সহশিল্পীদের স্মৃতিচারণায় পাপিয়া সারোয়ার

বিনোদন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫: ৩৩
Thumbnail image
পাপিয়া সারোয়ার (১৯৫২-২০২৪)। ছবি: সংগৃহীত

চলে গেলেন গানের পাখি পাপিয়া সারোয়ার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে প্রয়াত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। তাঁর প্রয়াণে সংগীতাঙ্গনে নেমেছে শোকের ছায়া। শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, অদিতি মহসিন ও গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির।

খুরশীদ আলম। ছবি: সংগৃহীত
খুরশীদ আলম। ছবি: সংগৃহীত

পাপিয়া ছিলেন একজন গুণী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী

খুরশীদ আলম, সংগীতশিল্পী

পাপিয়া সারোয়ার ছিলেন একজন গুণী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। তাঁর গায়কি ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা। দর্শক সহজে তাঁর কণ্ঠ চিনতে পারতেন। তিনি ভারতের শান্তিনিকেতন থেকে রবীন্দ্রসংগীতের তালিম নিয়েছেন। বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীত ছড়িয়ে দিতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর গান শুনে রবীন্দ্রসংগীতের অনেক শ্রোতা তৈরি হয়েছে। নতুনেরাও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকাকালে একুশে পদক পেয়েছেন, বাংলা একাডেমি থেকে সম্মাননা পেয়েছেন। দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে রবীন্দ্রসংগীতের জন্য কোটি শ্রোতার ভালোবাসা পেয়েছেন পাপিয়া।

আধুনিক গানেও ছিল তাঁর সফল পদচারণ। তাঁর গাওয়া ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন’ গানটি ছিল সবার মুখে মুখে। এখনো সেই গানের জনপ্রিয়তা টের পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাঁর নামে ‘পাপিয়ারে পাপিয়া দুজনে মিলিয়া’ গানটি ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। এই গুণী শিল্পীর প্রয়াণে দেশের সংগীতাঙ্গনের বড় ক্ষতি হলো।

অদিতি মহসিন। ছবি: সংগৃহীত
অদিতি মহসিন। ছবি: সংগৃহীত

পাপিয়া সারোয়ারের মৃত্যু দেশের সংগীতাঙ্গনের বড় ক্ষতি

অদিতি মহসিন, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী

পাপিয়া সারোয়ারের গান টিভিতে দেখেই আমরা বড় হয়েছি। আমি যখন ভারতের শান্তিনিকেতনে পড়তে গেলাম, তখন তাঁকে কাছ থেকে দেখা। সেই সময় তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পাস করে চলে আসার পর দেশে গান করা শুরু করি, তখন তো অনেক অনেক স্মৃতি। একসঙ্গে অনুষ্ঠানে যাওয়াসহ অনেক স্মৃতি।

পাপিয়া সারোয়ারের বাড়িতে আমি মাঝে মাঝেই যেতাম। তিনি খুব স্নেহ করে, আদর করে কথা বলতেন। সেই সঙ্গে গান নিয়ে নানা কথা শেয়ার করতেন। তাঁর সঙ্গে স্মৃতি বলে শেষ করা যাবে না।

শিক্ষা-মননে পাপিয়া সারোয়ার ছিলেন সমৃদ্ধ একজন শিল্পী। স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম প্রজন্মের শিল্পী ছিলেন তিনি। এ দেশের সংগীতে সেই প্রজন্মের শিল্পীদের অনেক অবদান। ওনাদের গান শুনেই শ্রোতা তৈরি হয়েছে। তাঁদের অবদান চিরস্মরণীয়। পাপিয়া সারোয়ারের চলে যাওয়াটা দেশের সংগীতাঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

মনিরুজ্জামান মনির। ছবি: সংগৃহীত
মনিরুজ্জামান মনির। ছবি: সংগৃহীত

খুব ভয়ে ছিলাম, গানটি শুনে উনি কী মনে করেন

মনিরুজ্জামান মনির, গীতিকার

‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন’ গানটি বিটিভির জন্য করা হয়েছিল। সুরকার ছিলেন মনসুর আলী। পাপিয়া সারোয়ার তখন সদ্য শান্তিনিকেতন থেকে এসেছেন। একদিন বিটিভির জিএম আমাকে ডেকে বললেন, মনসুর আলীর সুরে দুটি আধুনিক গান করেন। পাপিয়া সারোয়ার গাইবেন। এরপর ‘নাই টেলিফোন’ ও ‘পাপিয়ারে পাপিয়া’ গান দুটি লিখি।

একটি মেয়ে গ্রামে থাকে, যেখানে বিদ্যুৎ নেই, পিয়ন নেই। তার বন্ধু শহরে থাকে। কিন্তু বন্ধুকে মনের ভাব জানানোর কোনো রাস্তা নাই তার কাছে। এ রকম একটা চিন্তা থেকেই নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন গানটি লেখা। মনসুর আলী বললেন, রেকর্ডিংয়ের সময় তুমিও থেকো। আমার একটা ভয় ছিল, যিনি শান্তিনিকেতন থেকে সদ্য এসেছেন এত ভারী ভারী কথার রবীন্দ্রসংগীত শিখে। আমারটা তো হালকা গান। উনি শুনে কী মনে করেন!

রেকর্ডিংয়ের সময় পাপিয়া সারোয়ার তাঁর স্বামীকে নিয়ে এলেন। মনসুর আলী ভাই আমাকে পাপিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মনসুর আলী ভাই তাঁকে বলেন, রবীন্দ্রসংগীত তো গাইবেই, একটু ব্যতিক্রমী দুটি গান করেছি। তুমি কি গাইবে? পাপিয়া সারোয়ার বললেন, শোনান। নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন শোনার পর উনি বললেন, অসুবিধা নাই। এই গানের দ্বিতীয় অন্তরায় ছিল ‘তার দেওয়া রাখি হইল অঙ্গেরও জ্বালা’। পাপিয়া সারোয়ার আমাকে বললেন, অঙ্গ শব্দটি পরিবর্তন করে দেন। তখন অঙ্গের পরিবর্তে ‘আমারও জ্বালা’ ব্যবহার হলো।

পাপিয়ারে পাপিয়া গানটি শুনে পাপিয়া সারোয়ার বুঝতে পারলেন উনাকে মিন করেই লিখেছি। রবিঠাকুরের ‘বনের পাখি, খাঁচার পাখি’ আর আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আমি আলপনা এঁকে যাই আলো থেকে’ গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পাপিয়ারে পাপিয়া গানটি লিখেছিলাম। আমি তাঁকে বললাম, আমার মনে হয়েছে, শিল্পীর নামে গান লিখলে শিল্পী যেমন অনুপ্রাণিত হন, তেমনি মানুষের কৌতূহল বাড়ে। শুনে তিনি কিছু বললেন না, শুধু হাসলেন। সে সময় টের পাইনি গান দুটি এত জনপ্রিয়তা পাবে।

এরপর ওনার সঙ্গে আর গান করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা হলে প্রায়ই বলতেন, যেখানেই যাই, সেখানেই রবীন্দ্রসংগীতের পাশাপাশি এই দুটি গান সবাই শুনতে চায়।

শুধু এই দুটি গান নয়, তাঁর কণ্ঠে অনেক রবীন্দ্রসংগীত জনপ্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে ‘না সজনী না’ রবীন্দ্রসংগীতটি। এই গানটি তাঁর কণ্ঠে খুব মানিয়েছে। অনেক গুণী শিল্পী ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুসংবাদ শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও তাঁর গান দিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত