Ajker Patrika

মার্কিন ভিসা নীতি, নির্বাচন এবং নানা মত

মো. রাকিবুল ইসলাম
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৩, ১০: ৩৯
মার্কিন ভিসা নীতি, নির্বাচন এবং নানা মত

কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ও রাজনীতিসচেতন সর্বসাধারণের মাঝে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমেরিকার ঘোষিত নতুন ভিসা নীতি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত ২৪ মে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে আজ আমি একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির আওতায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কেউ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করলে কিংবা দায়ী থাকলে তাকে ও তার পরিবারকে আমরা ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে পারি।’ এই নীতির ব্যাখ্যায় মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লু আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে নিষেধাজ্ঞা দিইনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারী যে কাউকে ভিসার নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।

এটা হতে পারে সরকারের কোনো সদস্য, হতে পারে বিচার বিভাগীয় কেউ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ অথবা বিরোধীদলীয় কোনো সদস্যও হতে পারে।’ অর্থাৎ মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লুর কথা থেকে এটা অন্তত পরিষ্কার যে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব একটি আশঙ্কাজনক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং সেটি এই ভিসা নীতি যুক্ত করা থেকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে। সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই ভিসা নীতিকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করছে এবং এই ভিসা নীতি পরবর্তী নির্বাচনে নিজ দলকে কীভাবে সুবিধা দেবে ও অন্য পক্ষকে কীভাবে অসুবিধায় ফেলবে, সেটা নিজেদের মতো করে মনগড়া ব্যাখ্যা করছে। এ যেন ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার মতো ব্যাপার।

মূল সংকট সমাধানে না গিয়ে চলছে কথার রাজনীতি। যেমন আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, বিএনপির বিরুদ্ধেই মার্কিন ভিসা নীতি হয়েছে। আবার বিএনপির নেতারা দাবি করছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই এবং যারা আগে সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেছেন, যারা নির্বাচনে জোরজবরদস্তি করবে, মার্কিন সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—এটা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিষয়। এ বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই। এখান থেকে বোঝাই যাচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এখনো পরস্পরকে দোষারোপ করছে, যদিও ডোনাল্ড লু পরিষ্কার বলেছেন যে এই নীতি সুস্পষ্ট কারও বিরুদ্ধে নয়। এটা সরকারি অথবা বিরোধী দল যে কারও জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। তাই কোনো দলেরই মনে মনে সুখী হওয়ার কোনো সংগত কারণ নেই। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো সংকটের মূলে যাওয়ার চেষ্টা করছে না।

আমাদের নির্বাচন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট আগে থেকেই ছিল। আশি ও নব্বইয়ের দশকের সামরিক সরকারের অধীনের নির্বাচনগুলো, ১৯৯৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচন, দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশ্বাসের সংকট জন্ম দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগসহ রাজনৈতিক দলগুলো পর্যন্ত এখন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সর্বশেষ মার্কিন ভিসা নীতি যার প্রমাণ। প্রতিষ্ঠানের প্রতি ব্যক্তির আস্থা গড়ে ওঠে মূলত চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। অতীত অভিজ্ঞতা, কর্তব্য পালনে সুনাম, কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আচরণ এবং প্রতিশ্রুত কথা ও কাজের মধ্যে মিল। আমরা যদি আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোকে এই চারটি সূচকে মূল্যায়ন করি, তাহলে আমরা কী পাই? সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সর্বশেষ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনও যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।

নির্বাচন কমিশনের মূল কর্তব্য হচ্ছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা, রয়েছে সেখানেও অস্বস্তি। বাংলাদেশের কোনো নির্বাচন কমিশনই ভারতের টি এন সেশনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মতো সর্বজনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, চতুর্থ সূচক কথা ও কাজের সম্মিলন; সেখানেও নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখাতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচন ইভিএম নাকি ব্যালটে হবে, এ বিষয়ে কমিশন নিজের কথা রাখতে পারেনি। ফলে প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বহু বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। এর সর্বশেষ সংস্করণ মার্কিন ভিসা নীতি। অপরদিকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও জনগণের আস্থা হারাচ্ছে।

ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস তলানিতে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালনে সচেষ্ট নয়। তাই লক্ষ করলে দেখা যাবে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী বাদে সাধারণের সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল মূল্যস্ফীতি, পরিবেশ বিপর্যয়, ডলার-সংকট, অর্থ পাচার কিংবা দুর্নীতি দমনের মতো জনসম্পৃক্ত ইস্যুগুলো বাদ দিয়ে মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দাবি ও অন্যান্য ইস্যুতে বেশি সরব ছিল।

আবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অর্থ পাচার, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে বারবার। এভাবে সরকারি ও বিরোধী দল দুপক্ষই সাধারণের আস্থা হারিয়েছে। জনসাধারণের কথা চিন্তা করে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বিশ্বাসের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপায় সৃষ্টি করা দরকার ছিল, সেটি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি শঙ্কা ও সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই মোচন করতে হবে। একটা কথা বলে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রসহ এই অঞ্চলে যাদের স্বার্থ রয়েছে এমন প্রাসঙ্গিক শক্তিশালী দেশগুলোর দূতাবাস মারফত বারবার তারা বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় থাকুক দেখতে চায়, এ কথা ব্যক্ত করছে; তবে কী উপায়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, এ বিষয়ে মতামত প্রদান করেনি কিংবা কোনো ইঙ্গিত করেনি। এখন এই পরিস্থিতিতে যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে নিজেরা সমঝোতায় না আসতে পারে, তবে নতুন কোনো সংকট তৈরি হলে দেশের অর্থনীতি ও জনসাধারণ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তার দায় কে নেবে?

একটা কথা মনে রাখা দরকার যে নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না। কোনো দল বা গোষ্ঠী যদি মনে করে পশ্চিমা দেশগুলোর গৃহীত পদক্ষেপ কেবলমাত্র সরকারি দল কিংবা কেবলমাত্র বিরোধী দলগুলোকে আক্রান্ত করবে, তবে সেটা হবে চরম ভুল। অর্থনৈতিক অবস্থা, ভূরাজনীতি এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মিলিয়ে আমরা একটি জাতীয় সংকটের মুখোমুখি। এই সংকটকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হলে সব পক্ষকে আরও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনী সংকট সমাধানে সংলাপের বিকল্প নেই।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সংলাপ। কোনো সন্দেহ নেই মার্কিন ভিসা নীতি সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। নতুন করে সংকট বৃদ্ধি করতে না চাইলে সংলাপ জরুরি। 
এ ক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এগিয়ে আসতে পারেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সংলাপের ব্যবস্থা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক ধারা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তাই প্রয়োজনে তাঁর উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে আসুক। এলোমেলো মন্তব্য ও কথার লড়াই বন্ধ করে রাজনৈতিক দলগুলো সংকটের মূলে আলোকপাত করবে—পুরো জাতি এই প্রতীক্ষায়। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন কমিশন ও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচনী সহিংসতাবিহীন এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে। সর্বসাধারণের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা অনুধাবন করে সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক—এই কামনা।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত