Ajker Patrika

নির্বাচন ঘিরে কোনো বিপদ না আসে!

হাসান মামুন
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ৩২
নির্বাচন ঘিরে কোনো বিপদ না আসে!

দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সক্ষমতা যেহেতু গড়ে ওঠেনি বা গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি, তাই বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে প্রতিবারই একটা সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের। মাঝে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা হয়েছিল এ কারণেই। সেটা করা হয় দুইভাবে। সাংবিধানিকভাবেও এটা করা হয়েছিল এবং তার অধীনে তিনটি কমবেশি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন হয়। এই ব্যবস্থাকে কীভাবে আবার বিতর্কিত করা হয়েছিল এবং পরে তা একেবারে বাতিলই করে দেওয়া হয়, সেসবও আমাদের জানা।

সমস্যা হলো, ব্যবস্থাটি বাতিলের পর দুটি নির্বাচন হয়ে গেলেও তার একটিও দেশে কিংবা বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়নি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখাটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সেটি পালনে তাকে সহায়তা করার কথা সরকারের। কিন্তু কোনো দলীয় সরকারের আমলেই এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হয়নি। নির্বাচন কমিশন ও সরকার দুটোই ব্যর্থ হয়েছে একত্রে।

দলনিরপেক্ষ সরকারের ভূমিকা নিয়েও যে প্রশ্ন ওঠেনি, তা নয়। তারপরও ওই সব নির্বাচন মেনে নেয় পরাজিত দল এবং তারা সংসদে গিয়ে বসে। মানসম্মত না হলেও একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও গণতন্ত্রের একধরনের অনুশীলন আমরা দেখতে পাই ওই সব নির্বাচনের ভেতর দিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের পর হয়ে যাওয়া দুটি নির্বাচনের পর সেই অবস্থার ক্রমাবনতিই আমরা দেখেছি। সংসদে মিলছে লোকদেখানো বিরোধী দল আর মাঠে প্রকৃত বিরোধী দল এবং তাকে থাকতে হচ্ছে সরকারের অব্যাহত চাপের মুখে।

এ অবস্থায় আরেকটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে একতরফাভাবে। কেননা বিরোধী দল বিএনপি আগের দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে মোটেও রাজি নয়। অতীতে আওয়ামী লীগ যে দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল–এখন তার প্রতিপক্ষ বিএনপিকে একই দাবি আদায়ে প্রায় একই ধরনের আন্দোলনে নামতে হয়েছে রাজপথে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারাতেই তারা ছিল অবশ্য। সম্প্রতি একটি মহাসমাবেশ ঘিরে গোলযোগের সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি চলে গেছে সংঘাতের দিকে।

এটা কাম্য ছিল না; তবে এমন আশঙ্কাও অনেকে করছিলেন। ‘রাজনীতির একটি পক্ষ’ সংঘাত চাইছিল বলেও ধারণা করা হয়। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে তারাই জয়ী হয়েছে বললে ভুল হবে না। এমন সংঘাত দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে বলেই ধারণা।জনগণের মধ্যে বাড়বে অস্থিরতা ও আতঙ্ক। সবচেয়ে বড় কথা, এর মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচন হয়ে গেলেও তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। রাজনৈতিক সংকটেরও হবে না অবসান।

জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনটি হতে হবে। সেদিক থেকে দেখলে, তফসিল ঘোষণা না হলেও নির্বাচনের সময় কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন মানে তো কেবল ভোট গ্রহণের দিনের ঘটনাবলি নয়। এর আগের সময়টাও নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এ সময়ে আমরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখছি দেশে। কেবল সরকারের সঙ্গে নয়; নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও প্রধান বিরোধী দল ও তার মিত্রদের সম্পর্ক বিষিয়ে উঠেছে।

২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ঘিরে সৃষ্ট ঘটনাবলির পর সরকারও অবস্থান নিয়েছে যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করে ফেলার পক্ষে। আগে অবস্থান ছিল, বিএনপি নির্বাচনে এলে আসুক। এখনকার অবস্থান হলো, তাদের বাদ দিয়েই নির্বাচন। এ জন্য আগামী নির্বাচনকে অনেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছে।

২০১৪-এর নির্বাচন বিএনপি ও তার মিত্ররা প্রতিহত করতে পারেনি–যদিও সে লক্ষ্য অর্জনে তারা বড় ধরনের শক্তি প্রয়োগ করেছিল। আমাদের রাজনীতিতে যেকোনো দাবি আদায়ে শক্তি প্রয়োগ যেন প্রায় অনিবার্য। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে কি কম শক্তি প্রয়োগ করেছিল? আদর্শগত দিক দিয়ে ভিন্ন ধরনের দলগুলোও তখন একত্রে গড়ে তুলেছিল তীব্র আন্দোলন। এরশাদের জাতীয় পার্টিও তাতে শামিল হয়, যদিও তাদের সরিয়েই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছিল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।

দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে একটা রূপরেখাও প্রণয়ন করেছিল তারা। সেই অনুযায়ী দেশ অবশ্য পরিচালিত হয়নি; কোনো পক্ষই এর পরোয়া করেনি। সেটা অনুসৃত হলেও সুশাসন ও নির্বাচন নিয়ে এখনকার পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছাতে হতো না। কথা ছিল, দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত হবে; তার অধীনে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর হবে। একটা সহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিবেশও গড়ে উঠবে ক্রমে।এর কিছুই অর্জিত হয়নি। উপরন্তু প্রধান সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সংকট।

সংকটটা ওখানে যে, অতীতের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোয় যারা কমবেশি এক-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়েছে, সেই দলটির অংশগ্রহণ ছাড়াই হতে যাচ্ছে আরেকটি নির্বাচন। তারাও কার্যত নেমে গেছে নির্বাচন প্রতিহত করতে। সরকারও গেছে আন্দোলন দমনের পথে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাকে ইতিমধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে কারাগারে। এ অবস্থায় দলের আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা আরও বেশি বেপরোয়া আচরণ করতে পারে বলেই শঙ্কা। সরকারও বলছে, কীভাবে এ ধরনের আন্দোলন দমন করতে হয়–তারা জানে।

ধরা যাক, আন্দোলন বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না এবং এর মধ্য দিয়েই নির্বাচন করে ফেলতে সক্ষম হলো সরকার। এ ধরনের নির্বাচন কেমন হবে, তা অবশ্য সহজেই অনুমেয়। ‘জনগণের অংশগ্রহণের’ যুক্তিতে নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ করার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও ঘটবে বলে মনে হয় না। এতে নির্বাচন বৈধতা পেলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না, এটাই প্রধান সমস্যা। দেশের ভেতর থেকে প্রতিরোধ মিলিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে আপত্তি বা চাপ আসবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সত্যি বলতে, এর ক্ষেত্রও প্রস্তুত।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমাদের কঠোর অবস্থান ও অব্যাহত সক্রিয়তার কথা সবারই জানা। নতুন এই উপাদান সরাসরি গেছে বিরোধী দলগুলোর পক্ষে। কোনোভাবেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে তাদের কঠোর অবস্থানের পেছনেও রয়েছে পশ্চিমা সক্রিয়তা। এটা তাদের সৌভাগ্যও বলতে হবে, কেননা পশ্চিমা অবস্থানের কারণে সরকার আছে চাপের মুখে। তবে ২৮ অক্টোবরের পর কোনো চাপকেই চাপ মনে করছে না সরকার।

নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ভীতিও ঝেড়ে ফেলে তারা নির্বাচনটা করে ফেলতে চাইছে। এমন মনোভাবও স্পষ্ট, নির্বাচন করে ফেলতে পারলেই আর তেমন সমস্যা নেই। সেটা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। কেননা পশ্চিমারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত দিন যে ভূমিকা রাখল, এর একটা ফল তারা স্বভাবতই দেখতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে তাদের যে ‘নিজস্ব স্বার্থ’ রয়েছে, সেটাও কারও বুঝতে বাকি নেই।এটি অর্জনে তারা নির্বাচনের আগেও সক্রিয়তা দেখাতে পারে বলে মত রয়েছে। নির্বাচনের পরেও সক্রিয়তা দেখালে তার রূপ কী হবে, সেটা অবশ্য অস্পষ্ট।

রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু সমস্যা তীব্র হয়ে ওঠায় এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে যে অর্থনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা এলে সেটা মোকাবিলা করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। নির্বাচন ঘিরে কঠোর অবস্থান নেওয়া এসব রাষ্ট্রের সঙ্গেই প্রধানত আমাদের রপ্তানি, ঋণসহায়তা ও বিনিয়োগের সম্পর্ক। ওদের কাছ থেকে হালে রেমিট্যান্সও আসছে সবচেয়ে বেশি। তাদের পেশ করা মডেলেই আমরা এত দিন অর্থনীতি পরিচালনা করে সাফল্যও কম অর্জন করিনি। সে দিক থেকে তাদের পদক্ষেপের চাপ উপেক্ষা করা একরকম অসম্ভব।

এখন সরকার যদি পারে কোনোভাবে এ চাপ এড়িয়ে আবার ক্ষমতায় বসে যেতে, তাহলে শাসক দলের জন্য বেশ হয়! বিগত ১৫ বছরে দেশের ভেতরটা তারা যেভাবে ভেঙেচুরে সাজিয়ে তুলেছে, তাতে আরেকটা মেয়াদ পার করে দিতে তেমন সমস্যা হবে না–বাইরের চাপ যে পর্যন্ত আছে, সেটুকুতেও পশ্চিমারা আটকে থাকলে। বিএনপি ও তার মিত্রদের দাবি যত যুক্তিসংগতই হোক, রাজপথে তাদের চাপ সৃষ্টির ক্ষমতা কিন্তু আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কম। ঘটনা এ ধারায় অগ্রসর হলে তাদের সামনে সমূহ বিপদ।

আর ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হলে সরকার হবে বিপদগ্রস্ত। রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রপ্তানিতে যে ধারা সূচিত হয়েছে এবং নানা ‘অপঘটনা’ ঘটছে একযোগে; তার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের পরিস্থিতি এখন নজিরবিহীন বলতে হবে। এ অবস্থায় গবেষণালব্ধ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। সেটা দেশের জন্যও। সরকার গঠনের একটি নির্বাচনের চেয়ে দেশ বিপদগ্রস্ত হওয়া-না হওয়াটা নিশ্চয়ই অনেক বড় বিষয়।

লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘জুলাইকে জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে’, তাজনূভার দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট

প্রথমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘জুলাইকে জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে’, তাজনূভার দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট

প্রথমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘জুলাইকে জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে’, তাজনূভার দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট

প্রথমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘জুলাইকে জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে’, তাজনূভার দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট

প্রথমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

‘জুলাইকে জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে’, তাজনূভার দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট

প্রথমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত