Ajker Patrika

দিশাহীন রাজনীতি ও হতাশা

চিররঞ্জন সরকার
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮: ০২
দিশাহীন রাজনীতি ও হতাশা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন ইস্যুর প্রাধান্য থাকলেও, শেষ বিচারে তা দিশাহীন। ক্ষমতাসীনেরা যেমন সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে জনকল্যাণে ভূমিকা পালন ও সুশাসন কায়েম করতে পারে না, বিরোধীরাও সরকারের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে শোচনীয় রকম ব্যর্থ। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। দলটি একসময় অস্তিত্ব-সংকটে ভুগতে থাকে। ২০১৪ সালের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে যায়।

মাঠেও তেমন একটা দেখা যায়নি দলটিকে। দলের কোনো নেতাকেও সে সময় সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দণ্ডিত এবং তারেক রহমান দেশে না থাকায় নেতা-কর্মীরা ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েন! ছোটখাটো নানা কর্মসূচি দিলেও কোনোটাই হালে পানি পায়নি; বরং বিএনপি নেতাদের ‘ঈদের পর’, ‘রোজার পর’ কর্মসূচি-সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রায়ই কটাক্ষ করেন। তবে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছরের শুরু থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

গত কয়েক মাসে বিভাগীয় সমাবেশ, ঢাকায় মহাসমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি আবার চাঙা হয়েছে। কিন্তু শেষ বিচারে দলটি কী চায়, কোথায় যেতে চায়, কোথায় গিয়ে থামতে চায়, তা স্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগ যদি শেষ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানে, তাহলে তারা কী করবে, তা কেউ জানে না। এ অবস্থায় দলটির ব্যাপারে রয়েছে একধরনের হতাশা।

আবার ক্ষমতাসীনদের প্রতিও সাধারণ মানুষের আস্থা মোটেও প্রবল নয়। সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে মানুষ ক্ষমতাসীনদের প্রতিও বিরক্ত। কিন্তু এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কীভাবে ঘটাবে, সেটা তারা জানে না।

আসলে আমাদের দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা আছে, উত্তেজনা আছে, কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট পথের দিশা নেই। এ দেশের মানুষেরও রাজনীতিতে আগ্রহ আছে, রাজনীতি নিয়ে হতাশা, ক্ষোভ ও সমালোচনা আছে। কিন্তু চলমান রাজনীতি পরিবর্তনে তেমন কোনো ভূমিকা নেই। সংসদীয় রাজনীতিতে পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন করার বিধি আছে। সেই ভোটে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ আছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই ভোটাধিকার প্রয়োগেরও নিশ্চিত ব্যবস্থা নেই। তারপরও দেশের মানুষের রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ-উত্তেজনার কোনো শেষ নেই।

জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদেরা নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থে মগ্ন থাকেন। বিভিন্ন গুরুতর জাতীয় সমস্যার সমাধান নিয়েও তাঁদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। স্থানীয় সমস্যা নিয়েও তাঁরা মাথা ঘামান না। এদিকে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের জাতীয় রাজনীতিতে তেমন কোনো ভূমিকা পালনের সুযোগ নেই। স্থানীয় রাজনীতিবিদদের হাল অনেকটা ফুটবলের মতো। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে যতই নৃত্য করুক না কেন, আসল ফুটবল প্রতিযোগিতার ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেন না।

কেন এমন হাল? রাজনীতি এমনিতেই খুব জটিল-কুটিল জিনিস। শাসনক্ষমতা দখলের রাজনীতি রূঢ় বাস্তবতা দিয়ে ঘেরা। সেই রাজনীতির চর্চায় খুব কষ্ট, ঝুঁকিও বড় বেশি, মারধর খাওয়ার আশঙ্কা প্রভূত, তাতে গড় রাজনীতিবিদের অনীহা। আসল রাজনীতি, বড় রাজনীতির ময়দানে যোগ্য নেতার ঘোর অনটন। অর্থনীতির ভাষায় বললে, এক্সেস ডিমান্ড। কিন্তু অন্য দিকে, রাজনীতিচর্চার রোমাঞ্চ আমরা অর্জন করতে চাই ক্ষুদ্রতর নানা পরিসরে। সেই সব পরিসরেই যত রাজনীতিবিদের ভিড়। এক্সেস সাপ্লাই।

পাড়ার মিলাদ, পূজা, বিয়ে, স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় কমিটি, কোনো সংগঠনের নিয়ামক বোর্ড, ক্লাবের, স্কুলের পরিচালনা কমিটি, ব্যবসায়ীদের সংগঠন, জোট, ছোট ছোট বিভিন্ন ধরনের সংগঠন—সব জায়গায় রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজির বাড়বাড়ন্ত দেখে তাজ্জব হতে হয়। সব জায়গায় শাসক দল-বিরোধী দলের সমারোহ, জটিল-কুটিল পদ্ধতি প্রক্রিয়ার সাহায্যে অমুককে ল্যাং মেরে তমুক গোষ্ঠীকে বিপাকে ফেলে, অ্যাজেন্ডার ১০ নম্বর প্রস্তাবকে হিমঘরে পাঠিয়ে মাসল ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াই আমরা।

নিজস্ব প্রভাববলয় বাড়াতে উপদল গড়ি, মস্তান-উচ্ছৃঙ্খলদের প্রশ্রয় দিই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, টুপাইস কামানোর যাবতীয় মওকা খুঁজি, এর বাইরে রাজনীতির অন্য কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই। ফর্মুলাটা একই: ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। দাপট দেখানো।

সংগঠনের, প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে একবার ঢুকে পড়লে আমিই রাজা, আমিই ‘রাষ্ট্রপতি’, আমিই ‘প্রধানমন্ত্রী’। আমাদের দেশে বর্তমানে বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীও রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দেন। রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে কারও কোনো পরিচিতি নেই। কিছু লোক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হিসেবে মনোনয়ন বাগিয়ে নেন। এই নিয়ন্ত্রক সংসদের সভ্যরা রাজা-উজির গড়বেন ও মারবেন, এটাই নিয়ম। আবার, ওই এক সমস্যা—রাজনীতি করতেই হবে। উৎসাহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো, কোথাও না কোথাও সিংহাসন পাবেই।

যত ছোট প্রতিষ্ঠান, তত বড় লাফঝাঁপ। প্রতিষ্ঠানকে আঁকড়ে ধরে একেবারে ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্র্যাকটিস করা। কত কত ‘রাষ্ট্রপতি’ আর ‘প্রধানমন্ত্রী’, কত কত বিরোধী ‘নেতা-নেত্রী’ যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই।

যে বিপ্লব, আহা, বাইরে করা গেল না, বেচারা প্রতিষ্ঠানটিকেই তার ঠেলা সামলাতে হয়। আমরা বিভিন্ন কাগজে ‘আমরা-ওরা’ নিয়ে প্রচুর খবর পড়েছি। সেই ‘আমরা-ওরা’ আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে রয়েছে। আপনি বাজার অর্থনীতির ভক্ত তো আমি সমাজতান্ত্রিক ধারার অর্থনীতি। আপনি লাল, আমি গোলাপি। আমি ঘোরতর আস্তিক, ধর্মঅন্তপ্রাণ, আপনি নাস্তিক। নিজেদের সব চারিত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বসলাম বোর্ডের বা কাউন্সিলের মিটিংয়ে। সংগঠন করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, সত্যি কথা।

কিন্তু আমি জানি, অনেকে শুধু সংগঠনই করেছেন বা এখনো করছেন, কাজ করেন না। রাজনীতি করে প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে ঘায়েল করা যায় অফিস, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত কাজের চেয়ে তা অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। মাইনে নিয়ে শুধু রাজনীতি বা দলবাজি করেন এমন লোকও আমাদের দেশে প্রচুর আছে। তাঁকে ঘাঁটায় কার সাধ্যি। সবাই নিশ্চয়ই এমন নয়। অনেকেই আছেন, যাঁরা কখনো কোনো দিন কোথাও রাজনীতির সাহায্যে ক্ষমতাবান হতে চাননি। তাঁরাও এক অর্থে রাজনীতির বাইরে নন, কারণ আমাদের ব্যবহারিক জীবনে রাজনীতিকে এড়ানো শক্ত।

রাজনীতিচর্চার একটি বৌদ্ধিক এবং মানসিক দিক আছে, আর অন্য দিকে রয়েছে রাজনীতির কায়িক চেহারা, যেখানে ‘দাপুটে’ নেতার রমরমা। এই দুইয়ের দ্বন্দ্বে তথাকথিত ভদ্রলোক রাজনীতিবিদেরা শুধু নিজেদের সামাজিক পরিসরে ক্ষমতা দখলের খেলায় মেতে ওঠেন প্রত্যক্ষ রাজনীতির বাইরে যে আখড়া, সেখানে ভিড় বাড়তে থাকে। রাজনীতিচর্চা হয়ে দাঁড়ায় মুদ্রাদোষের মতো। না করে থাকতে পারেন না। কেউ বলতে পারেন, প্রত্যক্ষ রাজনীতি মানেও তো দুর্নীতি। তার জন্যই তো যত সমস্যা।

কিন্তু এখানে সেটা প্রশ্ন নয়। পাড়ার ক্লাবকে কবজা না করে বা নিজেরই সহকর্মীকে বিভাগ থেকে না তাড়িয়ে, যদি সেই কূটবুদ্ধিসহকারে বৃহত্তর রাজনীতি করতেন, ভালো হতো না কি? ক্ষুদ্র পরিসরে পরোক্ষ রাজনীতির কোনো সুফল নেই, এমন কথাও বলছি না। হাজার হোক, রাজনীতির সাহায্যেই তো অশুভ শক্তিকে ঠেকানো যায়, অন্তত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সেটাই শিক্ষা। কিন্তু অত্যধিক রাজনীতির সমস্যা বিস্তর। যেমন নামীদামি অধ্যাপকের পরিচয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম হওয়া উচিত। সেই নাম ও দাম তাঁর কাজের প্রতিফলনে হবে, এটাই বাঞ্ছনীয়; কে সিনেট-সিন্ডিকেট-কোর্ট-কাছারির সদস্য হবেন, তা নিয়ে নয়। এ কথাটাই আমরা ভুলতে বসেছি।

পরিশেষে একটা সর্বগ্রাসী সর্বব্যাপ্ত রাজনীতির কথা না বলে পারছি না। ‘আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছি’র রাজনীতি যেখানে কয়েক জন বলে, আর সবাই চুপ করে থাকে। অশান্তি নেই, প্রতিবাদ নেই, মিছিল নেই। যেন স্বেচ্ছায় স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়েছে সবাই কোনো এক অমোঘ, নিরঙ্কুশ, সদা সত্য রাজনৈতিক দর্শনের তাড়নায়। বিতর্ক নেই, তাই সংঘাতও নেই। দিনের পর দিন হাড়-হিম-করা শৃঙ্খলে আবদ্ধ সে ব্যবস্থা, যেখানে কাতারে কাতারে যোগ্য পদপ্রার্থীরা বঞ্চিত বা বিতাড়িত। শান্ত রাজনীতিই সর্বদা কাম্য, এমনটা হয়তো নয়।

রাজনীতির অভিমুখ পাল্টানো দরকার। একই কথা, একই কাজ সমাজে গভীর বিভাজনরেখা তৈরি করে। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নকে উৎসাহ জোগায়। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সমালোচনা চলা উচিত।

ক্ষমতাসীনেরা যদি পরিবর্তিত না হয়, বিরোধী দলও যদি তাদের নীতি ও কৌশল পরিবর্তন না করে, তাহলে আমাদের রাজনীতিতে নতুন পথের সন্ধান পাওয়া কঠিন। শুধু অনুশোচনা, খেদোক্তি আর কপাল চাপড়ানো ছাড়া আমাদের অন্য কোনো ভবিষ্যৎ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। তা বিদেশিদের কাছে রাজনীতিবিদেরা যতই ধরনা দিক। বিদেশিরা বড়জোর খেলার কৌশল বদলাতে ভূমিকা পালন করতে পারে, কিন্তু তাতে ফল বদলাবে বলে মনে হয় না!

লেখক:গবেষক ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত