Ajker Patrika

রোহিঙ্গা নীতি-কৌশল আমূল পাল্টানো দরকার

আলতাফ পারভেজ
রোহিঙ্গা নীতি-কৌশল আমূল পাল্টানো দরকার

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে প্রায় ৬৬ মাস হলো। এসেছিল প্রায় ১০ লাখ। এখন ১১-১২ লাখে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন মুখ যুক্ত হয়েছে আরও প্রায় দেড় লাখ। প্রতিদিন নতুন করে প্রায় ৯০টি রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে। শিবিরগুলো ক্রমে উপচে পড়ছে মানুষে। সেখানে রক্তাক্ত সংঘাত-সংঘর্ষ দেখা যাচ্ছে।

আবার আরাকান সীমান্তও আগের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত এখন। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রত্যাশাও আমূল বদলে গেছে। পাশাপাশি বেগবান হয়ে উঠছে সাগরপথে রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা। প্রশ্ন উঠেছে, এত সব খারাপ প্রবণতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন কী করবে? এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে বিকল্প কিছু গুরুত্বের সঙ্গে ভাবার সময় হয়েছে কি না?

তমব্রু সংঘাত কি কোনো মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত?
ভাসানচরকে আলাদা রাখলে রোহিঙ্গা শিবিরের সংখ্যা ৩৩টি। এসব শিবিরের চারদিকে আপাতদৃষ্টিতে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। কিন্তু ভেতর থেকে প্রতিনিয়ত সংঘাত-সংঘর্ষ-খুনোখুনির সংবাদ মেলে। সেখানে অনেকগুলো গ্যাং তৈরি হয়েছে। বহুমুখী চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ক্যাম্পগুলোর ভেতরে গড়ে ওঠা মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েও বিবাদ আছে। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা নতুন সামাজিক নেতৃত্ব ক্রমাগত আক্রান্ত হয় এসব ক্যাম্পে। মুহিবুল্লাহর মতো সুপরিচিত এবং প্রভাবশালী রোহিঙ্গা কণ্ঠস্বরকে উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া শিবিরে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নির্মমভাবে খুন হতে দেখা গেছে। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কমই। চোরাগোপ্তা গ্যাংগুলোর নৃশংসতা থামানো ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছিল। এর মাঝেই ঘটেছে গত ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে তমব্রু সীমান্তের সংঘর্ষ। রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে গত পাঁচ বছরে এটাই সবচেয়ে বড় উপদলীয় সংঘাত। এতে ‘আরসা’ নামে পরিচিত সশস্ত্র দলটি তমব্রু থেকে বিতাড়িত হয় বলে জানা গেছে। সেখানকার বসতিগুলো রীতিমতো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কাজে অপরপক্ষে ছিল ‘আরএসও’ নামে পরিচিত এক রোহিঙ্গা শক্তি, যারা এই আক্রমণে ‘বিভিন্ন উৎস’ থেকে মদদ পেয়েছিল বলে স্থানীয় ভাষ্য মেলে।
আপাতদৃষ্টিতে আরএসওর প্রতিরোধে আরসাকে তমব্রু ছাড়তে হলেও এ ঘটনা ‘শুরুর শেষ, নাকি শেষের শুরু’—তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এই দিনের পর রোহিঙ্গা জনপদে পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই।

গুরুতর এই সংঘাতের দুটি বিপরীতমুখী সম্ভাব্য পরিণতি অনুমান করা যায়: প্রথমত, আরসা প্রতিশোধ নিতে পারে। তাতে সংঘাতের দুষ্টচক্র চালু থাকবে। দ্বিতীয়ত, ক্যাম্পগুলোতে এত দিনকার চোরাগোপ্তা হামলা কমে আসবে, আরসার অনুসারীরা যেসব হামলা করত বলে অভিযোগ আছে। যদিও তার সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করার সুযোগ ছিল না।

সীমান্তের প্রায় শূন্যরেখায় তমব্রু শিবির সরকার স্বীকৃত কোনো ‘ক্যাম্প’ নয়। ৫০০-৬০০ রোহিঙ্গা পরিবার এখানে থাকত। অনিবন্ধিত এই ক্যাম্পের সংঘর্ষ সব নিবন্ধিত ক্যাম্পের পুরো জনগোষ্ঠীকে ভাবাচ্ছে এখন। ক্যাম্প বাসিন্দারা পরিস্থিতির একটা মোড় পরিবর্তনের অপেক্ষায় আছে। আরসার পিছু হটা কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও তার স্থায়িত্ব নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারছে না স্থানীয় লোকজন।

রোহিঙ্গা নীতি-কৌশল কি পাল্টাবে?
এতে সন্দেহ করার সুযোগ নেই যে বাংলাদেশ সরকার গত ৬৬ মাস রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সব উপায়ে চেষ্টা করেছে। 
কিন্তু এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ যেসব কৌশল নিয়েছিল তা যে সামান্যই ইতিবাচক ফল দিয়েছে, সেটাও এখন অনেকখানি স্পষ্ট।

সংগত কারণেই নীতিনির্ধারকদের সামনে পুরোনো নীতি-কৌশল পরিবর্তনের একটা চাপ ও চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের এত দিনকার রোহিঙ্গা নীতির প্রধান দিক ছিল দুটি। প্রথমত, আন্তর্জাতিকভাবে চীন ও ভারতের ওপর নির্ভর করে প্রত্যাবর্তনের জন্য বৈশ্বিক সমর্থন জোরদার করা। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ভেতর রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে সংগঠিত হওয়ার যেকোনো চেষ্টাকে নিয়ন্ত্রণ করা। শেষোক্ত কৌশলের কারণে ১০ লাখ রোহিঙ্গা পাঁচ বছরে একপ্রকার ক্যাম্পবন্দী। শিক্ষা এবং আয়ধর্মী কাজেও তাদের যুক্ত করা হয়নি খুব একটা। তারপরও অবশ্য অনেক রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নভাবে ক্যাম্পের বাইরে যায় কাজের খোঁজে। অনেকে অল্পবিস্তর ক্যাম্পের বাইরের জগতেও মিশে যাচ্ছে। তমব্রু সংঘাতের পর সেখানকার আশ্রয়শিবিরের প্রায় দুই হাজার লোককে একইভাবে এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ রকম সব খবরই বেশ হতাশাজনক। তবে ঢাকাকে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে বেইজিং এবং নয়াদিল্লি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের ভরসায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা পাওয়া গেছে সামান্যই।
এটা অবশ্যই বাংলাদেশের ভুল ধারণা ছিল যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চীন-ভারত নেপিডোর জেনারেলদের চাপ দেবে। এ রকম হওয়ার কোনো কারণ ছিল না এবং এখনো নেই। চীন-ভারতের জন্য মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে সে দেশে। ভূরাজনৈতিক বিবেচনায়ও মিয়ানমার এশিয়ার ওই দুই পরাশক্তির কাছে অতি প্রয়োজনীয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিভ্রমে থাকার উপায় নেই।

আমরা দেখেছি, চীন বহুবার বলেছে, তারা রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমাধানে কাজ করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আন্তর্জাতিক পরিসরে তারা ওখানকার জান্তাকে প্রশ্নহীনভাবে কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, ভারতও নেপিডোর শাসকদের কখনো অপ্রিয় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ তুলে বিব্রত করেছে বলে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আরাকানে ভারতের বিপুল বিনিয়োগ এবং মণিপুর-নাগাল্যান্ড সীমান্তে স্থানীয় বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর অনিবার্য সহযোগিতা নয়াদিল্লির দরকার। এই সব মিলিয়ে ভারতও রোহিঙ্গা প্রশ্নে শক্তভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি; অর্থাৎ এই দুই ‘বন্ধু’র ওপর ভরসা করে বাংলাদেশ পুরোদস্তুর ঠকেছে।

এই বাস্তবতায় রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কর্মনীতি যে আমূল পাল্টানো দরকার, তা এখন সময়ের দাবি। চীন ও ভারতের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ে বিদ্যমান বন্ধুত্ব রেখেও রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বন্ধু খুঁজে পেতে হবে। তার সুযোগও আছে। নতুন ঠান্ডাযুদ্ধ সেই সুযোগ তৈরি করছে। বাংলাদেশ সেই সুযোগ নেওয়ার হিম্মত দেখাতে না পারলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অধরা এক কূটনৈতিক লক্ষ্য হয়েই থাকবে।

রোহিঙ্গাদের সংগঠিত হতে দিলে সমস্যা কী?
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হলে তাদের সংগঠিত হতেও দিতে হবে। এটা প্রয়োজন। নিজ মাতৃভূমিতে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার সংগ্রাম পুরোটা বাংলাদেশের কাঁধে নেওয়ার সুযোগ নেই, প্রয়োজনও নেই। এটা তাদের সমস্যা। সমাধান খুঁজে পেতেও তাদের যুক্ত 
হতে হবে।

সন্দেহ নেই যে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর তুলনায় আপাতত রোহিঙ্গারা অসহায় জনগোষ্ঠী। কিন্তু সংগঠিত হওয়ার ভেতর দিয়েই কেবল অসহায়রা বিশ্বসমাজের কাছে বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে। এ রকম সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই চূড়ান্ত রকমের অহিংস হবে। বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে নজরও রাখবে। কিন্তু আরাকানে ফেরার সংগ্রামকে রোহিঙ্গাদের নিজেদের কাঁধে নেওয়ার সময় হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গা তরুণেরা সে দায়িত্ব নিতেও আগ্রহী। ফলে তাদের একতাবদ্ধ হতে দিতে বাংলাদেশের আপত্তি থাকার কী কারণ থাকতে পারে, তা বোঝা মুশকিল। মানবাধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের আলোকেই সেটা সম্ভব।

বাংলাদেশ যে একক চেষ্টায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠাতে পারবে না, সেটা গত পাঁচ বছরে অতি স্পষ্ট। এটা তিক্ত সত্য। কিন্তু এই সত্য মেনে নেওয়াই ভালো হবে। এ-ও অবশ্যই মানতে হবে, অল্পমাত্রায় হলেও রোহিঙ্গারা ক্রমে বাংলাদেশের সমাজে মিশে যাচ্ছে, যদিও তারা নিজেদের দেশেই ফিরতে আগ্রহী। আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে যদি এই জনগোষ্ঠীকে তাদের পুরোনো বসতিতে ফেরত পাঠানো না যায়, তাহলে সেটা দেশে-বিদেশে একটা খারাপ বার্তা ছড়াবে। একই সঙ্গে তার পরিণতিও হবে খারাপ।

এ বছরই মিয়ানমারে এক দফা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানকার সামরিক সরকার জনপ্রতিরোধের মুখে যদি এই নির্বাচন করে নিতে পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সে আরও অবজ্ঞা করতে শুরু করবে।

অন্যদিকে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোকে 
বর্তমান ধাঁচে, বর্তমান অবস্থায় রেখে মিয়ানমার থেকে মাদকের আগ্রাসন এবং সাগরপথে মানব পাচারের আধিক্য কমানোও কঠিন। এটা ঠিক নয় যে মিয়ানমারের দিক থেকে বাংলাদেশ যে মাদকযুদ্ধের শিকার, তার কারণ রোহিঙ্গারা। কিন্তু বাস্তবতা হলো সীমান্তজুড়ে বিপুল রোহিঙ্গার উপস্থিতি এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কাঠামোগত উদ্যোগ নেওয়া দুরূহ করে ফেলেছে।

সাম্প্রতিক আরেক বিপজ্জনক প্রবণতা হলো উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমতে শুরু করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত থাকার মুখে ইউরোপে শরণার্থী সমস্যা বাড়ায় এশিয়ার শরণার্থীদের জন্য পুরোনো ধারায় আর সহায়তা পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অনেকগুলো খারাপ উপাদান উদীয়মান। এসব বিবেচনায় রোহিঙ্গা বিষয়ে বিদ্যমান নীতি-কৌশলে দ্রুত পরিবর্তন আনা জরুরি। সময় দ্রুত বদলে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরের ভুলগুলো পুনরায় ঘটতে দেওয়া হবে বিপর্যয়কর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত