Ajker Patrika

ক্ষুধার ভূগোল ও বাংলাদেশ

চিররঞ্জন সরকার
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ৪৭
ক্ষুধার ভূগোল ও বাংলাদেশ

বাড়িতে আপনার ফ্রিজ আছে, এসি আছে, ওয়াশিং মেশিন আছে, ওভেন, এলইডি টিভি সব আছে। কিন্তু যদি বিদ্যুৎ না থাকে, তাহলে এসব জিনিসের কোনো উপযোগিতা বা কার্যকারিতা থাকে কি? ঠিক তেমনি দেশে যদি অনেক অত্যাধুনিক গাড়ি থাকে, উড়োজাহাজ থাকে, রাস্তা, ব্রিজ, ফ্লাইওভার, ফুটওভার এক্সপ্রেস হাইওয়ে, রেল—সবকিছু থাকে, কিন্তু তেল না থাকে, তাহলে এসবও নির্থক হয়ে যায়।

আসলে আধুনিক মানুষের জীবনে একসঙ্গে অনেক কিছু লাগে। এর একটি বাদ দিয়ে আরেকটি নয়। আমাদের জীবনে ফ্রিজ-টিভি-এসির যেমন দরকার আছে, এগুলো চালাতে বিদ্যুতের দরকার তার চেয়ে বেশি। শুধু বিদ্যুৎ হলে যেমন চলে না। আবার শুধু ফ্রিজ-টিভি-এসি থাকলেও হয় না। রাস্তা, ব্রিজে চলতে এবং গাড়ি চালাতে তেলেরও দরকার। তেল ছাড়া গাড়ি চলে না। আবার গাড়ি, রাস্তা, ব্রিজ ছাড়া কেবল তেল নিয়ে বসে থাকলেও তা কোনো উপকারে আসে না।

আমাদের দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর টেকসই সমাধান হচ্ছে না। এমনকি গত পঞ্চাশ বছরেও পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস সমস্যার সমাধান হয়নি। উল্টো সংকট যেন দিন দিন আরও বাড়ছে। এমনকি ক্ষুধার সমস্যারও তেমন কোনো সমাধান হয়নি। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সামনে যাওয়ার পরিবর্তে পিছিয়ে পড়ছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-জিএইচআই) ২০২২-এর প্রতিবেদন তারই প্রমাণ। গত বছরের তুলনায় এ বছর আট ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। সূচকে ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। অথচ আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৬তম।

অর্থাৎ ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় এবার বাংলাদেশের অবস্থানের আট ধাপ অবনতি হয়েছে। এবারের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ৬। এই স্কোর ১০ থেকে ১৯ দশমিক ৯-এর মধ্যে থাকলে কোনো দেশকে ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধায় আক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তালিকায় যথাক্রমে ১০৭ ও ৯৯তম স্থানে থাকা প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের নাম রয়েছে ‘মারাত্মক ক্ষুধায়’ (স্কোর ২০ থেকে ৩৪ দশমিক ৯) আক্রান্ত দেশের তালিকায়। তবে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ৬৪ ও ৭১তম।

ইনডেক্সে ৫ পয়েন্টের কম পেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বেলারুশ, চিলি, চীনসহ মোট ১৭টি দেশ। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে কারও স্কোর শূন্য হলে বুঝতে হবে, সেখানে ক্ষুধা নেই। আর স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ, সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ।

উল্লেখ্য, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের মাধ্যমে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার হিসাব করে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয়—যেকোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এ সূচকগুলো 
ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নিরসনের জন্য সব সরকারই কম-বেশি কাজ করেছে এবং করছে। কিন্তু তারপরও দেশে  ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় কমছে না। এটা স্বীকৃত যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের যোগসূত্র অত্যন্ত নিবিড়; অর্থাৎ দরিদ্র ব্যক্তিরাই ক্ষুধার্ত। সাধারণ ধারণা অনুযায়ী ক্ষুধার্ত ব্যক্তির সংজ্ঞা হলো, যে ব্যক্তি অনাহারে রয়েছে। কারণ, খাদ্য ক্রয়ের কোনো সামর্থ্যই তার নেই। সাধারণ ধারণায় ক্ষুধা মানেই আহারের অভাব; অর্থাৎ এই অভাবের জন্যই জনমানুষ ক্ষুধার্ত হয়। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ক্ষুধার সংজ্ঞায় পুষ্টির অভাব বা অপুষ্টিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ সংজ্ঞায় কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ ক্যালরির মানসম্পন্ন খাবার না খেতে পারে, তাহলে সে অপুষ্টির শিকার হবে। অপুষ্টির অর্থ প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব; অর্থাৎ নির্ধারিত পরিমাণের ক্যালরির ঘাটতি। এ সংজ্ঞায় খাদ্য গ্রহণের পরও মানুষ ক্ষুধার্ত হয়।

চিররঞ্জন সরকারকোভিড এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জোড়া ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কাজ নেই, ব্যবসা ছত্রখান। মূল্যবৃদ্ধির চাপে মানুষ নাজেহাল। ঘরে ঘরে তাই অনাহার তো বাড়বেই। যদিও বিষয়টি নিয়ে তেমন একটা আলোচনা নেই। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে আমরা ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছি—এটাই যা সান্ত্বনা।

ঢাকঢোল পিটিয়ে উন্নয়নের বাজনা বাজানো হচ্ছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে, মাথাপিছু আয় বাড়ন্ত—এসব এখন নিয়মিত বুলি। কিন্তু যা শোনা যায় না তা হলো, রেকর্ড ফসল উৎপাদনের পরেও গরিবের ঘরে এখনো ক্ষুধা আর অনাহারের জ্বলন্ত উদাহরণের কথা। দেশে সর্বোচ্চ শিক্ষালাভের পরও মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলের কাজ না পাওয়ার কাহিনি। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় টাকা বিলানোর ঢালাও প্রচারের পরও অজ্ঞাত কারণে তা গরিবের উঠোনে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছায় না। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা—সরকারি প্রকল্পের শেষ নেই। বরাদ্দ টাকাও অঢেল। হাজার হাজার কোটির আয়োজন। কিন্তু স্থানীয় নেতা, তত্ত্বাবধানকারী অফিসার, দালাল আর উপরি কামাইয়ের সুযোগ নেওয়া ধান্দাবাজদের সৌজন্যে কোথায় যেন আসল উদ্দেশ্য হাওয়া হয়ে যায়। কেন ও কীভাবে? এই রহস্যের পর্দা ফাঁস কোনো সরকারের আমলেই হয় না।

আমাদের প্রশাসন কখনো কালো দিকটা দেখায় না, আমরাও তাই বাধ্য দেশবাসীর মতো তা সচরাচর দেখতে পাই না। এভাবেই আসল সত্যিটা হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। ওসব ছেড়ে আমরা নানা আমোদ-আহ্লাদে উদ্বাহু হই। চোখে পড়ে না গরিব শ্রমিক, কৃষক খেটে খাওয়া মানুষের ঘরের সংকট, ক্ষুধা, অনাহারের ইতিবৃত্ত। অথচ সরকার ঠান্ডা ঘরে বসে যা-ই দাবি করুক, প্রকৃত চিত্র কিন্তু আদৌ দারিদ্র্য-রেখা থেকে বেরিয়ে আসা মানুষের গৌরবময় উত্তরণের কথা বলছে না। গরিব আরও গরিব আর লুটপাটকারী ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে।

এ কথা ঠিক যে গোটা বিশ্বের ক্ষুধার সূচকের (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স) প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থা এখনো শোচনীয়। দেশে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কিছুতেই কমছে না। উল্টো অনাহার ও খাদ্যের হাহাকার বাড়ছে।

আমাদের দেশে ক্ষুধা সূচক নিয়ে সরকার কিংবা বিরোধী দল—কেউই খুব একটা মাথা ঘামায় না। গরিব মানুষ তো ক্ষুধা সূচক বোঝেই না। খাবারের জোগাড় করতেই তারা জেরবার। নইলে ২০১৩ সালে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন তৈরি হওয়ার পর থেকেও আমাদের দেশে অপুষ্টি সমস্যার মোকাবিলায় কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি দেখেও রাজনৈতিক সমাজে কোনো আলোড়ন তৈরি হয়নি কেন? কিছু কিছু মানুষের বাড়িতে খাবার উপচে পড়ে, অথচ অনেক মানুষ ন্যূনতম খাবার পায় না। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প আছে। সেই প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ হলে গরিব মানুষের খাদ্যাভাব থাকারই কথা নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাস্তব ছবিটা অন্য রকম। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে মনে করেন, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, অবকাঠামোয় গলদ, অজ্ঞানতা আর প্রকল্প রূপায়ণে ত্রুটি। ফলে ক্ষুধা দূরীকরণে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাচ্ছে না; অর্থাৎ উপকরণ থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পায়।

রাজনীতিকেরা আছেন তাঁদের নিজস্ব ধান্দায়। তাঁরা বিভিন্ন নন-ইস্যুকে ইস্যু করে রাজনীতির মাঠে ধুলা ওড়ানোর চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ যেখানে আর্থিকভাবে শক্তিধর হতে চাইছে, ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা সমানে উন্নয়নের খতিয়ান দিতে ব্যস্ত, সেখানে ক্ষুধা সূচকে কেন বাংলাদেশ পেছনে থাকবে? কেনই-বা একপেট ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যাবে বিপুলসংখ্যক মানুষ? আলোচ্য রিপোর্টেই আক্ষেপ করা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, খিদের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী লড়াই মোটেই ঠিক পথে এগোচ্ছে না। আশঙ্কা, এভাবে চললে সারা বিশ্ব, বিশেষ করে ৪৭টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধার হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সফল হতে পারবে না; অর্থাৎ ক্ষুধার রাজ্যে বাংলাদেশের মতো পৃথিবীও ক্রমে গদ্যময় হয়ে উঠবে।

ক্ষুধা নিয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই দায় আছে। আছে করণীয়। সুমনের গানের কথায় বলতে হয়: ‘কেউ যদি বেশি খাও, খাবার হিসেব নাও/কেননা অনেক লোক ভালো করে খায় না;/খাওয়া না খাওয়ার খেলা, যদি চলে সারা বেলা/হঠাৎ কী ঘটে যায় কিচ্ছু বলা যায় না...’। 

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত