Ajker Patrika

করোনা-প্রায়-উত্তর ঈদযাত্রা ও ঈদ-অর্থনীতি

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৫৩
করোনা-প্রায়-উত্তর ঈদযাত্রা ও ঈদ-অর্থনীতি

কোভিড-১৯ এখনো পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখনো বিশ্বকে করোনামুক্ত বলতে পারছে না। কারণ চীন, ভারত, ইউরোপ এবং আমেরিকায় এখনো অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। ভারতে করোনা চোখ রাঙাচ্ছে। ভারত সরকার তাই অনেকগুলো রাজ্যেই মাস্ক পরার বিধান শক্তভাবে কার্যকর করার চেষ্টা করছে। প্রতিবেশী ভারতে যখন করোনা কড়া নাড়াচ্ছে, তখন আমাদের শঙ্কামুক্ত থাকার কোনো কারণ নেই। যদিও কয়েক মাস থেকে মানুষ অনেকটা ধরেই নিয়েছে আমরা করোনা থেকে এখন মুক্ত হয়ে গেছি।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জনগণের এমন ধারণার সঙ্গে একমত নন। তাঁরা জনগণকে সাবধান থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এরই মধ্যে আমাদের দেশে নববর্ষ পালিত হয়েছে, আগামী সপ্তাহে উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ২০২০-২১ সালে মানুষ করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার কারণে কোনো উৎসবই আগের মতো পালন করতে পারেনি। সে কারণে এবার বিপুলসংখ্যক মানুষ শহর থেকে গ্রামে ঈদযাত্রায় অংশ নিতে যাচ্ছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান এবং ব্যক্তিগত ও ভাড়া করা যানবাহন নিয়ে অসংখ্য মানুষ এরই মধ্যে গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। শুক্রবার থেকে এই যাত্রা অনেকটাই ঢল নামার মতো হয়ে যেতে পারে বলে সবার অনুমান। এর ফলে একদিকে পরিবহনগুলোর ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হতে পারে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধির ন্যূনতম শর্ত মেনে চলার লক্ষণ প্রায় নেই। দেশ থেকে ওমিক্রন এখনো বিলুপ্ত হয়নি। স্বল্পসংখ্যক হলেও কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন।

তাই এমন ঈদযাত্রায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে কারণেই নিবন্ধের শিরোনামে ‘প্রায়’ শব্দটি উল্লেখ করতে হলো, করোনা-উত্তর কথাটি ব্যবহার করতে পারছি না। করোনা-উত্তর বিশ্বব্যবস্থার প্রতীক্ষায় আমরাও আছি, এখনো নেই সেটিই কষ্টের বিষয়। কিন্তু এই কষ্টটা তো মেনে নিতেই হবে, উপেক্ষা করলে নতুন করে বিপদের মুখে পড়ব না, সেটি তো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। দুই বছর করোনায় আমরা অনেককেই হারিয়েছি, অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, সেই ভয়াবহ স্মৃতির কথা ভুলে যাইনি, ভুলতেও চাই না। সে কারণেই এবার যাঁরা ঈদযাত্রায় ব্যাপকভাবে অংশ নিতে যাচ্ছেন, তাঁরা যেন নিকট অতীতের করোনা সংকটের কথা ভুলে না যান। করোনায় আমরা দুই বছরে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সারা বিশ্বের মতো আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেক মানুষ কর্ম হারিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দুই বছরে শিখনফল অর্জনে এতটাই পিছিয়ে পড়েছে যে তাদের সামান্য সংখ্যকই সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে হয়তো পারবে। আমাদের একটি বড় ধরনের প্রজন্ম শিক্ষার মানের সংকটে পড়েছে। এটি আমাদের জাতীয় জীবনের বড় ক্ষতি, যা পুষিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অর্থনীতির অতি ক্ষতি হয়তো স্বল্প সময়ের মধ্যেই পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু ৫-৬ কোটি শিক্ষার্থীর শিখন ফলের ঘাটতি পূরণ করা খুবই অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে। সে কারণে আমরা আর চাই না করোনা সংক্রমণের মতো আর মারাত্মক ব্যাধি আমাদের জীবনে আবার ফিরে আসুক।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারীঅতীতেও ঈদ উপলক্ষে মানুষের ঢল সামলাতে কোনো কর্তৃপক্ষই পারেনি। গণপরিবহন বা নানা ধরনের পরিবহনে এই চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। কয়েক কোটি মানুষ চার-পাঁচ দিনের মধ্যে শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার জন্য যত পরিবহনের দরকার, তা বাংলাদেশ কেন কোনো দেশই জোগান দিতে সক্ষম নয়। ট্রেনের টিকিট কাটতে এখনই বহু মানুষকে যারপরনাই কষ্ট করতে দেখা যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিটি টিকিটের বিপরীতে ৬০-৭০ জনের যে ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে, তা পূরণ করতে হলে দেশের সবকটি রেল সড়কে বিরতিহীন সারিবদ্ধভাবে ট্রেন যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাতেও সম্ভব হবে কি না, বলা মুশকিল। অন্যদিকে গণপরিবহনের ওপর অতিমাত্রায় চাপ পড়লে ড্রাইভার-হেলপারদের বিরতি, বিশ্রাম প্রায় হারাম হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়! তাতে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। ঈদে আনন্দ করতে গিয়ে অতীতে অসংখ্য মানুষ ঈদযাত্রায় প্রাণ হারিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, পরিবার ঈদে স্বজন হারানোর বেদনায় দিনাতিপাত করেছে। এবার যেহেতু বাড়তি মানুষের চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাই পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাব। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করব ঈদ শেষে সবাই যেন আবার নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারেন। ঈদের আনন্দ শত শত বছর ধরে মানুষ উপভোগ করে আসছে। যখন যানবাহন বা সড়কপথ ছিল না, তখন হেঁটে মানুষকে গ্রামে যেতে দেখেছি। এখন মানুষের সচ্ছলতা বেড়েছে। যোগাযোগ ও যানবাহন বেড়েছে বহুমাত্রিক। সুতরাং সবাই চাইছে ইচ্ছেমতো ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে। অসংখ্য মানুষ ঈদ শেষে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ছুটে বেড়াবেন। জীবনের এই বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

আমাদের জাতীয় জীবনে দুটি ঈদ, বাংলা নববর্ষ, দুর্গাপূজা, নিজ নিজ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বড় উৎসব। আরও অনেক পালা-পার্বণ আছে। এসব উৎসব ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সঙ্গে সংগতি রেখে পরিবর্তিত হচ্ছে। যখন সমাজে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল তখন এসব পার্বণের সঙ্গে মানুষের সংশ্লিষ্টতা অনেকটাই নিয়ম রক্ষার পর্যায়ে ছিল। সীমিতসংখ্যক মানুষই ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করতে পারত। আমাদের প্রজন্মের শিশু-কিশোরেরা ঈদে পিতামাতার কাছ থেকে নতুন জামাকাপড়, জুতা, স্যান্ডেল পেয়েছে—এমনটি মনে পড়ে না। অভিভাবকদের সক্ষমতার ওপর এসব কেনাকাটা হতো, যা খুব স্বল্পপরিসরেই ছিল। ঈদে ঘরে তৈরি খাবার এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে একসঙ্গে ঈদ করার বেশি কিছু ছিল না। কালক্রমে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এই ৫০ বছরে অভূতপূর্ব পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত যেই স্তরেই আমরা এখন থাকি না কেন, শহর-গ্রামভেদে সর্বত্র মানুষের আয়-উপার্জন দেশে-বিদেশে নানাভাবেই বেড়ে চলেছে। এখন ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে কেনাকাটার যে ধুম পড়ে যায়, তা ৩০-৪০ বছর আগে কল্পনা করাও সম্ভব ছিল না। এখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যেও নতুন কাপড়চোপড় কেনাকাটা বা পাওয়ার নানা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরা তো সব ঈদ এবং পার্বণেই নানা ধরনের কেনাকাটায় অংশ নিচ্ছে। শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, আত্মীয়স্বজন, বাড়িতে কাজের লোকসহ সবাইকে এই ঈদ বা পূজা-পার্বণে নতুন পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল এবং অন্যান্য উপহারসামগ্রী দিতে দেখা যায়।

গত দুই-তিন দশকে ধীরে ধীরে পার্বণকেন্দ্রিক অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। একেক পার্বণের চাহিদা একেক রকম, বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন রকমের। সেভাবেই বাজারের চাহিদা পূরণে অসংখ্য মানুষ ফ্যাক্টরি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এটি এখন গ্রাম পর্যায়েও বিস্তৃত হয়ে গেছে। ঈদুল ফিতরে পোশাক-আশাক এবং ব্যবহার্য জিনিসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, তাই ব্যবসার পসরা সাজিয়ে শহর ও গ্রামে ক্রেতাসাধারণের চাহিদা পূরণ করছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েক মাস আগ থেকেই এসব চাহিদা অনুযায়ী পণ্যসামগ্রী তৈরি ও উৎপাদনে অসংখ্য ব্যক্তি ও গোষ্ঠী যুক্ত হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে এখন মাসব্যাপী কেনাবেচা হচ্ছে। শুধু পণ্যসামগ্রীই নয়, খাবার-দাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য এই সময় ব্যাপকভাবে কেনাবেচা হচ্ছে। মানুষ কয়েক দিন ঈদের আনন্দ নিজেদের মধ্যে উপভোগ করতে চায়। ফলে প্রতিটি উৎসবকে কেন্দ্র করেই দেশে এখন চলছে কেনাবেচা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও যাতায়াত। এর ফলে যে উৎসবে প্রায় সবাই যুক্ত, সেই উৎসবের কেনাকাটাও অনেক বেশি হয়। ঈদুল ফিতরের আয়োজনকে কেন্দ্র করে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে আসছে। এখন তাই ঈদ অর্থনীতি নামের ধারণাও প্রযুক্ত হয়েছে।

গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদ অর্থনীতিতে ছেদ পড়েছিল। এবার সেটি পুষিয়ে নেওয়ার প্রবণতা সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতিতে তেজিভাব ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে লক্ষ-কোটি টাকার সঞ্চালন ঘটছে। এটি অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত সহায়ক। আমাদের লাখো প্রবাসী এই সময়ে বাড়তি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। ঈদ বোনাস, নানা পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন, বেচা-বিক্রি সমাজের তৃণমূল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ায় প্রতিটি পরিবারই বাড়তি অর্থ উপার্জন বা খরচের সক্ষমতায় কম-বেশি যুক্ত হয়ে যায়। এর ফলে ঈদ অর্থনীতির প্রভাব সমাজ ও জনজীবনে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি করে সেটি পরবর্তী ঈদ কিংবা পার্বণকেও একইভাবে উদ্‌যাপিত করার শক্তি সঞ্চালনের প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এটি জাতীয় অর্থনীতি এবং জাতীয় জীবনের জন্যও বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে। এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়হীনদের মধ্যে ঈদ উপলক্ষে ৩৩ হাজার ঘর উপহার দিয়েছেন। এটা কখনো কল্পনা করা গিয়েছিল? আমাদের রাষ্ট্রের সক্ষমতাও এর মাধ্যমে অনুমান করা যেতে পারে। এ ধরনের সক্ষমতা দিয়েই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত