Ajker Patrika

যেসব ছবির উপজীব্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড

মীর রাকিব হাসান
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২২, ১২: ০১
যেসব ছবির উপজীব্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড

গুলিবিদ্ধ জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন। এই খবর এখন পৌঁছে গেছে বিশ্বের আনাচে–কানাচে। শুক্রবার জাপানের নারা শহরে বক্তব্য দেওয়ার সময় পেছন থেকে গুলি করা হয় ৬৭ বছর বয়সি শিনজো আবেকে। তিনি তখন একটি রেলস্টেশনের বাইরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ ঘটনায় পুলিশ এক ব্যক্তিকে আটকও করেছে।

দেশের ক্ষমতাসীন বা একদা ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের হত্যার ঘটনা এমন আরও আছে। সেসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে একাধিক চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আসুন, এমনই কিছু আলোচিত সিনেমা সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক—

মাদ্রাজ ক্যাফে (২০১৩)
পরিচালক: সুজিত সরকার
অভিনয়: জন আব্রাহাম, নারগিস ফাখরি, সিদ্ধার্থ বসু, প্রকাশ বেলাওয়াদি

‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ সিনেমায় জন আব্রাহাম। ভারতের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ১৯৯১ সালের ২১ মে এক আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন। চেন্নাই (তদনীন্তন মাদ্রাজ) শহর থেকে ৩০ মাইল দূরে শ্রীপেরামবুদুর শহরে রাজীব গান্ধীর শেষ জনসভাটির আয়োজন করা হয়েছিল। এই জনসভায় তিনি তামিলনাড়ুর শ্রীপেরামবুদুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী শ্রীমতী মারাগতাম চন্দ্রশেখরের সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানেই আত্মঘাতী বোমার হামলায় নিহত হন রাজীব।

এই হত্যাকাণ্ডের ২৩ বছর পর বলিউডের ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ সিনেমাতে উঠে আসে অন্তরালের নানা কাহিনী। ভারতের একজন প্রধানমন্ত্রীকে আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে মেরে ফেলার মতো এত বিধ্বংসী পরিকল্পনা ঠিক কীভাবে সম্পন্ন হয়েছিল, তা এই ছবিতে উঠে আসে কিছুটা। এই পরিকল্পনার নেপথ্যে ছিল গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দাপুটে শ্রীলংকান বিদ্রোহী গোষ্ঠী এলটিটিই (লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল এলম) বা তামিল টাইগার্স। লন্ডনের মাদ্রাজ ক্যাফেতে কিছু ব্যবসায়ী হাত মেলায় তামিল টাইগারের সাথে এবং অস্ত্র দিতে থাকে তামিলদের। ভারতীয় সেনাবাহিনী ওই সময় লাগাতার আক্রমণ চালাচ্ছিল তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে। তার প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া হয় শ্রীলংকার জাফনা থেকে ভারতে সুইসাইড স্কোয়াড পাঠানোর পরিকল্পনা।

‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ সিনেমায় নারগিস ফাখরি। একজন গুপ্তচরের ব্যক্তিগত জীবনকে অবলম্বন করে এগিয়ে চলে ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’ ছবির কাহিনী। এই গুপ্তচরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জন আব্রাহাম। সিনেমাটি জন আব্রাহামের ক্যারিয়ারের সেরা কাজ। সাংবাদিক চরিত্রে আছেন নারগিস ফাখরি।  সিনেমাটোগ্রাফি, ন্যারেটিভ স্টোরি টেলিং, ভিজুয়াল, এ্যাওয়ার্ড উইনিং অডিওগ্রাফী, চোখের পলক ফেলার সুযোগ নেই। সিনেমায় অনেকগুলো চরিত্র থাকলেও প্রত্যেকে সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। প্রত্যেকেই সূক্ষ্ম অভিনয়দক্ষতা দেখিয়েছেন। বলিউডের নাচ-গান-প্রেম এসব থেকে ভিন্ন এই সিনেমা। কাহিনীর সেন্সিটিভিটির কারণে অনেকেই এই সিনেমা প্রযোজনা করতে রাজি হননি, পরে জন আব্রাহাম নিজেই সিনেমাটি প্রযোজনার সিদ্ধান্ত নেন। সুজিত সরকার পরিচালনায় মুন্সিয়ানার ছাপ দেখিয়েছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতার দৃশ্যগুলো ক‍্যামেরার লেন্সের পর্দায় বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কালার গ্রেডিং এবং অ্যাকশন দৃশ্যগুলো বেশ বাস্তবসম্মত ছিলো। ১৩০ মিনিটের এই সিনেমায় একঘেয়েমিতা আসার কোনো সুযোগ নেই। যত সময় এগিয়ে যাবে টানটান উত্তেজনা অনুভব করবেন। সিনেমাটি দেখলে নতুন করে জানার আগ্রহ হবে রাজীব গান্ধি হত্যার কৌশল, তামিল টাইগারদের লড়াই, ভারতের জড়িয়ে যাওয়া এই যুদ্ধ এবং যুদ্ধ ছেড়ে চলে আসার কারন, ইন্টেলিজেন্স দের কোড/ডিকোড আর স্পাইদের খবর সংগ্রহের কৌশল, তামিল টাইগার প্রভাকরণের নেতৃত্বগুণ।

জেএফকে (১৯৯১)
পরিচালক: অলিভার স্টোন
অভিনয়: কেভিন কস্টনার, কেভিন বেকন

জেএফকে সিনেমায় কেভিন কস্টনার।ড্রামা, থ্রিলার কিংবা ইতিহাস- তিন জনরা নিয়েই এই সিনেমা। আমেরিকার ইতিহাসের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এফ কেনেডি। ধনী পরিবারে বড় হওয়া হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট কেনেডি হয়ে ওঠেন একজন সেলিব্রিটি। ১৯৬০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমবারের মত টিভিতে প্রচারিত হয় প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থীদের ডিবেট। সেই নির্বাচনেই সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে হারিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট হন। নানা কারণে তিনি বেশ আলোচিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট কেনেডি খুব বেশি দিন কিন্তু প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। প্রেসিডেন্সির ৩ বছর পূর্তির আগেই তাকে হত্যা করা হয়। তাঁর ছোট ভাই ববিও একই পরিণতির শিকার হন ১৯৬৮ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ডেমোক্রেটিক প্রার্থী নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে।

‘কেনেডি কার্স’ বলে একটা কথা প্রচলিত ছিল সেসময়। কারণ ওই পরিবারের অনেকেই অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরন করেছেন। কেনেডির হত্যা নিয়ে রয়েছে বেশ ধোঁয়াশা এবং তদন্তেও ছিল অনেক অসচ্ছ্বতা। আর সেই রহস্যই উদ্ঘাটনে নামেন নিউ অরলিন্সের ডিস্ট্রিক অ্যাটর্নি জিম গ্যারিসন।

প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যকাণ্ডের আগ মুহুর্ত। ‘জেএফকে’ ছবিটির প্লট শুরু হয় ১৯৬৬ সালের প্রেক্ষাপটে। তখন লুইজিয়ানা রাজ্যের নিউ অরলিনসের অ্যাটর্নি জিম গ্যরিসন এই হত্যার পেছনে সরকারি, সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর জড়িত থাকার বেশ কিছু তথ্য পেতে শুরু করেছিলেন। জিম টিভিতে লাইভ এই হত্যাকাণ্ড দেখছিলেন। একটা সময় এই হত্যাকাণ্ডের রায়ের আর কোন অগ্রগতিই হয় না কারণ যে হত্যাকারি তাকেই মেরে ফেলা হয়েছে। তিন বছর পরের কথা। আমেরিকা আক্রমণ করেছে ভিয়েতনামকে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ তুঙ্গে। জিম আবারো কেনেডির হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত পড়ালেখা করতে থাকে। হত্যাকারী অসওয়াল্ড এর স্বীকারোক্তির ডকুমেন্ট খুঁজে পাচ্ছিলো না কারণ তাঁর কোন রেকর্ডই নেই। এরপর আরো জানতে গিয়ে সে আবিষ্কার করলো কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমেরিকার জনগণকে অন্ধকারেই রেখেছে সরকার। সে আবারো সেই কেসকে নিয়ে উঠে পড়ে। সিনেমায় সেই গল্পটিই অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

সেরা অভিনেতাদের নাম জিজ্ঞেস করলে কেউ হয়ত কেভিন কস্টনারের নাম উল্লেখ করবেন না। কিন্তু এই সিনেমায় তিনি ইতিহাস সৃষ্টিকারী অভিনয়শৈলী দেখিয়েছেন। পরিচালক অলিভার স্টোনের মাস্টারপিস বলা হয় এই সিনেমাকে। তিনবার অস্কার বিজয়ী পরিচালক অলিভার স্টোন। মুক্তির আগে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সকল শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস সদস্যদের দেখানো হয়। মুক্তির পর ঝড় তুলে। ২ অস্কার ঘরে তুলে নেয় এই সিনেমা। আর পরিচালক অলিভার যখন জিমের বই পড়ে (সেই এটর্নি জেনারেলের এই কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে লেখা বই), সাথে সাথেই সিনেমা বানানোর রাইট কিনে নেয় নিজের টাকায়! যথারীতি পরিচালনায় কারিশমা দেখিয়েছেন এই লিজেন্ডারি পরিচালক। আর জিমের ভুমিকায় কেভিন কস্টনার অসাধারণ অভিনয় করেছেন। 

সাধারনত ইতিহাস নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র কিছুটা ধীরগতির হয়। এই পলিটিক্যাল থ্রিলারটি সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। একই সঙ্গে ইতিহাস জানার এবং থ্রিলার দেখার এক অনন্য অভিজ্ঞতা হবে ‘জেএফকে’–তে।

দ্য ম্যান স্ট্যান্ডিং নেক্সট (২০২০)
পরিচালনা: উ মিন-হো
অভিনয়: লি বাইং-হুন, লি সুং-মিন, কোয়াক ডো-জয়, লি হি-জুন

দ্য ম্যান স্ট্যান্ডিং নেক্সট সিনেমার কলাকুশলীরা। দক্ষিণ কোরিয়ার স্বৈরশাসক ছিলেন পার্ক চং হে। দেশটিতে টানা ১৮ বছর ধরে একনায়ক থাকা প্রেসিডেন্ট পার্ক খুন হন ১৯৭৯ সালে। আর খুনটা করেছিলেন কোরিয়ান সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (কেসিআইএ) পরিচালক কিম গিউ পায়োং। অথচ কোরীয় বিপ্লবে দুজনে একসাথে লড়েছিলেন!

১৯৭০ সালের ২৬ অক্টোবর রাতে কেসিআইএ প্রধান ও তার দুই সহযোগী মিলে প্রেসিডেন্ট পার্ককে খুন করার ৪০ দিন আগে কি কি ঘটেছিল তা তুলে ধরা হয়েছে ‘দ্য ম্যান স্টান্ডিং নেক্সট’ নামক ছবিতে। দু বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার বক্স অফিস কাঁপিয়েছিল সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমা। 

‘দ্য ম্যান স্ট্যান্ডিং নেক্সট’ সিনেমায় লি বাইং-হুন।কোরিয়ান সিনেমায় মারামারি, গোলাগুলি দেখে যারা অভ্যস্থ, তারা নতুন স্বাদ পাবেন এই ছবিটিতে। কেন ওই ঘটনা ঘটেছিল? ঘটনার পেছনে ব্যক্তি স্বার্থ ছিল নাকি দেশের স্বার্থ? এ ধরনের প্রশ্নগুলোর উত্তর সম্পর্কে কিছুটা হলে ধারণা মেলে এই ছবিটিতে। 

এ চলচ্চিত্রে অভিনয়ে ছিলেন কোরিয়ার বাঘা বাঘা অভিনেতারা। কেসিআইএ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন লি বয়ং হুন। লিয়ের বয়স ৫০ কেউ বলবেনা, অভিনয় কিংবা ফিটনেসে বুঝার উপায় নেই। লি সাং মিন করেছেন প্রেসিডেন্টের চরিত্র। সিনেমার শুরুটা এভাবে, কেসিআইএ এর সাবেক ডিরেক্টর আমেরিকায় নিজের জীবনের উপর একটি বই লিখেন যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে পার্ক ১৮ বছর ধরে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন। আর এদিকে প্রেসিডেন্ট পার্কের সাথে কাজ করা কিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমেরিকা গিয়ে আত্নজীবনীটি ফিরিয়ে আনার জন্য। বইয়ের লেখক আর কিম দুইজনই কোরিয়ার বিপ্লবের জন্য একসাথে লড়েছিলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে রাজনৈতিক এই বেড়াজালে কে কার সাথে থাকবে কে কাকে ধোকা দিবে, কার পরিণতি কি হবে,  স্বৈরশাসকের আদো পতন হবে নাকি। তা এই সিনেমায় ফুটে উঠেছে।

কীভাবে হত্যকাণ্ড ঘটিয়েছেন বর্ণনা দিচ্ছে কিম গিউ পায়োং। সিনেমার সবচেয়ে ভালো দিক এর অসাধারন বিজিএম। যেটা সবসময় বুঝাচ্ছিলো চরিত্রগুলোর মধ্যে কি যেন এক ক্ষুধা। সামনে কি যেন ঘটতে যাচ্ছে। সাথে আছে কালার গ্রেডিংয়ের অসাধারণ সমন্বয়। সিনেমাটোগ্রাফি দেখে মনে হবে আপনি ১৯৮০ সালে বসে সিনেমাটি দেখছেন। একটা দৃশ্যে লি বয়ং হুন স্টেইজের দিকে তাকিয়ে ছিল। স্টেজের লাইটগুলো আস্তে আস্তে নিভিয়ে দেয়া হচ্ছিল। সে যখন স্টেজে বসেছিল, তার নির্দেশে নিজের বন্ধুকে হত্যা করছিল স্পাইরা। সে আর ভাল মানুষ নেই। অন্ধকার দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হল। এরপর দুজন ব্যক্তির জুতা নেই দেখানো হয়েছে। অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তোলার জন্য এই ব্যাপারটা দেখানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রটারড্যাম উৎসব দিয়ে যাত্রা শুরু ‘রইদ’ ও ‘মাস্টার’ সিনেমার

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আগামী বছর ২৯ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম শহরে শুরু হবে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল রটারড্যামের ৫৫তম আসর। এই উৎসব দিয়ে যাত্রা শুরু করছে বাংলাদেশে দুই সিনেমা ‘রইদ’ ও ‘মাস্টার’। উৎসবে প্রিমিয়ার হবে সিনেমা দুটির। রইদ পরিচালনা করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন, মাস্টার সিনেমার পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার হবে গত নভেম্বরে দেশের হলে মুক্তি পাওয়া মোহাম্মদ তাওকীর ইসলামের ‘দেলুপি’।

‘হাওয়া’ দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয় মেজবাউর রহমান সুমনের। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করেন তিনি। তিন বছর পর তিনি নিয়ে আসছেন দ্বিতীয় সিনেমা রইদ। গত বছর রইদ সিনেমার শুটিং শুরু করেছিলেন সুমন। এতে অভিনয় করছেন মোস্তাফিজ নূর ইমরান, নাজিফা তুষি, গাজী রাকায়েতসহ অনেকে। নির্মাতা জানিয়েছিলেন, সিনেমার বিস্তারিত জানানো হবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে। অবশেষে গতকাল এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ট্রেলার প্রকাশ করে ঘোষণা দেওয়া হলো রইদ সিনেমার। এই সিনেমার প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে রটারড্যাম উৎসবে। এরপর মুক্তি দেওয়া হবে দেশের হলে।

রইদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে টাইগার প্রতিযোগিতা (মূল প্রতিযোগিতা) বিভাগে। নির্মাতা জানান, এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা রটারড্যামের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে আমন্ত্রণ পেয়েছে। এই বিভাগে রইদসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১২টি সিনেমা নির্বাচিত হয়েছে। এই সিনেমাগুলো থেকে নির্বাচকেরা বাছাই করবেন উৎসবের সেরা সিনেমা।

রইদ সিনেমার গল্প নিয়ে সুমন বলেন, ‘সাধু, তার পাগল স্ত্রী এবং তাদের বাড়ির পাশের তালগাছকে ঘিরে আবর্তিত এই গল্পে আমরা আদতে আদম ও হাওয়ার আদিম আখ্যানকেই খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমরা সেই হাজার বছরের পুরোনো আখ্যানকে বর্তমানে পুনর্নির্মাণ করেছি, তবে সময়ের বর্তমানে নয়, বরং অনুভূতির বর্তমানে। এই সিনেমার প্রতিটি স্তরে জড়িয়ে আছে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের দেখা গ্রামীণ বাংলার আবহ।’

মোস্তাফিজ নূর ইমরান ও নাজিফা তুষি। ছবি: সংগৃহীত
মোস্তাফিজ নূর ইমরান ও নাজিফা তুষি। ছবি: সংগৃহীত

রইদের গল্প লিখেছেন মেজবাউর রহমান সুমন ও সেলিনা বানু মনি। চিত্রনাট্য করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন, জাহিন ফারুক আমিন, সিদ্দিক আহমেদ ও সুকর্ণ শাহেদ ধীমান। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে বঙ্গ, সহপ্রযোজনায় আছে ফেসকার্ড প্রোডাকশন।

এদিকে রাজনৈতিক থ্রিলার ঘরানায় রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত বানিয়েছেন মাস্টার। গত বছর এপ্রিলে শেষ হয়েছিল সরকারি অনুদানে নির্মিত এই সিনেমার শুটিং। মাস্টারের শুটিং-পরবর্তী কাজ হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা। একটি উপজেলার স্থানীয় রাজনীতি এই সিনেমার প্রেক্ষাপট। সিনেমাটি প্রতিযোগিতা করবে রটারড্যাম উৎসবের বিগ স্ক্রিন কম্পিটিশন বিভাগে

গল্পে দেখা যাবে, জহির আহমেদ নামের এক শিক্ষক সমাজসেবায় এলাকাবাসীর কাছে জনপ্রিয়। ওই এলাকার উপজেলা নির্বাচনের সময় প্রার্থীর অভাব দেখা দেয়। তখন শিক্ষক জহির আহমেদকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় এলাকাবাসী। সবার অনুরোধে ভোটে দাঁড়িয়ে যায় জহির। ভোটে জয় পেয়ে চেয়ারম্যানও হয়। উপজেলার চেয়ারম্যান হওয়ার পর বদলে যায় ওই শিক্ষকের জীবন। জহির আহমেদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান। আরও আছেন আজমেরী হক বাঁধন, জাকিয়া বারী মম, ফজলুর রহমান বাবু, লুৎফর রহমান জর্জ, শরিফ সিরাজ প্রমুখ।

এদিকে রটারড্যাম উৎসবের ‘ব্রাইট ফিউচার’ বিভাগে প্রদর্শিত হবে দেলুপি। এই বিভাগে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বানানো প্রথম ও দ্বিতীয় সিনেমা নির্বাচিত হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের ঘটনা, বাস্তবতা আর সম্পর্কের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে দেলুপি। অভিনয় করেছেন স্থানীয়রা। গত ৭ নভেম্বর খুলনায় মুক্তি পেয়েছিল দেলুপি। পরের সপ্তাহে দেশব্যাপী মুক্তি পায় সিনেমাটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফেব্রুয়ারিতে আরিফিন শুভর ‘জ্যাজ সিটি’, দেখা যাবে ৩ ভাষায়

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
‘জ্যাজ সিটি’ সিরিজে শুভ। ছবি: সংগৃহীত
‘জ্যাজ সিটি’ সিরিজে শুভ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সনি লিভের ওয়েব সিরিজ ‘জ্যাজ সিটি’তে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের আরিফিন শুভ। এমনটা জানা গিয়েছিল আগেই। গত সেপ্টেম্বরে সনি লিভের প্রমোশনাল ভিডিওতে কয়েক ঝলক দেখা মিলেছিল তাঁর। এবার জানা গেল সিরিজটির মুক্তির তারিখ। গতকাল ট্রেলার প্রকাশ করে ঘোষণা দেওয়া হলো, আগামী বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে জ্যাজ সিটি, দেখা যাবে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায়।

জ্যাজ সিটি পরিচালনা করেছেন সৌমিক সেন। সর্বশেষ তিনি যুক্ত ছিলেন গত বছর মুক্তি পাওয়া জনপ্রিয় হিন্দি সিরিজ ‘জুবিলি’র সঙ্গে। বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের সঙ্গে যৌথভাবে সিরিজটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন সৌমিক। প্রেক্ষাপট ছিল চল্লিশের দশকের শেষের দিকের মুম্বাই শহর ও বলিউডের শুরুর দিকের ঘটনা। জুবিলির মতো নতুন এ সিরিজেও সৌমিক পর্দায় তুলে ধরেছেন পুরোনো প্রেক্ষাপট।

২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের হিন্দি ভাষার ট্রেলারে দেখা গেল, ১৯৭০-৭১ সালের পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট। রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গও। সেই সময়ে ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বই মোটাদাগে তুলে ধরা হয়েছে এতে। ট্রেলার দেখে সহজেই আন্দাজ করা গেল, জ্যাজ সিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রেই আছেন শুভ। তাঁর চরিত্রের নাম জিমি রয়। ট্রেলারে শুভকে হিন্দি ভাষাতেও কথা বলতে শোনা যায়, যা তিনি নিজেই ডাবিং করেছেন। শুভর বিপরীতে দেখা যাবে কলকাতার অভিনেত্রী সৌরসেনী মৈত্রকে। এ ছাড়া আরও আছেন কলকাতা ও হিন্দি সিনেমার একাধিক অভিনেতা।

জ্যাজ সিটি পশ্চিমবঙ্গে আরিফিন শুভর তৃতীয় ওয়েব কনটেন্ট। এর আগে তিনি অভিনয় করেছেন অরিন্দম শীলের ‘উনিশে এপ্রিল’ ও রাহুল মুখার্জির ‘লহু’তে। উনিশে এপ্রিল আলোর মুখ দেখলেও আটকে আছে লহু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বান্দরবানের ম্রো শিশু ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে ‘পাওমুম পার্বণ’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
বান্দরবানের ম্রো শিশু ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে ‘পাওমুম পার্বণ’

বান্দরবানের ম্রো শিশু ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের অংশগ্রহণে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব। আজ থেকে শুরু হওয়া ‘পাওমুম পার্বণ ২০২৫’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই আয়োজন ম্রো ভাষা, শিল্পকলা, সংগীত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার পাশাপাশি রাজধানীতে প্রথমবারের মতো আদিবাসী শিশুদের সৃজনশীল কাজ প্রদর্শনের সুযোগ করে দেবে বলে জানিয়েছে আয়োজকেরা।

লামায় অবস্থিত পাওমুম থারক্লা একটি সম্প্রদায়নির্ভর বিদ্যালয়, যা গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ম্রো ভাষা, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং শিশু শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। উৎসবে অংশ নেওয়া অনেক শিশুর জন্য এটিই পাহাড়ের বাইরে জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা।

উৎসবে শিশুদের তৈরি শিল্পকর্ম, বাঁশের কারুশিল্প, ফটোগ্রাফি, বুননের প্রদর্শনী, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং লাইভ পারফরম্যান্স যেমন ম্রো নৃত্য, গান ও ঐতিহ্যবাহী প্লাং বাঁশি উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন কর্মশালা, গাইডেড ট্যুর এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

পাওমুম থারক্লার সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, ‘আমাদের স্কুলটি শুরু হয়েছিল একটি ছোট বাঁশের ঝুপড়িতে, মাত্র কয়েকটি শিশু নিয়ে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আমরা শিক্ষার মাধ্যমে তাদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার কাজ করে যাচ্ছি। পাওমুম পার্বণ ২০২৫ শিশুদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ, যাতে তারা পাহাড়ের বাইরে নিজেকে তুলে ধরতে পারে। আমরা সব অংশীদারের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা এই যাত্রাকে সম্ভব করেছেন।’

প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (রোববার বন্ধ) চলবে এই আয়োজন। উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত। দর্শকেরা প্রদর্শনী ঘুরে দেখার পাশাপাশি শিশু ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশে ম্রো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপভোগ করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মঞ্চে আসছে ফারুক আহমেদ নির্দেশিত প্রথম নাটক ‘রঙমহাল’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

৪০ বছরের বেশি সময় নাটকের দল ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ফারুক আহমেদ। অভিনয় করেছেন দলটির অনেক নাটকে। তবে কখনোই দলটির হয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি তাঁর। অবশেষে ঢাকা থিয়েটারের নাট্যনির্দেশক হিসেবে হাজির হচ্ছেন ফারুক আহমেদ। আগামীকাল রাজধানীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতির মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে তাঁর নির্দেশিত ‘রঙমহাল’ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। এটি ঢাকা থিয়েটারের ৫৪তম প্রযোজনা।

রঙমহাল নাটকটি রচনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুবাইয়াৎ আহমেদ। মঞ্চ পরিকল্পনায় আছেন অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসরিন নাহার, ফারজানা চুমকি, অনিকেত ইসলাম, তৌকির আলম, রতন, বাদলসহ অনেকে।

মহড়াকক্ষে নাটকের মঞ্চ পরিকল্পক আফজাল হোসেনের সঙ্গে নির্দেশক ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
মহড়াকক্ষে নাটকের মঞ্চ পরিকল্পক আফজাল হোসেনের সঙ্গে নির্দেশক ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

রঙমহাল নিয়ে নির্দেশক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘খুব ভালো একটা গল্প দেখা যাবে এই নাটকে। একবাক্যে যদি বলি, এটি সমাজের রূপ ও অরূপের আখ্যান। আমি রঙমহাল নাটকটিকে মোরাল প্লে হিসেবে অভিহিত করব। নৈতিক মূল্যবোধের নাটক। দর্শক এ কথার বিচার করবেন। আশা করছি নতুন ও পুরোনোর সম্মিলিত প্রয়াসে রঙমহাল হয়ে উঠবে সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা।’

নির্দেশনায় আসতে এত সময় নেওয়ার কারণ জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে হলের নাট্যসম্পাদক ছিলাম। বেশ কয়েকটি নাটক নির্দেশনা দিয়েছিলাম। তবে ঢাকা থিয়েটারে এই প্রথম। ঢাকা থিয়েটারে অনেক বড় ও গুণী নির্দেশক ছিলেন এবং আছেন। বাচ্চু ভাই, জামিল ভাই, ফরীদি ভাইয়ের মতো মানুষ এখানে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁদের অসাধারণ সব নাটকে অভিনয় করেছেন গুণী শিল্পীরা। তা ছাড়া ব্যক্তিগত কারণে অনেক দিন সরাসরি থিয়েটার করতে পারিনি। সমস্ত ধাপ পেরিয়ে এখন নাটক নির্দেশনা দিচ্ছি, এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত