Ajker Patrika

কামরাঙ্গীরচরে ওস্তাদের বাড়ি

রজত কান্তি রায়
আপডেট : ২৯ জুন ২০২১, ১০: ০৩
কামরাঙ্গীরচরে ওস্তাদের বাড়ি

ঢাকা: বুড়িগঙ্গার বুকে গড়ে ওঠা গমগমে শহরতলি আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা খুঁজতে থাকি ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’–এর একটি ছাপড়া ঘর। থানা ভবন থেকে পশ্চিম দিকে একটু এগিয়ে যেতে হবে—এ রকমই ছিল ঠিকানার বর্ণনায়। সেখানে থাকেন বর্ণাঢ্য হয়ে উঠতে না পারা এক ‘ওস্তাদ’ শিল্পী। শহরতলির নাম কামরাঙ্গীরচর। শিল্পীর নাম মোহাম্মদ শোয়েব। জন্ম ১৯৫৫ সাল।

৬৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ শোয়েবের সঙ্গে যখন তাঁর দশ বাই দশ ফুট হাফ বিল্ডিংয়ের ঘরে বসি, মুখোমুখি, তখন বাইরে অঝোর ধারা। বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে টিনের ওপর। আছড়ে পড়া প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা যেন এক–একটি সুরের ঝঙ্কার। যা হয়তো ‘তনুমনপ্রাণ’ ভরে উপভোগ করছেন একজন শিল্পী। তিন দশকের বেশি সময় ধরে উজ্জ্বল রঙে দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি সিনেমার ব্যানার এঁকেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। রাজ্জাক–ইলিয়াস কাঞ্চন–জসিমের মতো বিখ্যাত নায়কেরা তাঁকে সসম্মানে ডাকতেন নিজেদের সিনেমার ব্যানার আঁকতে। তাঁর সামনে বসে জানতে চেষ্টা করি সে ইতিহাস। জানতে চেষ্টা করি, ঢাকাই সিনেমার এক উপেক্ষিত অধ্যায়ের গল্প, আরেক উপেক্ষিত নদীর চরে গজিয়ে ওঠা অপরিকল্পিত শহরতলিতে বসে।

‘অবুঝ মন, জিঘাংসা, জোকার, বেদের মেয়ে জোছনা—সব ফিলিমের ব্যানার আঁকলাম। কত ফিলিম হিট হইলো! মুন, স্টার, লায়ন—এই সব সিনেমা হল আছিল তখন। এখন তো নাই। সামনে লাগানো থাকত ব্যানার। নিচে গেটের কাছে থাকত নায়িকার কাটাউট, লাল–নীল বাত্তি দেওয়া। মানুষ আনন্দ পাইত।’ উসকে দিতেই বলতে শুরু করলেন ওস্তাদ মোহাম্মদ শোয়েব।

গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১। ঢাকায় দাদা মোহাম্মদ ইব্রাহীম করতেন লুঙ্গি–গামছার ব্যবসা। বাবা মোহাম্মদ ইশহাক ছিলেন দর্জি। মা রাজিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১৯৫৫ সালে পুরান ঢাকায় জন্ম মোহাম্মদ শোয়েবের। লেখাপড়া খুব একটা করেননি।

প্যারিসের ‘প্যালেই ডি টোকিও’ স্টুডিওতে ২০১৯ সালে প্রদর্শীত মোহাম্মদ শোয়েবের চিত্রকর্ম

উজ্জ্বল রং মানুষকে আকর্ষণ করে খুব সহজে। সে জন্যই বিশ বাই দশ ফুট, বিশ বাই আট ফুট, পনেরো বাই দশ ফুট, দশ বাই দশ ফুট, বারো বাই আট ফুট মাপের মার্কিন কাপড়ে তৈরি ক্যানভাসে গ্রাফ করে নায়ক–নায়িকা বা ভিলেনের ছবি আঁকা হতো উজ্জ্বল রঙে। সেগুলোই ছিল সিনেমার ব্যানার। সিনেমা হলের দরজার ওপর বিশেষভাবে টাঙানো হতো সেসব। দূর থেকে দেখে আকৃষ্ট হতো মানুষ। শিহরিত হতো নায়িকার রূপ দেখে, নায়ক আর ভিলেনের অ্যাকশন দেখে। সেসব দৃশ্য নিপুণ হাতে আঁকতেন মোহাম্মদ শোয়েব তাঁর শিষ্যদের নিয়ে। ১৯৬৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এঁকেছেন সিনেমার বর্ণিল জগতের ছবি, কাপড়ের ক্যানভাসে। করেছেন সিনেমার পোস্টার, প্রেস লে আউটের নকশা। বানিয়েছেন নায়ক, নায়িকা বা ভিলেনের কাটআউট। এসব ব্যানার, পোস্টার আর কাট আউট ঢাকা শহরের বলাকা, মুন, স্টার, লায়ন, অভিসার, যশোরের মণিহারসহ পুরো দেশের সিনেমা হলগুলোর শোভা বাড়িয়ে তুলত। ব্যবসা হতো রমরমা।

‘আপনাকে কেন সবাই ডাকতেন ব্যানার আঁকার জন্য? সেটা কি শুধু আপনার ভালো কাজের জন্য?’ প্রশ্ন শুনে একটু থেমে যান মোহাম্মদ শোয়েব। ‘ভালো কাজ কি না জানি না। তবে আমারে ডাকত। রাজ্জাক সাহেব নিজের প্রোডাকশনের ব্যানার বানাইতেন আমারে দিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চন, জসিম সবাই ডাকত। কোয়ালিটি হয়তো ভালো আছিল। কে জানে!’ ‘আপনার ওস্তাদ কে ছিলেন?’

এখানে একটা পারিবারিক গল্প আছে মোহাম্মদ শোয়েবের। চান বিবি নামে তাঁর এক নানি ছিলেন। সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের সঙ্গে ছিল চান বিবির যোগাযোগ। তিনিই ঢাকার আরেক ওস্তাদ শিল্পী ‘সিতারা পাবলিসিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিল্পী আনোয়ারের হাতে তুলে দেন শোয়েবকে। সেই শুরু; সালটা ছিল ১৯৬৫। মোহাম্মদ শোয়েব তখন বালক মাত্র, বয়স ১৫ বছর। শিল্পী আনোয়ারের কাছে সিনেমার ব্যানার আঁকার প্রাথমিক কাজ শিখেছেন এক বছর। সে সূত্রে তাঁকেই ওস্তাদ মানেন মোহাম্মদ শোয়েব।

এর পরের বছর তিনি কাজ করতে যান নারিন্দায়, খাজা সাহেবের মালিকানাধীন ‘কার স্টুডিও’–তে। মোহাম্মদ শোয়েব সেখানে কাজ করেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এ সময় তিনি জুনিয়র শিল্পী হিসেবে ব্যানারে ছোট ছোট চরিত্রগুলো আঁকার কাজ শুরু করেন এবং দক্ষ হয়ে ওঠেন। এর পর যত দিন গেছে প্রতিকৃতি আঁকায়, ক্যানভাসে অলংকরণ করায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ শোয়েব। তার পর তিনি কাজ করতে যান ‘রূপায়ণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠান ছিল সিনেমার ব্যানার শিল্পের আরেক গুণী শিল্পী বীরেন দাসের মালিকানাধীন। সেখানে তিনি ব্যানার আঁকার কাজ করেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। পরে ক্রমান্বয়ে ‘চিত্রকর’, ‘ফোর স্টার’, ‘মুন আর্ট’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। শেষে নিজের এক শিষ্যের সঙ্গে ‘একতা পাবলিশিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। সেটি সচল ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক ঢাকা আর্ট সামিটে মোহাম্মদ শোয়েব এবং তাঁর দলের সিনেমার ব্যানারের আদলে আঁকা চিত্রকর্ম

প্রায় চল্লিশ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে মোহাম্মদ শোয়েব সিনেমার ব্যানার শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন পরিশ্রম, আর মেধা দিয়ে। নিখুঁত প্রতিকৃতি আর কাপড়ের ওপর সূক্ষ্ম নকশা তোলায় তিনি ছিলেন ভীষণ দক্ষ। সমসাময়িক আর কোনো ব্যানার শিল্পী তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি বলে সব ‘আর্ট হাউসে’ ছিল তাঁর সমান কদর। যখন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়েছেন, সিনেমার ব্যানার ইন্ডাস্ট্রিতে সে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল সেরা। তবে তিনি সিনেমার ব্যানার আঁকার মধ্যেই আটকে ছিলেন না। যখন সিনেমার ব্যানার এঁকে খ্যাতির মধ্যগগনে, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রচারের জন্য বিলবোর্ড, হোর্ডিং, দেয়ালচিত্র আঁকেন মোহাম্মদ শোয়েব। সেখানেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া একসময় দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিভিন্ন বিদেশি অতিথির প্রতিকৃতিও আঁকেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের প্রতিকৃতি আঁকেন। সেটিই ছিল তাঁর শেষ কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথির প্রতিকৃতি আঁকা। এ ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার প্রতিকৃতি এঁকেছেন বিভিন্ন সময়। মোহাম্মদ শোয়েব অসামান্য দক্ষতায় প্রতিকৃতি আঁকতে পারতেন বলে এসব কাজে ডাক পেতেন।

২০০০ সালের পর ধীরে ধীরে কাজকর্ম কমতে শুরু করে সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেন, অনেকে আশায় বুক বেঁধে ‘লাইনে’ থাকার চেষ্টা করেন আরও কিছুদিন। একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মোহাম্মদ শোয়েবকেও। সিনেমার ব্যানার আঁকার যুগ যখন ধীরে ধীরে অস্তমিত হয়ে আসতে শুরু করে, মোহাম্মদ শোয়েব তখন চার দশকের চর্চা করা বিদ্যাকে ভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে রোজগার সচল রাখার চেষ্টা করে যান।

সিনেমার ব্যানার শিল্পী হিসেবে মোহাম্মদ শোয়েবের চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সিটি করপোরেশনের কাছে। প্রবাসী বাঙালি শিল্পী রুহুল আমিন কাজলের সহায়তায় এবং কোপেন হেগেন সিটি করপোরেশনের আমন্ত্রণে ২০১৪ সালে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর সহশিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু ডেনমার্কে গিয়েছিলেন ছবি আঁকতে। সেখানে তাঁদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় প্যারিসের ‘প্যালেই ডি টোকিও’ স্টুডিওতে, ২০১৯ সালে ‘সিটি প্রিন্সেস’ নামে একটি প্রদর্শনীতে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক ঢাকা আর্ট সামিটে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর দলের সিনেমার ব্যানারের আদলে আঁকা একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। তবে তাতে নায়ক–নায়িকার পরিবর্তে আঁকা হয়েছিল আফ্রিকা ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এসব আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে মোহাম্মদ শোয়েবের পরিচিত হয়ে ওঠার পেছনে সহায়তা করেছে ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন শিল্প কেন্দ্র ‘যথাশিল্প’।

‘প্রায় চল্লিশ বছর সিনেমার ব্যানার আঁকলেন। পেছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয় আপনার?’ প্রশ্ন শুনে মোহাম্মদ শোয়েব হাসেন। বৃষ্টির শব্দে তাঁর হাসির শব্দ চাপা পড়ে যায়। ‘যা করার আছিল, করছি। মন দিয়া করছি। আর কী?’ তাঁর নীরবতার আড়ালে আরও অনেক কিছু আছে। আছে শিল্পের প্রতি সীমাহীন দরদ। আছে নিঃসিম শূন্যতা। আছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ১৯৯৪ সালে স্ত্রী বানু বেগম মৃত্যুবরণ করেছেন। পরের বছরই তাঁর বড় মেয়ে রিমা আক্তার মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। অন্য সন্তানদের বড় করেছেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা—ছেলে ইমরান, মেয়ে সীমা আক্তার ও সোমা আক্তার বড় হয়েছেন। তাঁদের বিয়েও হয়ে গেছে। এখন নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসেছে জীবনে।

যথাশিল্প স্টুডিওতে সিনেমা ব্যানার আঁকার একটি ওয়ার্কশপে ছবি আঁকছেন মোহাম্মদ শোয়েব। যথাশিল্পের কর্ণধার গবেষক ও শিল্পী শাওন আকন্দের কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে মোহাম্মদ শোয়েবের গুরুত্ব কী। কোনো দ্বিধা ছাড়াই শাওন আকন্দ বলেন, ‘হি ইজ দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস। উনিশ শতকে রাজা রবি বর্মার হাতে তৈরি হয়েছিল এক বিশেষ শিল্প ঘরানার। পরবর্তীকালে ভারতের কোলাপুরের বাবুরাও পেইন্টারের হাত ধরে এবং মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আলো–বাতাসে সে শিল্প ঘরানা সিনেমার ব্যানার শিল্প হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। মকবুল ফিদা হুসেন কিংবা আমাদের নিতুন কুণ্ডও এক সময় যুক্ত ছিলেন এ বিশেষ ধরনের শিল্পচর্চায়। উনিশ শতকে গড়ে ওঠা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের নিরিখে বাংলাদেশে মোহাম্মদ শোয়েব সম্ভবত শেষ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী।’

বৃষ্টি পড়ে কামরাঙ্গীরচরে। বোদনার অনুষ্টুপ ছন্দ বেজে যায় মোহাম্মদ শোয়েবের টিনের চালে। কামরাঙ্গীরচর, চরের এ ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ ঘর সিনেমা ব্যানারের রঙিন ক্যানভাস নয়। এখানে রং–তুলি হাতে নিয়ে বসে নেই কোনো ওস্তাদ। বসে আছেন এক বিধ্বস্ত শিল্পী—দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস মোহাম্মদ শোয়েব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রটারড্যাম উৎসব দিয়ে যাত্রা শুরু ‘রইদ’ ও ‘মাস্টার’ সিনেমার

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আগামী বছর ২৯ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম শহরে শুরু হবে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল রটারড্যামের ৫৫তম আসর। এই উৎসব দিয়ে যাত্রা শুরু করছে বাংলাদেশে দুই সিনেমা ‘রইদ’ ও ‘মাস্টার’। উৎসবে প্রিমিয়ার হবে সিনেমা দুটির। রইদ পরিচালনা করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন, মাস্টার সিনেমার পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার হবে গত নভেম্বরে দেশের হলে মুক্তি পাওয়া মোহাম্মদ তাওকীর ইসলামের ‘দেলুপি’।

‘হাওয়া’ দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয় মেজবাউর রহমান সুমনের। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করেন তিনি। তিন বছর পর তিনি নিয়ে আসছেন দ্বিতীয় সিনেমা রইদ। গত বছর রইদ সিনেমার শুটিং শুরু করেছিলেন সুমন। এতে অভিনয় করছেন মোস্তাফিজ নূর ইমরান, নাজিফা তুষি, গাজী রাকায়েতসহ অনেকে। নির্মাতা জানিয়েছিলেন, সিনেমার বিস্তারিত জানানো হবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে। অবশেষে গতকাল এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ট্রেলার প্রকাশ করে ঘোষণা দেওয়া হলো রইদ সিনেমার। এই সিনেমার প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে রটারড্যাম উৎসবে। এরপর মুক্তি দেওয়া হবে দেশের হলে।

রইদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে টাইগার প্রতিযোগিতা (মূল প্রতিযোগিতা) বিভাগে। নির্মাতা জানান, এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা রটারড্যামের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে আমন্ত্রণ পেয়েছে। এই বিভাগে রইদসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১২টি সিনেমা নির্বাচিত হয়েছে। এই সিনেমাগুলো থেকে নির্বাচকেরা বাছাই করবেন উৎসবের সেরা সিনেমা।

রইদ সিনেমার গল্প নিয়ে সুমন বলেন, ‘সাধু, তার পাগল স্ত্রী এবং তাদের বাড়ির পাশের তালগাছকে ঘিরে আবর্তিত এই গল্পে আমরা আদতে আদম ও হাওয়ার আদিম আখ্যানকেই খোঁজার চেষ্টা করেছি। আমরা সেই হাজার বছরের পুরোনো আখ্যানকে বর্তমানে পুনর্নির্মাণ করেছি, তবে সময়ের বর্তমানে নয়, বরং অনুভূতির বর্তমানে। এই সিনেমার প্রতিটি স্তরে জড়িয়ে আছে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের দেখা গ্রামীণ বাংলার আবহ।’

মোস্তাফিজ নূর ইমরান ও নাজিফা তুষি। ছবি: সংগৃহীত
মোস্তাফিজ নূর ইমরান ও নাজিফা তুষি। ছবি: সংগৃহীত

রইদের গল্প লিখেছেন মেজবাউর রহমান সুমন ও সেলিনা বানু মনি। চিত্রনাট্য করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন, জাহিন ফারুক আমিন, সিদ্দিক আহমেদ ও সুকর্ণ শাহেদ ধীমান। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে বঙ্গ, সহপ্রযোজনায় আছে ফেসকার্ড প্রোডাকশন।

এদিকে রাজনৈতিক থ্রিলার ঘরানায় রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত বানিয়েছেন মাস্টার। গত বছর এপ্রিলে শেষ হয়েছিল সরকারি অনুদানে নির্মিত এই সিনেমার শুটিং। মাস্টারের শুটিং-পরবর্তী কাজ হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরা। একটি উপজেলার স্থানীয় রাজনীতি এই সিনেমার প্রেক্ষাপট। সিনেমাটি প্রতিযোগিতা করবে রটারড্যাম উৎসবের বিগ স্ক্রিন কম্পিটিশন বিভাগে

গল্পে দেখা যাবে, জহির আহমেদ নামের এক শিক্ষক সমাজসেবায় এলাকাবাসীর কাছে জনপ্রিয়। ওই এলাকার উপজেলা নির্বাচনের সময় প্রার্থীর অভাব দেখা দেয়। তখন শিক্ষক জহির আহমেদকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় এলাকাবাসী। সবার অনুরোধে ভোটে দাঁড়িয়ে যায় জহির। ভোটে জয় পেয়ে চেয়ারম্যানও হয়। উপজেলার চেয়ারম্যান হওয়ার পর বদলে যায় ওই শিক্ষকের জীবন। জহির আহমেদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান। আরও আছেন আজমেরী হক বাঁধন, জাকিয়া বারী মম, ফজলুর রহমান বাবু, লুৎফর রহমান জর্জ, শরিফ সিরাজ প্রমুখ।

এদিকে রটারড্যাম উৎসবের ‘ব্রাইট ফিউচার’ বিভাগে প্রদর্শিত হবে দেলুপি। এই বিভাগে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বানানো প্রথম ও দ্বিতীয় সিনেমা নির্বাচিত হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের ঘটনা, বাস্তবতা আর সম্পর্কের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে দেলুপি। অভিনয় করেছেন স্থানীয়রা। গত ৭ নভেম্বর খুলনায় মুক্তি পেয়েছিল দেলুপি। পরের সপ্তাহে দেশব্যাপী মুক্তি পায় সিনেমাটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফেব্রুয়ারিতে আরিফিন শুভর ‘জ্যাজ সিটি’, দেখা যাবে ৩ ভাষায়

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
‘জ্যাজ সিটি’ সিরিজে শুভ। ছবি: সংগৃহীত
‘জ্যাজ সিটি’ সিরিজে শুভ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সনি লিভের ওয়েব সিরিজ ‘জ্যাজ সিটি’তে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের আরিফিন শুভ। এমনটা জানা গিয়েছিল আগেই। গত সেপ্টেম্বরে সনি লিভের প্রমোশনাল ভিডিওতে কয়েক ঝলক দেখা মিলেছিল তাঁর। এবার জানা গেল সিরিজটির মুক্তির তারিখ। গতকাল ট্রেলার প্রকাশ করে ঘোষণা দেওয়া হলো, আগামী বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে জ্যাজ সিটি, দেখা যাবে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায়।

জ্যাজ সিটি পরিচালনা করেছেন সৌমিক সেন। সর্বশেষ তিনি যুক্ত ছিলেন গত বছর মুক্তি পাওয়া জনপ্রিয় হিন্দি সিরিজ ‘জুবিলি’র সঙ্গে। বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের সঙ্গে যৌথভাবে সিরিজটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন সৌমিক। প্রেক্ষাপট ছিল চল্লিশের দশকের শেষের দিকের মুম্বাই শহর ও বলিউডের শুরুর দিকের ঘটনা। জুবিলির মতো নতুন এ সিরিজেও সৌমিক পর্দায় তুলে ধরেছেন পুরোনো প্রেক্ষাপট।

২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের হিন্দি ভাষার ট্রেলারে দেখা গেল, ১৯৭০-৭১ সালের পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট। রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গও। সেই সময়ে ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বই মোটাদাগে তুলে ধরা হয়েছে এতে। ট্রেলার দেখে সহজেই আন্দাজ করা গেল, জ্যাজ সিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রেই আছেন শুভ। তাঁর চরিত্রের নাম জিমি রয়। ট্রেলারে শুভকে হিন্দি ভাষাতেও কথা বলতে শোনা যায়, যা তিনি নিজেই ডাবিং করেছেন। শুভর বিপরীতে দেখা যাবে কলকাতার অভিনেত্রী সৌরসেনী মৈত্রকে। এ ছাড়া আরও আছেন কলকাতা ও হিন্দি সিনেমার একাধিক অভিনেতা।

জ্যাজ সিটি পশ্চিমবঙ্গে আরিফিন শুভর তৃতীয় ওয়েব কনটেন্ট। এর আগে তিনি অভিনয় করেছেন অরিন্দম শীলের ‘উনিশে এপ্রিল’ ও রাহুল মুখার্জির ‘লহু’তে। উনিশে এপ্রিল আলোর মুখ দেখলেও আটকে আছে লহু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বান্দরবানের ম্রো শিশু ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে ‘পাওমুম পার্বণ’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
বান্দরবানের ম্রো শিশু ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে ‘পাওমুম পার্বণ’

বান্দরবানের ম্রো শিশু ও সম্প্রদায়ের সদস্যদের অংশগ্রহণে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব। আজ থেকে শুরু হওয়া ‘পাওমুম পার্বণ ২০২৫’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই আয়োজন ম্রো ভাষা, শিল্পকলা, সংগীত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার পাশাপাশি রাজধানীতে প্রথমবারের মতো আদিবাসী শিশুদের সৃজনশীল কাজ প্রদর্শনের সুযোগ করে দেবে বলে জানিয়েছে আয়োজকেরা।

লামায় অবস্থিত পাওমুম থারক্লা একটি সম্প্রদায়নির্ভর বিদ্যালয়, যা গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ম্রো ভাষা, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং শিশু শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। উৎসবে অংশ নেওয়া অনেক শিশুর জন্য এটিই পাহাড়ের বাইরে জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা।

উৎসবে শিশুদের তৈরি শিল্পকর্ম, বাঁশের কারুশিল্প, ফটোগ্রাফি, বুননের প্রদর্শনী, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং লাইভ পারফরম্যান্স যেমন ম্রো নৃত্য, গান ও ঐতিহ্যবাহী প্লাং বাঁশি উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন কর্মশালা, গাইডেড ট্যুর এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

পাওমুম থারক্লার সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, ‘আমাদের স্কুলটি শুরু হয়েছিল একটি ছোট বাঁশের ঝুপড়িতে, মাত্র কয়েকটি শিশু নিয়ে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আমরা শিক্ষার মাধ্যমে তাদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার কাজ করে যাচ্ছি। পাওমুম পার্বণ ২০২৫ শিশুদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ, যাতে তারা পাহাড়ের বাইরে নিজেকে তুলে ধরতে পারে। আমরা সব অংশীদারের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা এই যাত্রাকে সম্ভব করেছেন।’

প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (রোববার বন্ধ) চলবে এই আয়োজন। উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত। দর্শকেরা প্রদর্শনী ঘুরে দেখার পাশাপাশি শিশু ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশে ম্রো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপভোগ করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মঞ্চে আসছে ফারুক আহমেদ নির্দেশিত প্রথম নাটক ‘রঙমহাল’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

৪০ বছরের বেশি সময় নাটকের দল ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ফারুক আহমেদ। অভিনয় করেছেন দলটির অনেক নাটকে। তবে কখনোই দলটির হয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি তাঁর। অবশেষে ঢাকা থিয়েটারের নাট্যনির্দেশক হিসেবে হাজির হচ্ছেন ফারুক আহমেদ। আগামীকাল রাজধানীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতির মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে তাঁর নির্দেশিত ‘রঙমহাল’ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। এটি ঢাকা থিয়েটারের ৫৪তম প্রযোজনা।

রঙমহাল নাটকটি রচনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুবাইয়াৎ আহমেদ। মঞ্চ পরিকল্পনায় আছেন অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসরিন নাহার, ফারজানা চুমকি, অনিকেত ইসলাম, তৌকির আলম, রতন, বাদলসহ অনেকে।

মহড়াকক্ষে নাটকের মঞ্চ পরিকল্পক আফজাল হোসেনের সঙ্গে নির্দেশক ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
মহড়াকক্ষে নাটকের মঞ্চ পরিকল্পক আফজাল হোসেনের সঙ্গে নির্দেশক ফারুক আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

রঙমহাল নিয়ে নির্দেশক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘খুব ভালো একটা গল্প দেখা যাবে এই নাটকে। একবাক্যে যদি বলি, এটি সমাজের রূপ ও অরূপের আখ্যান। আমি রঙমহাল নাটকটিকে মোরাল প্লে হিসেবে অভিহিত করব। নৈতিক মূল্যবোধের নাটক। দর্শক এ কথার বিচার করবেন। আশা করছি নতুন ও পুরোনোর সম্মিলিত প্রয়াসে রঙমহাল হয়ে উঠবে সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা।’

নির্দেশনায় আসতে এত সময় নেওয়ার কারণ জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে হলের নাট্যসম্পাদক ছিলাম। বেশ কয়েকটি নাটক নির্দেশনা দিয়েছিলাম। তবে ঢাকা থিয়েটারে এই প্রথম। ঢাকা থিয়েটারে অনেক বড় ও গুণী নির্দেশক ছিলেন এবং আছেন। বাচ্চু ভাই, জামিল ভাই, ফরীদি ভাইয়ের মতো মানুষ এখানে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁদের অসাধারণ সব নাটকে অভিনয় করেছেন গুণী শিল্পীরা। তা ছাড়া ব্যক্তিগত কারণে অনেক দিন সরাসরি থিয়েটার করতে পারিনি। সমস্ত ধাপ পেরিয়ে এখন নাটক নির্দেশনা দিচ্ছি, এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত