চিররঞ্জন সরকার

ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস ও ক্ষতিকর কর্মসূচি থেকে বিএনপি সরে আসছে না। এতে শঙ্কা জাগছে, আবারও কি বিএনপি ২০১৪-১৫ সালের মতো লাগাতার অবরোধের পথে পা বাড়াবে? বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সেই সময় টানা ২৮০ দিন অবরোধ পালন করেছিল। তখন অবরোধের মধ্যে নির্দিষ্ট মেয়াদে হরতালেরও ডাক দেওয়া হতো। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ ও হরতালের ডাক দেয় বিএনপি জোট। বাস্তবে এই হরতাল ও অবরোধের কার্যকারিতা দেখা না গেলেও সেই অবরোধের ২৮০ দিন অতিক্রম করলেও বিএনপি জোট আনুষ্ঠানিকভাবে অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। সহিংস আন্দোলন করেও সেই সময় কোনো দাবি আদায় করা সম্ভব হয়নি। উল্টো বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিবাদ, সমালোচনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ইত্যাদি যেকোনো রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য। সাংবিধানিক অধিকার। দলের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন করতে এবং ক্ষমতাসীন দলের গণবিরোধী কাজ ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নানা রকম তৎপরতা চালাতে হয়। কখনো তারা অসহযোগের মতো ‘চরম’ কর্মসূচিও গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু বিএনপি এখন যা করছে, এর কোনো তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দলটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন কর্মসূচি পালনের নানা রকম ভিডিও পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে সীমিতসংখ্যক নেতা-কর্মীর ঝটিকা মিছিল। যদিও বাস্তবে নেতা-কর্মীদের এসব ক্ষণস্থায়ী ঝটিকা মিছিল রাজপথে তেমন একটা প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। হরতাল-অবরোধের প্রভাব যেমন ক্রমেই কমে আসছে, তেমনি নির্বাচনের দিকেও বীর বিক্রমে এগিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন হলো, এবারও যদি ক্ষমতাসীনেরা বিএনপির দাবি-দাওয়া না মেনে নির্ধারিত সময়ে সংসদ নির্বাচন করে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে, তখন বিএনপি কী করবে? তখনো কী বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাবে? সেই আন্দোলনের পরেও পদত্যাগ না করে ক্ষমতাসীনেরা যদি নানা কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকে, তাহলেও কী এভাবে অনন্তকাল আন্দোলন চলবে? বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অবরোধ ও হরতালের ডাক দিয়েই যাবেন?
রুহুল কবির রিজভী অবশ্য বলছেন, নির্বাচন ‘হতে দেওয়া হবে না।’ ‘হতে দেওয়া হবে না’ বললেই কি নির্বাচন ঠেকানো যাবে? বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচন হলে (নির্বাচন যে হবেই, তার আলামত স্পষ্ট) তাঁরা কী করবেন? আওয়ামী লীগারদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেবেন? পেট্রলবোমা ছুড়বেন? রিজভী সাহেবরা ২০১৫ সালেও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঠিকই নির্বাচন করেছে। সেই নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় তারা এখনো ক্ষমতায় আছে। বিএনপি নেতারা যতই হুংকার ছাড়ুন না কেন, নির্বাচন এবারও হবে। এটা একই সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের নির্ঝঞ্ঝাটে ক্ষমতায় থাকার মওকা এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তা ছাড়া, নির্বাচনের পক্ষে আওয়ামী লীগ ছাড়া আরও অন্তত দুই ডজন দল রয়েছে। দলগুলো ইতিমধ্যে এমপি হওয়ার জন্য মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই ‘রেসের ঘোড়া’দের স্তব্ধ করার মতো শক্তি বিএনপির কোথায়?
আমরা পনেরো বছর ধরে একই রকম দৃশ্য দেখছি। নির্বাচন এলেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানায়। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা তা মানে না। ক্ষমতাসীনেরা তাদের মিত্রদের নিয়ে নির্বাচন করে। জয়ী হয়। সরকার গঠন করে। এরপর বিএনপিকে দাবড়ানি দেয়। দাবড়ানি খেয়ে তারা ছত্রভঙ্গ হয়। কিছুদিন চুপচাপ থাকে। দম নেয়। এরপর আবার একটু একটু করে আন্দোলন শুরু করে। হুমকি দেয়। হরতাল-অবরোধ করে। কিন্তু তাতে শক্তিক্ষয় ছাড়া কোথাও কোনো পরিবর্তন হয় না।
এবারও কয়েক মাস ধরে বিএনপি যখন তার মিত্রদের নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে নানা কর্মসূচি পালন করছে, তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের দিকে। বিএনপিসহ বিরোধী কয়েকটি দলের আন্দোলন কিংবা নির্বাচন বর্জন—কোনো কিছুই ক্ষমতাসীনদের ন্যূনতম চাপে ফেলতে পারেনি। উল্টো মামলা, গ্রেপ্তার, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় যেতে না পারার হতাশা, কিছু কিছু নেতা-কর্মীর দলত্যাগ করে নির্বাচনী মিছিলে যোগদানসহ নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত বিএনপি। দলের সিদ্ধান্তে অনেক নেতা-কর্মীই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। আবার দল থেকে বোরোতেও পারছেন না। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা নির্বাচনের পক্ষে কাজ করায় দেড় মাসে ৩০ জনের বেশি কেন্দ্রীয় এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলটি সরকার পতনের আন্দোলনে সফল হতে পারছে না, আবার নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। এতে ক্ষতি যা হওয়ার হচ্ছে দেশের এবং দেশের সাধারণ মানুষের। কিন্তু সেই বোধ বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর আছে বলে মনে হয় না।
এমনিতে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলার কিছু নেই। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি হরতাল-অবরোধ-ঘেরাও, সমাবেশ, মহাসমাবেশ, বিক্ষোভ অনেক কিছুই করতে পারে। সমস্যা হচ্ছে বিএনপির এই আন্দোলনের কারণে নিরীহ মানুষদের সীমাহীন সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ বিএনপির হরতাল-অবরোধ শেষ পর্যন্ত নিরীহ থাকে না। এটা সহিংস কর্মসূচিতে পরিণত হয়। আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও এক মাসে প্রায় ২৩০টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। বাদ যায়নি ট্রেনও। এ সময় ১১টি স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ অফিস, বিএনপি অফিস, পুলিশ বক্স, কাউন্সিলর অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার, শোরুম ইত্যাদি। এসব অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আহত হয়েছেন অনেকে।
বিএনপি আন্দোলনের নামে একধরনের ভীতির সৃষ্টি করছে। রুটি-রুজি নিয়ে ব্যস্ত মানুষের এসব আন্দোলন নিয়ে তেমন একটা মাথাব্যথা নেই। তাই তো বিএনপির চলমান আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর জনসম্পৃক্ততাহীন বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির কোনো প্রভাব নেই। পোড়ার আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে মানুষ গাড়িও বের করছে। অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবকিছুই সচল থাকছে। বিএনপির একমাত্র মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী ‘অজ্ঞাত’ স্থান থেকে ভিডিও বার্তায় দুদিন পর পর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। হুমকি দিচ্ছেন, আন্দোলন আরও জোরদার করবেন। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সরকারের পতন হলো বলে! কিন্তু তাঁর কথায় সাধারণ মানুষ পথে নামে না। নেতা-কর্মীরাও না। কেউ ভরসাও পায় না।
সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের দেশে কোনো রাজনৈতিক দলেরই কোনো দায় আছে বলে মনে হয় না। অথচ সাধারণ মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার কথা রাজনৈতিক দলগুলোরই। সরকার যেমন জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়ার কথা, রাজনৈতিক দলেরও সেই দায় থাকা দরকার। এমনকি সেই দায়বদ্ধতাকে সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেওয়ারও যুক্তি আছে। রাজনৈতিক দলগুলো আর পাঁচটা বেসরকারি সংগঠনের মতো নয়, তারা একটি ‘পাবলিক বডি’, অর্থাৎ জনপরিসরের প্রতিষ্ঠান, জনসমর্থন পাওয়ার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, সুতরাং প্রতিটি কাজের জন্য জনসাধারণের কাছে তাদের জবাবদিহির দায় থাকা উচিত। দলীয় রাজনীতির মূর্তি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে রাজনৈতিক দলের আচরণের ঔচিত্য-অনৌচিত্য বিষয়ে নীতিগত আলোচনা করে আদৌ আর কোনো লাভ আছে কি না, সেই প্রশ্ন নিতান্ত স্বাভাবিক।
কিন্তু সকাল থেকে রাত্রি অবধি অনন্ত কুনাট্যের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্যের কথা স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। দলনেতা ও নেত্রীরা তাতে হয়তো কর্ণপাতও করবেন না, কিন্তু তাঁদের অনেকের অনেক আচরণ যে যথার্থ রাজনীতি নয়, রাজনীতির কলঙ্ক, সেই সত্যটি অন্তত সমাজের নিজের মনে রাখা জরুরি।
প্রকৃত গণতন্ত্রের শর্ত পূর্ণ হলে এই দায়িত্বের কথা আলাদা করে বলার দরকার হতো না। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলকে জনসাধারণের সমর্থন নিয়ে চলতে হয়—সুতরাং তাদের কাছে দায়বদ্ধ না থাকলে জনসমর্থন হারাতে হবে, এই আশঙ্কার তাড়নাতেই দলের নেতা ও কর্মীদের আচরণ যথাযথ হওয়ার কথা, ভুল করলে দ্রুত আত্মসংশোধন করার কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দলের সঙ্গে জনতার সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে দাতা এবং গ্রহীতার। আর গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে দলতন্ত্রে। দলতন্ত্রের অভিধানে নৈতিক দায়দায়িত্বের কোনো স্থান নেই।
ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। বস্তুত যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া আর সবকিছুর বিনিময়ে ক্ষমতা ধরে রাখার উদগ্র বাসনা-তাড়িত রাজনীতির কারবারিরা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং সমাজের পক্ষে হানিকর আচরণকেই নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে সবাই মিলে আদিগন্ত বিস্তৃত অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া ছাড়া বুঝি আমাদের অন্য কোনো যৌতুক নেই!

ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস ও ক্ষতিকর কর্মসূচি থেকে বিএনপি সরে আসছে না। এতে শঙ্কা জাগছে, আবারও কি বিএনপি ২০১৪-১৫ সালের মতো লাগাতার অবরোধের পথে পা বাড়াবে? বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সেই সময় টানা ২৮০ দিন অবরোধ পালন করেছিল। তখন অবরোধের মধ্যে নির্দিষ্ট মেয়াদে হরতালেরও ডাক দেওয়া হতো। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ ও হরতালের ডাক দেয় বিএনপি জোট। বাস্তবে এই হরতাল ও অবরোধের কার্যকারিতা দেখা না গেলেও সেই অবরোধের ২৮০ দিন অতিক্রম করলেও বিএনপি জোট আনুষ্ঠানিকভাবে অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। সহিংস আন্দোলন করেও সেই সময় কোনো দাবি আদায় করা সম্ভব হয়নি। উল্টো বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিবাদ, সমালোচনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ইত্যাদি যেকোনো রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য। সাংবিধানিক অধিকার। দলের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন করতে এবং ক্ষমতাসীন দলের গণবিরোধী কাজ ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নানা রকম তৎপরতা চালাতে হয়। কখনো তারা অসহযোগের মতো ‘চরম’ কর্মসূচিও গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু বিএনপি এখন যা করছে, এর কোনো তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দলটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন কর্মসূচি পালনের নানা রকম ভিডিও পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে সীমিতসংখ্যক নেতা-কর্মীর ঝটিকা মিছিল। যদিও বাস্তবে নেতা-কর্মীদের এসব ক্ষণস্থায়ী ঝটিকা মিছিল রাজপথে তেমন একটা প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। হরতাল-অবরোধের প্রভাব যেমন ক্রমেই কমে আসছে, তেমনি নির্বাচনের দিকেও বীর বিক্রমে এগিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন হলো, এবারও যদি ক্ষমতাসীনেরা বিএনপির দাবি-দাওয়া না মেনে নির্ধারিত সময়ে সংসদ নির্বাচন করে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে, তখন বিএনপি কী করবে? তখনো কী বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাবে? সেই আন্দোলনের পরেও পদত্যাগ না করে ক্ষমতাসীনেরা যদি নানা কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকে, তাহলেও কী এভাবে অনন্তকাল আন্দোলন চলবে? বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অবরোধ ও হরতালের ডাক দিয়েই যাবেন?
রুহুল কবির রিজভী অবশ্য বলছেন, নির্বাচন ‘হতে দেওয়া হবে না।’ ‘হতে দেওয়া হবে না’ বললেই কি নির্বাচন ঠেকানো যাবে? বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচন হলে (নির্বাচন যে হবেই, তার আলামত স্পষ্ট) তাঁরা কী করবেন? আওয়ামী লীগারদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেবেন? পেট্রলবোমা ছুড়বেন? রিজভী সাহেবরা ২০১৫ সালেও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঠিকই নির্বাচন করেছে। সেই নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় তারা এখনো ক্ষমতায় আছে। বিএনপি নেতারা যতই হুংকার ছাড়ুন না কেন, নির্বাচন এবারও হবে। এটা একই সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের নির্ঝঞ্ঝাটে ক্ষমতায় থাকার মওকা এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তা ছাড়া, নির্বাচনের পক্ষে আওয়ামী লীগ ছাড়া আরও অন্তত দুই ডজন দল রয়েছে। দলগুলো ইতিমধ্যে এমপি হওয়ার জন্য মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই ‘রেসের ঘোড়া’দের স্তব্ধ করার মতো শক্তি বিএনপির কোথায়?
আমরা পনেরো বছর ধরে একই রকম দৃশ্য দেখছি। নির্বাচন এলেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানায়। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা তা মানে না। ক্ষমতাসীনেরা তাদের মিত্রদের নিয়ে নির্বাচন করে। জয়ী হয়। সরকার গঠন করে। এরপর বিএনপিকে দাবড়ানি দেয়। দাবড়ানি খেয়ে তারা ছত্রভঙ্গ হয়। কিছুদিন চুপচাপ থাকে। দম নেয়। এরপর আবার একটু একটু করে আন্দোলন শুরু করে। হুমকি দেয়। হরতাল-অবরোধ করে। কিন্তু তাতে শক্তিক্ষয় ছাড়া কোথাও কোনো পরিবর্তন হয় না।
এবারও কয়েক মাস ধরে বিএনপি যখন তার মিত্রদের নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে নানা কর্মসূচি পালন করছে, তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের দিকে। বিএনপিসহ বিরোধী কয়েকটি দলের আন্দোলন কিংবা নির্বাচন বর্জন—কোনো কিছুই ক্ষমতাসীনদের ন্যূনতম চাপে ফেলতে পারেনি। উল্টো মামলা, গ্রেপ্তার, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় যেতে না পারার হতাশা, কিছু কিছু নেতা-কর্মীর দলত্যাগ করে নির্বাচনী মিছিলে যোগদানসহ নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত বিএনপি। দলের সিদ্ধান্তে অনেক নেতা-কর্মীই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। আবার দল থেকে বোরোতেও পারছেন না। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা নির্বাচনের পক্ষে কাজ করায় দেড় মাসে ৩০ জনের বেশি কেন্দ্রীয় এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলটি সরকার পতনের আন্দোলনে সফল হতে পারছে না, আবার নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। এতে ক্ষতি যা হওয়ার হচ্ছে দেশের এবং দেশের সাধারণ মানুষের। কিন্তু সেই বোধ বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর আছে বলে মনে হয় না।
এমনিতে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলার কিছু নেই। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি হরতাল-অবরোধ-ঘেরাও, সমাবেশ, মহাসমাবেশ, বিক্ষোভ অনেক কিছুই করতে পারে। সমস্যা হচ্ছে বিএনপির এই আন্দোলনের কারণে নিরীহ মানুষদের সীমাহীন সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ বিএনপির হরতাল-অবরোধ শেষ পর্যন্ত নিরীহ থাকে না। এটা সহিংস কর্মসূচিতে পরিণত হয়। আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও এক মাসে প্রায় ২৩০টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। বাদ যায়নি ট্রেনও। এ সময় ১১টি স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ অফিস, বিএনপি অফিস, পুলিশ বক্স, কাউন্সিলর অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার, শোরুম ইত্যাদি। এসব অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আহত হয়েছেন অনেকে।
বিএনপি আন্দোলনের নামে একধরনের ভীতির সৃষ্টি করছে। রুটি-রুজি নিয়ে ব্যস্ত মানুষের এসব আন্দোলন নিয়ে তেমন একটা মাথাব্যথা নেই। তাই তো বিএনপির চলমান আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর জনসম্পৃক্ততাহীন বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির কোনো প্রভাব নেই। পোড়ার আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে মানুষ গাড়িও বের করছে। অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবকিছুই সচল থাকছে। বিএনপির একমাত্র মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী ‘অজ্ঞাত’ স্থান থেকে ভিডিও বার্তায় দুদিন পর পর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। হুমকি দিচ্ছেন, আন্দোলন আরও জোরদার করবেন। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সরকারের পতন হলো বলে! কিন্তু তাঁর কথায় সাধারণ মানুষ পথে নামে না। নেতা-কর্মীরাও না। কেউ ভরসাও পায় না।
সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের দেশে কোনো রাজনৈতিক দলেরই কোনো দায় আছে বলে মনে হয় না। অথচ সাধারণ মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার কথা রাজনৈতিক দলগুলোরই। সরকার যেমন জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়ার কথা, রাজনৈতিক দলেরও সেই দায় থাকা দরকার। এমনকি সেই দায়বদ্ধতাকে সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেওয়ারও যুক্তি আছে। রাজনৈতিক দলগুলো আর পাঁচটা বেসরকারি সংগঠনের মতো নয়, তারা একটি ‘পাবলিক বডি’, অর্থাৎ জনপরিসরের প্রতিষ্ঠান, জনসমর্থন পাওয়ার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, সুতরাং প্রতিটি কাজের জন্য জনসাধারণের কাছে তাদের জবাবদিহির দায় থাকা উচিত। দলীয় রাজনীতির মূর্তি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে রাজনৈতিক দলের আচরণের ঔচিত্য-অনৌচিত্য বিষয়ে নীতিগত আলোচনা করে আদৌ আর কোনো লাভ আছে কি না, সেই প্রশ্ন নিতান্ত স্বাভাবিক।
কিন্তু সকাল থেকে রাত্রি অবধি অনন্ত কুনাট্যের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্যের কথা স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। দলনেতা ও নেত্রীরা তাতে হয়তো কর্ণপাতও করবেন না, কিন্তু তাঁদের অনেকের অনেক আচরণ যে যথার্থ রাজনীতি নয়, রাজনীতির কলঙ্ক, সেই সত্যটি অন্তত সমাজের নিজের মনে রাখা জরুরি।
প্রকৃত গণতন্ত্রের শর্ত পূর্ণ হলে এই দায়িত্বের কথা আলাদা করে বলার দরকার হতো না। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলকে জনসাধারণের সমর্থন নিয়ে চলতে হয়—সুতরাং তাদের কাছে দায়বদ্ধ না থাকলে জনসমর্থন হারাতে হবে, এই আশঙ্কার তাড়নাতেই দলের নেতা ও কর্মীদের আচরণ যথাযথ হওয়ার কথা, ভুল করলে দ্রুত আত্মসংশোধন করার কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দলের সঙ্গে জনতার সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে দাতা এবং গ্রহীতার। আর গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে দলতন্ত্রে। দলতন্ত্রের অভিধানে নৈতিক দায়দায়িত্বের কোনো স্থান নেই।
ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। বস্তুত যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া আর সবকিছুর বিনিময়ে ক্ষমতা ধরে রাখার উদগ্র বাসনা-তাড়িত রাজনীতির কারবারিরা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং সমাজের পক্ষে হানিকর আচরণকেই নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে সবাই মিলে আদিগন্ত বিস্তৃত অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া ছাড়া বুঝি আমাদের অন্য কোনো যৌতুক নেই!
চিররঞ্জন সরকার

ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস ও ক্ষতিকর কর্মসূচি থেকে বিএনপি সরে আসছে না। এতে শঙ্কা জাগছে, আবারও কি বিএনপি ২০১৪-১৫ সালের মতো লাগাতার অবরোধের পথে পা বাড়াবে? বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সেই সময় টানা ২৮০ দিন অবরোধ পালন করেছিল। তখন অবরোধের মধ্যে নির্দিষ্ট মেয়াদে হরতালেরও ডাক দেওয়া হতো। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ ও হরতালের ডাক দেয় বিএনপি জোট। বাস্তবে এই হরতাল ও অবরোধের কার্যকারিতা দেখা না গেলেও সেই অবরোধের ২৮০ দিন অতিক্রম করলেও বিএনপি জোট আনুষ্ঠানিকভাবে অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। সহিংস আন্দোলন করেও সেই সময় কোনো দাবি আদায় করা সম্ভব হয়নি। উল্টো বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিবাদ, সমালোচনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ইত্যাদি যেকোনো রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য। সাংবিধানিক অধিকার। দলের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন করতে এবং ক্ষমতাসীন দলের গণবিরোধী কাজ ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নানা রকম তৎপরতা চালাতে হয়। কখনো তারা অসহযোগের মতো ‘চরম’ কর্মসূচিও গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু বিএনপি এখন যা করছে, এর কোনো তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দলটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন কর্মসূচি পালনের নানা রকম ভিডিও পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে সীমিতসংখ্যক নেতা-কর্মীর ঝটিকা মিছিল। যদিও বাস্তবে নেতা-কর্মীদের এসব ক্ষণস্থায়ী ঝটিকা মিছিল রাজপথে তেমন একটা প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। হরতাল-অবরোধের প্রভাব যেমন ক্রমেই কমে আসছে, তেমনি নির্বাচনের দিকেও বীর বিক্রমে এগিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন হলো, এবারও যদি ক্ষমতাসীনেরা বিএনপির দাবি-দাওয়া না মেনে নির্ধারিত সময়ে সংসদ নির্বাচন করে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে, তখন বিএনপি কী করবে? তখনো কী বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাবে? সেই আন্দোলনের পরেও পদত্যাগ না করে ক্ষমতাসীনেরা যদি নানা কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকে, তাহলেও কী এভাবে অনন্তকাল আন্দোলন চলবে? বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অবরোধ ও হরতালের ডাক দিয়েই যাবেন?
রুহুল কবির রিজভী অবশ্য বলছেন, নির্বাচন ‘হতে দেওয়া হবে না।’ ‘হতে দেওয়া হবে না’ বললেই কি নির্বাচন ঠেকানো যাবে? বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচন হলে (নির্বাচন যে হবেই, তার আলামত স্পষ্ট) তাঁরা কী করবেন? আওয়ামী লীগারদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেবেন? পেট্রলবোমা ছুড়বেন? রিজভী সাহেবরা ২০১৫ সালেও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঠিকই নির্বাচন করেছে। সেই নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় তারা এখনো ক্ষমতায় আছে। বিএনপি নেতারা যতই হুংকার ছাড়ুন না কেন, নির্বাচন এবারও হবে। এটা একই সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের নির্ঝঞ্ঝাটে ক্ষমতায় থাকার মওকা এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তা ছাড়া, নির্বাচনের পক্ষে আওয়ামী লীগ ছাড়া আরও অন্তত দুই ডজন দল রয়েছে। দলগুলো ইতিমধ্যে এমপি হওয়ার জন্য মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই ‘রেসের ঘোড়া’দের স্তব্ধ করার মতো শক্তি বিএনপির কোথায়?
আমরা পনেরো বছর ধরে একই রকম দৃশ্য দেখছি। নির্বাচন এলেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানায়। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা তা মানে না। ক্ষমতাসীনেরা তাদের মিত্রদের নিয়ে নির্বাচন করে। জয়ী হয়। সরকার গঠন করে। এরপর বিএনপিকে দাবড়ানি দেয়। দাবড়ানি খেয়ে তারা ছত্রভঙ্গ হয়। কিছুদিন চুপচাপ থাকে। দম নেয়। এরপর আবার একটু একটু করে আন্দোলন শুরু করে। হুমকি দেয়। হরতাল-অবরোধ করে। কিন্তু তাতে শক্তিক্ষয় ছাড়া কোথাও কোনো পরিবর্তন হয় না।
এবারও কয়েক মাস ধরে বিএনপি যখন তার মিত্রদের নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে নানা কর্মসূচি পালন করছে, তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের দিকে। বিএনপিসহ বিরোধী কয়েকটি দলের আন্দোলন কিংবা নির্বাচন বর্জন—কোনো কিছুই ক্ষমতাসীনদের ন্যূনতম চাপে ফেলতে পারেনি। উল্টো মামলা, গ্রেপ্তার, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় যেতে না পারার হতাশা, কিছু কিছু নেতা-কর্মীর দলত্যাগ করে নির্বাচনী মিছিলে যোগদানসহ নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত বিএনপি। দলের সিদ্ধান্তে অনেক নেতা-কর্মীই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। আবার দল থেকে বোরোতেও পারছেন না। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা নির্বাচনের পক্ষে কাজ করায় দেড় মাসে ৩০ জনের বেশি কেন্দ্রীয় এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলটি সরকার পতনের আন্দোলনে সফল হতে পারছে না, আবার নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। এতে ক্ষতি যা হওয়ার হচ্ছে দেশের এবং দেশের সাধারণ মানুষের। কিন্তু সেই বোধ বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর আছে বলে মনে হয় না।
এমনিতে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলার কিছু নেই। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি হরতাল-অবরোধ-ঘেরাও, সমাবেশ, মহাসমাবেশ, বিক্ষোভ অনেক কিছুই করতে পারে। সমস্যা হচ্ছে বিএনপির এই আন্দোলনের কারণে নিরীহ মানুষদের সীমাহীন সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ বিএনপির হরতাল-অবরোধ শেষ পর্যন্ত নিরীহ থাকে না। এটা সহিংস কর্মসূচিতে পরিণত হয়। আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও এক মাসে প্রায় ২৩০টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। বাদ যায়নি ট্রেনও। এ সময় ১১টি স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ অফিস, বিএনপি অফিস, পুলিশ বক্স, কাউন্সিলর অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার, শোরুম ইত্যাদি। এসব অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আহত হয়েছেন অনেকে।
বিএনপি আন্দোলনের নামে একধরনের ভীতির সৃষ্টি করছে। রুটি-রুজি নিয়ে ব্যস্ত মানুষের এসব আন্দোলন নিয়ে তেমন একটা মাথাব্যথা নেই। তাই তো বিএনপির চলমান আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর জনসম্পৃক্ততাহীন বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির কোনো প্রভাব নেই। পোড়ার আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে মানুষ গাড়িও বের করছে। অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবকিছুই সচল থাকছে। বিএনপির একমাত্র মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী ‘অজ্ঞাত’ স্থান থেকে ভিডিও বার্তায় দুদিন পর পর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। হুমকি দিচ্ছেন, আন্দোলন আরও জোরদার করবেন। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সরকারের পতন হলো বলে! কিন্তু তাঁর কথায় সাধারণ মানুষ পথে নামে না। নেতা-কর্মীরাও না। কেউ ভরসাও পায় না।
সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের দেশে কোনো রাজনৈতিক দলেরই কোনো দায় আছে বলে মনে হয় না। অথচ সাধারণ মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার কথা রাজনৈতিক দলগুলোরই। সরকার যেমন জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়ার কথা, রাজনৈতিক দলেরও সেই দায় থাকা দরকার। এমনকি সেই দায়বদ্ধতাকে সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেওয়ারও যুক্তি আছে। রাজনৈতিক দলগুলো আর পাঁচটা বেসরকারি সংগঠনের মতো নয়, তারা একটি ‘পাবলিক বডি’, অর্থাৎ জনপরিসরের প্রতিষ্ঠান, জনসমর্থন পাওয়ার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, সুতরাং প্রতিটি কাজের জন্য জনসাধারণের কাছে তাদের জবাবদিহির দায় থাকা উচিত। দলীয় রাজনীতির মূর্তি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে রাজনৈতিক দলের আচরণের ঔচিত্য-অনৌচিত্য বিষয়ে নীতিগত আলোচনা করে আদৌ আর কোনো লাভ আছে কি না, সেই প্রশ্ন নিতান্ত স্বাভাবিক।
কিন্তু সকাল থেকে রাত্রি অবধি অনন্ত কুনাট্যের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্যের কথা স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। দলনেতা ও নেত্রীরা তাতে হয়তো কর্ণপাতও করবেন না, কিন্তু তাঁদের অনেকের অনেক আচরণ যে যথার্থ রাজনীতি নয়, রাজনীতির কলঙ্ক, সেই সত্যটি অন্তত সমাজের নিজের মনে রাখা জরুরি।
প্রকৃত গণতন্ত্রের শর্ত পূর্ণ হলে এই দায়িত্বের কথা আলাদা করে বলার দরকার হতো না। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলকে জনসাধারণের সমর্থন নিয়ে চলতে হয়—সুতরাং তাদের কাছে দায়বদ্ধ না থাকলে জনসমর্থন হারাতে হবে, এই আশঙ্কার তাড়নাতেই দলের নেতা ও কর্মীদের আচরণ যথাযথ হওয়ার কথা, ভুল করলে দ্রুত আত্মসংশোধন করার কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দলের সঙ্গে জনতার সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে দাতা এবং গ্রহীতার। আর গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে দলতন্ত্রে। দলতন্ত্রের অভিধানে নৈতিক দায়দায়িত্বের কোনো স্থান নেই।
ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। বস্তুত যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া আর সবকিছুর বিনিময়ে ক্ষমতা ধরে রাখার উদগ্র বাসনা-তাড়িত রাজনীতির কারবারিরা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং সমাজের পক্ষে হানিকর আচরণকেই নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে সবাই মিলে আদিগন্ত বিস্তৃত অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া ছাড়া বুঝি আমাদের অন্য কোনো যৌতুক নেই!

ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস ও ক্ষতিকর কর্মসূচি থেকে বিএনপি সরে আসছে না। এতে শঙ্কা জাগছে, আবারও কি বিএনপি ২০১৪-১৫ সালের মতো লাগাতার অবরোধের পথে পা বাড়াবে? বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট সেই সময় টানা ২৮০ দিন অবরোধ পালন করেছিল। তখন অবরোধের মধ্যে নির্দিষ্ট মেয়াদে হরতালেরও ডাক দেওয়া হতো। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ ও হরতালের ডাক দেয় বিএনপি জোট। বাস্তবে এই হরতাল ও অবরোধের কার্যকারিতা দেখা না গেলেও সেই অবরোধের ২৮০ দিন অতিক্রম করলেও বিএনপি জোট আনুষ্ঠানিকভাবে অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। সহিংস আন্দোলন করেও সেই সময় কোনো দাবি আদায় করা সম্ভব হয়নি। উল্টো বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিবাদ, সমালোচনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ইত্যাদি যেকোনো রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য। সাংবিধানিক অধিকার। দলের নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন করতে এবং ক্ষমতাসীন দলের গণবিরোধী কাজ ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নানা রকম তৎপরতা চালাতে হয়। কখনো তারা অসহযোগের মতো ‘চরম’ কর্মসূচিও গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু বিএনপি এখন যা করছে, এর কোনো তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
দলটির পক্ষ থেকে প্রতিদিন কর্মসূচি পালনের নানা রকম ভিডিও পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে সীমিতসংখ্যক নেতা-কর্মীর ঝটিকা মিছিল। যদিও বাস্তবে নেতা-কর্মীদের এসব ক্ষণস্থায়ী ঝটিকা মিছিল রাজপথে তেমন একটা প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। হরতাল-অবরোধের প্রভাব যেমন ক্রমেই কমে আসছে, তেমনি নির্বাচনের দিকেও বীর বিক্রমে এগিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন হলো, এবারও যদি ক্ষমতাসীনেরা বিএনপির দাবি-দাওয়া না মেনে নির্ধারিত সময়ে সংসদ নির্বাচন করে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে, তখন বিএনপি কী করবে? তখনো কী বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাবে? সেই আন্দোলনের পরেও পদত্যাগ না করে ক্ষমতাসীনেরা যদি নানা কৌশলে ক্ষমতায় টিকে থাকে, তাহলেও কী এভাবে অনন্তকাল আন্দোলন চলবে? বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অবরোধ ও হরতালের ডাক দিয়েই যাবেন?
রুহুল কবির রিজভী অবশ্য বলছেন, নির্বাচন ‘হতে দেওয়া হবে না।’ ‘হতে দেওয়া হবে না’ বললেই কি নির্বাচন ঠেকানো যাবে? বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচন হলে (নির্বাচন যে হবেই, তার আলামত স্পষ্ট) তাঁরা কী করবেন? আওয়ামী লীগারদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেবেন? পেট্রলবোমা ছুড়বেন? রিজভী সাহেবরা ২০১৫ সালেও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঠিকই নির্বাচন করেছে। সেই নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় তারা এখনো ক্ষমতায় আছে। বিএনপি নেতারা যতই হুংকার ছাড়ুন না কেন, নির্বাচন এবারও হবে। এটা একই সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের নির্ঝঞ্ঝাটে ক্ষমতায় থাকার মওকা এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তা ছাড়া, নির্বাচনের পক্ষে আওয়ামী লীগ ছাড়া আরও অন্তত দুই ডজন দল রয়েছে। দলগুলো ইতিমধ্যে এমপি হওয়ার জন্য মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই ‘রেসের ঘোড়া’দের স্তব্ধ করার মতো শক্তি বিএনপির কোথায়?
আমরা পনেরো বছর ধরে একই রকম দৃশ্য দেখছি। নির্বাচন এলেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানায়। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা তা মানে না। ক্ষমতাসীনেরা তাদের মিত্রদের নিয়ে নির্বাচন করে। জয়ী হয়। সরকার গঠন করে। এরপর বিএনপিকে দাবড়ানি দেয়। দাবড়ানি খেয়ে তারা ছত্রভঙ্গ হয়। কিছুদিন চুপচাপ থাকে। দম নেয়। এরপর আবার একটু একটু করে আন্দোলন শুরু করে। হুমকি দেয়। হরতাল-অবরোধ করে। কিন্তু তাতে শক্তিক্ষয় ছাড়া কোথাও কোনো পরিবর্তন হয় না।
এবারও কয়েক মাস ধরে বিএনপি যখন তার মিত্রদের নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে নানা কর্মসূচি পালন করছে, তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের দিকে। বিএনপিসহ বিরোধী কয়েকটি দলের আন্দোলন কিংবা নির্বাচন বর্জন—কোনো কিছুই ক্ষমতাসীনদের ন্যূনতম চাপে ফেলতে পারেনি। উল্টো মামলা, গ্রেপ্তার, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় যেতে না পারার হতাশা, কিছু কিছু নেতা-কর্মীর দলত্যাগ করে নির্বাচনী মিছিলে যোগদানসহ নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত বিএনপি। দলের সিদ্ধান্তে অনেক নেতা-কর্মীই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। আবার দল থেকে বোরোতেও পারছেন না। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা নির্বাচনের পক্ষে কাজ করায় দেড় মাসে ৩০ জনের বেশি কেন্দ্রীয় এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলটি সরকার পতনের আন্দোলনে সফল হতে পারছে না, আবার নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। এতে ক্ষতি যা হওয়ার হচ্ছে দেশের এবং দেশের সাধারণ মানুষের। কিন্তু সেই বোধ বিএনপিসহ আন্দোলনরত দলগুলোর আছে বলে মনে হয় না।
এমনিতে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলার কিছু নেই। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি হরতাল-অবরোধ-ঘেরাও, সমাবেশ, মহাসমাবেশ, বিক্ষোভ অনেক কিছুই করতে পারে। সমস্যা হচ্ছে বিএনপির এই আন্দোলনের কারণে নিরীহ মানুষদের সীমাহীন সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ বিএনপির হরতাল-অবরোধ শেষ পর্যন্ত নিরীহ থাকে না। এটা সহিংস কর্মসূচিতে পরিণত হয়। আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও এক মাসে প্রায় ২৩০টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। বাদ যায়নি ট্রেনও। এ সময় ১১টি স্থাপনায়ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ অফিস, বিএনপি অফিস, পুলিশ বক্স, কাউন্সিলর অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার, শোরুম ইত্যাদি। এসব অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আহত হয়েছেন অনেকে।
বিএনপি আন্দোলনের নামে একধরনের ভীতির সৃষ্টি করছে। রুটি-রুজি নিয়ে ব্যস্ত মানুষের এসব আন্দোলন নিয়ে তেমন একটা মাথাব্যথা নেই। তাই তো বিএনপির চলমান আন্দোলনে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর জনসম্পৃক্ততাহীন বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির কোনো প্রভাব নেই। পোড়ার আশঙ্কাকে উপেক্ষা করে মানুষ গাড়িও বের করছে। অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবকিছুই সচল থাকছে। বিএনপির একমাত্র মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী ‘অজ্ঞাত’ স্থান থেকে ভিডিও বার্তায় দুদিন পর পর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। হুমকি দিচ্ছেন, আন্দোলন আরও জোরদার করবেন। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সরকারের পতন হলো বলে! কিন্তু তাঁর কথায় সাধারণ মানুষ পথে নামে না। নেতা-কর্মীরাও না। কেউ ভরসাও পায় না।
সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের দেশে কোনো রাজনৈতিক দলেরই কোনো দায় আছে বলে মনে হয় না। অথচ সাধারণ মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার কথা রাজনৈতিক দলগুলোরই। সরকার যেমন জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধ হওয়ার কথা, রাজনৈতিক দলেরও সেই দায় থাকা দরকার। এমনকি সেই দায়বদ্ধতাকে সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেওয়ারও যুক্তি আছে। রাজনৈতিক দলগুলো আর পাঁচটা বেসরকারি সংগঠনের মতো নয়, তারা একটি ‘পাবলিক বডি’, অর্থাৎ জনপরিসরের প্রতিষ্ঠান, জনসমর্থন পাওয়ার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, সুতরাং প্রতিটি কাজের জন্য জনসাধারণের কাছে তাদের জবাবদিহির দায় থাকা উচিত। দলীয় রাজনীতির মূর্তি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে রাজনৈতিক দলের আচরণের ঔচিত্য-অনৌচিত্য বিষয়ে নীতিগত আলোচনা করে আদৌ আর কোনো লাভ আছে কি না, সেই প্রশ্ন নিতান্ত স্বাভাবিক।
কিন্তু সকাল থেকে রাত্রি অবধি অনন্ত কুনাট্যের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্যের কথা স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। দলনেতা ও নেত্রীরা তাতে হয়তো কর্ণপাতও করবেন না, কিন্তু তাঁদের অনেকের অনেক আচরণ যে যথার্থ রাজনীতি নয়, রাজনীতির কলঙ্ক, সেই সত্যটি অন্তত সমাজের নিজের মনে রাখা জরুরি।
প্রকৃত গণতন্ত্রের শর্ত পূর্ণ হলে এই দায়িত্বের কথা আলাদা করে বলার দরকার হতো না। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলকে জনসাধারণের সমর্থন নিয়ে চলতে হয়—সুতরাং তাদের কাছে দায়বদ্ধ না থাকলে জনসমর্থন হারাতে হবে, এই আশঙ্কার তাড়নাতেই দলের নেতা ও কর্মীদের আচরণ যথাযথ হওয়ার কথা, ভুল করলে দ্রুত আত্মসংশোধন করার কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দলের সঙ্গে জনতার সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে দাতা এবং গ্রহীতার। আর গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে দলতন্ত্রে। দলতন্ত্রের অভিধানে নৈতিক দায়দায়িত্বের কোনো স্থান নেই।
ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। বস্তুত যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া আর সবকিছুর বিনিময়ে ক্ষমতা ধরে রাখার উদগ্র বাসনা-তাড়িত রাজনীতির কারবারিরা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং সমাজের পক্ষে হানিকর আচরণকেই নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে সবাই মিলে আদিগন্ত বিস্তৃত অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া ছাড়া বুঝি আমাদের অন্য কোনো যৌতুক নেই!

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
১২ ডিসেম্বর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
১২ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
১২ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ক্রমেই দেখা যাচ্ছে, জনসমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যেই রাজনীতিকদের একাংশ দুর্বিনীত, অসংযত, হিংস্র আচরণে মত্ত হচ্ছেন। আর সেই হিংস্রতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে ‘প্রতিপক্ষ’ ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
১২ ডিসেম্বর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫