Ajker Patrika

শুভবুদ্ধি আসুক বিএনপিতে

মোনায়েম সরকার
শুভবুদ্ধি আসুক বিএনপিতে

১২ জুলাই রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুটি সমাবেশ হয়েছে। সেদিনই সন্ধ্যায় এই নিবন্ধ লিখতে বসে যেসব খবর পেলাম, তাতে বলতে হয় সমাবেশ দুটি স্বল্প দূরত্বে অনুষ্ঠিত হলেও দুই দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কোনো রকম সংঘাত হয়নি। অনেকে আশঙ্কা করছিলেন, এদিন রাজধানীতে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ জন্য মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক ছিল। যান চলাচল কমে গিয়েছিল রাজধানীতে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভালোয় ভালোয় সম্পন্ন হওয়ায় সবাই হাঁফ ছেড়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমিও স্বস্তি বোধ করছি। পুলিশ উভয় পক্ষকে একই রকম শর্ত দিয়েছিল, যাতে সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের মতো দেশে সব শর্ত পালন করা না গেলেও সদিচ্ছা থাকলে যে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা যায়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে মানুষে সয়লাব করে দেওয়া সমাবেশের যে আওয়াজ তোলা হয়েছিল, তেমন কিছু বাস্তবে দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশেও দলীয় কর্মীসহ জনসমাগম কম হয়নি। তারাও পুলিশের শর্ত মেনে সমাবেশ করে উদাহরণ তৈরি করল।

বিএনপির সমাবেশ থেকে এদিন সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করে পদযাত্রার দিনক্ষণ জানানো হয়েছে। নিজেদের ভাষায় সরকারকে অভিযুক্ত করে তারা বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা পরিষ্কার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারির সফরের মধ্যে তারা রাজধানীতে একটি বড় সমাবেশ করে পশ্চিমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও পাল্টা সমাবেশ করে নিজ শক্তি ও জনসমর্থনের জানান দিতে চেয়েছে। বিএনপির দাবির জবাবে এই সমাবেশ থেকে বলা হয়েছে, তাদেরও এক দফা। সেটা হলো, আগামী নির্বাচন হবে যথাসময়ে এবং সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব সম্পর্কে ওই সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক যা বলেছেন, তার সঙ্গে দেশের বেশির ভাগ মানুষই একমত হবে। শেখ হাসিনা সৎ, দক্ষ, দূরদর্শী এবং দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার জুড়ি নেই। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী পশ্চিমা মহলসহ সবাইকে তিনি কথা দিয়েছেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যত খুশি পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে নির্বাচন দেখার কথাও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। আর নির্বাচন করবে তো নির্বাচন কমিশন। সরকার তাকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকারের যেসব নির্বাচন হয়েছে, তাতে বিএনপি অংশ না নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব হয়নি। নির্বাচনে বড় অনিয়মও হয়নি। ভোট প্রদানের হারও কম নয়। বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা–কর্মীও এতে অংশ নিয়েছেন এবং জয়যুক্ত হয়েছেন। তাদের পক্ষের ভোটাররাও ভোট দিতে গেছেন। সুতরাং ভবিষ্যতে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অটল থেকে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলেই সরকারের জন্য খুব প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, এটা বলা যায় না।

রাজনীতিতে অনেক ক্ষেত্রে অন্যায় দাবিও আদায় করা যায় সরকারের ওপর আন্দোলনের চাপ সৃষ্টি করা গেলে। বিএনপি ও তার সহযাত্রীদের চিন্তা করে দেখতে হবে, সে ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার মতো শক্তি তাদের আছে কি না। সরকার পতনের আওয়াজ তারা এর আগেও তুলেছে। দিনক্ষণ ঠিক করেও কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের কথা আমাদের সবার মনে আছে। রাজধানীতে সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক এনে সেদিনই তারা রাস্তায় বসে যাবে হেফাজত স্টাইলে—এমন একটি পরিকল্পনা ছিল বলে জানা যায়। সরকার স্বভাবতই তেমন অরাজকতা সৃষ্টি হতে দেয়নি। কোনো সরকারই রাজধানীর বুকে এমন কিছু ঘটতে দিতে পারে না। তবে বিকল্প স্থানে বিএনপির সমাবেশ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে, তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। সত্যি বলতে, সেদিন সরকারের জন্য বিব্রতকর কিছুই ঘটেনি।

তার আগে থেকেই অবশ্য বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গোষ্ঠীর। তাদের অন্যায্য শর্ত মেনে না চলা শেখ হাসিনার সরকারকে পশ্চিমাদেরও অপছন্দ। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সে কথা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকেও খোলাখুলি বলেছেন। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়েও সত্য উচ্চারণে দ্বিধা করেননি। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নিতান্ত নিজেদের স্বার্থে সরকারকে বিব্রত করে চলেছে কিছু অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিয়ে। র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের জন্য পৃথক ভিসা নীতি তারা ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে বিএনপি ও তার মিত্রদের মতো করে তারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের শর্ত হিসেবে তারা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, তাতে সরকার সেভাবে চিন্তিত নয়। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে চায়। এই নির্বাচনে বিএনপির মতো বড় দল অংশ নিক, এটা তাদেরও চাওয়া। এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে বিএনপি বরং ভিসা নীতিতে পড়বে—এমনটাই মনে করছে সরকার। সুতরাং পশ্চিমাদের দিক দিয়ে পরিস্থিতি সরকারের সম্পূর্ণ প্রতিকূলে, সেটাও বলা যাবে না।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে, জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে আগামী নির্বাচনেও তারা জয়যুক্ত হতে চাইছে। বাংলাদেশের মতো দেশে উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন—এ কথা প্রধানমন্ত্রীও বলেন। ক্ষমতাসীন দল রয়েছে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। নিজস্ব চ্যানেলে খোঁজখবর নিয়ে তিনি উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নে এগিয়ে যাবেন, এটাই প্রত্যাশা। এ অবস্থায় বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে স্বপ্ন দেখছে, তা থেকে বাস্তবতা অনেক দূরে।

তা ছাড়া, কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার মতো নেতৃত্ব বিএনপির নেই। দলের মধ্যে রয়েছে অনৈক্য ও সমন্বয়হীনতা। বিএনপির সঙ্গী সংগঠনগুলোর শক্তি-সামর্থ্যও আস্থা জাগানোর মতো নয়। তরুণদের নিয়ে যে একটি মোটামুটি শক্তিশালী গ্রুপ গড়ে উঠেছিল, তাতেও বিভিন্ন অনৈতিক প্রশ্নে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। সেখানে অগ্রহণযোগ্য বিদেশি শক্তির সঙ্গে তাদের ওঠাবসার অভিযোগ খোদ বিরোধী দলের সমর্থকদেরও হতাশ করবে। অতীতের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্যও বিএনপির ওপর মানুষের আস্থার অভাব রয়েছে। তারা সরকার পতনের ডাক দিলেই মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে, পরিস্থিতি মোটেও তেমন নয়। দেশে যে অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা নেই, তা তো নয়। একটি বড় জনগোষ্ঠী কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, এটাও অস্বীকার করা যাবে না। অনেক দেশেই একই অবস্থা। তা সত্ত্বেও বিএনপির ডাকে মানুষ রাস্তায় নেমে আসছে না, এটা হলো বাস্তবতা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই বাস্তবতা বদলে যাবে বলেও কি আশা করা যায়? যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্ররা একটি সফল সরকারকে বিএনপির ইচ্ছাপূরণের জন্য ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে—এমন প্রত্যাশাও শিশুসুলভ। আজকের দুনিয়ায় কেউ বাইরে থেকে এসে একটি শক্তিশালী সরকারের পতন ঘটিয়ে দিতে পারে না। বিএনপিকে ভেবে দেখতে হবে, বাংলাদেশ ইমরান খান শাসিত পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতিতে নেই। এখানকার সবকিছুই আলাদা, তা নিশ্চয় বিএনপি নেতাদের বুঝিয়ে বলতে হবে না।

পশ্চিমারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়, তাতে কারও আপত্তি নেই। তাদের নজরদারির কারণে আগামী নির্বাচন অপেক্ষাকৃত ভালো পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে, এটাও স্বাভাবিকভাবে আশা করা যায়। কিন্তু তারা কি কখনো বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাবে? সংগত কারণেই অসাংবিধানিক কিছুর দাবি তারা জানাবে না। সে কারণে বিএনপিকেও এমন অগ্রহণযোগ্য দাবি থেকে দ্রুত সরে এসে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মনোভাব প্রকাশ করতে হবে। সেটা তাদের জন্যও মঙ্গলজনক।

বিএনপির মতো একটি দল আর কত দিন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থাকবে? এই নীতি অব্যাহত রাখলে তাদের মধ্যে বিভক্তিও কি দেখা দেবে না? স্থানীয় নির্বাচনে তারা অনেক নেতা-কর্মীকে ‘দলীয় শৃঙ্খলায়’ ধরে রাখতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচনে সেই প্রবণতা আরও বাড়বে। তার বদলে বিএনপি পারে সংবিধানের আওতায় কীভাবে আরও ভালোভাবে নির্বাচনটি করা যায়, সে বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করতে।

গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে তারা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবও এর আগে তুলে ধরেছে। বিএনপি কতটা সংস্কারে বিশ্বাসী, সে বিষয়ে কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে। গণতন্ত্রের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধও প্রশ্নবিদ্ধ। তার পরও দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে অযাচিত দাবি প্রত্যাহার করে এগিয়ে এলে নির্বাচনটিও অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে যায়। এটাই কি দিন শেষে প্রত্যাশিত নয়?

মোনায়েম সরকার, রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

মিরপুরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল সিংহী, আর চিড়িয়াখানা থেকে দর্শনার্থীরা

খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানি থেকে নয়, কাল কাতার থেকেই আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

ভারতকে একঘরে করতে দক্ষিণ এশিয়ায় নয়া জোটের সন্ধানে পাকিস্তান, সফল হবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

মিরপুরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল সিংহী, আর চিড়িয়াখানা থেকে দর্শনার্থীরা

খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানি থেকে নয়, কাল কাতার থেকেই আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

ভারতকে একঘরে করতে দক্ষিণ এশিয়ায় নয়া জোটের সন্ধানে পাকিস্তান, সফল হবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

মিরপুরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল সিংহী, আর চিড়িয়াখানা থেকে দর্শনার্থীরা

খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানি থেকে নয়, কাল কাতার থেকেই আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

ভারতকে একঘরে করতে দক্ষিণ এশিয়ায় নয়া জোটের সন্ধানে পাকিস্তান, সফল হবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

মিরপুরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল সিংহী, আর চিড়িয়াখানা থেকে দর্শনার্থীরা

খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানি থেকে নয়, কাল কাতার থেকেই আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

ভারতকে একঘরে করতে দক্ষিণ এশিয়ায় নয়া জোটের সন্ধানে পাকিস্তান, সফল হবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

মিরপুরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল সিংহী, আর চিড়িয়াখানা থেকে দর্শনার্থীরা

খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানি থেকে নয়, কাল কাতার থেকেই আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

ভারতকে একঘরে করতে দক্ষিণ এশিয়ায় নয়া জোটের সন্ধানে পাকিস্তান, সফল হবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত