মাথা ন্যাড়া করে গৃহবধূকে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ১

লক্ষ্মীপুরে এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাঁর ননদকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাড়ে তিন বছর আগে ভোলার ইলিশা এলাকার বাসিন্দা আলমগীরের মেয়ের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর সদরের চর রমণী মোহন এলাকার বাসিন্দা কাঞ্চন মাঝির ছেলে মো. হাসানের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতেই তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ৩ লাখ টাকা দাবি করে। তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত শাশুড়ি, ননদ ও স্বামী হাসান।

দরিদ্র বাবার পক্ষে যৌতুকের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় নীরবে নির্যাতন সহ্য করে আসছিলেন রুমা আক্তার। গত রোববার রাতে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ তাঁকে হাত-পা বেঁধে মাথা ন্যাড়া করে ঘরে আটকে রাখে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। পরে তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে ঘরে বেঁধে রেখে পালিয়ে যায় সবাই। আত্মীয়স্বজনেরা বিষয়টি জানতে পারে। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মনির হোসেন সজীবসহ এলাকাবাসী গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী।

স্থানীয় এলাকাবাসী হুমায়ন কবির ও জসিম উদ্দিন জানান, যৌতুকের দাবিতে এভাবে গৃহবধূকে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনার পর ওই নারী ভেঙে পড়েছেন। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তাঁরা। এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায় যৌতুকের দাবিতে নারীরা প্রায়ই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাই দ্রুত এসব নির্যাতন বন্ধের দাবি স্থানীয়দের।

তবে যৌতুক দাবিতে মাথা ন্যাড়া করে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভুক্তভোগীর ননদ আটক পাখি বেগম। আটক করার আগে সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, পারিবারিক কলহের কারণে তাঁর স্বামী চুল কেটে দেয়। এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। অন্যায়ভাবে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

চররমণী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনির হোসেন সজীব বলেন, যৌতুকের জন্য প্রায়ই রুমা আক্তারকে নির্যাতন করত স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ঘটনার দিন ৩ লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে তাঁর মাথা ন্যাড়া করাসহ শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশকে বিষয়টি জানান।

অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) পলাশ কান্তি নাথ জানান, নির্যাতনের ঘটনায় গৃহবধূর ননদ পাখি বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।