Ajker Patrika

নিত্যপণ্যের বাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়বে

ড. ম. তামিম
নিত্যপণ্যের বাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়বে

আজকের পত্রিকা: সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাফল্য দাবি করার পরেও বর্তমানে বিপর্যয়ের কারণগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?

ম. তামিম: আমরা তো বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে বৈশ্বিক কারণে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। মূল সমস্যা আমাদের জ্বালানি। জ্বালানি খাতকে যদি আমরা উন্নয়ন না করি, তাহলে বিদ্যুৎ আসবে কোথা থেকে? বিদ্যুৎকেন্দ্র তো আমাদের বসে আছে। প্রাথমিক জ্বালানি যদি আমরা সরবরাহ করতে না পারি, তাহলে হাজার হাজার বিদ্যুৎকেন্দ্র করে কোনো লাভ নেই।

আবার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব ছিল। সেটার জন্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখার দরকার ছিল। এখন আমরা বলছি, আমাদের ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তবে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র বাদ দিলে

সেটা ২২ হাজার মেগাওয়াটে পরিণত হয়। এর মধ্যে আবার ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এসব অকেজো

মেশিন থেকে আর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে না। কিন্তু সেই উৎপাদনের বিষয়টি কাগজে-কলমে দেখিয়ে সক্ষমতার মধ্যে ধরা হচ্ছে। আমার মতে, এ বিষয়ে স্বচ্ছতা তৈরি করা উচিত। আমাদের প্রকৃত সক্ষমতাকে সামনে এনে পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।

দ্বিতীয়ত, আগামী ১০ বছরে আমাদের শিল্প ও আবাসিক খাতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগবে, সেই হিসাবটা বের করতে হবে। এই পরিকল্পনায় হিসাব কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। তবে অতি উৎপাদন কিংবা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম উৎপাদন নানা বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।

তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির সরবরাহ সক্ষমতা বাড়াতে হবে; বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে।

রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যখন স্থাপন করা হয়েছে, তখন দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য সেগুলো দরকার ছিল। রামপালের মতো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী চালু হয়ে গেলে এখন বিদ্যুতের সংকট সৃষ্টি হতো না।

আজকের পত্রিকা: সরকারের কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাহী ক্ষমতাবলে সরকার সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

ম. তামিম: সব দেশের সব সরকারেরই নিজের আইন ভঙ্গ করার একটা প্রবণতা থাকে। ১৯৯৬ সালে বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ খাতে সংস্কার শুরু হয়। এই সংস্কারের মধ্যেই ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করা। সরকারের কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করাই নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাজ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রচণ্ড চাপেই ২০০৩ সালে বিইআরসি আইন করা হয়। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে এটি কার্যকর হতে শুরু করে। এখন যা করা হচ্ছে, এটা পরিষ্কারভাবে পেছনের দিকে যাওয়া। এতে অদক্ষতা বাড়বে এবং জবাবদিহি কমে যাবে।

এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স নেয়। তবে মূল কাজটা হচ্ছে দাম নির্ধারণ। শুধু বিশেষ সময়ে দাম নির্ধারণ করবে সরকার। কিন্তু এবার পুরোপুরি বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে।

বিইআরসির কাছ থেকে দাম বাড়ানোর ক্ষমতা সরকারের হাতে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। নিয়মিত দাম সমন্বয়ের জন্য বিষয়টি করা হয়েছে। কিন্তু এ কাজটি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ক্ষেত্রে প্রতি মাসে করে দেখিয়েছে বিইআরসি। সুতরাং বিদ্যুৎ খাতেও এটি চাইলে বিইআরসি করতে পারত। আবার বিইআরসির হাত থেকে দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নিয়ে নিলে জনগণের কাছে জবাবদিহির প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তখন বিদ্যুৎ খাতের ইউটিলিটি কোম্পানিগুলো আরও অদক্ষ হয়ে পড়বে। কোম্পানিগুলো স্বেচ্ছাচারীও হয়ে উঠবে।

সরকার এবার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কাজটি মূলত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা বিইআরসি করে থাকে। এখন আমি জানি না, এই দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি কি সমান্তরালভাবে চলতে থাকবে? অর্থাৎ সরকারও দাম বাড়াবে, আবার বিইআরসিও দাম বাড়াবে। নাকি সরকার একবার বাড়াবে, আরেকবার বিইআরসি বাড়াবে? আমি এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নই। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, মূল্য নির্ধারণে বিইআরসির আর কোনো ভূমিকা থাকবে না।

কোনো দেশেই এসব সংস্থা পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে না। তবে গণশুনানির মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করলে শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কথা বলে সব ঠিক করা যেত। এবার সরকার যা করেছে, তাতে এ সংস্থাটির ভবিষ্যতে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা না-ও থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠার পর দাম সমন্বয় ছাড়াও দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নজরদারি, বিনিয়োগ ও সামর্থ্য বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে বিইআরসি। যদিও জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে সংস্থাটির দাম সমন্বয়ের ক্ষমতা থাকলেও কয়েক বছর ধরে তা করে আসছিল মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে একরকম পঙ্গু করে ফেলা হলো বিইআরসিকে।

আজকের পত্রিকা: বিদ্যুতের দাম যখন বাড়ে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দাম বাড়ানো হচ্ছে না, আর্থিক ঘাটতি সমন্বয় করা হচ্ছে। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে আপনার বক্তব্য কী?

ম. তামিম: সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় নানান যুক্তি দিয়ে থাকে। আমরা জানি যে তেলের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম খুব দ্রুত ওঠানামা করতে পারে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম সেই তুলনায় বেশ সময় নিয়ে ওঠানামা করে। এমনকি মাসিক ভিত্তিতেও দামের ওঠানামার সুযোগ কম। একমাত্র বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হয়।

বিদ্যুৎ খাতে কখনোই পরিস্থিতি এমন হয় না যে তিন দিনের মধ্যে দাম বাড়াতে হবে। সরকার চাইলে তিন দিন পর বিইআরসির মাধ্যমেই দাম বাড়াতে পারত। এতে সরকারের প্রতিও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ত। নির্বাহী আদেশে করার কোনো দরকার ছিল না। এতে কোনো যৌক্তিক কারণ দেখি না। এখন কমিশনের কিছু করার থাকল না। তাদের ক্ষমতা খর্ব করা হলো। কিছুদিন আগে সরকার আইন সংশোধন করে দাম বাড়ানোর ক্ষমতা নেওয়ার পর বিইআরসি গণশুনানি করেছে। এতে আশাবাদী হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, সরকার জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া তাদের মূল্য সমন্বয়ের ক্ষমতা ব্যবহার করবে না। কিন্তু এখন দেখলাম, জরুরি পরিস্থিতি ছাড়াই ক্ষমতা ব্যবহার করল সরকার। এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না। 

আজকের পত্রিকা: সামনে ইরি-বোরো মৌসুম এবং জিনিসপত্রের দাম আগে থেকেই আকাশচুম্বী। এখন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে এর প্রভাব তো কৃষি এবং সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

ম. তামিম: এমনিতেই হিসাব অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোয় বাজারে তেমন প্রভাব পড়ার কথা নয়। মূলত তেলের দাম বৃদ্ধি হলে বাজারের সবকিছুতে এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশ তো সব সম্ভবের দেশ। আর ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক কিছুই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আমরা খুবই কঠিন একটি সময় পার করছি। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। শক্ত হাতে সরকারকে দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ক্যাপটিভ (শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র) থাকায় রপ্তানিমুখী শিল্পে (তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত) হয়তো বড় প্রভাব পড়বে না। তবে দেশীয় উৎপাদন শিল্পে খরচ বেড়ে যাবে। তেল, চিনির প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি। এর আগে সাবানের দাম এক লাফে অনেক বেড়ে গেছে। এ ধরনের সব পণ্যের দাম বাড়তে থাকবে। এতে নিত্যপণ্যের বাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এটা জ্বালানি তেলের মতো সঙ্গে সঙ্গে হবে না, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ধীরে ধীরে পড়তে পারে।

আজকের পত্রিকা: সরকার তো নতুন বছরে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার কথা বলেছিল, সম্প্রতি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর কারণ কী?

ম. তামিম: মূলত বিদ্যুৎ খাতের জন্য যে জ্বালানি দরকার, তার সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে; বিশেষ করে যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ফার্নেস অয়েল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তারা সংকটে পড়েছে। বিষয়টি এমন নয় যে বৈশ্বিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারেও দাম বেড়েছে। মূল কারণটি হলো ডলার সংকট। এই ডলার সংকটের কারণেই ফার্নেস তেল দ্বারা পরিচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ঠিকমতো চালু রাখা যাচ্ছে না। ডলার সংকটের কারণে ফার্নেস তেল আমদানি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এখন রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহে সংকট দেখা গেছে ওই ডলার সংকটের কারণেই। সেই সংকট দূর করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। 

আজকের পত্রিকা: এবার গ্যাসের দাম বাড়ল ৮২ শতাংশ। এর প্রভাব তো সাধারণ জনগণের ওপরই ব্যাপকভাবে পড়বে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

ম. তামিম: মাঝারি ও ছোট শিল্পের সঙ্গে রপ্তানি শিল্পও সমস্যার সম্মুখীন হবে। দেশীয় উৎপাদন ব্যাহত হবে। গ্যাসচালিত সব পণ্য উৎপাদনের দাম বাড়বে, যাতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যাবে। ১১ টাকা ৬৪ পয়সার গড় গ্যাসের দাম এক লাফে ২১ টাকা ২৭ পয়সা বাড়ানো হলো; অর্থাৎ পেট্রোবাংলা এখন প্রচুর লাভ করবে। এই দুর্যোগে যেখানে বিশ্বের ধনী দেশগুলো ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ মধ্যবিত্ত এবং গরিব মানুষকে আরও একটা গহ্বরে ফেলা হলো। 

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ম. তামিম: আপনার মাধ্যমে আজকের পত্রিকার পাঠক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত