Ajker Patrika

‘নাট্যকলায় পড়তে আমি ঘর পালাইছিলাম’

খায়রুল বাসার নির্ঝর, ঢাকা
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯: ১৭
‘নাট্যকলায় পড়তে আমি ঘর পালাইছিলাম’

জাকিয়া বারী মম এমন একজন অভিনেত্রী, যাকে যেকোনো চরিত্রের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায়। তিনিও চ্যালেঞ্জটি লুফে নেন স্বচ্ছন্দে। অনেক দিন হলো অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম ক্যামেরার সামনে দাঁড়াননি। তিনি আছেন নিজের মতো। পড়ছেন, দেখছেন, প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভালো কাজের। মম এখন ব্যক্তিগত সফরে শ্রীমঙ্গলে। সঙ্গে আছেন অভিনেত্রী সুষমা সরকার। যাওয়ার আগে মম বললেন ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক কথা। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খায়রুল বাসার নির্ঝর

আপনার ছোটবেলার কিছু ছবি দেখলাম ফেসবুক টাইমলাইনে। মঞ্চে আপনি গাইছেন, নাচছেন…

জাকিয়া বারী মম: আম্মার বাসায় গেছিলাম। অনেক দিন পর দেখা হলে যেমন হয়, আম্মা আমাকে অনেক কিছু দিলেন। আমি বললাম, কী ব্যাপার? সবকিছু দিয়ে দিচ্ছ কেন? সমস্যা কী তোমার? আম্মা বললেন, নাও, তোমার জিনিস তোমার কাছে থাকলেই হয়তো ভালো হবে। (আমি বললাম) তোমার কাছে তো ভালোই ছিল। আমার ছোটবেলার ছবির অ্যালবাম ছিল মায়ের কাছে, অ্যালবাম দেখা তো নস্টালজিক ব্যাপার আরকি! ওখান থেকে কয়েকটা ছবি ফেসবুকে দিয়েছি।

ছবিগুলো দেখে মনে পড়ল, একসময় সকালবেলা রাস্তায় হাঁটলে কোনো না কোনো বাড়ি থেকে হারমোনিয়ামের আওয়াজ আসত। কেউ রিহার্সাল করছে...সুর ভেসে আসছে...

জাকিয়া বারী মম: এটা তো আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শুনছি। ট্রাস্ট মি। এখন আমার বন্ধুবান্ধবেরা আমাকে ক্ষ্যাপানোর জন্য বলে, ‘এই যে তুমি তো ব্রাহ্মণবাইড়া। যেহেতু তুমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার, খালি মারামারি করবা।’ আমি বলি, মানে! এইটা তো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিচয় হইতেই পারে না।

যে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আমি জন্মাইছি, বড় হইছি, ইট ওয়াজ সো বিউটিফুল। তুমি যেটা বলতেছিলা, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হারমোনিয়ামের সাউন্ড, এগুলা কিন্তু হইতোই তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। বিকাল হইলেই গাইতে পারুক না পারুক বাচ্চারা ট্রাই করত। সবাই, কমবেশি।

জাকিয়া বারী মম

তাহলে ছোটবেলা থেকেই কালচারালি বেশ অ্যাকটিভ ছিলেন আপনি?

জাকিয়া বারী মম: আমি যখন আলাউদ্দীন সংগীতাঙ্গনে ভর্তি হই, তখন আমার বয়স সাড়ে তিন-চার—এ রকম কিছু হবে। আমার তো আসলে তখন ওই ধরনের কোনো সেন্স কাজ করার ব্যাপার নেই। তখন আমার নাচতে ভালো লাগে, গাইতে ভালো লাগে, মিউজিক ভালো লাগে, ছবি আঁকতে ভালো লাগে। বাচ্চাদের এগুলা ডেফিনেটলি ভালো লাগবে। তো আমি ওই ‘বাচ্চাদের ভালো লাগার জায়গা থেকেই’ এগুলোর সাথে ইনভলভ হই, পড়াশোনার পাশাপাশি।

আমার চাইল্ডহুড ইজ সো কালারফুল। নাচ-গান-আর্টের ক্লাসে যাওয়া, আবার সন্ধ্যার সময় ফিরে আম্মার কাছে পড়তে বসা। তার পর একটা টাইম পর্যন্ত খেলা, টেলিভিশন দেখা—ইট ওয়াজ সো নাইস। মানে এত সিসটেমেটিক! এবং লেখাপড়ার সাথে সাথে আব্বা-আম্মা আমাকে...আমার আব্বা-আম্মা এদিক থেকে বেশ...যদি বোধের জায়গা বলি, ভালো লাগার জায়গা বলি, দে আর দ্য পারসন, যারা কিনা চাইছে তাঁদের সন্তান কালচারালি অ্যাকটিভ থাকুক।

বিকজ তাঁরা অনেক কালচারালি অ্যাকটিভ ছিলেন তাঁদের সময়। আমার বাবা তো কবিতা লেখেন। তাঁর বইও পাবলিশড হইছে দুইটা। উনি একটু পলিটিক্যাল...একটু বাম ঘেঁষা মানুষ।

আমার মা একসময় আমার নানার সঙ্গে নাটক করেছেন। আমার নানা আমার মাকে, খালাকে গান শিখাইছেন। অভিনয় শিখাইছেন। ওইখানকার সময়...লাকসামে তখন...ওই সময় মফস্বলে যে ধরনের ট্রেন্ড ছিল আরকি। টাউন হল, ক্লাব—এ ধরনের। তো ওই রকম একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আমার বাবা-মা দুজনই আসাতে তাঁরা চেয়েছিলেন তাঁদের সন্তানকে কালচারাল অ্যাক্টিভিটিতে দেখতে। ইট ওয়াজ দেয়ার ট্রেন্ড।

আমি ছোটবেলা থেকে ইনভলভ হইছি। পরে এসে এইটা...ইটস মাই হ্যাভিট...মানে এক ধরনের জার্নির মতো হয়ে গেছে। আমি কখনোই আসলে শুধু লেখাপড়া করি নাই। আমাকে সবকিছু একসাথে করতে হতো। লটস অব কমপিটিশন আই হ্যাড। এটা আরও লম্বা জার্নি। এটা বললে আরও সময় চলে যাবে।

শৈশব আসলে মানুষকে তৈরি করে দেয়। একটা ভালো শৈশব পেয়েছেন আপনি। সেটাই আজকের এই মমকে তৈরি করে দিয়েছে...

জাকিয়া বারী মম: এটা প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই হয়। এটাই হওয়া স্বাভাবিক আরকি।

আপনি যে ধরনের কালারফুল শৈশব কাটিয়েছেন, ওইরকম শৈশব কি এই সময়ে বাচ্চারা পাচ্ছে?

জাকিয়া বারী মম

জাকিয়া বারী মম: ওই ফ্রেশ ওয়েদার তো নাই আসলে। ওই ফ্রেশ ওয়েদার তো বাচ্চাদেরকে দেওয়া এখন ডিফিকাল্ট। এখন টেকনোলজি নানাভাবে ডমিনেট করতেছে। ডোন্ট নো। আমি হয়তো এভাবে বড় হইছি বলে আমার এভাবে মনে হইছে। কিন্তু এখন যে সন্তানটা জন্মাচ্ছে, তার জন্য তো এটাই রিয়্যালিটি। ওদেরকে তো আসলে এটা বলে বোঝানো যাবে না, যেটা আমি এক্সপেরিয়েন্স করছি।

ওরা কতটুকুই বুঝতে পারে? ওরা যতটুকু বুঝতে পারে, ততটুকু পর্যন্ত গিয়ে তারা তাদের ইন্টারেস্টে ডাইভার্ট হয়ে যায়। এটাই স্বাভাবিক। এখনকার বাচ্চারা অনেক প্র্যাকটিক্যালি ভাবে। আমরা হয়তো আরও ইমোশনালি ভাবতাম—এটাও আমার কাছে মনে হইছে। এটাও সময়ের একটা ব্লেন্ডিং। চেঞ্জ হইতেছে। এভাবেই আগাবে।

বাংলাদেশের এখনকার যে সমাজবাস্তবতা, তাতে শুধু অভিনয়টাকেই পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি কি আছে? বা এস্টাবলিশড হয়েছে? আপনার কী মনে হয়?

জাকিয়া বারী মম: এখন তো আরও অনেক অপশন আছে। আমি প্রথমে...দ্যাখো, চিন্তা করো...যে বাবা-মা তাঁদের সন্তানকে এভাবে বড় করে ছোটবেলা থেকে, তাঁরা সাডেনলি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আমাকে নাট্যকলায় ভর্তি হতে না দেওয়ার কারণটা কী? বিকজ ইনসিকিউরিটি। তাঁদের মেয়েকে নিয়ে তাঁরা কনসার্ন। নাট্যকলায় পড়লে সে যদি ক্যারিয়ার করতে চায়, কীভাবে ক্যারিয়ার করবে? তখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার সায়েন্স, বিবিএ—এগুলো বেশি পপুলার। আমাদের সাবজেক্টের ওই রকম ভ্যালু তখন...এখনো সোশ্যালি তো না-ই।

আমাকে তো পালাইতে হইছে বাসা থেকে। বাবার সাথে আমার দুই বছর কথা হয় নাই। আমি তো জাহাঙ্গীরনগর (বিশ্ববিদ্যালয়ে) পালাইয়া গিয়া ভর্তি হইছিলাম। ওই সব নাটক তো জীবনে অনেক করছি।

ওই তুলনায় এখন তো টেকনোলজি অনেক ওপেন করে দিছে। ঘরে বসেই এখন ইউ ক্যান রিড লটস অব স্টাফ, যা আমরা তখন অ্যাফোর্ড করতে পারি নাই। এখন তো কত টিউটোরিয়াল, কত এক্সারসাইজ! এখন যদি কেউ অ্যাক্টর হতে চায়, তাহলে সে ঘরে বসে তো তার প্রাইমারি লেসনটা নিতেই পারে।

এখন তো টিভি নাটকের বাইরে শুধু ইউটিউবের জন্যও অনেক প্রোডাকশন তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে। ওয়েব ফিল্ম-সিরিজ তৈরি হচ্ছে। কাজের ব্যাপ্তি বেড়েছে…

জাকিয়া বারী মম: প্রচুর হচ্ছে তো। প্রচুর হলে সুবিধা-অসুবিধা দুটোই থাকবে। জালালুদ্দিন রুমির একটা কথা সম্ভবত এমন যে, কোনো কিছু অতিরিক্ত হলেই তা বিষ। ‘হোয়াট ইজ পয়জন?’ এ রকম প্রশ্নের উত্তরে তিনি সম্ভবত এমন কিছু বলেছিলেন। ভালোবাসা বেশি হলেও সেটা বিষ।

 

 

জাকিয়া বারী মম

এটাতেই বেশি আক্রান্ত হয় মানুষ…

জাকিয়া বারী মম: এটাতে বেশি আক্রান্ত হয় কারণ, মানুষ আবেগতাড়িত হয় তো। ইমোশনাল ব্যালেন্স করাটা ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, ভালোবাসলেই তো ঘৃণা করা সম্ভব। আদারওয়াইজ হাউ ইউ ডিজার্ভ ইট?

 

অনেক দিন হলো আপনি কোনো শুটিং করছেন না। আপনার এই সাময়িক অনুপস্থিতিতে এক ধরনের শূন্যতা কিন্তু তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক প্রোডাকশনগুলোতে। অভিনয় নিয়ে এখন জাকিয়া বারী মমর ভাবনাটা কী?

জাকিয়া বারী মম: দ্যাখো, আমি অ্যাক্টর হইতে চাইছি। আমি জানি না এই অ্যাক্টর ব্যাপারটা কী? আমি জানি না অ্যাক্টিংটা কী? এত কিছুর পরও আমি বুঝি না, হোয়াট ইজ ইট? এত জানা-দেখার পরও। এত অ্যাফোর্ট থাকার পরেও। তো আমার কাছে মনে হয় যে, বিয়ন্ড সামথিং মাই আন্ডারস্ট্যান্ডিং, হোয়াট ইজ ইট? দিস ইজ লাভ।

আমার ভীষণ ভালো লাগে, আমি অভিনয় করতে চেষ্টা করি—এটা ভেবে। আমি ভীষণ ভালোবাসি এই কাজটাকে, এবং কাজটা করতেও পারি, দ্যাটস হোয়াই আই অ্যাম ফরচুনেট। মানে আমি কাজের সাথেই থাকতে চাই।

ইটস নট যে, আমি কোনো স্ট্র্যাটেজিক্যালি কিছু ফিল করে বললাম, ইটস নট দ্যাট।

এই যে দিলারা (জামান) মা, আমাদের দেশে তো উনিই সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ অভিনেত্রী। তিনি কীভাবে এত অ্যাফোর্ট দেন! কাজের প্রতি ওনার যে ডেডিকেশন, যে ভক্তি—এমন শিল্পী হতে পারলেই তো জীবনে অনেক বড় পাওয়া হয়ে যায়। শিল্পী হওয়ার যে চেষ্টা, এটা কিন্তু দারুণ ব্যাপার।

কাজ করতে চাইলে তো সারা জীবনই করা যায়, যে যেভাবে চায়। কিন্তু সেটাও তো নানা ফরম্যাটে নানা সময়ে বদল হয়। ইন্ডাস্ট্রিতে আমি অনেক ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। সবার প্রতিই আমার কৃতজ্ঞতা। ইটস লং টাইম। কোভিড আসার পর একটু থেমেছি। থামা যে জীবনে জরুরি, এটা অনুভব করেছি।

এখন কীভাবে সময় কাটছে তাহলে আপনার?

জাকিয়া বারী মম: এখন বরং পড়তে, নিজের সাথে থাকতে, দেখতে, এক্সারসাইজ করতেই আমার বেশি ভালো লাগছে। একটাই ব্যাপার, আমি যখন কাজ করতে গেছি, কাজের জায়গাটা অনেক বেশি নয়েজি মনে হয়েছে। আমি আসলে নেহাতই ভালোবেসে কাজটা করতে আসছিলাম। ভালোবেসে কাজ করতে করতে একটা লম্বা সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি কী কী শেখা যায়, লেখাপড়া করা যায়। সব মিলিয়ে আমার মনে হচ্ছে, আই ডোন্ট নো, হচ্ছে না আরকি! এটা এক ধরনের আমার না-পারাই। আমি পেরে উঠছি না। বাসায় বসে এই দুই বছরে টুকিটাকি লেখাপড়া, নিজের কিছু লেখা লিখতে ইচ্ছা করেছে। কিন্তু কোনো লেখাই শেষ করতে পারি না।

জাকিয়া বারী মম

কী কী লিখছেন? নিজের কথাই?

জাকিয়া বারী মম: নিজের কথা না। আমি একটা চরিত্র দাঁড় করেছিলাম রোদসী নামে। রোদসীর সঙ্গে বাংলাদেশের যেকোনো মেয়ে নিজেকে মেলাতে পারবে। খুবই সাধারণ একটা চরিত্র। ক্যারেক্টার সিম্পল কিন্তু মানসিকভাবে বা ও যে ধরনের বোধের মানুষ, সে সবকিছু খানিকটা অন্যভাবে দেখে।

এটা কি শুধু গল্প হয়েই থাকবে? নাকি এ গল্প নিয়ে নাটক-সিনেমা কিছু বানাবেন?

জাকিয়া বারী মম: না, না ভাই। ওই যে দেখো কী বিপদ! বাংলাদেশে যারা বানান, আমি তাঁদেরকে হাত জোড় করে স্যালুট করি। এ দেশে যারা ডিরেক্টর, ডিরেকশনের চেয়ে তাঁদেরকে অন্যান্য অনেক কিছু নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। সেগুলো ডিঙিয়ে তাঁর যে মূল নির্মাতা-সত্তা সেখানে পৌঁছতেই অনেক কষ্ট হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদা পারভীনের জন্মদিনে শিল্পকলায় বিশেষ আয়োজন

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ফরিদা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত
ফরিদা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত

শিষ্যদের মাঝে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। তাই লালনের গান শেখাতে গড়ে তোলেন অচিন পাখি সংগীত একাডেমি। মনের বাসনা ব্যক্ত করে ফরিদা পারভীন বলেছিলেন, ‘সাঁইজি যেমন তাঁর শিষ্যদের মাঝে বেঁচে আছেন, আমার মাঝে আমার গুরু বেঁচে আছেন, তেমনি আমার অচিন পাখির ছাত্রছাত্রীদের মাঝে আমি বেঁচে থাকতে চাই।’ আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর ফরিদা পারভীনের জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে তাঁর গড়া অচিন পাখি সংগীত একাডেমি।

আগামীকাল বুধবার বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে থাকবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। আমন্ত্রিত অতিথিরা কথায় কথায় তুলে ধরবেন শিল্পীর জীবনের নানা অধ্যায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানা এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিন। উদ্বোধন করবেন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। সভাপতিত্ব করবেন ফরিদা পারভীনের জীবনসঙ্গী ও বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম।

ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর, নাটোরে। পাঁচ বছর বয়সে মাগুরায় কমল চক্রবর্তীর কাছে গানের হাতেখড়ি ফরিদা পারভীনের। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। ক্যারিয়ারে নজরুলগীতি, দেশাত্মবোধকসহ নানা ধরনের গান করলেও তিনি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছেন লালনসংগীতে। সংগীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ফরিদা পারভীন পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩), জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কারসহ (২০০৮) অসংখ্য পুরস্কার।

এ বছর ১৩ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুভমিতা ও ঊষা উত্থুপের কণ্ঠে সাবরিনার গান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শুভমিতা, সাবরিনা রুবিন ও ঊষা উত্থুপ। ছবি: সংগৃহীত
শুভমিতা, সাবরিনা রুবিন ও ঊষা উত্থুপ। ছবি: সংগৃহীত

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনাম কুড়িয়েছেন লেখক ও গীতিকার ডা. সাবরিনা রুবিন। রাশিয়া, আমেরিকা, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গান। তাঁর লেখা নতুন দুই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের কণ্ঠশিল্পী শুভমিতা ও ঊষা উত্থুপ। শুভমিতা গেয়েছেন ‘এখানেই সব কিছু শেষ হোক’ শিরোনামের গান। সংগীত আয়োজন করেছেন কলকাতার দেব গৌতম। সম্প্রতি দেব গৌতমের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে গানটি। এ ছাড়া নতুন বছরের শুরুতে প্রকাশ পাবে সাবরিনার লেখা ঊষা উত্থুপের গাওয়া নতুন একটি গান।

সাবরিনা বলেন, ‘শুভমিতার গাওয়া গানটি নিয়ে ইতিমধ্যেই ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। নতুন বছরে আসছে আমার লেখা ও ঊষা উত্থুপের গাওয়া নতুন গান। আমার বিশ্বাস, এ গানটিও শ্রোতাদের মন জয় করবে।’

বাংলাদেশে সাবরিনার লেখা গান গেয়েছেন শুভ্র দেব, শান শায়খ, তাসনিম স্বর্ণাসহ অনেকে। ভারতের মালয়ালাম সিনেমায়ও কাজ করেছেন সাবরিনা। পাশাপাশি তামিল সিনেমায় বাংলা গীতিকথা লিখেছেন তিনি। তাঁর গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতের শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা, ঊষা উত্থুপ, দেব গৌতমসহ অনেকে।

সাহিত্য অঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাবরিনা রুবিন পেয়েছেন ইয়াসির আরাফাত ওয়ার্ল্ড পিস অ্যাওয়ার্ড, চেকভ ব্রোঞ্জ অনার, গুজরাট সাহিত্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও মোটিভেশনাল স্ট্রিপস অনার, মুনির মেজিয়েদ অ্যাওয়ার্ড ইন লিটারেচার, তাজাকিস্তানের সিপে অ্যাওয়ার্ড, রবীন্দ্রনাথ সম্মাননাসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা। আমাজন প্রকাশ করেছে তাঁর লেখা গায়ক শুভ্র দেবের বায়োগ্রাফি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন প্রজন্মের গল্পে নতুন ধারাবাহিক ‘পরম্পরা’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সংবাদ সম্মেলনে ‘পরম্পরা’র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। ছবি: সংগৃহীত
সংবাদ সম্মেলনে ‘পরম্পরা’র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। ছবি: সংগৃহীত

নতুন বছরের শুরুতে নতুন ধারাবাহিক নিয়ে আসছে দীপ্ত টিভি। তিন প্রজন্মের জীবনবোধ, মূল্যবোধ ও সম্পর্কের টানাপোড়েনকে কেন্দ্র করে নির্মিত ধারাবাহিকটির নাম ‘পরম্পরা’। পরিচালনা করেছেন আশিস রায়। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর, শতাব্দী ওয়াদুদ, সুষমা সরকার, শাফিউল রাজ, নূপুর আহসান, জান্নাতুল ফেরদৌস কাজল, কাজী রাজু, মিলি বাসার, সানজিদা মিলা, শানারেই দেবী শানু প্রমুখ। ৩ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহের শনি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন রাত ৯টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে ধারাবাহিকটি।

পরম্পরার চিত্রনাট্য লিখেছেন আফিফা মোহসিনা অরণি, সংলাপ রচনা করেছেন সরোয়ার সৈকত। গল্পে দেখা যাবে ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা নাহিয়ান দীর্ঘদিন পর ঢাকায় ফিরে এসে নিজেকে নতুন সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশে মানিয়ে নিতে হিমশিম খায়। তার আধুনিক জীবনযাপন ও চিন্তাভাবনার সঙ্গে যৌথ পরিবারের সদস্যদের ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গির দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একই ছাদের নিচে তিন প্রজন্মের ভালোবাসা, সংঘাত, মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা এবং সম্পর্কের গভীরতা ধীরে ধীরে গল্পকে নিয়ে যায় নানা আবেগী মোড়ে।

নতুন এই ধারাবাহিক নিয়ে গতকাল দীপ্ত টিভির প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন দীপ্ত টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফারুক, পরিচালক আশিস রায়, দীপ্ত টিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ পরম্পরার শিল্পী ও কলাকুশলীরা। সেখানে ধারাবাহিকটির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিরে দেখা /কনসার্টে অস্থিরতার বছর

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২
ঢাকার কনসার্টে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার কনসার্টে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সংগীতাঙ্গনে ২০২৫ সাল বিশেষ কোনো সুখবর বয়ে আনতে পারেনি। নতুন গান প্রকাশ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। নতুন গান প্রকাশ না করলেও বছরজুড়ে শিল্পীরা দর্শকদের কাছাকাছি থাকেন লাইভ কনসার্ট দিয়ে। এ বছর কনসার্ট নিয়েও ছিল অস্থিরতা। নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় একের পর এক কনসার্ট বাতিল হয়েছে।

ভিনদেশি সংস্কৃতি রুখে দিতে গত ১১ এপ্রিল চার বিভাগীয় শহরে স্বাধীনতা কনসার্টের আয়োজন করা হয়। প্রথমে কনসার্টের তারিখ এক দিন পেছানো হলেও পরবর্তী সময়ে পুরো আয়োজনই বাতিল করা হয়। ১১ এপ্রিল পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জাহিদের কনসার্ট আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। মেলোডি আনলিশড নামের এ কনসার্টে দেশের বেশ কয়েকজন শিল্পী ও ব্যান্ডের গাওয়ার কথা ছিল। এতে অংশ নিতে শিল্পী ঢাকায়ও এসেছিলেন। তবে অনুষ্ঠানের ঘণ্টাখানেক আগে আয়োজনটি বাতিল করা হয়।

ঢাকায় এসেও দর্শকদের গান শোনাতে পারেননি পাকিস্তানের আরেক সংগীতশিল্পী আলী আজমত। ‘লিজেন্ডস লাইভ ইন ঢাকা’ শীর্ষক এ কনসার্টে জেমসেরও গাওয়ার কথা ছিল। তবে ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্থগিত ও পরে বাতিল করা হয় আয়োজনটি। পাকিস্তানের জনপ্রিয় ব্যান্ড জালের কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল ২৮ নভেম্বর। ‘সাউন্ড অব সোল’ শিরোনামের এ কনসার্টে আরও পারফর্ম করার কথা ছিল দেশের দুই ব্যান্ড ওয়ারফেজ ও লেভেল ফাইভের। সেটিও বাতিল হয়ে যায়। ভারতীয় সংগীতশিল্পী অনুভ জৈনের কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল ১২ ডিসেম্বর। আয়োজনের সপ্তাহ দুয়েক আগে এটিও বাতিল হয়ে যায়। এর আগে বাতিল হয়েছে পাকিস্তানি ব্যান্ড কাভিশের কনসার্ট।

এ ছাড়া, ১৩ ডিসেম্বর মেইন স্টেজ আয়োজিত এক কনসার্টে গান শোনানোর কথা ছিল আতিফ আসলামের। তিনি ঢাকায়ও এসেছিলেন। প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় কনসার্টটি হয়নি। তার বদলে কয়েকটি প্রাইভেট কনসার্টে গান শুনিয়ে ঢাকা ছাড়েন আতিফ। তবে যে কনসার্ট বাতিলের খবর দেশ-বিদেশে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তৈরি করেছে, সেটা জেমসের কনসার্ট। গত শুক্রবার ফরিদপুর জেলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেখানে গাওয়ার কথা ছিল জেমসের। গান শোনাতে যথাসময়ে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। তবে বহিরাগত ব্যক্তিদের হামলা ও ইটবৃষ্টির মুখে কনসার্টটি বাতিল হয়ে যায়, শেষ পর্যন্ত গান না গেয়েই ফরিদপুর ছাড়েন জেমস।

দেশের কনসার্টে যখন অনিশ্চয়তা চলছিল, তখন শিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বিদেশে। যুক্তরাষ্ট্রে সংগীতসফরে গিয়েছিলেন জেমস, আসিফ আকবর, বাপ্পা মজুমদার, প্রতীক হাসান, প্রীতম হাসান, ব্যান্ড অর্থহীন ও মাইলস। অস্ট্রেলিয়ায় গান শুনিয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ ও তানযীর তুহীন। সিঙ্গাপুরে গাইতে গিয়েছিলেন কনা। আর্ক, শিরোনামহীন, ওয়ারফেজ, অ্যাশেজ, মিলাসহ একাধিক ব্যান্ড ও শিল্পী কনসার্ট করেছেন কানাডায়।

বছরজুড়ে যেসব গান নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ঈশান মজুমদার ও শুভেন্দু দাস শুভর ‘গুলবাহার’, কোনাল-নিলয়ের ‘ময়না’, পান্থ কানাইয়ের ‘সেই এক সময় ছিল’, সাইফ জোহানের ‘কিছু মানুষ মরে যায় পঁচিশে’, শিরোনামহীন ব্যান্ডের ‘এই অবেলায় ২’, ইমরানের ‘পারব না তোমাকে ছাড়তে’ ইত্যাদি। কোক স্টুডিও বাংলায় রুনা লায়লার গাওয়া ‘মাস্ত কালান্দার’, তানযীর তুহীনের ‘ক্যাফে’, হাবিবের ‘মহা জাদু’ এবং অঙ্কনের গাওয়া ‘লং ডিসট্যান্স লাভ’ উপভোগ করেছেন শ্রোতারা।

সিনেমায় এ বছর হাতে গোনা কয়েকটি গান আলোচিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তাণ্ডব সিনেমায় প্রীতম ও জেফারের গাওয়া ‘লিচুর বাগানে’, বরবাদ সিনেমায় প্রীতম ও দোলার ‘চাঁদমামা’, জ্বীন থ্রি সিনেমায় ইমরান ও কনার ‘কন্যা’। জংলি সিনেমার ‘ও বন্ধু গো শোনো’, দাগির ‘একটুখানি মন’ গান দুটিও প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া, হৃদয়ের কথা নাটকে হাবিব-ন্যান্‌সির গাওয়া ‘আমার দিনগুলো সব যায় হারিয়ে আঁধারে’, আশিকি নাটকে কনা-সজীবের গাওয়া ‘যদি মনটা চুরি করি’ এবং ‘গুলমোহর’ ওয়েব সিরিজে তানযীর তুহীনের গাওয়া ‘সুরের হাহাকার’ গানগুলো শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত