চাইলেই বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতার মতো চলাফেরা করতে পারেন না। ইচ্ছে হলেই কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পক্ষে বক্তব্য রাখতে পারেন না। আবার ইচ্ছে হলেই কোনো দলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন না। তাঁকে সব দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সমান সদ্ভাব নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দায়িত্ব পালনকারী অনেক কূটনীতিক ফ্রি-স্টাইলে চলেন, ফ্রি-স্টাইলে কথা বলেন। তাঁদের কথা ও তৎপরতা অনেক ক্ষেত্রেই সব রকম কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যায়।
এর জন্য অবশ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বই দায়ী। আমাদের দেশে বিরোধী দল নিজের শক্তির ওপর আস্থাশীল নয়। তারা কূটনীতিকদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি মনে করে। কূটনীতিকদের কাছে সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করে। সরকারও নিজেদের নানা দুর্বলতা ঢাকতে কূটনীতিকদের সমীহ করে চলে। ফলে কূটনীতিকেরা নিজেদের ‘নিধিরাম’ ভাবা শুরু করেন; যা কূটনীতির মূল দর্শনের সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়।
প্রসঙ্গত, ইংরেজি ‘ডিপ্লোমেসি’র বাংলা করা হয়েছে কূটনীতি। কূট শব্দটি বাংলা ভাষায় নেতিবাচক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। কূট মানে হচ্ছে কুটিল (কূটবুদ্ধি); জটিল, দুর্বোধ্য (কূটপ্রশ্ন) ; মিথ্যা, কপট, শঠ (কূটচরিত্র) ; জালিয়াতি, জোচ্চুরি, কারসাজি বা ঘোরপ্যাঁচযুক্ত (কূটচাল)। অভিধান মতে, কূটনীতি হচ্ছে কুটিল নীতি; কপটতা; কৌশলপূর্ণ রাজনীতি (প্রধানত এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের)। সেই দিক থেকে ‘ডিপ্লোমেসি’ শব্দের অর্থ হিসেবে কূটনীতি শব্দটি কিছুটা বেমানান। একজন মানুষ কূট হলেও হতে পারেন। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের নীতি কী করে কূট বা নেতিবাচক হয়?
কূটনীতির মানে যা-ই হোক না কেন, বর্তমান যুগ হচ্ছে কূটনীতির যুগ। সবকিছুতেই ‘কূটনীতি’ কথাটা ব্যবহার করা হয়। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যেমন কূটনৈতিক উদ্যোগের কথা বলা হয়, আবার করোনার টিকার জন্যও যথাযথ ‘কূটনৈতিক উদ্যোগের’ কথা বলা হয়। এভাবে তেল কূটনীতি, জল কূটনীতি, সমুদ্র কূটনীতি, টিকা কূটনীতি, অভিবাসন কূটনীতি, জলবায়ু কূটনীতি, বাণিজ্য কূটনীতি, অস্ত্র কূটনীতি ইত্যাদি নানা কূটনীতির কথা শোনা যায়। বর্তমানে কূটনীতির মারপ্যাঁচে যেমন এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে ঘায়েল করছে, আবার কূটনীতির জোরে সুবিধাও আদায় করছে।
কূটনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘ডিপ্লোমেসি’ শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘ডিপ্লোন’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। ‘ডিপ্লোন’ মানে হচ্ছে ভাঁজ করা। কাপড়চোপড় ভাঁজ করে রাখার মতো রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ককে ভাঁজ করে রাখা থেকেই কি এ শব্দের উৎপত্তি? হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই! কূটনীতি ব্যাপারটি অত্যন্ত পুরোনো। রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে সঙ্গে কূটনীতির ধারণাও এসেছে। প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। প্রয়োজনে সেই সব নগররাষ্ট্রের মধ্যে দূত বিনিময় হতো। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ভারতেও দূত বিনিময়ের রীতি প্রচলিত ছিল। পঞ্চদশ শতক থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রে দূতাবাস স্থাপন শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে, ফরাসিরা সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় আলোচককে বোঝার জন্য ‘কূটনীতিক’ (কূটনৈতিক) শব্দটি ব্যবহার শুরু করে।
আধুনিক বিশ্বে কূটনীতি বলতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থে সাহায্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক বোঝায়। কূটনীতির সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির সম্পর্ক নিবিড়। নিজ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নতি ও অন্যান্য প্রয়োজনে প্রতিটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করে। কূটনীতির মাধ্যমে সেই নীতি রূপায়িত হয়।
কূটনীতি আসলে সহজ নয়। এটা অত্যন্ত জটিল একটা কাজ। ইংরেজি ভাষায় ডিপ্লোমেসি শব্দটির একটি বহু প্রচলিত সংজ্ঞা পাওয়া যায়।সংজ্ঞাটি হলো, যখন তুমি লোকজনকে বোঝাতে পারো যে, যে জিনিসটা তুমি পাবে না, সেটা তুমি মোটেই চাও না—সেই কলাকৌশলের নামই ডিপ্লোমেসি। এই সংজ্ঞার মতো কূটনীতিও আসলে খুবই জটিল একটি কাজ। এর ভাব আলাদা, ভাষা আলাদা। উদ্দেশ্যও আলাদা।ফ্রান্সে প্রচলিত একটি কথা আছে, একজন নারীর সঙ্গে একজন ডিপ্লোম্যাটের পার্থক্য কী?
যদি কোনো নারী ‘না’ বলেন, তার মানে ‘হয়তো’, তিনি যদি ‘হয়তো’ বলেন, তাহলে তার মানে হচ্ছে ‘হ্যাঁ’, আর তিনি যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে তিনি কোনো নারীই নন!
ডিপ্লোম্যাটের ব্যাপারটা ঠিক বিপরীত। কোনো ডিপ্লোম্যাট যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তার মানে ‘হয়তো’, তিনি যদি ‘হয়তো’ বলেন, তাহলে তার মানে হচ্ছে ‘না’, আর তিনি যদি ‘না’ বলেন, তাহলে তিনি কোনো ডিপ্লোম্যাটই নন!
আসলে কূটনীতি হচ্ছে একধরনের আর্ট। একসময় কূটনীতি বলতে কেবল একটি দেশের লাভের কথা ভাবা হতো। বর্তমানে কূটনৈতিক সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে পরিচালনা করা হয়। আধুনিক যুগে বৈদেশিক সম্পর্ক চাট্টিখানি বিষয় নয়। সম্রাট আকবরের সময় অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো-মন্দে বিশেষ কিছু আসত-যেত না। কিন্তু একালে আসে-যায়। কূটনীতি একালে এক কঠিন বিষয়। ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কই হোক বা বন্ধুপ্রতিম সম্পর্কই হোক, মনে করার কারণ নেই যে সবাই সব সময় ভাইয়ের মতো মমতা মাখানো বা বন্ধুর মতো অন্তরঙ্গ আচরণ করবে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে। বৈদেশিক সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থনির্ভর। আমি তোমাকে দেব, তুমি আমাকে দেবে। দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রেম-প্রীতির ব্যাপার নয়; দেওয়া-নেওয়ার বিষয়; মর্যাদা ও স্বার্থরক্ষার বিষয়।
কূটনীতি আসলে কৌশলের খেলা। কূটনীতির ভাষাও তাই আলাদা। কূটনীতির ভাষা সাধারণ ভাষা থেকে খানিকটা ভিন্ন হয়ে থাকে, সেটা সবার জানা। আমরা অনেক সময় ‘কূটনীতির মারপ্যাঁচ’ শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকি। আপনি কিছুই বললেন না, নীরব থাকলেন—তাতেও কিন্তু আসল কথাটি বলা হয়ে যায়। আবার একটি বা দুটি শব্দ বললেন নিছক কৌতুকের ছলে, তাতেও কাজ হাসিল হয়ে যেতে পারে।
কূটনীতিতে কতগুলো শব্দ বহুল ব্যবহৃত। বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় সমার্থক সেই শব্দগুলো (জারগন) কূটনীতিকদের মুখস্থ। এই যেমন, বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু, সমঝোতা, কমফোর্ট জোন, ডায়ালগ, উইন-উইন পজিশন ইত্যাদি। এ ধরনের আরও কিছু শব্দ আছে, যার মূল সুর হলো সহযোগিতা। দ্বিপক্ষীয় হোক বা বহুপক্ষীয়, দ্বিরাষ্ট্রীয় হোক বা বহুরাষ্ট্রীয় অথবা জোটকেন্দ্রিক; কূটনীতি শুরু হয় সহযোগিতার নাম নিয়েই।
সহযোগিতার ইস্যু ছাড়াও কূটনীতিতে আরেকটি শব্দের বেশ কদর—‘বন্ধুত্ব’! মোটামুটি সব দেশের কূটনৈতিক পরিভাষায় এ শব্দটির গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ব্যবহার রয়েছে। কূটনৈতিক নীতিমালার বাইবেল হিসেবে পরিচিত ভিয়েনা কনভেনশনেও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই বন্ধুত্বের কথাই বারবার বলা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় তো বটেই, আঞ্চলিক জোটগুলোও বেশ কায়দা করে এবং নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ‘বন্ধুত্ব’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।
ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্চিল একসময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘কূটনীতি হলো এমন একটা আর্ট যে তুমি কাউকে জাহান্নামে যাও বলবে এমনভাবে, যেন সে তোমার কাছে এসে সেখানে যাওয়ার ঠিকানা খোঁজ করে।’ আর আড়াই হাজার বছর আগে চীনা সমর বিশেষজ্ঞ সান জু পরামর্শ দিয়েছিলেন, যুদ্ধের সর্বোত্তম পথ হলো, একটা গুলি খরচ না করেও শত্রুকে ঘায়েল করা।
আমাদের কূটনীতি যদিও সেই পর্যায়ে উপনীত হতে পারেনি। আমরা এখন পর্যন্ত বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, অভিন্ন স্বার্থ, শান্তি, কল্যাণ ইত্যাদি শব্দ নিয়েই নাড়াচাড়া করি। আমাদের কূটনৈতিক মান নিয়ে যেমন ভাবা দরকার, একই সঙ্গে আমাদের দেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের ভূমিকা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা দরকার।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সুমন ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁর পরিবারের দাবি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তাঁকে তুলে নিয়ে গেছেন। তাঁর বোন সানজিদা ইসলাম গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী। তিনি জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত যখন তাঁদের বাসায় যান, তখন বাইরে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠনের কিছু ব্যক্তি। ‘মায়ের কান্না’ ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি, কারাদণ্ডের শিকার ও চাকরিচ্যুত সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন।
এই ঘটনার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক বিরোধও চলছে।
প্রশ্ন উঠেছে কূটনীতিকদের অধিকারের সীমা নিয়ে। তাঁদের কর্মতৎপরতা নিয়ে। একজন রাষ্ট্রদূত বিদেশি নাগরিক। তিনি চাইলেই বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতার মতো চলাফেরা করতে পারেন না। ইচ্ছে হলেই কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর পক্ষে বক্তব্য রাখতে পারেন না। আবার ইচ্ছে হলেই কোনো দলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন না। তাঁকে সব দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সমান সদ্ভাব নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দায়িত্ব পালনকারী অনেক কূটনীতিক ফ্রি-স্টাইলে চলেন, ফ্রি-স্টাইলে কথা বলেন। তাঁদের কথা ও তৎপরতা অনেক ক্ষেত্রেই সব রকম কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যায়।
এর জন্য অবশ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বই দায়ী। আমাদের দেশে বিরোধী দল নিজের শক্তির ওপর আস্থাশীল নয়। তারা কূটনীতিকদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি মনে করে। কূটনীতিকদের কাছে সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করে। সরকারও নিজেদের নানা দুর্বলতা ঢাকতে কূটনীতিকদের সমীহ করে চলে। ফলে কূটনীতিকেরা নিজেদের ‘নিধিরাম’ ভাবা শুরু করেন; যা কূটনীতির মূল দর্শনের সঙ্গে মোটেও সংগতিপূর্ণ নয়।
প্রসঙ্গত, ইংরেজি ‘ডিপ্লোমেসি’র বাংলা করা হয়েছে কূটনীতি। কূট শব্দটি বাংলা ভাষায় নেতিবাচক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। কূট মানে হচ্ছে কুটিল (কূটবুদ্ধি); জটিল, দুর্বোধ্য (কূটপ্রশ্ন) ; মিথ্যা, কপট, শঠ (কূটচরিত্র) ; জালিয়াতি, জোচ্চুরি, কারসাজি বা ঘোরপ্যাঁচযুক্ত (কূটচাল)। অভিধান মতে, কূটনীতি হচ্ছে কুটিল নীতি; কপটতা; কৌশলপূর্ণ রাজনীতি (প্রধানত এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের)। সেই দিক থেকে ‘ডিপ্লোমেসি’ শব্দের অর্থ হিসেবে কূটনীতি শব্দটি কিছুটা বেমানান। একজন মানুষ কূট হলেও হতে পারেন। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের নীতি কী করে কূট বা নেতিবাচক হয়?
কূটনীতির মানে যা-ই হোক না কেন, বর্তমান যুগ হচ্ছে কূটনীতির যুগ। সবকিছুতেই ‘কূটনীতি’ কথাটা ব্যবহার করা হয়। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যেমন কূটনৈতিক উদ্যোগের কথা বলা হয়, আবার করোনার টিকার জন্যও যথাযথ ‘কূটনৈতিক উদ্যোগের’ কথা বলা হয়। এভাবে তেল কূটনীতি, জল কূটনীতি, সমুদ্র কূটনীতি, টিকা কূটনীতি, অভিবাসন কূটনীতি, জলবায়ু কূটনীতি, বাণিজ্য কূটনীতি, অস্ত্র কূটনীতি ইত্যাদি নানা কূটনীতির কথা শোনা যায়। বর্তমানে কূটনীতির মারপ্যাঁচে যেমন এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে ঘায়েল করছে, আবার কূটনীতির জোরে সুবিধাও আদায় করছে।
কূটনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘ডিপ্লোমেসি’ শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘ডিপ্লোন’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। ‘ডিপ্লোন’ মানে হচ্ছে ভাঁজ করা। কাপড়চোপড় ভাঁজ করে রাখার মতো রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ককে ভাঁজ করে রাখা থেকেই কি এ শব্দের উৎপত্তি? হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই! কূটনীতি ব্যাপারটি অত্যন্ত পুরোনো। রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে সঙ্গে কূটনীতির ধারণাও এসেছে। প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। প্রয়োজনে সেই সব নগররাষ্ট্রের মধ্যে দূত বিনিময় হতো। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ভারতেও দূত বিনিময়ের রীতি প্রচলিত ছিল। পঞ্চদশ শতক থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রে দূতাবাস স্থাপন শুরু করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে, ফরাসিরা সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় আলোচককে বোঝার জন্য ‘কূটনীতিক’ (কূটনৈতিক) শব্দটি ব্যবহার শুরু করে।
আধুনিক বিশ্বে কূটনীতি বলতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থে সাহায্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক বোঝায়। কূটনীতির সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির সম্পর্ক নিবিড়। নিজ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নতি ও অন্যান্য প্রয়োজনে প্রতিটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন করে। কূটনীতির মাধ্যমে সেই নীতি রূপায়িত হয়।
কূটনীতি আসলে সহজ নয়। এটা অত্যন্ত জটিল একটা কাজ। ইংরেজি ভাষায় ডিপ্লোমেসি শব্দটির একটি বহু প্রচলিত সংজ্ঞা পাওয়া যায়।সংজ্ঞাটি হলো, যখন তুমি লোকজনকে বোঝাতে পারো যে, যে জিনিসটা তুমি পাবে না, সেটা তুমি মোটেই চাও না—সেই কলাকৌশলের নামই ডিপ্লোমেসি। এই সংজ্ঞার মতো কূটনীতিও আসলে খুবই জটিল একটি কাজ। এর ভাব আলাদা, ভাষা আলাদা। উদ্দেশ্যও আলাদা।ফ্রান্সে প্রচলিত একটি কথা আছে, একজন নারীর সঙ্গে একজন ডিপ্লোম্যাটের পার্থক্য কী?
যদি কোনো নারী ‘না’ বলেন, তার মানে ‘হয়তো’, তিনি যদি ‘হয়তো’ বলেন, তাহলে তার মানে হচ্ছে ‘হ্যাঁ’, আর তিনি যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তাহলে তিনি কোনো নারীই নন!
ডিপ্লোম্যাটের ব্যাপারটা ঠিক বিপরীত। কোনো ডিপ্লোম্যাট যদি ‘হ্যাঁ’ বলেন, তার মানে ‘হয়তো’, তিনি যদি ‘হয়তো’ বলেন, তাহলে তার মানে হচ্ছে ‘না’, আর তিনি যদি ‘না’ বলেন, তাহলে তিনি কোনো ডিপ্লোম্যাটই নন!
আসলে কূটনীতি হচ্ছে একধরনের আর্ট। একসময় কূটনীতি বলতে কেবল একটি দেশের লাভের কথা ভাবা হতো। বর্তমানে কূটনৈতিক সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে পরিচালনা করা হয়। আধুনিক যুগে বৈদেশিক সম্পর্ক চাট্টিখানি বিষয় নয়। সম্রাট আকবরের সময় অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো-মন্দে বিশেষ কিছু আসত-যেত না। কিন্তু একালে আসে-যায়। কূটনীতি একালে এক কঠিন বিষয়। ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কই হোক বা বন্ধুপ্রতিম সম্পর্কই হোক, মনে করার কারণ নেই যে সবাই সব সময় ভাইয়ের মতো মমতা মাখানো বা বন্ধুর মতো অন্তরঙ্গ আচরণ করবে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে। বৈদেশিক সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থনির্ভর। আমি তোমাকে দেব, তুমি আমাকে দেবে। দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রেম-প্রীতির ব্যাপার নয়; দেওয়া-নেওয়ার বিষয়; মর্যাদা ও স্বার্থরক্ষার বিষয়।
কূটনীতি আসলে কৌশলের খেলা। কূটনীতির ভাষাও তাই আলাদা। কূটনীতির ভাষা সাধারণ ভাষা থেকে খানিকটা ভিন্ন হয়ে থাকে, সেটা সবার জানা। আমরা অনেক সময় ‘কূটনীতির মারপ্যাঁচ’ শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকি। আপনি কিছুই বললেন না, নীরব থাকলেন—তাতেও কিন্তু আসল কথাটি বলা হয়ে যায়। আবার একটি বা দুটি শব্দ বললেন নিছক কৌতুকের ছলে, তাতেও কাজ হাসিল হয়ে যেতে পারে।
কূটনীতিতে কতগুলো শব্দ বহুল ব্যবহৃত। বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় সমার্থক সেই শব্দগুলো (জারগন) কূটনীতিকদের মুখস্থ। এই যেমন, বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যু, সমঝোতা, কমফোর্ট জোন, ডায়ালগ, উইন-উইন পজিশন ইত্যাদি। এ ধরনের আরও কিছু শব্দ আছে, যার মূল সুর হলো সহযোগিতা। দ্বিপক্ষীয় হোক বা বহুপক্ষীয়, দ্বিরাষ্ট্রীয় হোক বা বহুরাষ্ট্রীয় অথবা জোটকেন্দ্রিক; কূটনীতি শুরু হয় সহযোগিতার নাম নিয়েই।
সহযোগিতার ইস্যু ছাড়াও কূটনীতিতে আরেকটি শব্দের বেশ কদর—‘বন্ধুত্ব’! মোটামুটি সব দেশের কূটনৈতিক পরিভাষায় এ শব্দটির গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও ব্যবহার রয়েছে। কূটনৈতিক নীতিমালার বাইবেল হিসেবে পরিচিত ভিয়েনা কনভেনশনেও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই বন্ধুত্বের কথাই বারবার বলা হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় তো বটেই, আঞ্চলিক জোটগুলোও বেশ কায়দা করে এবং নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ‘বন্ধুত্ব’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।
ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্চিল একসময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘কূটনীতি হলো এমন একটা আর্ট যে তুমি কাউকে জাহান্নামে যাও বলবে এমনভাবে, যেন সে তোমার কাছে এসে সেখানে যাওয়ার ঠিকানা খোঁজ করে।’ আর আড়াই হাজার বছর আগে চীনা সমর বিশেষজ্ঞ সান জু পরামর্শ দিয়েছিলেন, যুদ্ধের সর্বোত্তম পথ হলো, একটা গুলি খরচ না করেও শত্রুকে ঘায়েল করা।
আমাদের কূটনীতি যদিও সেই পর্যায়ে উপনীত হতে পারেনি। আমরা এখন পর্যন্ত বন্ধুত্ব, সহযোগিতা, অভিন্ন স্বার্থ, শান্তি, কল্যাণ ইত্যাদি শব্দ নিয়েই নাড়াচাড়া করি। আমাদের কূটনৈতিক মান নিয়ে যেমন ভাবা দরকার, একই সঙ্গে আমাদের দেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের ভূমিকা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা দরকার।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
২৭ ডিসেম্বর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
২৭ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
২৭ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়ি পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসার সময় বাইরে একদল মানুষ তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করে। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
২৭ ডিসেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫