Ajker Patrika

‘প্রত্যাশিত নির্বাচন’ সারতে পারাটাও চ্যালেঞ্জ

হাসান মামুন
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ৫০
‘প্রত্যাশিত নির্বাচন’ সারতে পারাটাও চ্যালেঞ্জ

এই নিবন্ধ প্রকাশ পেতে পেতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরিয়ে যাবে। ৭ জানুয়ারির ভোটে অংশ নিতে যেসব দল এগিয়ে এসেছে, সেগুলোর অংশগ্রহণের চিত্রটি স্পষ্ট হবে এরই মধ্যে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা), নবগঠিত কিছু দল ও কয়েকটি ইসলামপন্থী দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলগুলো বলতে গেলে একপক্ষীয়। নির্বাচনে এমন কোনো দল নেই, যেসব দলের নেতারা ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত। তাঁদের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনে এসেছেন। ফলে ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও তাঁরা রাজি নন। আসন ভাগাভাগি পাকা করে নির্বিঘ্নে জিততে চাইছেন তাঁরা। প্রতিপক্ষহীন নির্বাচনে সবাই চাইছেন জয়ের নিশ্চয়তা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও অনানুষ্ঠানিকভাবে এটা সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলবে মনে হয়।

এ অবস্থায় কারও বুঝতে বাকি নেই, কী ধরনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ২০১৪ সালেও সমমনাদের নিয়ে একটা একতরফা নির্বাচন করেছিল সরকার। তখন থেকে নতুন করে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে শুরু করে। এই ইস্যুতে নির্বাচন প্রতিহতকরণও শুরু করে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এবারও সেই চেষ্টা চলছে; তবে ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না। সমমনাদের নিয়ে সরকার মোটামুটি নির্বিঘ্নেই ভোট সেরে ফেলতে পারবে বলে মনে হচ্ছে। এর ভেতর দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আরেকটি মেয়াদ লাভ করবে, এটা ধরেই নিচ্ছে সবাই।

যেহেতু নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির নির্বাচন, তাই এটাও মোটামুটি বলে দেওয়া সম্ভব—কোন দল কত আসন পাবে! তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যতিক্রমী সুযোগ পাওয়া ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কিছুটা অনিশ্চয়তার উপাদান যুক্ত করেছেন এবার। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে আসবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তবে এতে সরকারের কোনো ঝুঁকি নেই। স্বতন্ত্ররা তো মূলত ক্ষমতাসীন দলেরই মানুষ। এমনটিও মনে করা হচ্ছে, নির্বাচনে তাঁরা দ্বিতীয় বৃহৎ গ্রুপ হিসেবে বেরিয়ে আসতে পারেন। তখন তাঁরাই সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন কি না, এমন প্রশ্নও এরই মধ্যে উঠেছে।

জোটসঙ্গী ও সমমনা দলের যেসব প্রার্থীকে জেতাতে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রাপ্তদের বসিয়ে দেবে বলে শোনা গেছে, তাঁরা অতঃপর নিজ নিজ এলাকায় কী ভূমিকা নেবেন, বলা মুশকিল। ওই সব আসনে ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেহেতু থাকছেন—তাতে সমমনা দলের প্রার্থীরা ফাঁকা মাঠ পাবেন না। এমন নির্বাচনে প্রশাসনের সহায়তা একটি বড় ফ্যাক্টর। সেটি কোথায় কোন প্রার্থী পাবেন আর কে পাবেন না, বলা কঠিন। সরকার ও প্রশাসনের মিলিত সিদ্ধান্তই এ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। কথিত আছে, ২০১৮ সালে খোদ বিএনপিও একধরনের আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে এসেছিল। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেটা কার্যকর করা যায়নি বলেই তারা অবিশ্বাস্যভাবে মাত্র ৭টি আসন পায়। আর জাপা উঠে আসে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে। এতে করে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে, বিশেষ করে যখন বিএনপির সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। জোটসঙ্গী ও সমমনা দলগুলোর ক্ষেত্রে এবার একই ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়া যাবে কি? 

এমন যদি হয়—তারা আসায় নির্বাচনটি ‘অংশগ্রহণমূলক’ দেখালেও ভোটে সিংহভাগই পরাস্ত হলেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে? নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সত্যিকারের ভোট হলে কিন্তু এমনটাই হওয়ার কথা। কারণ জাপাসহ সরকারের সহযোগীদের উল্লেখযোগ্য ভোট নেই বা থাকলেও গত দুই মেয়াদে অনেক কমে এসেছে। স্থানীয় নির্বাচনে কিন্তু বারবার দেখা গেছে, সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকলেও জাপার ভোট অনেক ক্ষেত্রে চরমোনাইভিত্তিক ইসলামী আন্দোলনের চেয়েও কম। গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে জাপার প্রার্থীরা প্রধানত ক্ষমতাসীনদের ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে জিতে এসেছেন। এবার সেই আসন সমঝোতা যদি আগের মতো কাজ না করে? জোটসঙ্গীদের বেলায় এটা আরও বেশি করে প্রযোজ্য। 

সরকার এবার ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দেখাতে চায়, প্রতিপক্ষ না এলেও দেশের মানুষ সেভাবে বর্জন করেনি নির্বাচন। ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিতের একটি পরিকল্পনা নাকি রয়েছে। বিরোধী দলের অংশগ্রহণবিহীন নির্বাচন—যেখানে ক্ষমতাসীনদের বিজয় নিশ্চিত, সেখানে এত ভোট পড়ার প্রত্যাশাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। এটাও ঠিক, নিজ দল থেকে স্বতন্ত্রদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে।

ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রাপ্তদেরও অনেকে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মোকাবিলা করবেন। কোথাও কোথাও রয়েছেন একাধিক স্বতন্ত্র। তাঁরা সবাই নিজ নিজ সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসবেন, এমনটাই প্রত্যাশা সরকারের। তবে এটা ঘিরে ভোটারের ওপর জবরদস্তি হলে তা হবে হিতে বিপরীত। আজকের দিনে এসব গোপন করা যাবে না। এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। শেষে হয়তো দেখা যাবে, একপক্ষীয় নির্বাচনটাও ‘শান্তিপূর্ণ’ থাকল না। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বানচাল করতে চাইছে। এমনও তো হতে পারে, আন্দোলনকারীদের বদলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের দিক থেকেই অশান্ত হয়ে উঠল পরিস্থিতি!

সেটি হতে না দেওয়া সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়ের কোনো শঙ্কা নেই; তবে প্রধানত স্বতন্ত্রদের জোর তৎপরতায় নির্বাচনটা হয়ে উঠতে পারে অশান্তিপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে দক্ষভাবে। তাঁদের কাজ হবে প্রধানত ভোটার টানা, নিজেদের মধ্যে হলেও একটা ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’র আবহ আনা। তবে যে নির্বাচনে রয়েছে এমপি হওয়ার তুলনামূলক সহজ সুযোগ, সেখানে কতজন কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে চলবেন? এ অবস্থায় অনেকে বলছেন, ক্ষমতাসীন দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তবে এটা ঘিরে সরকারের নতুন কোনো পরিকল্পনা থাকলে ভিন্ন কথা।

২০১৪ থেকে যে ধরনের নির্বাচন হচ্ছে, তাতে সরকারের প্রতিপক্ষ দল অংশ নিলেও দেখা যাচ্ছে—তারা স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারছে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সেটা ভালোভাবে দেখা গেছে। তারা যে এবারও নির্বাচন বর্জন করল, এর একটি বড় কারণ নিহিত রয়েছে সেই তিক্ত অভিজ্ঞতায়। বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনে না আসায় সরকার যে অখুশি হয়েছে, তা-ও মনে হয় না। অনেকে মনে করেন, সরকার কৌশলে সেটা বরং নিশ্চিত করেছে। জোটসঙ্গী ও সমমনাদের নিয়েই তারা নির্বাচন সারতে চায়, যাতে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকবে নিশ্চিত। ‘উন্নয়নের ধারা’ বহাল রাখতে এটা প্রয়োজন, এই হলো বয়ান। সমমনারাও এমনটাই মনে করে। এর বিনিময়ে তারা চায় মন্ত্রিত্ব না হলেও নিদেনপক্ষে এমপি পদ।

তবে সরকার এবার চাইতে পারে, ‘নিজেদের মধ্যে’ হলেও একটা সত্যিকারের ভোট হোক। এ অবস্থায় সরকারপক্ষীয় জনসাধারণের ভোট টানারও ক্ষমতা যাদের নেই, তারা পরাস্ত হয়ে মাঠ ছাড়ুক।

এ ধরনের ভোটাভুটির সুযোগও না থাকলে ৭ জানুয়ারি হবে কেবল ফল ঘোষণার দিন। কে কোন আসনে জিতবেন, সেটা মোটামুটি স্থির করা থাকবে। এটা হবে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। পরবর্তী সংসদকে ‘বহুদলীয়’ দেখাতে চাইলে এমন নির্বাচন করার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি। কেননা জোটসঙ্গী ও সমমনাদের নিজ ক্ষমতায় জিতে আসার সুযোগ নেই বললেই চলে।

এখানে কথা হলো, বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের জিতিয়ে এনে কাকে কী দেখাবে সরকার? দেশ-বিদেশের সবাই জানে, এখানে কীভাবে কী হচ্ছে! তার বদলে নিজেদের মধ্যে একটা সত্যিকারের ভোট করলে কি সেটা ভালো দেখাবে না? আর এ ক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতি যা হয় হবে। সেটা বাড়িয়ে দেখানোরও প্রয়োজন নেই। আইনগত বৈধতায় ভোটের হার কোনো বাধা হবে না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তো সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থী বিনা ভোটে জিতেছিলেন। তাতেও সরকার পরিচালনায় কোনো চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়নি। এবারও কোনো সমস্যা হবে না—এমনকি ২০ শতাংশ ভোট পড়লে। নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে বরং সমস্যা। 

সরকারকে ঠান্ডা মাথায় তার প্রত্যাশিত নির্বাচনটা সারতে হবে। সঙ্গে প্রস্তুতি রাখতে হবে এ ধরনের নির্বাচন ঘিরে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে নিষেধাজ্ঞা এলে সেটা মোকাবিলার। প্রধান কিছু সূচক বলছে, সামনে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাও বেশ কঠিন হবে। পশ্চিমাদের পদক্ষেপ এতে দিতে পারে ঘৃতাহুতি। অর্থনীতির বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তেও থাকতে পারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন ঘিরে আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথাও তো তারা বলে রেখেছে। এতে একপক্ষীয় নির্বাচনের ভেতর দিয়ে অঙ্কিত রাজনৈতিক ছকটি অনুসরণ করা সহজ না-ও হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত