Ajker Patrika

হ্যাপী আখান্দ্‌: বাংলা গানের খসে পড়া নক্ষত্র

গুঞ্জন রহমান
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ২৮
হ্যাপী আখান্দ্‌: বাংলা গানের খসে পড়া নক্ষত্র

হ্যাপী আখান্দ্‌ (জিয়া হাসান আখন্দ্‌ হ্যাপী, ১২ অক্টোবর ১৯৬০-২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৭) নামটা আমি প্রথম শুনি ফিডব্যাকের ‘মেলা’ অ্যালবামে। সেই অ্যালবামে পালকি শিরোনামে একটা গান আছে, যেটা আসলে হ্যাপী আখান্দ্‌কে নিয়ে লেখা। গানের শুরুতে ছোট্ট একটি সংলাপ আছে, যা থেকে জানা যায়, হ্যাপী আখান্দের অকালপ্রয়াণের কষ্ট থেকেই তাঁর সহকর্মী, গুণমুগ্ধ বন্ধুরা এই গান করছেন তাঁকে উৎসর্গ করে। ‘...শিল্পীর মৃত্যু নেই। আমাদের বিশ্বাস হ্যাপী আখান্দের মৃত্যু নেই। অন্য সুরের ভুবনে বর বেশে এ যেন হ্যাপীর পালকি চড়ে মহাপ্রস্থান! কানে এখনো বাজে, তার শেষ যাওয়ার সুর...’—এভাবে হ্যাপীর কথা বলেছিলেন ফিডব্যাক ব্যান্ডে তাঁর সহকর্মী বন্ধুরা। 

নামটা দেরিতে শুনলেও তাঁর গান অনেক আগেই শোনা হয়ে গিয়েছিল সিনেমার বদৌলতে। আমার আব্বু-আম্মু সিনেমাপাগল মানুষ ছিলেন। নতুন সিনেমা এলেই সিনেমা হলে গিয়ে দেখতেন তাঁরা। ছোটকালে বাবা-মায়ের সঙ্গে আমিও সাথ ধরতাম। তখনই প্রথম ‘ঘুড্ডি’ ছবিতে শুনি ‘কে বাঁশি বাজায় রে’। কিন্তু, সেই সময়ের যা রীতি, নায়ক-নায়িকা আর প্রধান চরিত্রগুলো ছাড়া বাকি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের খোঁজ কে রাখে? তাই নায়িকার ভাইয়ের চরিত্র রূপায়ণকারী, যে গিটার বাজিয়ে বোনকে গান শোনাতে শোনাতে গেয়ে ফেলে এক কালজয়ী গানের মুখটুকু, ওই শিল্পীই যে তুমুল আলোচিত হ্যাপী আখান্দ্‌, তা তখন কীভাবে জানব? খুব সম্ভবত তখনো আমি সেভাবে পড়তে শিখিনি। তাই সিনেমার স্ক্রিনে হ্যাপী আখান্দের নাম পড়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। আর সিনেমায় দেখারও আগে, ওই সিনেমারই আরেক সুপার হিট গান ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ পিকনিক সং হিসেবে সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল। তখন ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ ছাড়া বন্ধুদের আড্ডা অকল্পনীয়। ‘কে বাঁশি বাজায় রে’ হ্যাপীর নিজেরই লেখা ও সুর করা। ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ অবশ্য তাঁর লেখা বা সুর করা নয়, এর গীতিকার এস এম হেদায়েত এবং সুরকার লাকী আখান্দ। কিন্তু গানটা নির্মিত হয় হ্যাপী আখান্দের সংগীতায়োজনে। গাওয়ার সময় হ্যাপী ও লাকী দুই ভাই-ই গেয়েছেন একসঙ্গে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালে এই গান তাঁর সংগীত পরিচালনায় পরিবেশিত হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে। বিটিভির তৎকালীন প্রযোজক ও পরবর্তীতে পরিচালক সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকি সেই পরিবেশনা শুনে মুগ্ধ হন। তাই যখন তিনি ‘ঘুড্ডি’ ছবিটি তৈরি করতে শুরু করেন, ছবির সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব দেন লাকী আখান্দকে; অবশ্যই ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটিসহ। 

হ্যাপীর রেকর্ড করা গানের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশি নয়। মাত্র ২৭ বছরের ক্যারিয়ারে পাঁচ-ছয়টি গানের বেশি রেকর্ড তিনি করতে পারেননি। পারার কথাও নয়। এখনকার মতো তখন গান প্রকাশের এত মাধ্যম যেমন ছিল না, তেমনি ছিল না রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থাও। হাতে গোনা অল্প কয়েকটি স্টুডিও, যেখানে সিনেমা, টিভি, রেডিও, রেকর্ড—সব মাধ্যমের জন্য রেকর্ডিং চলছে অবিরাম। এত এত গুণী মিউজিশিয়ানের মাঝে সময় বের করে নিজেদের একটা শিফট নিতে পারা চাট্টিখানি কথা নয়। এই ভিড় ঠেলে কোনো শিল্পীরই পর্যাপ্ত গান তখন রেকর্ড করা যেত না। 

লাকী আখান্দবড় ভাই লাকী তখন পুরোদস্তুর সংগীত পরিচালক। তিনি বিটিভির নিয়মিত তালিকাভুক্ত শিল্পী ও সংগীত পরিচালক, সিনেমাতেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, রেডিও তো আছেই। নিজের গান করার চেয়ে লাকী বরং অন্য শিল্পীদের জন্যই গান করেন বেশি। বড় ভাইকে দেখে সেই চর্চাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেলেন হ্যাপী। তিনিও নিজে গাওয়ার চেয়ে অন্যদের গান কম্পোজ করতেই বেশি মনোযোগী হলেন। তাঁর সংগীতায়োজনে সবচেয়ে বেশি গান করেছেন ফিরোজ সাঁই। সাঁইজির বিখ্যাত মাইজভান্ডারি ক্ল্যাসিক গান—‘ইশকুল খুইলাছে রে মওলা’র সংগীতায়োজন হ্যাপীর করা। ফেরদৌস ওয়াহিদের বিখ্যাত ‘এমন একটা মা দে না’ গানেরও সংগীত পরিচালক হ্যাপী আখান্দ। এভাবে অনেক শিল্পীর অনেক বিখ্যাত গান তিনি করেছেন। আরেকটি গানের কথা মনে পড়ছে, সোলস ব্যান্ডের তৎকালীন লিড ভোকালিস্ট কুমার বিশ্বজিতের জন্য তিনি কম্পোজ করেছিলেন ‘তোকে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’ গানটি। পরে অবশ্য বিশ্বজিৎ সেই গানটি তাঁর নিজের সলো অ্যালবামে প্রকাশ করেন। সোলসও বহুদিন গানটি স্টেজে পারফর্ম করেছে। 

হ্যাপীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছিলেন তাঁর সমবয়সী ব্যান্ড তারকা মাকসুদুল হক, যিনি শুরুতে বলা পালকি গানটি সৃষ্টি করেছিলেন হ্যাপীর স্মৃতির উদ্দেশে। ইউটিউব আবিষ্কারেরও অনেক আগে একটি ভিডিও দেখেছিলাম এক সাইটে, এখন সেটি আর খুঁজে পেলাম না কোথাও। সেই ভিডিওতে মাকসুদ হ্যাপীর ইন্টারকনে পিয়ানো বাজানোর ঘটনা স্মরণ করেন। হোটেল ইন্টারকনের অধুনালুপ্ত চাম্বেলি হাউসে একটি গ্র্যান্ড পিয়ানো ছিল, যা সাধারণত ইন্টারকনের কমিশন্ড মিউজিশিয়ান এবং বিদেশি অতিথিদের কেউ বাজাতে পারতেন, সর্বসাধারণের সেই পিয়ানো বাজানোর অনুমতি নেই। 

ফিডব্যাক তখন ইন্টারকনের রেসিডেন্ট ব্যান্ড হিসেবে নিয়মিত বাজায়। হ্যাপীর প্রতিষ্ঠা করা মাইলস ব্যান্ডও এনলিস্ট হয়েছে। তাই বলে সেই হাইলি ডিস্টিংগুইশড গ্র্যান্ড পিয়ানোতে হাত দেওয়ার অনুমতি এঁদের কারও নেই। কিন্তু সেটা মানতে পারতেন না সদ্য কৈশোর পেরোনো হ্যাপী। প্রায়ই তিনি বলতেন, একদিন আমি ওই পিয়ানো বাজাবই। এবং সত্যিই তিনি একদিন বসে গেলেন কাছেপিঠে কেউ নেই দেখে। মাকসুদ বলছেন, ‘আমি তাকে বাধা দেওয়ার আগেই সে এগিয়ে গেল এবং বসে পড়ল পিয়ানোর সামনে। স্ট্যান্ডে একটা খাতা ছিল, স্টাফ নোটেশন লেখা। সেটা খুলেই হ্যাপী বাজাতে শুরু করল।’ এর পর যা হলো, তা অভাবনীয়। প্রথম কিছুক্ষণ কেউ খেয়াল করল না, কে বাজাচ্ছে, কারণ এতটাই নিখুঁত ছিল সে বাজনা যে, কারও সন্দেহ হয়নি যে, নিয়মিত পিয়ানো বাদকের বাইরে অন্য কেউ বাজাচ্ছে। কিন্তু একটু পরই যখন বাজনা শুনে লোকজন জড়ো হতে শুরু করল, তখন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ল। কিন্তু তারা কেউ হ্যাপীকে থামাতে গেলেন না। কারণ, ততক্ষণে সমঝদার শ্রোতারা তন্ময় হয়ে গেছেন হ্যাপির বাদনে। বয়স্ক এক বিদেশি ভদ্রলোক মাকসুদের কাছে জানতে চাইলেন, ‘যে ছেলেটি বাজাচ্ছে, তুমি কি তাকে চেনো?’ মাকসুদ ‘হ্যাঁ’ বলতেই, তিনি বললেন, ‘অনেক বছরের সাধনা ছাড়া গ্র্যান্ড পিয়ানোর রিডে এভাবে আঙুল চালানো যায় না।’ মাকসুদ তাঁকে বললেন যে, ‘ওর নাম হ্যাপী এবং ও আজই প্রথম গ্র্যান্ড পিয়ানোতে হাত দিল। এর আগে সে কিবোর্ড বাজিয়েছে। কিন্তু অরিজিনাল পিয়ানো বলতে যা বোঝায়, মানে এখন যেটা বাজাচ্ছে, সেটাতে হাত দেওয়ার সুযোগ তার কোনো দিন হয়নি!’ বলাই বাহুল্য, সেই বিদেশি বিশ্বাস করলেন না। কারণ, স্টাফ নোটেশন দেখে দেখে হ্যাপী তাঁর সুনিপুণ হাতে বাজাচ্ছিলেন কোনো কালজয়ী শিল্পীর অমর সৃষ্টি (মাকসুদ বলেছিলেন সেটি কোনো বিখ্যাত সুরস্রষ্টার সৃষ্টিকর্ম, এত দিন পর আমার এখন তা মনে পড়ছে না)। 

বাংলা গানের অসামান্য এই আখান্দ ভ্রাতৃদ্বয়ের কাছ থেকে পাওয়ার কথা ছিল আরও অনেক কিছুহ্যাপী মাত্র ১২ বছর বয়সে যোগ দেন ‘উইন্ডি সাইড অব কেয়ার’ নামক বাংলাদেশের প্রথম ব্যান্ডে। এই ব্যান্ড সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তান আমলে, পাকিস্তানিদেরই হাতে। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে সেই ব্যান্ডের বাংলাদেশি সদস্যদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাকে আবারও গড়ে তোলেন হ্যাপী। সেই সময়ে বড় ভাই লাকীর সঙ্গে কলকাতার এইচএমভি স্টুডিওতে রেকর্ডিংয়ে অংশ নেন হ্যাপী। মাত্র ১২ বছর বয়সে। তিনি সেখানে তবলা বাজিয়েছিলেন। তবলার শুধু বাঁয়া বা ডুগি ব্যবহার করে তিনি ড্রামবিট দিচ্ছিলেন, যার অভিনব কায়দায় অবাক হয়ে রেকর্ডিং চলার সময়েই রেকর্ডিং রুমে ঢুকে পড়েছিলেন বিখ্যাত সংগীত পরিচালক কলিম শরাফিও। রেকর্ডিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে শুনেছিলেন তাঁর বাজানো। এর কিছুদিন পর লাকী আবারও কলকাতা গেলে হ্যাপীর কণ্ঠে রেকর্ড করা এবং তাঁর সংগীতায়োজনে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটির রেকর্ড নিয়ে যান। সেই রেকর্ড বাজানো হয় বিখ্যাত শিল্পী বনশ্রী সেনগুপ্তার বাসায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত শিল্পী মান্না দে এবং সংগীত পরিচালক আর ডি বর্মণ। তাঁরা মুগ্ধ হন এইটুকু ছেলের এত পরিণত সৃষ্টিকর্ম শুনে। তাঁরা আমন্ত্রণ জানান হ্যাপীকে কলকাতায় বাজানোর জন্য। হ্যাপী কলকাতা যান ১৯৭৫ সালে, বীরভূমের দুর্গাপুরে কনসার্টে অংশ নেন, যে কনসার্টের মূল আকর্ষণ ছিলেন আশা ভোসলে এবং আর ডি বর্মণ। তাঁদের উপস্থিতিতে মঞ্চে উঠে হ্যাপী গেয়ে শোনান টানা ১১টি গান। আশা ভোসলের গান শুনতে আসা দর্শক বিমোহিত হয়ে শোনেন হ্যাপীর গান। পরে স্টেজে উঠে আশা ও আর ডি বর্মণ আশীর্বাদ করেন ছোট্ট হ্যাপীকে। আর হ্যাপী পেয়ে যান তাঁর এক অন্ধ ভক্তকে, যিনি পরে বিখ্যাত হন অনেক সাড়া জাগানো সব অ্যালবামের সংগীতায়োজন করে; নাম মধু মুখোপাধ্যায়। হ্যাপী আখন্দের এই ছাত্রের কম্পোজিশনেই প্রকাশ পায় সুমন চট্টোপাধ্যায় ও নচিকেতার প্রথম দিককার সব অ্যালবাম। 

বাংলাদেশের পপ-রক ঘরানার পাশ্চাত্য সংগীতের সবচেয়ে প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন হ্যাপী আখান্দ্‌। তাঁর বড় ভাই লাকী আখান্দ শুধু নয়, সমসাময়িক সব শিল্পীই দাবি করেন, তিনি আসলে সংগীতের একজন প্রডিজি ছিলেন। সময়ের অনেক আগে জন্মে যাওয়া অসামান্য এক প্রতিভা, যার বিকাশের উপযুক্ত সময়টা আসার আগেই তাঁকে চলে যেতে হয় অন্য সুরের ভুবনে। হ্যাপীর অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারেননি লাকী। দিনের পর দিন তিনি সেই শোকে মুহ্যমান থেকেছেন, দূরে থেকেছেন সংগীত থেকে। এও আমাদের বাংলা গানের আরেক ক্ষতি। হ্যাপীর চলে যাওয়ায় আমরা হ্যাপীর সৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়েছি যেমন, তেমনি বঞ্চিত হয়েছি লাকীর সৃষ্টি থেকেও। বাংলা গানের অসামান্য এই আখান্দ ভ্রাতৃদ্বয় যদি পূর্ণ আয়ুষ্কালের শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করে যেতে পারতেন, নিঃসন্দেহে আমাদের গান আরও অনেক অনেক সমৃদ্ধ হতো। 

আজ ২৮ ডিসেম্বর হ্যাপী আখান্দের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। যেখানেই থাকুন তিনি, ভালো থাকুন, শান্তিতে থাকুন। তাঁর সুরেলা স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৩
২০০৪ সালের ১৯ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার হাত থেকে নতুন কুঁড়ি ২০০৩-এর দেশাত্মবোধক গানের প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করছেন পুতুল। ছবি: সংগৃহীত
২০০৪ সালের ১৯ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার হাত থেকে নতুন কুঁড়ি ২০০৩-এর দেশাত্মবোধক গানের প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করছেন পুতুল। ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও। শোক জানিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি ভাগ করেছেন সংগীতশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল।

খালেদা জিয়াকে প্রথমবার দেখার স্মৃতি জানিয়ে ফেসবুকে পুতুল লেখেন, ‘জীবনে প্রথম তাঁকে দেখেছিলাম শৈশবে; ছুঁয়েছিলাম তাঁর তুলতুলে হাত। কী অভূতপূর্ব সেই অনুভূতি! বিজয়ী হয়ে যত না আনন্দ হয়েছিল, তার চাইতে কোনো অংশে কম ছিল না তাঁকে ছুঁতে পারার আনন্দ। পুরস্কার নিতে নিতে তাকিয়েছিলাম তাঁর চোখ দুটোর দিকে। মনে হয়েছিল এক মোম দিয়ে গড়া মানবী আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছেন। ধূসর চুল আর শুভ্র শাড়িতে মনে হয়েছিল রাষ্ট্রপ্রধান হতে হলে বোধ হয় এতটাই আভিজাত্য নিজের ভেতর ধারণ করতে হয়।’

বড় হওয়ার পার খালেদা জিয়ার সামনে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে পুতুলের। সেই স্মৃতির কথা জানিয়ে পুতুল লেখেন, ‘বড় হওয়ার পর আবার গান গেয়েছি তাঁর সামনে। তত দিনে সংগীতাঙ্গনে পেশাদার শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি। তিনি মঞ্চে বসে, তার ঠিক কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে একই মঞ্চে গাইছি। তিনি আদর করেছিলেন সেদিন আমার পরিবেশনা শেষে। বুঝেছিলাম তিনি একজন সংস্কৃতিপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী।’

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পুতুল লেখেন, ‘একটা অধ্যায়ের শেষ হলো। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ওপারে চলে গেছেন, যিনি এ দেশের লাখো তরুণীকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সাধারণ একজন গৃহবধূ হয়েও আত্মবিশ্বাসের জোরে অসাধারণ হয়ে ওঠা যায়। শুধু অসাধারণ নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। জন্ম থেকে রাজনীতির কেবল দীর্ঘ প্রেক্ষাপট থাকলেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়, এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে নিজের প্রজ্ঞা আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে তিনবার তিনি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভালো থাকবেন মাননীয়া। ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে...।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন: জয়া আহসান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৫
খালেদা জিয়া ও জয়া আহসান। ছবি: সংগৃহীত
খালেদা জিয়া ও জয়া আহসান। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন।

ফেসবুকে জয়া আহসান লেখেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন। সামনে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। তাঁর উপস্থিতির মূল্যই ছিল অসামান্য।’

জয়া আরও লেখেন, ‘রাজনীতিতে মত-পথের বিরোধ থাকবে। কিন্তু সামরিক শাসনবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম জিয়া ছিলেন প্রধান একটি চরিত্র, সাহসে ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল। তাঁর সঙ্গে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর আত্মা চিরপ্রশান্তি লাভ করুক।’

গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। আজ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টার মারা যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোবিজ তারকাদের শোক

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শাকিব, অপু বিশ্বাস ও জেমস। ছবি: সংগৃহীত
শাকিব, অপু বিশ্বাস ও জেমস। ছবি: সংগৃহীত

আজ ৩০ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও।

ফেসবুকে ব্যান্ড তারকা নগরবাউল জেমস লেখেন, ‘শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকামে অধিষ্ঠিত করেন—আমিন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’

শাকিব খান লেখেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’

জয়া আহসান লেখেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন। সামনে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। তাঁর উপস্থিতির মূল্যই ছিল অসামান্য। রাজনীতিতে মত-পথের বিরোধ থাকবে। কিন্তু সামরিক শাসনবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধান একটি চরিত্র, সাহসে ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল। তাঁর সঙ্গে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর আত্মা চিরপ্রশান্তি লাভ করুক।’

অপু বিশ্বাস লেখেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই চিরবিদায় যেন মহাকালের সাক্ষী হয়ে রইল। একজন মহীয়সী নারীর প্রস্থান যেন যুগে যুগে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে লেখা থাকবে। বিনম্র শ্রদ্ধা।’

শবনম বুবলী লেখেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর বিদেহী আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক। আমিন।’

সিয়াম আহমেদ লেখেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

নুসরাত ফারিয়া লেখেন, ‘আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।’

নির্মাতা আশফাক নিপুন লেখেন, ‘আল্লাহ আপনাকে জান্নাত নসিব করুন। আপনি ছিলেন ধৈর্য, আভিজাত্য এবং হার না মানার এক অনন্য প্রতীক; এমনকি প্রতিপক্ষের অমানবিক আচরণের মুখেও আপনি দমে যাননি। এই জাতি আপনাকে সব সময় গর্বের সঙ্গে মনে রাখবে।’

অনেক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন খালেদা জিয়া। ভুগছিলেন শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায়। গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ছিলেন চিকিৎসাধীন। সেখানেই মারা যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদা পারভীনের জন্মদিনে শিল্পকলায় বিশেষ আয়োজন

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ফরিদা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত
ফরিদা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত

শিষ্যদের মাঝে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। তাই লালনের গান শেখাতে গড়ে তোলেন অচিন পাখি সংগীত একাডেমি। মনের বাসনা ব্যক্ত করে ফরিদা পারভীন বলেছিলেন, ‘সাঁইজি যেমন তাঁর শিষ্যদের মাঝে বেঁচে আছেন, আমার মাঝে আমার গুরু বেঁচে আছেন, তেমনি আমার অচিন পাখির ছাত্রছাত্রীদের মাঝে আমি বেঁচে থাকতে চাই।’ আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর ফরিদা পারভীনের জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে তাঁর গড়া অচিন পাখি সংগীত একাডেমি।

আগামীকাল বুধবার বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে থাকবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। আমন্ত্রিত অতিথিরা কথায় কথায় তুলে ধরবেন শিল্পীর জীবনের নানা অধ্যায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানা এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিন। উদ্বোধন করবেন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। সভাপতিত্ব করবেন ফরিদা পারভীনের জীবনসঙ্গী ও বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম।

ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর, নাটোরে। পাঁচ বছর বয়সে মাগুরায় কমল চক্রবর্তীর কাছে গানের হাতেখড়ি ফরিদা পারভীনের। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। ক্যারিয়ারে নজরুলগীতি, দেশাত্মবোধকসহ নানা ধরনের গান করলেও তিনি মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছেন লালনসংগীতে। সংগীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ফরিদা পারভীন পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩), জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কারসহ (২০০৮) অসংখ্য পুরস্কার।

এ বছর ১৩ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত