Ajker Patrika

ফাঁসির সেল থেকে ফিরে আসা

কামরুল হাসান
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ০৭
ফাঁসির সেল থেকে ফিরে আসা

আজকের গল্পে দুটি চরিত্র। একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী আর অন্যজন গড়পড়তা সাধারণ মানুষ। এই সন্ত্রাসীর গল্পের সঙ্গে সাধারণ মানুষটিকে টেনে আনার একটি যোগসূত্র আছে। সেটা হলো, একদিন এই সন্ত্রাসী খুন হন। আর সেই খুনের মামলায় জড়ানো হয় এই সাধারণ মানুষটিকে। এরপর ফাঁসির আসামি হয়ে তিনি দুই বছর ‘কনডেম সেলে’ কাটান। পরে বেঁচে ফিরে আসেন দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে। সে ঘটনা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।

দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রথমে বলি সেই সন্ত্রাসী লোকটির গল্প। তাঁর নাম গাজি লিয়াকত ওরফে কালা লিয়াকত। নামটি শুনেই আশা করি বুঝতে পারছেন, কী ভয়ংকর লোকটি। কালা লিয়াকত থাকতেন পুরান ঢাকার জুড়িয়াটুলি লেনে। তাঁর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল সূত্রাপুরজুড়ে। ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে কালা লিয়াকতের নাম শুনলেই ভয়ে কেঁপে উঠতেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা। তাঁর আধিপত্য ছিল শ্যামবাজার থেকে শুরু করে বাবুবাজার পর্যন্ত। একদিন সকালে সেই কালা লিয়াকত খুন হন প্রতিপক্ষের হাতে।

জনকণ্ঠ অফিস তখন মতিঝিলে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রিপোর্টারদের মিটিং। সকালে অফিসে এসে শুনি পিএবিএক্স নম্বরে ফোন এসেছে—কালা লিয়াকত খুন। সবার হাতে-হাতে তখন মোবাইল ফোন ছিল না। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর সাধারণ মানুষ ছিল খুবই শ্রদ্ধাশীল। কোনো কিছু ঘটলেই তারা সংবাদপত্র অফিসে ফোন করে খবর দিত। অনেক সময় থানার ওসিরাও ফোন করে লোক পাঠাতে বলতেন।

খুনের খবর শুনে গেলাম জুড়িয়াটুলি লেনে। দেখি, কালা লিয়াকতের লাশ বাসার সামনে ফাঁকা একটা জায়গায় খাটিয়ার ওপর রাখা। তার চারপাশে একদল যুবক ঘোরাঘুরি করছে, যাদের চলাফেরা অন্যরকম। কেমন যেন একটা ভুতুড়ে পরিবেশ। যাকে জিজ্ঞাসা করি কেউ কিছু বলে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সব দেখছি। একজন এসে আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। একটু পর এক নারী এসে আমাকে নিয়ে একটি ঘরের ভেতরে গেলেন। বলেন, ‘ওখানে যারা আছে সবার মাথা গরম, হাতে অস্ত্র আছে। কোনো কিছু জানতে চাইলে আমাকে বলেন।’ তিনি আমার দরকারি প্রশ্নগুলোর জবাব দিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা শেষ করে বের হব—এমন সময় তিনি একটু অপেক্ষা করতে বলে চলে গেলেন। ফিরে এলেন এক প্লেট বিরিয়ানি হাতে নিয়ে। সামনে লাশ পড়ে আছে, আর তার সামনে বসে আমি বিরিয়ানি খাব? খুবই অস্বাভাবিক মনে হলো। কিন্তু তিনি নাছোড়। পরে অনেক অনুনয়বিনয় করে বেরিয়ে এলাম।

পরে জানলাম তিনিই কালা লিয়াকতের স্ত্রী। নাম রোকেয়া বেগম। আমাকে বলেছিলেন, তাঁর স্বামীকে যাঁরা খুন করেছেন তিনি তাঁদের চেনেন। এই খুনের নেতৃত্ব দিয়েছেন কালা লিয়াকতের প্রতিপক্ষ সুন্দর বাবু নামের আরেক সন্ত্রাসী। রোকেয়া বেগম সুন্দর বাবুসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন।

এরপর দিন যায়। কালা লিয়াকতের কথা ভুলে যাই। জনকণ্ঠ ছেড়ে আসি প্রথম আলোয়। ২০০৬ সালে পুরোনো মামলা নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে আবার সামনে আসে কালা লিয়াকতের নাম। তত দিনে ডিবির পরিদর্শক রেজাউল করিম এই খুনের মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছেন, বিচারও শেষ হয়েছে।

আমার উদ্দেশ্য ছিল, সন্ত্রাসীরা খুন হওয়ার পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা কেমন আছে, তা তুলে আনা। সেই তালিকায় এলো কালা লিয়াকতের নাম। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেলাম কালা লিয়াকতের স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে। কথা বলতে গিয়ে তিনি দিলেন বিস্ফোরক তথ্য। বললেন, সুন্দর বাবু নামে যাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তিনি তাঁর স্বামীর খুনি সুন্দর বাবু নন। এই কথা তিনি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং আদালতকে বলেছেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শোনেনি। তাঁর এই কথা কয়েকটি পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে। রোকেয়া বেগমের কাছে মামলার নথিপত্র ছিল। দেখি, শাহ আলম বাবু ওরফে সুন্দর বাবু নামের যে আসামি আছেন, তাঁর বাবার নাম আফজাল হোসেন। ৫৭ নম্বর নয়াপল্টনের বাসিন্দা তিনি। ২০০৩ সালের ২৬ জুন সেই শাহ আলম বাবু আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ২০০৪ সালের ১৮ আগস্ট আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। সেই থেকে তিনি কনডেম সেলে।

মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। এবার যেতে হবে ৫৭ নম্বর নয়াপল্টনে শাহ আলম বাবুর বাড়িতে। এসে পেয়ে গেলাম শাহ আলমের স্ত্রী জমিলা খাতুনকে। তিনি আমাকে দেখে প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেন। তারপর খুব ভালো করে দেখলেন। একটি ঘরে বসতে দিয়ে বললেন, এই ঘরে ব্লক ও বাটিকের কারখানা ছিল। সেই কারখানার কাপড় বিক্রি করা হতো নিউমার্কেটে। ব্যবসা ভালোই চলছিল। হঠাৎ একদিন জানতে পারেন, তাঁর স্বামী খুনের আসামি। যে লোকটি কোনো দিন নিজের সন্তানের গায়ে হাত তোলেননি, তিনি কী করে মানুষ খুন করবেন? কোনো কিছুতেই হিসাব মেলে না।

জমিলা বলেন, তাঁদের বাড়ির একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন আবদুল গণি নামের এক মুহুরি। তিনি প্রথম এ ঘটনাটি জানান। এরপর গণিকে দিয়ে মামলার নকল তোলেন। কয়েক দিন পর বাড়িতে পুলিশ আসে। জমিলা এরপর শাহ আলমকে নিয়ে যান এপিপি গোলাম মোস্তফার কাছে। তিনি সব শুনে বলেন, আত্মসমর্পণের সময় কাগজপত্রে শাহ আলম বাবু নামের সঙ্গে ‘সুন্দর বাবু’ লিখতে হবে। শাহ আলম এতে রাজি না হলেও পরে সুন্দর বাবু নামেই আদালতে হাজির হতে বাধ্য হন।

২০০৩ সালের ২৬ জুন শাহ আলম বাবু আদালতে হাজির হয়ে জানান, তিনি প্রকৃত ‘সুন্দর বাবু’ নন। মামলার বাদীও আদালতে হাজির হয়ে জানান, এই বাবু তাঁর স্বামীর হত্যাকারী নন। আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণকালে সাক্ষীরাও শাহ আলমকে শনাক্ত করেননি। তবুও তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়।

জমিলা বলেন, রেজাউল করিম নামের সেই পুলিশ তাঁর স্বামীর কাছে টাকা চেয়েছিলেন। টাকা না পেয়ে তিনি অভিযোগপত্রে শাহ আলমের নাম ঢুকিয়ে দেন। ফাঁসির আসামি হয়ে শাহ আলম যান কারাগারে। কিন্তু জমিলা দমার পাত্র নন। তিনি লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। এক অফিস থেকে অন্য অফিস, এক আদালত থেকে আরেক আদালতে। মামলা হাইকোর্টে আসে।

জমিলাকে নিয়ে প্রতিবেদন করি প্রথম আলোয়। এতে বেশ সাড়া পড়ে। এরপর ফলোআপ চলতে থাকে। একটি মানবাধিকার সংস্থা এগিয়ে আসে। জমিলা একটু ভরসা পান। তিনি প্রায়ই ফোনে তাঁর কষ্টের কথা বলেন। একদিন বলেন, স্বামীর জন্য এত কিছু করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। শাহ আলম জেলে যাওয়ার পর প্রথমে হাত পড়ে কারখানাটায়। এরপর একে একে গ্রামের জমি, ভিটের গাছপালা, গাভি, গয়না, ঘরের আসবাব, টিভি, ফ্রিজ সবকিছু বিক্রি হয়ে যায়। জমিলার তিন সন্তানের মধ্যে মেজ ছেলে সেলিম পড়ত বিকেএসপিতে। তার পড়া বন্ধ হয়ে যায়। বড় মেয়ে আফসানার বিয়ের চিন্তা করছিলেন জমিলা। তা-ও থেমে যায়। ছোট ছেলে রাকিব মহল্লার পাশে একটি স্কুলে পড়ত। বাবার জেল হওয়ার পর কয়েক দিন সে ঠিকমতো খায়নি। বায়না ধরেছিল, বাবা না এলে কিছুই খাবে না। কিন্তু ক্ষুধার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানে ছেলেটি। তবু লড়াই চালিয়ে যান জমিলা। তাঁর জয়ও হয়। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শাহ আলমকে মুক্তি দেন। ২০০৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। তখনো আসল খুনি ‘সুন্দর বাবু’ ধরা পড়েননি।

পরদিন শুক্রবার সকালে যাই শাহ আলমের নয়াপল্টনের বাসায়। দেখি আশপাশের শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করেছে। জমিলার বাড়িতে যেন ঈদের আনন্দ। অনেকবার রিপোর্টের কারণে ওই পরিবারের সবাই আমাকে চেনে। আমাকে দেখে এগিয়ে আসেন জমিলা। আমাকে নিয়ে যান শাহ আলমের কাছে। শাহ আলম শোনান তাঁর কনডেম সেলের গল্প। বলেন, ‘রাত এলেই মনে হতো আমাকে মেরে ফেলা হবে। যেকোনো মুহূর্তে কনডেম সেল থেকে নেওয়া হবে ফাঁসির মঞ্চে। ভয়ে দুই চোখ এক করতে পারতাম না। এভাবে দুই বছর নির্ঘুম কেটেছে, প্রায় অন্ধকারে ছিলাম। এখন স্বাভাবিক আলোয় এসে তাকাতে পারছি না। নিজের কাছে বিশ্বাস হয় না, আমি বেঁচে আছি।’

শাহ আলমের সব বক্তব্য রেকর্ড করি। রেকর্ডার পকেটে ঢুকিয়ে জমিলাকে বলি, এবার তাহলে যাই। গাড়ির সামনে আসতেই জমিলা ছেলে-মেয়েদের নাম ধরে ডাকেন। সবাইকে বলেন, আংকেলকে সালাম করো। ছেলে-মেয়েরা লাইন ধরে সালাম করে। আমি জমিলার মেয়ে আফসানার মাথায় হাত রাখতেই সে আমাকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে। সে কান্না সংক্রমিত করে জমিলা ও শাহ আলমকে। আমাকেও। নয়াপল্টনের রাস্তায় তখন অনেক মানুষ। তাদের চোখও তখন ভেজা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস ‘সন্ত্রাসী রনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৪
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।

ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।

ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।

পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঁচজন রিমান্ডে

মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মামুন হত্যার ঘটনায় ২ শুটার শনাক্ত, গ্রেপ্তার যেকোনো সময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৬
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ফটকে তারিক সাইফ মামুনকে গুলিতে হত্যা করা হয়। ইনসেটে তারিক সাইফ মামুন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ফটকে তারিক সাইফ মামুনকে গুলিতে হত্যা করা হয়। ইনসেটে তারিক সাইফ মামুন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাইফ মামুনকে হত্যার ঘটনায় দুই পেশাদার শুটারসহ চারজনকে শনাক্ত করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুটার দুজনের মধ্যে একজন ধানমন্ডি, আরেকজন তেজগাঁও এলাকার একাধিক মামলার আসামি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, যেকোনো সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।

গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ফটকে মামুনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, হামলার সময় দুজন শুটার পিস্তল চালিয়ে হামলা চালায়, তবে আশপাশে অন্তত দুটি ব্যাকআপ টিম ছিল, ওই টিমের সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। মামুনকে হত্যার পর হামলাকারীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে তারা দেশের ভেতরেই অবস্থান করছে এবং তাদের ধরার জন্য পুলিশ একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সীমান্তে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. মোস্তাক সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দুজনকে শনাক্ত করেছি। তারা দেশেই আছে। তাদের গ্রেপ্তারের খুব কাছাকাছি রয়েছি।’

ডিএমপির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, শুটাররা মুখে মাস্ক ও মাথায় টুপি পরিধান করলেও প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মামুন হত্যার আগে অন্তত একজন তাঁকে অনুসরণ করছিল। হামলার আগে তাদের পরিকল্পনা সূক্ষ্মভাবে ছিল এবং তারা পেশাদারত্বের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম রুবেল, অপরজন ইব্রাহীম। এ ছাড়া আরও দুটি দল আলাদাভাবে হত্যাকাণ্ডে ব্যাকআপ টিম হিসেবে কাজ করেছে। এতে সোহেল ও কামাল নামে দুই সন্ত্রাসীর নাম এসেছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একাধিক পুলিশের টিম কাজ করছে। শনাক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।’

মামুনের একসময় ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু ইমনের সঙ্গে পারিবারিক ও চাঁদাবাজি-সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব তীব্র ছিল। এ কারণে ইমনের অনুসারীরা একাধিকবার হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। ২০১৭ সালে তেজগাঁওয়ে মামুনের ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছিল, তখনো তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীল নিহত হন।

মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং শুটারদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মল্লিক এহসান আহসান সামী জানান, গুলিতে নিহত ব্যক্তিটি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। তিনি কোনো ব্যবসায়ী নন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত