Ajker Patrika

দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ কমলে গরম বাড়বে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ এশিয়া এমনিতেই তাপমাত্রার দিক থেকে একটি উত্তপ্ত অঞ্চল। ছবি: উইনডি ডট কম
দক্ষিণ এশিয়া এমনিতেই তাপমাত্রার দিক থেকে একটি উত্তপ্ত অঞ্চল। ছবি: উইনডি ডট কম

গত ৪০ বছরে বিশ্বের অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় উষ্ণতা বেড়েছে অনেক ধীরে। যেখানে বৈশ্বিকভাবে স্থলভাগে প্রতি দশকে গড়ে তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং একই অক্ষাংশে অবস্থিত অঞ্চলে তা বেড়েছে দশমিক ২৩ ডিগ্রি, সেখানে দক্ষিণ এশিয়ায় এই হার ছিল মাত্র দশমিক শূন্য ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি এর কারণ কী। তবে বায়ুদূষণ ও সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে একবার যদি দূষণ কমে যায় ও সেচ সম্প্রসারণের গতি থেমে যায়, তাহলে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাবে।

দক্ষিণ এশিয়া এমনিতেই তাপমাত্রার দিক থেকে একটি উত্তপ্ত অঞ্চল। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত (বর্ষা আসার আগে)—এই সময়টিই সবচেয়ে গরম থাকে। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে ভারতের উত্তরাঞ্চল ও বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে নিয়মিতভাবেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর যারা সবচেয়ে তীব্র বা চরম তাপমাত্রার সঙ্গে লড়ছে, তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশই বাস করে দক্ষিণ এশিয়ায়। এই ধরনের তাপমাত্রা বিশেষ করে বয়স্ক বা অসুস্থ মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

এই বিপজ্জনক গরম দিনগুলো আরও ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে। ২০২৫ সালেই ভারতের কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। তাপমাত্রা বাড়ছে ঠিকই, তবে দক্ষিণ এশিয়া এখনো বৈশ্বিক উষ্ণতার পূর্ণ প্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছে। এর এক বড় কারণ এই অঞ্চলের চরম মাত্রার দূষণ।

কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো দীর্ঘমেয়াদি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো বিশ্বব্যাপী সমভাবে ছড়িয়ে পড়লেও অন্য দূষণ অনেক বেশি স্থানীয়। এই স্থানীয় দূষণের একটি বড় অংশ আবার পৃথিবীর তলদেশ ঠান্ডা রাখে। সালফেট কণা, ধোঁয়া ও অন্যান্য অ্যারোসল (ছোট ছোট বায়ু কণা) সূর্যালোককে মাটিতে পৌঁছাতে বাধা দেয়—কখনো তা প্রতিফলিত হয়ে মহাকাশে ফিরে যায়, আবার কখনো তা বাতাসে শোষিত হয়। অ্যারোসল মেঘের গঠনে প্রভাব ফেলে, যা আরও সূর্যালোক আটকে রাখে।

আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেলের (আইপিসিসি) মতে, শিল্পযুগের আগের সময়ের তুলনায় এখন পর্যন্ত অ্যারোসল দূষণের গড় প্রভাব পৃথিবীকে দশমিক ৪ ডিগ্রি ঠান্ডা করেছে, যা গ্রিনহাউস গ্যাসের উষ্ণতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পুষিয়ে দিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ চলাচলে জ্বালানি পরিবর্তনের কারণে অ্যারোসল কমে যাওয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণতা আবার দ্রুত বাড়ছে।

ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি পৃথিবীর অন্যতম দূষিত এলাকা। ভারী শিল্প, যানবাহনের ধোঁয়া, ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো ও রান্নার কাজে কঠিন জ্বালানির ব্যবহার অ্যারোসল বাড়াচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, এই দূষণ দক্ষিণ এশিয়ায় উষ্ণতা বৃদ্ধিকে কিছুটা ঠেকিয়ে রেখেছে। তবে কালো ধোঁয়া সূর্যালোক শোষণ করে মাটিকে ঠান্ডা রাখলেও বাতাসকে গরম করে তোলে—এটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এক গবেষণা দেখা যায়, ২০২০ সালের বসন্তে করোনা মহামারির লকডাউনের সময় দূষণ হঠাৎ কমে গেলে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন তাপমাত্রা বেড়ে যাবে, তবে উল্টো অনেক শহরে তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল। গবেষণায় মাত্র কয়েক মাসের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাই এই পরিবর্তনগুলো কাকতালীয়ভাবেও ঘটতে পারে। তবে বিষয়টি এখনো কিছুটা রহস্যজনক বলে মনে করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিদ লরেটা মিকলি।

দক্ষিণ এশিয়ায় ধীর গতির উষ্ণতার আরেকটি কারণ হলো ব্যাপক সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ। বাষ্পীভবনের সময় পানি তাপ শোষণ করে চারপাশ ঠান্ডা রাখে। ১৯৮০ সাল থেকে ভারতে সেচকৃত জমির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই বাড়তি সেচ ব্যবস্থা বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবকে ঢেকে রেখেছে। ২০২০ সালে ‘নেচার কমিউনিকেশনসে’ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, যদি সেচ না থাকত, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এখনকার তুলনায় ২ থেকে ৮ গুণ বেশি ‘চরম’ গরমের দিন থাকত।

তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন—দূষণ ও সেচ ঠিক কতটা ভূমিকা রেখেছে। এর প্রভাবে শুধু তাপমাত্রা নয়, বর্ষা ও বৃষ্টিপাতের ধরনও বদলাচ্ছে। তবে একটি বিষয়ে সব বিশেষজ্ঞ একমত: আগামী ২০ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার উষ্ণতা বিগত ২০ বছরের দ্বিগুণ হারে বাড়বে। ভারতের দিল্লিতে আয়োজিত এক সম্মেলনে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ ডেভিড ব্যাটিস্টি বলেন, ‘ভারতের জন্য এটা একপ্রকার নিশ্চিত।’

হার্ভার্ডের ডেনিয়েল শ্রাগ বলেন, ভারতের উষ্ণতা বৈশ্বিক গড়ের চেয়েও দ্রুত বাড়বে।

আগামী দিনে দূষণ ও সেচ—দুটিই আগের মতো বাড়বে না। কারণ, এগুলোর তাপমাত্রা ঠান্ডা রাখার ভূমিকা কেবল তখনই থাকে যখন এগুলোর পরিমাণ বাড়ে। একবার যদি এগুলো স্থির হয়ে যায় বা কমে যায়, তখন দক্ষিণ এশিয়া বিগত দশকের লুকানো উষ্ণতার পুরো চাপ একসঙ্গে অনুভব করবে।

ড. শ্রাগ বলেন, ‘ভারত এভাবে সেচ দিতে পারবে না। কারণ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। আর এ রকম দূষণও দেশটি ধরে রাখতে পারবে না।’

ভারত সরকার ইতিমধ্যে বায়ুদূষণ রোধে উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ২০১৭ সালের তুলনায় কণিকা দূষণ ২০-৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। ২০২৬ সালের লক্ষ্য ৪০ শতাংশ। তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হলো নতুন অ্যারোসল মনিটরিং স্টেশন স্থাপন। অনেক শহর ২০২৪ সালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি, তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, গত এক দশকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

১৯৬০-এর দশকে ছিল বিশ্বের অন্যতম দূষিত দেশ জাপান। পরবর্তী দুই দশকে কঠোর আইন ও পরিবেশ কর আরোপ করে পরিস্থিতির উন্নতি আনে। ১৯৮০ সাল নাগাদ সেখানে অ্যারোসল দূষণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। চীনও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে দূষণ কমাতে সক্ষম হয়েছে।

এখনো পর্যন্ত, দক্ষিণ এশিয়ায় দূষণ চরম গরমের চেয়েও অনেক বড় হুমকি। ২০২১ সালে ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ’ গবেষণা বলছে, কণিকা দূষণের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় ২০-৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যেখানে চরম গরমে মৃত্যু হয়েছে ১ থেকে ৬ লাখ মানুষের। দিল্লির সাসটেইনেবল ফিউচারস কল্যাবোরেটিভের গবেষক ভাগরব কৃষ্ণ বলেন, ‘বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ভয়াবহ। কারণ, মানুষ বছরে ৩৬৫ দিন দূষণের সংস্পর্শে থাকে।’

এমনকি অল্প একটু উষ্ণতা বাড়লেও দক্ষিণ এশিয়ার জন্য তা ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এরই মধ্যে কিছু এলাকায় এমন গরম ও আর্দ্রতা অনুভূত হয় যা মানুষের সহ্যসীমার কাছাকাছি (৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৫০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা)। আগামী দিনে এই ধরনের পরিস্থিতি আরও বেশি ঘন ঘন হবে।

ড. ব্যাটিস্টি বলেন, যদি দূষণ ও সেচ একই রকম থাকে, তাহলেও ২০৪৭ সালের মধ্যে একজন ভারতীয় বছরে যত দিন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে তীব্র চাপ সহ্য করেন, তা চারগুণ বেড়ে যাবে। আর এই দুই উপাদান যদি কমে যায়, তবে চাপ হবে আরও বেশি।

ভারতের প্রায় অর্ধেক মানুষ বাইরে কাজ করেন এবং মাত্র ১০ শতাংশ পরিবারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে। কিছু শহর ইতিমধ্যে গরম মোকাবিলায় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে—কোথায় ঠান্ডা জায়গা তৈরি করা হবে বা পানি বিতরণ হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করছে। তবে এখনো অধিকাংশ শহরেই তাপ-সহনশীল অবকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় পড়েছে হালকা শীত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০৬
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মহান বিজয় দিবসের ছুটির দিনে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকায় অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। তাপমাত্রাও গতকালের মতো রয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল সোমবার ছিল ১৭ দশমিক ১। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ পরিষ্কার থাকবে। আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন তথ্য বলছে, আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি উষ্ণ হয়েছে পৃথিবী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী ঠিক কতটা উষ্ণ হয়ে উঠেছে—এই প্রশ্নের উত্তর নতুন এক বৈজ্ঞানিক তথ্যভান্ডার সামনে এনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিজ্ঞানীর প্রকাশিত নতুন তাপমাত্রা ডেটা-সেট দেখাচ্ছে—শিল্পবিপ্লব শুরুর আগের তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণতা হয়তো আমরা এত দিন যতটুকু ভেবেছি, তার চেয়েও বেশি বেড়েছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, সাধারণত আধুনিক জলবায়ু বিশ্লেষণে ১৮৫০ সালের তাপমাত্রাকে ‘প্রাক-শিল্পযুগ’ বা শিল্পযুগ শুরুর আগের তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, বিশ্ব এখন প্রাক শিল্প যুগের আগের তুলনায় প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। কিন্তু ‘গ্লোসেট’ (GloSAT) নামে নতুন ডেটা-সেট প্রাক-শিল্পযুগের তাপমাত্রার হিসেবটিকে নিয়ে গেছে আরও পেছনে, ১৭৮১ সাল পর্যন্ত। গবেষকদের মতে, এই বাড়তি সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যেই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছিল, যা ওই সময়ের মধ্যেও কিছুটা উষ্ণতা বাড়িয়েছিল।

গ্লোসেট ডেটা দেখাচ্ছে—১৮ শতকের শেষভাগ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত পৃথিবী ১৮৫০–১৯০০ সময়কালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ঠান্ডা ছিল। ফলে সেই সময়ের বিপরীতে বর্তমান উষ্ণতা হিসেব করতে গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি আরও বেশি মাত্রায় ঘটেছে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, প্রাক শিল্প যুগে যে উষ্ণতাটুকু বেড়েছিল, তার সবটাই মানুষের কারণে নয়। ১৮০০ সালের শুরুর দিকে তাম্বোরা সহ একাধিক বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত পৃথিবীকে সাময়িকভাবে ঠান্ডা করে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে সেই শীতলতার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিরাজ করেছে, সেটিও উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যানেল (আইপিসিসি) আগেই জানিয়েছিল, ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে মানুষের কারণে উষ্ণতা বেড়েছিল ০ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। নতুন গবেষণাগুলো সেই সীমার মাঝামাঝি অবস্থান করছে—প্রায় ০.০৯ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই গবেষণার বড় দিক হলো—পুরোনো তাপমাত্রা রেকর্ড। ইউরোপের বিভিন্ন শহর যেমন, সুইডেনের উপসালা, জার্মানির হোহেনপাইসেনবার্গের মতো স্থানে শত শত বছর ধরে সংরক্ষিত তথ্য এবং ১৮ শতকের জাহাজযাত্রার সময় নথিভুক্ত সামুদ্রিক বায়ুর তাপমাত্রা একত্র করে তৈরি হয়েছে এই বৈশ্বিক চিত্র। যদিও প্রাচীন তথ্যগুলো অসম্পূর্ণ এবং অনিশ্চয়তা বেশি, তবু বিজ্ঞানীদের মতে একটি বিষয় স্পষ্ট—পৃথিবী তখন আরও ঠান্ডা ছিল।

তাহলে এর অর্থ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন তথ্যের প্রেক্ষাপটে প্যারিস চুক্তির মতো বর্তমান জলবায়ু লক্ষ্যগুলো অর্থাৎ প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করে রাখার নৈতিক সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে যায় না। এই উপলব্ধি ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বোঝা ও মোকাবিলায় আরও সতর্ক হওয়ার বার্তাই দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দূষণ বাড়ছে বাতাসে, যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্রহায়ণের শেষ দিন আজ। বাতাসে শীতের আমেজ। তবে শীতল আবহাওয়া নিয়ে আসা শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকার বাতাসে বেড়ে যায় দূষণের মাত্রা। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ সোমবার ঢাকার অবস্থান ৮ম।

আজ সকাল ৮টা ৪৩ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৫৮, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। শহরটির বায়ুমান ৩৪৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের করাচি, কুয়েতের কুয়েত সিটি, মিশরের কায়রো ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২০১, ১৮৯, ১৮৯ ও ১৮১।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় তাপমাত্রা কমতে পারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

অগ্রহায়ণের বিদায়বেলায় আজ সোমবার সকালবেলা রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আগের দিন রোববার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকাল ৬টায় সেটি বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮২ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৪ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোলায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াত মারামারি, আহত ১৫

বগুড়ায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

রাবিতে ‘রাজাকার, আলবদর, আলশামস’ প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত