রজত কান্তি রায়

ঢাকা: বুড়িগঙ্গার বুকে গড়ে ওঠা গমগমে শহরতলি আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা খুঁজতে থাকি ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’–এর একটি ছাপড়া ঘর। থানা ভবন থেকে পশ্চিম দিকে একটু এগিয়ে যেতে হবে—এ রকমই ছিল ঠিকানার বর্ণনায়। সেখানে থাকেন বর্ণাঢ্য হয়ে উঠতে না পারা এক ‘ওস্তাদ’ শিল্পী। শহরতলির নাম কামরাঙ্গীরচর। শিল্পীর নাম মোহাম্মদ শোয়েব। জন্ম ১৯৫৫ সাল।
৬৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ শোয়েবের সঙ্গে যখন তাঁর দশ বাই দশ ফুট হাফ বিল্ডিংয়ের ঘরে বসি, মুখোমুখি, তখন বাইরে অঝোর ধারা। বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে টিনের ওপর। আছড়ে পড়া প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা যেন এক–একটি সুরের ঝঙ্কার। যা হয়তো ‘তনুমনপ্রাণ’ ভরে উপভোগ করছেন একজন শিল্পী। তিন দশকের বেশি সময় ধরে উজ্জ্বল রঙে দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি সিনেমার ব্যানার এঁকেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। রাজ্জাক–ইলিয়াস কাঞ্চন–জসিমের মতো বিখ্যাত নায়কেরা তাঁকে সসম্মানে ডাকতেন নিজেদের সিনেমার ব্যানার আঁকতে। তাঁর সামনে বসে জানতে চেষ্টা করি সে ইতিহাস। জানতে চেষ্টা করি, ঢাকাই সিনেমার এক উপেক্ষিত অধ্যায়ের গল্প, আরেক উপেক্ষিত নদীর চরে গজিয়ে ওঠা অপরিকল্পিত শহরতলিতে বসে।
‘অবুঝ মন, জিঘাংসা, জোকার, বেদের মেয়ে জোছনা—সব ফিলিমের ব্যানার আঁকলাম। কত ফিলিম হিট হইলো! মুন, স্টার, লায়ন—এই সব সিনেমা হল আছিল তখন। এখন তো নাই। সামনে লাগানো থাকত ব্যানার। নিচে গেটের কাছে থাকত নায়িকার কাটাউট, লাল–নীল বাত্তি দেওয়া। মানুষ আনন্দ পাইত।’ উসকে দিতেই বলতে শুরু করলেন ওস্তাদ মোহাম্মদ শোয়েব।
গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১। ঢাকায় দাদা মোহাম্মদ ইব্রাহীম করতেন লুঙ্গি–গামছার ব্যবসা। বাবা মোহাম্মদ ইশহাক ছিলেন দর্জি। মা রাজিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১৯৫৫ সালে পুরান ঢাকায় জন্ম মোহাম্মদ শোয়েবের। লেখাপড়া খুব একটা করেননি।

উজ্জ্বল রং মানুষকে আকর্ষণ করে খুব সহজে। সে জন্যই বিশ বাই দশ ফুট, বিশ বাই আট ফুট, পনেরো বাই দশ ফুট, দশ বাই দশ ফুট, বারো বাই আট ফুট মাপের মার্কিন কাপড়ে তৈরি ক্যানভাসে গ্রাফ করে নায়ক–নায়িকা বা ভিলেনের ছবি আঁকা হতো উজ্জ্বল রঙে। সেগুলোই ছিল সিনেমার ব্যানার। সিনেমা হলের দরজার ওপর বিশেষভাবে টাঙানো হতো সেসব। দূর থেকে দেখে আকৃষ্ট হতো মানুষ। শিহরিত হতো নায়িকার রূপ দেখে, নায়ক আর ভিলেনের অ্যাকশন দেখে। সেসব দৃশ্য নিপুণ হাতে আঁকতেন মোহাম্মদ শোয়েব তাঁর শিষ্যদের নিয়ে। ১৯৬৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এঁকেছেন সিনেমার বর্ণিল জগতের ছবি, কাপড়ের ক্যানভাসে। করেছেন সিনেমার পোস্টার, প্রেস লে আউটের নকশা। বানিয়েছেন নায়ক, নায়িকা বা ভিলেনের কাটআউট। এসব ব্যানার, পোস্টার আর কাট আউট ঢাকা শহরের বলাকা, মুন, স্টার, লায়ন, অভিসার, যশোরের মণিহারসহ পুরো দেশের সিনেমা হলগুলোর শোভা বাড়িয়ে তুলত। ব্যবসা হতো রমরমা।
‘আপনাকে কেন সবাই ডাকতেন ব্যানার আঁকার জন্য? সেটা কি শুধু আপনার ভালো কাজের জন্য?’ প্রশ্ন শুনে একটু থেমে যান মোহাম্মদ শোয়েব। ‘ভালো কাজ কি না জানি না। তবে আমারে ডাকত। রাজ্জাক সাহেব নিজের প্রোডাকশনের ব্যানার বানাইতেন আমারে দিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চন, জসিম সবাই ডাকত। কোয়ালিটি হয়তো ভালো আছিল। কে জানে!’ ‘আপনার ওস্তাদ কে ছিলেন?’
এখানে একটা পারিবারিক গল্প আছে মোহাম্মদ শোয়েবের। চান বিবি নামে তাঁর এক নানি ছিলেন। সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের সঙ্গে ছিল চান বিবির যোগাযোগ। তিনিই ঢাকার আরেক ওস্তাদ শিল্পী ‘সিতারা পাবলিসিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিল্পী আনোয়ারের হাতে তুলে দেন শোয়েবকে। সেই শুরু; সালটা ছিল ১৯৬৫। মোহাম্মদ শোয়েব তখন বালক মাত্র, বয়স ১৫ বছর। শিল্পী আনোয়ারের কাছে সিনেমার ব্যানার আঁকার প্রাথমিক কাজ শিখেছেন এক বছর। সে সূত্রে তাঁকেই ওস্তাদ মানেন মোহাম্মদ শোয়েব।
এর পরের বছর তিনি কাজ করতে যান নারিন্দায়, খাজা সাহেবের মালিকানাধীন ‘কার স্টুডিও’–তে। মোহাম্মদ শোয়েব সেখানে কাজ করেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এ সময় তিনি জুনিয়র শিল্পী হিসেবে ব্যানারে ছোট ছোট চরিত্রগুলো আঁকার কাজ শুরু করেন এবং দক্ষ হয়ে ওঠেন। এর পর যত দিন গেছে প্রতিকৃতি আঁকায়, ক্যানভাসে অলংকরণ করায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ শোয়েব। তার পর তিনি কাজ করতে যান ‘রূপায়ণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠান ছিল সিনেমার ব্যানার শিল্পের আরেক গুণী শিল্পী বীরেন দাসের মালিকানাধীন। সেখানে তিনি ব্যানার আঁকার কাজ করেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। পরে ক্রমান্বয়ে ‘চিত্রকর’, ‘ফোর স্টার’, ‘মুন আর্ট’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। শেষে নিজের এক শিষ্যের সঙ্গে ‘একতা পাবলিশিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। সেটি সচল ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

প্রায় চল্লিশ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে মোহাম্মদ শোয়েব সিনেমার ব্যানার শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন পরিশ্রম, আর মেধা দিয়ে। নিখুঁত প্রতিকৃতি আর কাপড়ের ওপর সূক্ষ্ম নকশা তোলায় তিনি ছিলেন ভীষণ দক্ষ। সমসাময়িক আর কোনো ব্যানার শিল্পী তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি বলে সব ‘আর্ট হাউসে’ ছিল তাঁর সমান কদর। যখন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়েছেন, সিনেমার ব্যানার ইন্ডাস্ট্রিতে সে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল সেরা। তবে তিনি সিনেমার ব্যানার আঁকার মধ্যেই আটকে ছিলেন না। যখন সিনেমার ব্যানার এঁকে খ্যাতির মধ্যগগনে, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রচারের জন্য বিলবোর্ড, হোর্ডিং, দেয়ালচিত্র আঁকেন মোহাম্মদ শোয়েব। সেখানেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া একসময় দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিভিন্ন বিদেশি অতিথির প্রতিকৃতিও আঁকেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের প্রতিকৃতি আঁকেন। সেটিই ছিল তাঁর শেষ কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথির প্রতিকৃতি আঁকা। এ ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার প্রতিকৃতি এঁকেছেন বিভিন্ন সময়। মোহাম্মদ শোয়েব অসামান্য দক্ষতায় প্রতিকৃতি আঁকতে পারতেন বলে এসব কাজে ডাক পেতেন।
২০০০ সালের পর ধীরে ধীরে কাজকর্ম কমতে শুরু করে সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেন, অনেকে আশায় বুক বেঁধে ‘লাইনে’ থাকার চেষ্টা করেন আরও কিছুদিন। একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মোহাম্মদ শোয়েবকেও। সিনেমার ব্যানার আঁকার যুগ যখন ধীরে ধীরে অস্তমিত হয়ে আসতে শুরু করে, মোহাম্মদ শোয়েব তখন চার দশকের চর্চা করা বিদ্যাকে ভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে রোজগার সচল রাখার চেষ্টা করে যান।
সিনেমার ব্যানার শিল্পী হিসেবে মোহাম্মদ শোয়েবের চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সিটি করপোরেশনের কাছে। প্রবাসী বাঙালি শিল্পী রুহুল আমিন কাজলের সহায়তায় এবং কোপেন হেগেন সিটি করপোরেশনের আমন্ত্রণে ২০১৪ সালে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর সহশিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু ডেনমার্কে গিয়েছিলেন ছবি আঁকতে। সেখানে তাঁদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় প্যারিসের ‘প্যালেই ডি টোকিও’ স্টুডিওতে, ২০১৯ সালে ‘সিটি প্রিন্সেস’ নামে একটি প্রদর্শনীতে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক ঢাকা আর্ট সামিটে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর দলের সিনেমার ব্যানারের আদলে আঁকা একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। তবে তাতে নায়ক–নায়িকার পরিবর্তে আঁকা হয়েছিল আফ্রিকা ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এসব আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে মোহাম্মদ শোয়েবের পরিচিত হয়ে ওঠার পেছনে সহায়তা করেছে ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন শিল্প কেন্দ্র ‘যথাশিল্প’।
‘প্রায় চল্লিশ বছর সিনেমার ব্যানার আঁকলেন। পেছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয় আপনার?’ প্রশ্ন শুনে মোহাম্মদ শোয়েব হাসেন। বৃষ্টির শব্দে তাঁর হাসির শব্দ চাপা পড়ে যায়। ‘যা করার আছিল, করছি। মন দিয়া করছি। আর কী?’ তাঁর নীরবতার আড়ালে আরও অনেক কিছু আছে। আছে শিল্পের প্রতি সীমাহীন দরদ। আছে নিঃসিম শূন্যতা। আছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ১৯৯৪ সালে স্ত্রী বানু বেগম মৃত্যুবরণ করেছেন। পরের বছরই তাঁর বড় মেয়ে রিমা আক্তার মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। অন্য সন্তানদের বড় করেছেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা—ছেলে ইমরান, মেয়ে সীমা আক্তার ও সোমা আক্তার বড় হয়েছেন। তাঁদের বিয়েও হয়ে গেছে। এখন নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসেছে জীবনে।
যথাশিল্পের কর্ণধার গবেষক ও শিল্পী শাওন আকন্দের কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে মোহাম্মদ শোয়েবের গুরুত্ব কী। কোনো দ্বিধা ছাড়াই শাওন আকন্দ বলেন, ‘হি ইজ দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস। উনিশ শতকে রাজা রবি বর্মার হাতে তৈরি হয়েছিল এক বিশেষ শিল্প ঘরানার। পরবর্তীকালে ভারতের কোলাপুরের বাবুরাও পেইন্টারের হাত ধরে এবং মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আলো–বাতাসে সে শিল্প ঘরানা সিনেমার ব্যানার শিল্প হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। মকবুল ফিদা হুসেন কিংবা আমাদের নিতুন কুণ্ডও এক সময় যুক্ত ছিলেন এ বিশেষ ধরনের শিল্পচর্চায়। উনিশ শতকে গড়ে ওঠা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের নিরিখে বাংলাদেশে মোহাম্মদ শোয়েব সম্ভবত শেষ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী।’
বৃষ্টি পড়ে কামরাঙ্গীরচরে। বোদনার অনুষ্টুপ ছন্দ বেজে যায় মোহাম্মদ শোয়েবের টিনের চালে। কামরাঙ্গীরচর, চরের এ ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ ঘর সিনেমা ব্যানারের রঙিন ক্যানভাস নয়। এখানে রং–তুলি হাতে নিয়ে বসে নেই কোনো ওস্তাদ। বসে আছেন এক বিধ্বস্ত শিল্পী—দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস মোহাম্মদ শোয়েব।

ঢাকা: বুড়িগঙ্গার বুকে গড়ে ওঠা গমগমে শহরতলি আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা খুঁজতে থাকি ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’–এর একটি ছাপড়া ঘর। থানা ভবন থেকে পশ্চিম দিকে একটু এগিয়ে যেতে হবে—এ রকমই ছিল ঠিকানার বর্ণনায়। সেখানে থাকেন বর্ণাঢ্য হয়ে উঠতে না পারা এক ‘ওস্তাদ’ শিল্পী। শহরতলির নাম কামরাঙ্গীরচর। শিল্পীর নাম মোহাম্মদ শোয়েব। জন্ম ১৯৫৫ সাল।
৬৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ শোয়েবের সঙ্গে যখন তাঁর দশ বাই দশ ফুট হাফ বিল্ডিংয়ের ঘরে বসি, মুখোমুখি, তখন বাইরে অঝোর ধারা। বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা আছড়ে পড়ছে টিনের ওপর। আছড়ে পড়া প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটা যেন এক–একটি সুরের ঝঙ্কার। যা হয়তো ‘তনুমনপ্রাণ’ ভরে উপভোগ করছেন একজন শিল্পী। তিন দশকের বেশি সময় ধরে উজ্জ্বল রঙে দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি সিনেমার ব্যানার এঁকেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। রাজ্জাক–ইলিয়াস কাঞ্চন–জসিমের মতো বিখ্যাত নায়কেরা তাঁকে সসম্মানে ডাকতেন নিজেদের সিনেমার ব্যানার আঁকতে। তাঁর সামনে বসে জানতে চেষ্টা করি সে ইতিহাস। জানতে চেষ্টা করি, ঢাকাই সিনেমার এক উপেক্ষিত অধ্যায়ের গল্প, আরেক উপেক্ষিত নদীর চরে গজিয়ে ওঠা অপরিকল্পিত শহরতলিতে বসে।
‘অবুঝ মন, জিঘাংসা, জোকার, বেদের মেয়ে জোছনা—সব ফিলিমের ব্যানার আঁকলাম। কত ফিলিম হিট হইলো! মুন, স্টার, লায়ন—এই সব সিনেমা হল আছিল তখন। এখন তো নাই। সামনে লাগানো থাকত ব্যানার। নিচে গেটের কাছে থাকত নায়িকার কাটাউট, লাল–নীল বাত্তি দেওয়া। মানুষ আনন্দ পাইত।’ উসকে দিতেই বলতে শুরু করলেন ওস্তাদ মোহাম্মদ শোয়েব।
গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১। ঢাকায় দাদা মোহাম্মদ ইব্রাহীম করতেন লুঙ্গি–গামছার ব্যবসা। বাবা মোহাম্মদ ইশহাক ছিলেন দর্জি। মা রাজিয়া খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ১৯৫৫ সালে পুরান ঢাকায় জন্ম মোহাম্মদ শোয়েবের। লেখাপড়া খুব একটা করেননি।

উজ্জ্বল রং মানুষকে আকর্ষণ করে খুব সহজে। সে জন্যই বিশ বাই দশ ফুট, বিশ বাই আট ফুট, পনেরো বাই দশ ফুট, দশ বাই দশ ফুট, বারো বাই আট ফুট মাপের মার্কিন কাপড়ে তৈরি ক্যানভাসে গ্রাফ করে নায়ক–নায়িকা বা ভিলেনের ছবি আঁকা হতো উজ্জ্বল রঙে। সেগুলোই ছিল সিনেমার ব্যানার। সিনেমা হলের দরজার ওপর বিশেষভাবে টাঙানো হতো সেসব। দূর থেকে দেখে আকৃষ্ট হতো মানুষ। শিহরিত হতো নায়িকার রূপ দেখে, নায়ক আর ভিলেনের অ্যাকশন দেখে। সেসব দৃশ্য নিপুণ হাতে আঁকতেন মোহাম্মদ শোয়েব তাঁর শিষ্যদের নিয়ে। ১৯৬৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এঁকেছেন সিনেমার বর্ণিল জগতের ছবি, কাপড়ের ক্যানভাসে। করেছেন সিনেমার পোস্টার, প্রেস লে আউটের নকশা। বানিয়েছেন নায়ক, নায়িকা বা ভিলেনের কাটআউট। এসব ব্যানার, পোস্টার আর কাট আউট ঢাকা শহরের বলাকা, মুন, স্টার, লায়ন, অভিসার, যশোরের মণিহারসহ পুরো দেশের সিনেমা হলগুলোর শোভা বাড়িয়ে তুলত। ব্যবসা হতো রমরমা।
‘আপনাকে কেন সবাই ডাকতেন ব্যানার আঁকার জন্য? সেটা কি শুধু আপনার ভালো কাজের জন্য?’ প্রশ্ন শুনে একটু থেমে যান মোহাম্মদ শোয়েব। ‘ভালো কাজ কি না জানি না। তবে আমারে ডাকত। রাজ্জাক সাহেব নিজের প্রোডাকশনের ব্যানার বানাইতেন আমারে দিয়া। ইলিয়াস কাঞ্চন, জসিম সবাই ডাকত। কোয়ালিটি হয়তো ভালো আছিল। কে জানে!’ ‘আপনার ওস্তাদ কে ছিলেন?’
এখানে একটা পারিবারিক গল্প আছে মোহাম্মদ শোয়েবের। চান বিবি নামে তাঁর এক নানি ছিলেন। সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের সঙ্গে ছিল চান বিবির যোগাযোগ। তিনিই ঢাকার আরেক ওস্তাদ শিল্পী ‘সিতারা পাবলিসিটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিল্পী আনোয়ারের হাতে তুলে দেন শোয়েবকে। সেই শুরু; সালটা ছিল ১৯৬৫। মোহাম্মদ শোয়েব তখন বালক মাত্র, বয়স ১৫ বছর। শিল্পী আনোয়ারের কাছে সিনেমার ব্যানার আঁকার প্রাথমিক কাজ শিখেছেন এক বছর। সে সূত্রে তাঁকেই ওস্তাদ মানেন মোহাম্মদ শোয়েব।
এর পরের বছর তিনি কাজ করতে যান নারিন্দায়, খাজা সাহেবের মালিকানাধীন ‘কার স্টুডিও’–তে। মোহাম্মদ শোয়েব সেখানে কাজ করেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এ সময় তিনি জুনিয়র শিল্পী হিসেবে ব্যানারে ছোট ছোট চরিত্রগুলো আঁকার কাজ শুরু করেন এবং দক্ষ হয়ে ওঠেন। এর পর যত দিন গেছে প্রতিকৃতি আঁকায়, ক্যানভাসে অলংকরণ করায় দক্ষ হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ শোয়েব। তার পর তিনি কাজ করতে যান ‘রূপায়ণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠান ছিল সিনেমার ব্যানার শিল্পের আরেক গুণী শিল্পী বীরেন দাসের মালিকানাধীন। সেখানে তিনি ব্যানার আঁকার কাজ করেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। পরে ক্রমান্বয়ে ‘চিত্রকর’, ‘ফোর স্টার’, ‘মুন আর্ট’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। শেষে নিজের এক শিষ্যের সঙ্গে ‘একতা পাবলিশিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। সেটি সচল ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত।

প্রায় চল্লিশ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে মোহাম্মদ শোয়েব সিনেমার ব্যানার শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন পরিশ্রম, আর মেধা দিয়ে। নিখুঁত প্রতিকৃতি আর কাপড়ের ওপর সূক্ষ্ম নকশা তোলায় তিনি ছিলেন ভীষণ দক্ষ। সমসাময়িক আর কোনো ব্যানার শিল্পী তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি বলে সব ‘আর্ট হাউসে’ ছিল তাঁর সমান কদর। যখন যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়েছেন, সিনেমার ব্যানার ইন্ডাস্ট্রিতে সে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল সেরা। তবে তিনি সিনেমার ব্যানার আঁকার মধ্যেই আটকে ছিলেন না। যখন সিনেমার ব্যানার এঁকে খ্যাতির মধ্যগগনে, তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য প্রচারের জন্য বিলবোর্ড, হোর্ডিং, দেয়ালচিত্র আঁকেন মোহাম্মদ শোয়েব। সেখানেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া একসময় দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিভিন্ন বিদেশি অতিথির প্রতিকৃতিও আঁকেন তিনি। এ ক্ষেত্রেও তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ২০১১ সালে ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের প্রতিকৃতি আঁকেন। সেটিই ছিল তাঁর শেষ কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথির প্রতিকৃতি আঁকা। এ ছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার প্রতিকৃতি এঁকেছেন বিভিন্ন সময়। মোহাম্মদ শোয়েব অসামান্য দক্ষতায় প্রতিকৃতি আঁকতে পারতেন বলে এসব কাজে ডাক পেতেন।
২০০০ সালের পর ধীরে ধীরে কাজকর্ম কমতে শুরু করে সিনেমার ব্যানার শিল্পীদের। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেন, অনেকে আশায় বুক বেঁধে ‘লাইনে’ থাকার চেষ্টা করেন আরও কিছুদিন। একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মোহাম্মদ শোয়েবকেও। সিনেমার ব্যানার আঁকার যুগ যখন ধীরে ধীরে অস্তমিত হয়ে আসতে শুরু করে, মোহাম্মদ শোয়েব তখন চার দশকের চর্চা করা বিদ্যাকে ভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করে রোজগার সচল রাখার চেষ্টা করে যান।
সিনেমার ব্যানার শিল্পী হিসেবে মোহাম্মদ শোয়েবের চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সিটি করপোরেশনের কাছে। প্রবাসী বাঙালি শিল্পী রুহুল আমিন কাজলের সহায়তায় এবং কোপেন হেগেন সিটি করপোরেশনের আমন্ত্রণে ২০১৪ সালে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর সহশিল্পী মোহাম্মদ হানিফ পাপ্পু ডেনমার্কে গিয়েছিলেন ছবি আঁকতে। সেখানে তাঁদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় প্যারিসের ‘প্যালেই ডি টোকিও’ স্টুডিওতে, ২০১৯ সালে ‘সিটি প্রিন্সেস’ নামে একটি প্রদর্শনীতে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক ঢাকা আর্ট সামিটে মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর দলের সিনেমার ব্যানারের আদলে আঁকা একটি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়। তবে তাতে নায়ক–নায়িকার পরিবর্তে আঁকা হয়েছিল আফ্রিকা ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এসব আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে মোহাম্মদ শোয়েবের পরিচিত হয়ে ওঠার পেছনে সহায়তা করেছে ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন শিল্প কেন্দ্র ‘যথাশিল্প’।
‘প্রায় চল্লিশ বছর সিনেমার ব্যানার আঁকলেন। পেছনে ফিরে তাকালে কী মনে হয় আপনার?’ প্রশ্ন শুনে মোহাম্মদ শোয়েব হাসেন। বৃষ্টির শব্দে তাঁর হাসির শব্দ চাপা পড়ে যায়। ‘যা করার আছিল, করছি। মন দিয়া করছি। আর কী?’ তাঁর নীরবতার আড়ালে আরও অনেক কিছু আছে। আছে শিল্পের প্রতি সীমাহীন দরদ। আছে নিঃসিম শূন্যতা। আছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ১৯৯৪ সালে স্ত্রী বানু বেগম মৃত্যুবরণ করেছেন। পরের বছরই তাঁর বড় মেয়ে রিমা আক্তার মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। অন্য সন্তানদের বড় করেছেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা—ছেলে ইমরান, মেয়ে সীমা আক্তার ও সোমা আক্তার বড় হয়েছেন। তাঁদের বিয়েও হয়ে গেছে। এখন নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসেছে জীবনে।
যথাশিল্পের কর্ণধার গবেষক ও শিল্পী শাওন আকন্দের কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে মোহাম্মদ শোয়েবের গুরুত্ব কী। কোনো দ্বিধা ছাড়াই শাওন আকন্দ বলেন, ‘হি ইজ দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস। উনিশ শতকে রাজা রবি বর্মার হাতে তৈরি হয়েছিল এক বিশেষ শিল্প ঘরানার। পরবর্তীকালে ভারতের কোলাপুরের বাবুরাও পেইন্টারের হাত ধরে এবং মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আলো–বাতাসে সে শিল্প ঘরানা সিনেমার ব্যানার শিল্প হিসেবে বেড়ে উঠেছিল। মকবুল ফিদা হুসেন কিংবা আমাদের নিতুন কুণ্ডও এক সময় যুক্ত ছিলেন এ বিশেষ ধরনের শিল্পচর্চায়। উনিশ শতকে গড়ে ওঠা সিনেমা ব্যানার পেইন্টিংয়ের নিরিখে বাংলাদেশে মোহাম্মদ শোয়েব সম্ভবত শেষ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী।’
বৃষ্টি পড়ে কামরাঙ্গীরচরে। বোদনার অনুষ্টুপ ছন্দ বেজে যায় মোহাম্মদ শোয়েবের টিনের চালে। কামরাঙ্গীরচর, চরের এ ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ ঘর সিনেমা ব্যানারের রঙিন ক্যানভাস নয়। এখানে রং–তুলি হাতে নিয়ে বসে নেই কোনো ওস্তাদ। বসে আছেন এক বিধ্বস্ত শিল্পী—দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস মোহাম্মদ শোয়েব।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে দেশে। শোকাহত দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন তাঁরা। অনেকেই করেছেন স্মৃতিচারণা। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
৫ ঘণ্টা আগে
‘মধ্যবিত্ত’ দিয়ে বছর শুরু, ‘খিলাড়ি’ দিয়ে বছর শেষ। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে মুক্তি পেয়েছে ৪৬টি বাংলা সিনেমা। কিন্তু আলোচনা তৈরি করতে পেরেছে কয়টি, সেটাই বড় প্রশ্ন। দুই ঈদ ছাড়া ইদানীং বাংলা সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে না। নির্মাতারাও চান যেকোনো উৎসবে সিনেমা আনতে।
১৩ ঘণ্টা আগে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দেশজুড়ে। শোক প্রকাশ করে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন সংগীতশিল্পী পুতুল।
১ দিন আগে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও।
১ দিন আগেসাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে দেশে। শোকাহত দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন তাঁরা। অনেকেই করেছেন স্মৃতিচারণা। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
বিনোদন ডেস্ক

তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে
—হানিফ সংকেত, নির্মাতা ও উপস্থাপক
সর্বজন শ্রদ্ধেয় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে জাতি হারিয়েছে একজন অভিভাবক। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। তাঁর শোকাবহ পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি গভীর সমবেদনা।
আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে
—মনির খান, সংগীতশিল্পী
২০১১ সালে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। হাতে পুরস্কার ও গলায় মেডেল পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে।’ একপর্যায়ে তিনি আমাকে জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক কমিটির সহসংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বানালেন। সেই সুবাদে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। উনি বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন, নির্দেশনা দিতেন কীভাবে কাজ করতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমার, কোনোভাবেই মানতে পারছি না। কিছু চলে যাওয়া পাহাড় সমান বেদনার। অনেকবার তিনি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছেন। বারবার এসেছে তাঁর বিদেশে যাওয়ার প্রসঙ্গ। উনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘এ দেশের মাটি ও মানুষ ছাড়া বিদেশের মাটিতে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেশের মানুষের অন্তরেই আমার বসবাস। এখানেই আমার মৃত্যু হবে, এই মাটিতেই আমার কবর হবে।’ তাঁর কথাই সত্য হলো।
তিনি দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ
—কনকচাঁপা, সংগীতশিল্পী
চলে গেলেন স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আপসহীন অবিসংবাদিত নেতা বেগম খালেদা জিয়া। বারবার তাঁর নামের সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘আপসহীন’। তিনি অন্যায়, মিথ্যাচার, স্বৈরচারিতার কাছে মাথা নত করেননি। দেশের মানুষের মায়ায় তিনি সংসার, সন্তান, আরাম-আয়েশি বিলাসী জীবন—কিছুর তোয়াক্কা করেন নাই। আফসোস, একটা মিথ্যা মামলার কারণে তিনি সুন্দরভাবে জীবনের সমাপ্তি টানতে পারলেন না। জেলখানায় তাঁর জীবন কীভাবে কেটেছে তা ভেবে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত। অথচ তিনি থাকতেন নির্ভার! এ জন্যই তিনি অকুতোভয় জীবনযোদ্ধা, মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানবী। তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণ ছিল, ‘জীবনে যা কিছু হয়ে যাক এই দেশ, এই দেশের মানুষ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।’ দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ তিনি, তিনিই প্রকৃত রাজনীতিবিদ এবং খাঁটি দেশনেতা। আমাদের দুঃখ রাখার জায়গা নেই যে আমরা তাঁকে সঠিক মর্যাদা দিতে পারিনি।
বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন তিনি
—জয়া আহসান, অভিনেত্রী
বেগম খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন। সামনে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। তাঁর উপস্থিতির মূল্যই ছিল অসামান্য। রাজনীতিতে মত-পথের বিরোধ থাকবে। কিন্তু সামরিক শাসনবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম জিয়া ছিলেন প্রধান একটি চরিত্র, সাহসে ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল। তাঁর সঙ্গে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর আত্মা চির প্রশান্তি লাভ করুক।
শত প্রতিকূলতায়ও মর্যাদা ও ধীর-স্থিরতায় নিজেকে ধারণ করেছেন তিনি
—আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী
আমাদের জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর নেতৃত্ব ও দীর্ঘদিনের জনসেবা বাংলাদেশের ওপর স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। তিনি অসাধারণ এক জীবন যাপন করেছেন। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও যে মর্যাদা ও ধীর-স্থিরতায় নিজেকে ধারণ করেছেন তিনি, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। জাতি তাঁকে সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
তাঁর প্রয়াণে দেশ ও জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল
—বেবী নাজনীন, সংগীতশিল্পী
বেগম খালেদা জিয়া দেশ এবং মানুষের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, রাজনীতির ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁকে হারানোর দুঃখ মানুষের মনে সব সময় বিরাজমান থাকবে।
খালেদা জিয়া হলো একটা ইনস্টিটিউশন। তাঁর সঙ্গে থেকে অনেকে অনেক কিছু শিখেছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষের অভিভাবক ছিলেন। দলের নেতা-কর্মীদের হাতে-কলমে শিখিয়েছেন কীভাবে রাজনীতি করতে হয়। আমারও হাতেখড়ি তিনিই দিয়েছেন।
তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। আমার মতো তাঁর কাছাকাছি আর কেউ হয়তো থাকেনি। উনি জেলে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। খুব আদর ও স্নেহ করে বলেছিলেন, ‘ভালো থেকো, নিজের যত্ন নিও। তোমরা দেশ বাঁচাও এবং দেশের মানুষ বাঁচাও।’
এই অন্তিম যাত্রায় তিনি যেমন মানুষের দোয়া নিয়ে গেছেন, তেমনি দেশের মানুষের জন্য রেখে গেছেন আশীর্বাদ, যা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানুষের মাঝে গণতান্ত্রিক শক্তি হয়ে কাজ করবে।

তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে
—হানিফ সংকেত, নির্মাতা ও উপস্থাপক
সর্বজন শ্রদ্ধেয় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে জাতি হারিয়েছে একজন অভিভাবক। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। তাঁর শোকাবহ পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি গভীর সমবেদনা।
আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে
—মনির খান, সংগীতশিল্পী
২০১১ সালে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। হাতে পুরস্কার ও গলায় মেডেল পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে।’ একপর্যায়ে তিনি আমাকে জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক কমিটির সহসংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বানালেন। সেই সুবাদে ম্যাডামের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো। উনি বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন, নির্দেশনা দিতেন কীভাবে কাজ করতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমার, কোনোভাবেই মানতে পারছি না। কিছু চলে যাওয়া পাহাড় সমান বেদনার। অনেকবার তিনি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছেন। বারবার এসেছে তাঁর বিদেশে যাওয়ার প্রসঙ্গ। উনি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘এ দেশের মাটি ও মানুষ ছাড়া বিদেশের মাটিতে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেশের মানুষের অন্তরেই আমার বসবাস। এখানেই আমার মৃত্যু হবে, এই মাটিতেই আমার কবর হবে।’ তাঁর কথাই সত্য হলো।
তিনি দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ
—কনকচাঁপা, সংগীতশিল্পী
চলে গেলেন স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আপসহীন অবিসংবাদিত নেতা বেগম খালেদা জিয়া। বারবার তাঁর নামের সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘আপসহীন’। তিনি অন্যায়, মিথ্যাচার, স্বৈরচারিতার কাছে মাথা নত করেননি। দেশের মানুষের মায়ায় তিনি সংসার, সন্তান, আরাম-আয়েশি বিলাসী জীবন—কিছুর তোয়াক্কা করেন নাই। আফসোস, একটা মিথ্যা মামলার কারণে তিনি সুন্দরভাবে জীবনের সমাপ্তি টানতে পারলেন না। জেলখানায় তাঁর জীবন কীভাবে কেটেছে তা ভেবে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত। অথচ তিনি থাকতেন নির্ভার! এ জন্যই তিনি অকুতোভয় জীবনযোদ্ধা, মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানবী। তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণ ছিল, ‘জীবনে যা কিছু হয়ে যাক এই দেশ, এই দেশের মানুষ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।’ দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ তিনি, তিনিই প্রকৃত রাজনীতিবিদ এবং খাঁটি দেশনেতা। আমাদের দুঃখ রাখার জায়গা নেই যে আমরা তাঁকে সঠিক মর্যাদা দিতে পারিনি।
বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন তিনি
—জয়া আহসান, অভিনেত্রী
বেগম খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন। সামনে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। তাঁর উপস্থিতির মূল্যই ছিল অসামান্য। রাজনীতিতে মত-পথের বিরোধ থাকবে। কিন্তু সামরিক শাসনবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম জিয়া ছিলেন প্রধান একটি চরিত্র, সাহসে ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল। তাঁর সঙ্গে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর আত্মা চির প্রশান্তি লাভ করুক।
শত প্রতিকূলতায়ও মর্যাদা ও ধীর-স্থিরতায় নিজেকে ধারণ করেছেন তিনি
—আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী
আমাদের জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর নেতৃত্ব ও দীর্ঘদিনের জনসেবা বাংলাদেশের ওপর স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। তিনি অসাধারণ এক জীবন যাপন করেছেন। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও যে মর্যাদা ও ধীর-স্থিরতায় নিজেকে ধারণ করেছেন তিনি, তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। জাতি তাঁকে সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
তাঁর প্রয়াণে দেশ ও জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল
—বেবী নাজনীন, সংগীতশিল্পী
বেগম খালেদা জিয়া দেশ এবং মানুষের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, রাজনীতির ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ ও জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁকে হারানোর দুঃখ মানুষের মনে সব সময় বিরাজমান থাকবে।
খালেদা জিয়া হলো একটা ইনস্টিটিউশন। তাঁর সঙ্গে থেকে অনেকে অনেক কিছু শিখেছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষের অভিভাবক ছিলেন। দলের নেতা-কর্মীদের হাতে-কলমে শিখিয়েছেন কীভাবে রাজনীতি করতে হয়। আমারও হাতেখড়ি তিনিই দিয়েছেন।
তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। আমার মতো তাঁর কাছাকাছি আর কেউ হয়তো থাকেনি। উনি জেলে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। খুব আদর ও স্নেহ করে বলেছিলেন, ‘ভালো থেকো, নিজের যত্ন নিও। তোমরা দেশ বাঁচাও এবং দেশের মানুষ বাঁচাও।’
এই অন্তিম যাত্রায় তিনি যেমন মানুষের দোয়া নিয়ে গেছেন, তেমনি দেশের মানুষের জন্য রেখে গেছেন আশীর্বাদ, যা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানুষের মাঝে গণতান্ত্রিক শক্তি হয়ে কাজ করবে।

গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১।
২৯ জুন ২০২১
‘মধ্যবিত্ত’ দিয়ে বছর শুরু, ‘খিলাড়ি’ দিয়ে বছর শেষ। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে মুক্তি পেয়েছে ৪৬টি বাংলা সিনেমা। কিন্তু আলোচনা তৈরি করতে পেরেছে কয়টি, সেটাই বড় প্রশ্ন। দুই ঈদ ছাড়া ইদানীং বাংলা সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে না। নির্মাতারাও চান যেকোনো উৎসবে সিনেমা আনতে।
১৩ ঘণ্টা আগে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দেশজুড়ে। শোক প্রকাশ করে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন সংগীতশিল্পী পুতুল।
১ দিন আগে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও।
১ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

‘মধ্যবিত্ত’ দিয়ে বছর শুরু, ‘খিলাড়ি’ দিয়ে বছর শেষ। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে মুক্তি পেয়েছে ৪৬টি বাংলা সিনেমা। কিন্তু আলোচনা তৈরি করতে পেরেছে কয়টি, সেটাই বড় প্রশ্ন। দুই ঈদ ছাড়া ইদানীং বাংলা সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে না। নির্মাতারাও চান যেকোনো উৎসবে সিনেমা আনতে। ফলে পুরো বছর সিনেমার খরায় ভুগতে থাকে প্রেক্ষাগৃহগুলো।
এই সংকট কিছুটা হলেও পূরণ করেছে সরকারি অনুদানের এবং স্বাধীন নির্মাতাদের কম বাজেটের সিনেমাগুলো। এ বছর যত সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, বেশির ভাগই এ ধরনের। অনেক বছর ধরে আটকে থাকা সিনেমা মুক্তির হিড়িক ছিল বছরজুড়ে, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে। প্রচার ছাড়া অনেকটা দায়সারাভাবে মুক্তি দেওয়া এসব সিনেমা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তো ছিলই না, নির্মাতারাও তাঁদের কাজ পৌঁছে দিতে অত গরজ দেখাননি। যেন অনেক দিনের বোঝা কাঁধ থেকে নামাতে পেরে দায়মুক্ত হয়েছেন তাঁরা! ‘মেকাপ’, ‘রিকশা গার্ল’, ‘জলে জ্বলে তারা’, ‘ময়না’, ‘অন্তরাত্মা’, ‘অন্যদিন’, ‘জলরঙ’, ‘নন্দিনী’, ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’, ‘মন যে বোঝে না’সহ ১৯টি সিনেমা আছে এ তালিকায়।
২০২৪ সালের সঙ্গে তুলনা টানলে এ বছর ঢালিউডে হিট সিনেমার সংখ্যা বেড়েছে। শাকিবের ‘তুফান’ই ছিল গত বছরের একমাত্র ব্যবসাসফল সিনেমা। তবে ২০২৫ সালে পাঁচটির বেশি সিনেমা দর্শকদের হলমুখী করতে পেরেছে। যদিও বড় বাজেট, বড় তারকা আর বড় ক্যানভাসের সিনেমাগুলোই সব মনোযোগ কেড়ে নেয়। চলচ্চিত্রের মতো গ্ল্যামারাস ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয়তা আর টাকার উদ্যাপনই স্বাভাবিক। যে কারণে, এ বছরও শাকিব খানের ‘বরবাদ’, ‘তাণ্ডব’ এবং আফরান নিশোর ‘দাগি’কে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা ও প্রত্যাশা ছিল। বরবাদ হিট হলেও অন্য দুটি প্রত্যাশিত ব্যবসা করতে পারেনি।
তবে একটা অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এবার। বড় বাজেট আর বড় আলোচনাকে টেক্কা দিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে তুলনায় কম বাজেটের কিছু সিনেমা। প্রমাণ করেছে, তারকার চেয়ে গল্পের শক্তি বেশি। রোজার ঈদে যেমন বরবাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছে মোশাররফ করিমের ‘চক্কর ৩০২’ ও সিয়ামের ‘জংলি’, তেমনি কোরবানির ঈদে তান্ডবকে পেছনে ফেলে দিয়েছে জাহিদ হাসানের ‘উৎসব’। নভেম্বরে মুক্তি পাওয়া ‘দেলুপি’ হলে অতটা দর্শক টানতে না পারলেও ভালো প্রচেষ্টা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
বিদেশের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রশংসা পাওয়া ‘সাবা’, ‘বাড়ির নাম শাহানা’, ‘ফেরেশতে’, ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমাগুলো দেশে মুক্তির পর সমালোচকদের মনোযোগ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় সাফল্য এনে দিয়েছে ‘আলী’। ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে প্রথমবার স্পেশাল মেনশন পুরস্কার জিতে নেয় আদনান আল রাজীব পরিচালিত সিনেমাটি। কান উৎসবে এই জয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা সিনেমার পরিচিতি আরও বেড়েছে। এই অর্জন উৎসাহিত করেছে দেশের তরুণ নির্মাতাদের।
তবে চলচ্চিত্র যাদের রুটি-রুজি, তাঁদের জন্য বছরটা খুব সুখকর ছিল না। শিল্পী থেকে কলাকুশলীরা বছরের একটা লম্বা সময় বেকার কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, নতুন সিনেমার ঘোষণা এসেছে কম, শুটিংয়ের রমরমা তেমন ছিল না। নতুন বছরে এই অবস্থা বদলে যাবে, চলচ্চিত্রপাড়া আবারও ব্যস্ত হবে—এটাই প্রত্যাশা।

আলোচিত ঘটনা
বিয়ে ও বিচ্ছেদ
২০ ডিসেম্বর অভিনেত্রী আফসানা আরা বিন্দু জানান, ২০২২ সালে ভেঙে গেছে ব্যবসায়ী আসিফ সালাহউদ্দিন মালিকের সঙ্গে তাঁর সংসার।
৩০ ডিসেম্বর সংগীতশিল্পী সালমার সঙ্গে বিচ্ছেদের খবর জানান তাঁর স্বামী সানাউল্লাহ নূরে সাগর।
হারিয়েছি যাঁদের
অঞ্জনা রহমান: ৪ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।

প্রবীর মিত্র: ৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন: ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন। কয়েক বছর ধরে লিভারের জটিলতায় ভুগছিলেন অঞ্জন।

সন্জীদা খাতুন: ২৫ মার্চ মারা যান বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্জীদা খাতুন। তিনি ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, কিডনি রোগে ভুগছিলেন।
গুলশান আরা আহমেদ: ১৫ এপ্রিল মারা যান ছোট পর্দার অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ। হার্ট অ্যাটাক করলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: ১০ মে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান সংগীতব্যক্তিত্ব মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
জীনাত রেহানা: ‘সাগরের তীর থেকে’ গানের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা মারা যান ২ জুলাই। দীর্ঘদিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
এ কে রাতুল: জিম করতে গিয়ে ২৭ জুলাই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান মিউজিশিয়ান এ কে রাতুল। তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা জসীমের মেজ ছেলে।
অমরেশ রায় চৌধুরী: ১২ আগস্ট মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী অমরেশ রায় চৌধুরী।

ফরিদা পারভীন: ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
সেলিম হায়দার: ফিডব্যাক ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গিটারিস্ট সেলিম হায়দার মারা যান ২৭ নভেম্বর। ক্যানসারসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সংগীত ক্যারিয়ারে ফিডব্যাকসহ বাজিয়েছেন বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের সঙ্গে। গত ৩০ বছর রুনা লায়লার সঙ্গেও নিয়মিত বাজিয়েছেন তিনি।
জেনস সুমন: গত ২৮ নভেম্বর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সংগীতশিল্পী জেনস সুমন। ১৬ বছরের বিরতি কাটিয়ে গত বছর আবার গানে ফিরেছিলেন ‘একটা চাদর হবে’খ্যাত এই গায়ক।

‘মধ্যবিত্ত’ দিয়ে বছর শুরু, ‘খিলাড়ি’ দিয়ে বছর শেষ। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে মুক্তি পেয়েছে ৪৬টি বাংলা সিনেমা। কিন্তু আলোচনা তৈরি করতে পেরেছে কয়টি, সেটাই বড় প্রশ্ন। দুই ঈদ ছাড়া ইদানীং বাংলা সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে না। নির্মাতারাও চান যেকোনো উৎসবে সিনেমা আনতে। ফলে পুরো বছর সিনেমার খরায় ভুগতে থাকে প্রেক্ষাগৃহগুলো।
এই সংকট কিছুটা হলেও পূরণ করেছে সরকারি অনুদানের এবং স্বাধীন নির্মাতাদের কম বাজেটের সিনেমাগুলো। এ বছর যত সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, বেশির ভাগই এ ধরনের। অনেক বছর ধরে আটকে থাকা সিনেমা মুক্তির হিড়িক ছিল বছরজুড়ে, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে। প্রচার ছাড়া অনেকটা দায়সারাভাবে মুক্তি দেওয়া এসব সিনেমা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তো ছিলই না, নির্মাতারাও তাঁদের কাজ পৌঁছে দিতে অত গরজ দেখাননি। যেন অনেক দিনের বোঝা কাঁধ থেকে নামাতে পেরে দায়মুক্ত হয়েছেন তাঁরা! ‘মেকাপ’, ‘রিকশা গার্ল’, ‘জলে জ্বলে তারা’, ‘ময়না’, ‘অন্তরাত্মা’, ‘অন্যদিন’, ‘জলরঙ’, ‘নন্দিনী’, ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’, ‘মন যে বোঝে না’সহ ১৯টি সিনেমা আছে এ তালিকায়।
২০২৪ সালের সঙ্গে তুলনা টানলে এ বছর ঢালিউডে হিট সিনেমার সংখ্যা বেড়েছে। শাকিবের ‘তুফান’ই ছিল গত বছরের একমাত্র ব্যবসাসফল সিনেমা। তবে ২০২৫ সালে পাঁচটির বেশি সিনেমা দর্শকদের হলমুখী করতে পেরেছে। যদিও বড় বাজেট, বড় তারকা আর বড় ক্যানভাসের সিনেমাগুলোই সব মনোযোগ কেড়ে নেয়। চলচ্চিত্রের মতো গ্ল্যামারাস ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয়তা আর টাকার উদ্যাপনই স্বাভাবিক। যে কারণে, এ বছরও শাকিব খানের ‘বরবাদ’, ‘তাণ্ডব’ এবং আফরান নিশোর ‘দাগি’কে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা ও প্রত্যাশা ছিল। বরবাদ হিট হলেও অন্য দুটি প্রত্যাশিত ব্যবসা করতে পারেনি।
তবে একটা অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এবার। বড় বাজেট আর বড় আলোচনাকে টেক্কা দিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে তুলনায় কম বাজেটের কিছু সিনেমা। প্রমাণ করেছে, তারকার চেয়ে গল্পের শক্তি বেশি। রোজার ঈদে যেমন বরবাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছে মোশাররফ করিমের ‘চক্কর ৩০২’ ও সিয়ামের ‘জংলি’, তেমনি কোরবানির ঈদে তান্ডবকে পেছনে ফেলে দিয়েছে জাহিদ হাসানের ‘উৎসব’। নভেম্বরে মুক্তি পাওয়া ‘দেলুপি’ হলে অতটা দর্শক টানতে না পারলেও ভালো প্রচেষ্টা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
বিদেশের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রশংসা পাওয়া ‘সাবা’, ‘বাড়ির নাম শাহানা’, ‘ফেরেশতে’, ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমাগুলো দেশে মুক্তির পর সমালোচকদের মনোযোগ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় সাফল্য এনে দিয়েছে ‘আলী’। ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে প্রথমবার স্পেশাল মেনশন পুরস্কার জিতে নেয় আদনান আল রাজীব পরিচালিত সিনেমাটি। কান উৎসবে এই জয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা সিনেমার পরিচিতি আরও বেড়েছে। এই অর্জন উৎসাহিত করেছে দেশের তরুণ নির্মাতাদের।
তবে চলচ্চিত্র যাদের রুটি-রুজি, তাঁদের জন্য বছরটা খুব সুখকর ছিল না। শিল্পী থেকে কলাকুশলীরা বছরের একটা লম্বা সময় বেকার কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, নতুন সিনেমার ঘোষণা এসেছে কম, শুটিংয়ের রমরমা তেমন ছিল না। নতুন বছরে এই অবস্থা বদলে যাবে, চলচ্চিত্রপাড়া আবারও ব্যস্ত হবে—এটাই প্রত্যাশা।

আলোচিত ঘটনা
বিয়ে ও বিচ্ছেদ
২০ ডিসেম্বর অভিনেত্রী আফসানা আরা বিন্দু জানান, ২০২২ সালে ভেঙে গেছে ব্যবসায়ী আসিফ সালাহউদ্দিন মালিকের সঙ্গে তাঁর সংসার।
৩০ ডিসেম্বর সংগীতশিল্পী সালমার সঙ্গে বিচ্ছেদের খবর জানান তাঁর স্বামী সানাউল্লাহ নূরে সাগর।
হারিয়েছি যাঁদের
অঞ্জনা রহমান: ৪ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।

প্রবীর মিত্র: ৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
জাহিদুর রহিম অঞ্জন: ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন। কয়েক বছর ধরে লিভারের জটিলতায় ভুগছিলেন অঞ্জন।

সন্জীদা খাতুন: ২৫ মার্চ মারা যান বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সন্জীদা খাতুন। তিনি ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, কিডনি রোগে ভুগছিলেন।
গুলশান আরা আহমেদ: ১৫ এপ্রিল মারা যান ছোট পর্দার অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ। হার্ট অ্যাটাক করলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: ১০ মে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান সংগীতব্যক্তিত্ব মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
জীনাত রেহানা: ‘সাগরের তীর থেকে’ গানের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা মারা যান ২ জুলাই। দীর্ঘদিন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
এ কে রাতুল: জিম করতে গিয়ে ২৭ জুলাই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান মিউজিশিয়ান এ কে রাতুল। তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা জসীমের মেজ ছেলে।
অমরেশ রায় চৌধুরী: ১২ আগস্ট মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী অমরেশ রায় চৌধুরী।

ফরিদা পারভীন: ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান লালনসংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
সেলিম হায়দার: ফিডব্যাক ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গিটারিস্ট সেলিম হায়দার মারা যান ২৭ নভেম্বর। ক্যানসারসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সংগীত ক্যারিয়ারে ফিডব্যাকসহ বাজিয়েছেন বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের সঙ্গে। গত ৩০ বছর রুনা লায়লার সঙ্গেও নিয়মিত বাজিয়েছেন তিনি।
জেনস সুমন: গত ২৮ নভেম্বর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সংগীতশিল্পী জেনস সুমন। ১৬ বছরের বিরতি কাটিয়ে গত বছর আবার গানে ফিরেছিলেন ‘একটা চাদর হবে’খ্যাত এই গায়ক।

গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১।
২৯ জুন ২০২১
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে দেশে। শোকাহত দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন তাঁরা। অনেকেই করেছেন স্মৃতিচারণা। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
৫ ঘণ্টা আগে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দেশজুড়ে। শোক প্রকাশ করে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন সংগীতশিল্পী পুতুল।
১ দিন আগে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও।
১ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও। শোক জানিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি ভাগ করেছেন সংগীতশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল।
খালেদা জিয়াকে প্রথমবার দেখার স্মৃতি জানিয়ে ফেসবুকে পুতুল লেখেন, ‘জীবনে প্রথম তাঁকে দেখেছিলাম শৈশবে; ছুঁয়েছিলাম তাঁর তুলতুলে হাত। কী অভূতপূর্ব সেই অনুভূতি! বিজয়ী হয়ে যত না আনন্দ হয়েছিল, তার চাইতে কোনো অংশে কম ছিল না তাঁকে ছুঁতে পারার আনন্দ। পুরস্কার নিতে নিতে তাকিয়েছিলাম তাঁর চোখ দুটোর দিকে। মনে হয়েছিল এক মোম দিয়ে গড়া মানবী আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছেন। ধূসর চুল আর শুভ্র শাড়িতে মনে হয়েছিল রাষ্ট্রপ্রধান হতে হলে বোধ হয় এতটাই আভিজাত্য নিজের ভেতর ধারণ করতে হয়।’
বড় হওয়ার পার খালেদা জিয়ার সামনে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে পুতুলের। সেই স্মৃতির কথা জানিয়ে পুতুল লেখেন, ‘বড় হওয়ার পর আবার গান গেয়েছি তাঁর সামনে। তত দিনে সংগীতাঙ্গনে পেশাদার শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি। তিনি মঞ্চে বসে, তার ঠিক কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে একই মঞ্চে গাইছি। তিনি আদর করেছিলেন সেদিন আমার পরিবেশনা শেষে। বুঝেছিলাম তিনি একজন সংস্কৃতিপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী।’
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পুতুল লেখেন, ‘একটা অধ্যায়ের শেষ হলো। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ওপারে চলে গেছেন, যিনি এ দেশের লাখো তরুণীকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সাধারণ একজন গৃহবধূ হয়েও আত্মবিশ্বাসের জোরে অসাধারণ হয়ে ওঠা যায়। শুধু অসাধারণ নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। জন্ম থেকে রাজনীতির কেবল দীর্ঘ প্রেক্ষাপট থাকলেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়, এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে নিজের প্রজ্ঞা আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে তিনবার তিনি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভালো থাকবেন মাননীয়া। ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে...।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও। শোক জানিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি ভাগ করেছেন সংগীতশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল।
খালেদা জিয়াকে প্রথমবার দেখার স্মৃতি জানিয়ে ফেসবুকে পুতুল লেখেন, ‘জীবনে প্রথম তাঁকে দেখেছিলাম শৈশবে; ছুঁয়েছিলাম তাঁর তুলতুলে হাত। কী অভূতপূর্ব সেই অনুভূতি! বিজয়ী হয়ে যত না আনন্দ হয়েছিল, তার চাইতে কোনো অংশে কম ছিল না তাঁকে ছুঁতে পারার আনন্দ। পুরস্কার নিতে নিতে তাকিয়েছিলাম তাঁর চোখ দুটোর দিকে। মনে হয়েছিল এক মোম দিয়ে গড়া মানবী আমার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছেন। ধূসর চুল আর শুভ্র শাড়িতে মনে হয়েছিল রাষ্ট্রপ্রধান হতে হলে বোধ হয় এতটাই আভিজাত্য নিজের ভেতর ধারণ করতে হয়।’
বড় হওয়ার পার খালেদা জিয়ার সামনে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে পুতুলের। সেই স্মৃতির কথা জানিয়ে পুতুল লেখেন, ‘বড় হওয়ার পর আবার গান গেয়েছি তাঁর সামনে। তত দিনে সংগীতাঙ্গনে পেশাদার শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছি। তিনি মঞ্চে বসে, তার ঠিক কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে একই মঞ্চে গাইছি। তিনি আদর করেছিলেন সেদিন আমার পরিবেশনা শেষে। বুঝেছিলাম তিনি একজন সংস্কৃতিপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী।’
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পুতুল লেখেন, ‘একটা অধ্যায়ের শেষ হলো। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ওপারে চলে গেছেন, যিনি এ দেশের লাখো তরুণীকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সাধারণ একজন গৃহবধূ হয়েও আত্মবিশ্বাসের জোরে অসাধারণ হয়ে ওঠা যায়। শুধু অসাধারণ নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। জন্ম থেকে রাজনীতির কেবল দীর্ঘ প্রেক্ষাপট থাকলেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়, এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে নিজের প্রজ্ঞা আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে তিনবার তিনি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভালো থাকবেন মাননীয়া। ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে...।’

গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১।
২৯ জুন ২০২১
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে দেশে। শোকাহত দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন তাঁরা। অনেকেই করেছেন স্মৃতিচারণা। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
৫ ঘণ্টা আগে
‘মধ্যবিত্ত’ দিয়ে বছর শুরু, ‘খিলাড়ি’ দিয়ে বছর শেষ। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে মুক্তি পেয়েছে ৪৬টি বাংলা সিনেমা। কিন্তু আলোচনা তৈরি করতে পেরেছে কয়টি, সেটাই বড় প্রশ্ন। দুই ঈদ ছাড়া ইদানীং বাংলা সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে না। নির্মাতারাও চান যেকোনো উৎসবে সিনেমা আনতে।
১৩ ঘণ্টা আগে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও।
১ দিন আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন।
ফেসবুকে জয়া আহসান লেখেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন। সামনে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। তাঁর উপস্থিতির মূল্যই ছিল অসামান্য।’
জয়া আরও লেখেন, ‘রাজনীতিতে মত-পথের বিরোধ থাকবে। কিন্তু সামরিক শাসনবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম জিয়া ছিলেন প্রধান একটি চরিত্র, সাহসে ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল। তাঁর সঙ্গে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর আত্মা চিরপ্রশান্তি লাভ করুক।’
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। আজ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টার মারা যান তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশজুড়ে। শোক জানাচ্ছেন শোবিজের তারকারাও। খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন।
ফেসবুকে জয়া আহসান লেখেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বড় দুঃসময়ে বিদায় নিলেন। সামনে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। তাঁর উপস্থিতির মূল্যই ছিল অসামান্য।’
জয়া আরও লেখেন, ‘রাজনীতিতে মত-পথের বিরোধ থাকবে। কিন্তু সামরিক শাসনবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম জিয়া ছিলেন প্রধান একটি চরিত্র, সাহসে ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল। তাঁর সঙ্গে দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তাঁর আত্মা চিরপ্রশান্তি লাভ করুক।’
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। আজ ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টার মারা যান তিনি।

গল্পটা ১৯৪৭–এর সুতোয় বাঁধা। কলকাতার রাজাবাজারে ছিল তাঁর বাপ–দাদার বাস। ছেচল্লিশের দাঙ্গা আর সাতচল্লিশের দেশভাগের ফেরে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় মোহাম্মদ শোয়েবের পরিবার—ঠিকানা নবাবপুর রোড, ঢাকা ১।
২৯ জুন ২০২১
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমেছে দেশে। শোকাহত দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে নিজেদের অনুভূতি জানিয়েছেন তাঁরা। অনেকেই করেছেন স্মৃতিচারণা। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
৫ ঘণ্টা আগে
‘মধ্যবিত্ত’ দিয়ে বছর শুরু, ‘খিলাড়ি’ দিয়ে বছর শেষ। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে মুক্তি পেয়েছে ৪৬টি বাংলা সিনেমা। কিন্তু আলোচনা তৈরি করতে পেরেছে কয়টি, সেটাই বড় প্রশ্ন। দুই ঈদ ছাড়া ইদানীং বাংলা সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে না। নির্মাতারাও চান যেকোনো উৎসবে সিনেমা আনতে।
১৩ ঘণ্টা আগে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দেশজুড়ে। শোক প্রকাশ করে তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন সংগীতশিল্পী পুতুল।
১ দিন আগে