Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

অভিনয়ের বিশালতা এক জীবনে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়: আলমগীর

অভিনেতা আলমগীরের বাসায়; ছবি: সংগৃহীত

আজ ৩ এপ্রিল। অভিনেতা আলমগীরের জন্মদিন। আগে ঘটা করে জন্মদিন পালন করলেও, এখন পরিবারের সঙ্গেই কাটে দিনটি। টেলিফোনে কথা হলো আলমগীরের সঙ্গে, এবারের জন্মদিন উদ্‌যাপন নিয়ে বললেন তিনি। গত বছরেও জন্মদিনের ঠিক আগে কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে, তাঁর বাসায়। আলমগীরের সঙ্গে খান মুহাম্মদ রুমেলের কথোপকথনের অংশবিশেষ রইল এই প্রতিবেদনে

খান মুহাম্মদ রুমেল

আজ ৩ এপ্রিল। আলমগীরের জন্মদিন। না, মুঘল সম্রাট আলমগীর নন, তিনি নায়ক আলমগীর। অবশ্য এক অর্থে তিনিও সম্রাট। বাংলা চলচ্চিত্রের সম্রাট! জন্মদিনের শুভক্ষণে ফোন করি তাঁকে। একবার রিং বাজতেই রিসিভ করেন তিনি। সেই চিরপরিচিত ভরাট কণ্ঠ।

—হ্যালো!

—শুভ জন্মদিন!

—অনেক ধন্যবাদ। কেমন আছো?’ ফোনের অপর প্রান্তে তাঁর হাসি টের পাওয়া যায়।

—জি ভালো আছি। ৭৫ পেরোলেন আজ। কেমন লাগছে?

—৭৫ হয়ে গেছে আমার? বলো কি!

—জি

—ভালো লাগছে। ভালোই তো একটা দীর্ঘ জীবন পেলাম।

—জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো উচ্ছ্বাস কাজ করে?

—আমি তো এখনো সতেজ ও সুস্থ আছি। সুতরাং, কিছুটা ভালো লাগা তো কাজ করেই। তবে জন্মদিনে বিশেষ কোনো উৎসব নেই। ঘরোয়াভাবে কাটছে আজকের দিন। বাইরের কেউ আসবে না। হয়তো আজকে ছেলেমেয়েরা আসবে। তারা নিশ্চয়ই একটা কেক কাটবে। আমার এক মেয়ে দেশের বাইরে থাকে। ঈদ করতে ঢাকায় এসেছে। তার মেয়েরও জন্মদিন ১২ এপ্রিল। নানা–নাতি মিলে কেক কাটব। এই তো!

—এর বাইরে আর কিছু না?

—নাহ, আর কী? কত জন্মদিন তো চলে গেছে ব্যস্ততার ফাঁকে, টেরই পাইনি!

—জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?

—স্মৃতির কি আর শেষ আছে? তবে ছোটবেলায় ঘটা করে জন্মদিন পালন হতো। অনেক বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন আসত। এখন আর ওসব করি না। ঘরোয়াভাবে পরিবারের সঙ্গে কাটাই।...

সংক্ষিপ্ত কথোপকথন শেষ হলো। মনে পড়ে গেল গত বছর তাঁর জন্মদিনের ঠিক আগে বাসার ড্রয়িং রুমে বসে দীর্ঘ আলাপ হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। সেই এপ্রিলে চরম গরম ছিল। তীব্র তাপে পুড়ছিল চারপাশ। নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘণ্টা আগে পৌঁছে পায়চারি করছিলাম বাসার নিচে। খোঁজ পেয়ে তিনি ডেকে পাঠান। ঘরে ঢুকতেই গম্ভীর মুখ জিজ্ঞাসা—নিচে হাঁটাহাঁটি করছ কেন?

—না মানে আমার তো আরও আধা ঘণ্টা পরে আসার কথা। তাই সময় কাটানোর জন্য নিচে অপেক্ষা করছিলাম।

গাম্ভীর্যের মুখোশ খুলে এবার হাহা করে হাসেন তিনি।

—ভারি অদ্ভূত ছেলে তো তুমি? বলো কী জানতে চাও?

—জানতে চাই না তেমন কিছু। আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দিতে চাই।

কথা শুনে একটু থামেন তিনি। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকেন দেয়ালে টাঙানো নিজের একটা ছবির দিকে। সুন্দর গোছানো বিশাল ড্রয়িং রুমে দেয়ালে দেয়ালে আলমগীরের তারুণ্যের ছবি। এক পাশের দেয়ালজুড়ে কাঠের কারুকাজ করা হারমোনিয়াম, তানপুরা ও ফিল্মি ক্যামেরার ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি দেখে বোঝা যায় রুনা লায়লা আলমগীরের যুগলবন্দী জীবনকে ইঙ্গিত করছে এই কারুকাজ। তার নিচে থরে থরে সাজানো নানা পুরস্কার। তার মধ্যে অনেকগুলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পদক। দেয়াল থেকে চোখ ফিরিয়ে প্রশ্ন করি আলমগীরকে।

—পাঁচ দশকের বেশি সময়ের চলচ্চিত্রযাত্রায় পেছন ফিরলে অর্জনের খাতায় কী দেখেন?

ছোট করে একটুখানি হাসেন তিনি। বলেন, ‘অর্জন কী আছে? অর্জন তো কিছু নেই! যেটা স্বপ্ন দেখে, তার আশপাশে তো যেতে পারে না মানুষ। আমরা যখন যাত্রা শুরু করি, তখন চলচ্চিত্রের উড়ব উড়ব ভাব। তারপর আমরা যখন মধ্য গগণে, তখন চলচ্চিত্র উড়ছিল। কিন্তু এখন তো চলচ্চিত্র ভালো নেই। ভালো আছি কী করে বলব।’

—কোনো গ্রাফ তো আর সরল রেখায় চলে না। আপ অ্যান্ড ডাউন থাকে। এখন হয়তো একটু ডাউন। আবার চলচ্চিত্রের ওপরে ওঠার সম্ভাবনা কতটুকু দেখেন আপনি?

—আমি আশাবাদী লোক। এখন রাত চলছে। ভোর হবে আবার। সে আশা করি। কিন্তু একটু ভয় লাগে। আমরা সবাই মিলে হয়তো চেষ্টা করছি। কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিল্পী, কলাকুশলী, প্রযোজক ও পরিচালক মিলে কী করবে। আমাদের সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল লাগবে। মাল্টিপ্লেক্স তো একটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির পরিচয় হতে পারে না!

—আপনি বলেছিলেন মানুষ এক জীবনে স্বপ্ন ছুঁতে পারে না। কিন্তু স্বপ্ন তাড়া করে....

—হ্যাঁ, তাড়া তো আমি করেছি। এখনো করে চলেছি। দীলিপ কুমারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে অনেকবার। তিনি আমাকে বলেছেন, আলমগীর আমি অ্যাকটিংয়ের Aটাও এখনো শিখতে পারিনি। দীলিপ কুমার যদি এ কথা বলেন, তাহলে ভাব আমাদের অবস্থা কোথায়? অভিনয়ের যে বিশালতা, সেটা এক জনমে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে খুব বেশি নম্বর দিতে পারি না। দুই–তিন নম্বর হয়তো দেব, দশের মধ্যে।

—এই যে আপনি অভিনেতা হিসেবে নিজেকে দুই–তিন নম্বর দিচ্ছেন, আপনি দীলিপ কুমারের কথা বলছেন, এই যে একটা অতৃপ্তি, স্বপ্ন তাড়া করতে এই অতৃপ্তিই কি একজন শিল্পীকে এগিয়ে নেয়?

—হ্যাঁ, তাই হয়েছে গত পঞ্চাশ বছর ধরে। ধরো, একটা শট দিয়ে এলাম। পরে এসে ভাবছি, এটা এভাবে না করে ওভাবেও করতে পারতাম। এই যে ভাবনা, আমার কিন্তু রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল।

অভিনেতা আলমগীর; ছবি: সংগৃহীত
অভিনেতা আলমগীর; ছবি: সংগৃহীত

—আপনার নায়িকাদের নিয়ে বলুন। আপনার সময়ের সব নায়িকার সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে শাবানা–আলমগীর জুটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। দর্শক জুটি তৈরি করে নাকি পরিচালক তৈরি করেন, নাকি গল্পের প্রয়োজনেই হয়?

—আসলে এটা কেউ তৈরি করে না। এটা হয়ে যায়। আমি আর শাবানা প্ল্যান করে কোনো সিনেমা করিনি। আমার প্রথম সিনেমা রিলিজ হয় ১৯৭৩ সালে। আমি শুটিং শুরু করেছি ’৭২-এর ২৬ জুন। প্রথম সিনেমা রিলিজের আগে আরও চার–পাঁচটা সিনেমা হয়ে যায় আমার। শাবানার সঙ্গে আমার প্রথম সিনেমা ‘দস্যুরানী’ এরপর ‘অতিথি’, ‘জয় পরাজয়’। তিনটাই সুপার হিট হয়েছিল। পরিচালকেরা তো গল্প অনুযায়ী নায়ক–নায়িকা নেন। কিন্তু প্রডিউসারেরা চান সেলেবল কমোডিটি। তখন প্রডিউসারেরা বলতে থাকলেন, এমন গল্প নেন যেখানে আলমগীর-শাবানাকে নেওয়া যায়। আমাদের সময় আমরা সবাই কাজপাগল ছিলাম। প্রেমটেম করার সময় ছিল না আমাদের। এর ওপর পরিচালকদের চোখ, মারাত্মক চোখ। আমি ডায়লগ বাদ দিয়ে হিরোইনের সঙ্গে কথা বলছি, বকা শুনতে হতো, খুব বকা শুনতে হতো। শাবানা, কবরী ও ববিতা মানুষ হিসেবে অসাধারণ, শিল্পী হিসেবেও অসাধারণ। আসলে তাঁদের সম্পর্কে মন্তব্য করা আমার সাজে না। কারণ, তাঁরা তিনজনই নায়িকা হিসেবে আমার সিনিয়র। হ্যাঁ, রোজিনা সম্পর্কে বলতে পারি। রোজিনা একটা কাজপাগলা মেয়ে ছিল। ও আর কিছু বুঝত না। সিনেমা করতে হবে, ভালো অভিনয় করতে হবে...ও জীবন দিয়ে কাজ করত। শাবানাও প্রচণ্ড সিরিয়াস অভিনেত্রী। ববিতাও মোটামুটি সিরিয়াস অভিনেত্রী...হাহাহা

—মোটামুটি সিরিয়াস কেন?

—ফূর্তিবাজ ছিলেন। হুল্লোড় করতেন। উনি আমাদের খুব স্নেহ করতেন। আর ববিতাকে চেনা কিন্তু খুব কঠিন। ববিতার সামনে সব সময় একটা পর্দা থাকে। পর্দা ক্রস করতে পারলে সে খুব ভালো বন্ধু। তবে পর্দা ক্রস করার পারমিশন পাওয়া খুব কঠিন। কিন্তু তাঁদের অভিনয় যাচাই করার মতো ক্ষমতা আমার নেই।

গল্পে গল্পে কেটে যায় অনেক সময়। জিজ্ঞেস করি, অন্তরালের জীবনে থাকতে সুচিত্রা সেন হাতে গোনা যে কয়েকজন মানুষকে দেখা দিতেন, তাঁদের মধ্যে আপনিও ছিলেন, কীভাবে?

অভিনেতা আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
অভিনেতা আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

—সময়টা ঠিক মনে নেই। আমি কলকাতায় সিনেমা করতে যাই। ঢাকার আরও কয়েকজন আর্টিস্ট ছিলেন। শুটিংয়ের আগে আমি স্টুডিও দেখতে গেলাম। একটা মেকাপ রুম ছিল, যেটা উত্তম কুমার ব্যবহার করতেন। ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এমন সময় মনে হলো, সুচিত্রা সেন তো বেঁচে আছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে দেখা হলো না, সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তো দেখা করার চেষ্টা করতে পারি। একপ্রকার যুদ্ধ করে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি। অনেককে বলেছি, সুচিত্রা সেনের সঙ্গে দেখা চাই। সবার এক কথা, যা চাও করে দেব, কিন্তু এটা সম্ভব না। বারীন ব্যানার্জি নামের আমার এক বন্ধু তাঁর গাড়ি করে সুচিত্রা সেনের বাড়ির গেটে পৌঁছে দিলেন। দারোয়ানকে দিয়ে আমার কার্ড পাঠালাম। পেছনে লিখে দিলাম—দিদি আমি বাংলাদেশ থেকে আলমগীর। তোমার দর্শন প্রার্থনীয়। কিছুক্ষণ পর দারোয়ান একটা কাগজে ফোন নম্বর লিখে নিয়ে এল। পরদিন সকাল ১০টায় কল করতে বলেছেন। পরদিন কল করলাম। কথা হলো। কিন্তু তিনি দেখা দেবেন না। জোরাজুরি করতে থাকলে তিনি বললেন, পরের বার এলে দেখা হবে। আমি বললাম, দিদি উত্তর কুমারও আমাকে বলেছিলেন পরেরবার এলে দেখা হবে। কিন্তু দেখাটা আর হয়নি। তখন কাজ হলো। তিনি আমাকে সময় দিতে রাজি হলেন। তবে বললেন, এসো, সময় পনেরো মিনিট। বাট নো ফ্রেন্ডস, নো ক্যামেরা। সেই পনেরো মিনিট হয়ে গেল এক ঘণ্টা। তারপর তো আমি তার ছোট ভাই হয়ে গিয়েছিলাম।

আলমগীরের সঙ্গে আড্ডায় সময়টা যেন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে। তবু কথা শেষ হয় না। কিন্তু একসময় তো থামতে হয়। আমিও থামি।

বাইরে বের হয়ে রাস্তায় নামি। তাতানো রোদ কমে গিয়ে রাস্তাজুড়ে বিছিয়ে কমলা রঙের আলো। বইছে আরামদায়ক বাতাস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ টিএসসিতে চতুর্দশ সঞ্জীব উৎসব

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সঞ্জীব চৌধুরী । ছবি : সংগৃহীত
সঞ্জীব চৌধুরী । ছবি : সংগৃহীত

প্রয়াত সংগীতশিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর। প্রতিবছরের এই দিনে তাঁর স্মরণে সঞ্জীব উৎসবের আয়োজন করেন তরুণ সংগীতপ্রেমীরা। সে ধারাবাহিকতায় আজ বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে অবস্থিত সঞ্জীব চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে চতুর্দশ সঞ্জীব উৎসব

উৎসবটি আয়োজন করেছে আজব কারখানা। সঞ্জীব চৌধুরীর অমর সৃষ্টিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে উৎসবটি প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে। দীর্ঘ পরিক্রমায় এটি দেশের সংগীতপ্রেমীদের জন্য একটি অনন্য মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এবারের আয়োজনে গাইবেন জয় শাহরিয়ার, সন্ধি, সভ্যতা, সাহস মোস্তাফিজ, সুহৃদ স্বাগত, ফারাহ্‌দীবা তাসনীম, রাজেশ মজুমদার, রিহান রিজুয়ান প্রমুখ। আয়োজন তত্ত্বাবধানে রয়েছে সঞ্জীব উৎসব উদ্‌যাপন পর্ষদ। সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি।

আয়োজক ও সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার বলেন, ‘আমরা সঞ্জীবদার গান শুনে বড় হয়েছি। তাঁর গান শুধু বিনোদন নয়, সঞ্জীবদার একটা দর্শন ছিল। আমরা যারা সিংগার-সংরাইটার হিসেবে সেই দর্শনকে ধারণ করি, এটা তাদেরই সম্মিলিত আয়োজন। যাতে সঞ্জীবদার গান-দর্শন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে যায়।’

সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন একাধারে শিল্পী, লেখক ও সাংবাদিক। সঞ্জীব চৌধুরী ও বাপ্পা মজুমদার মিলে গড়ে তুলেছিলেন দলছুট ব্যান্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে কাজের পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন সংগীত ও সাহিত্যের চর্চা। ‘আমি তোমাকেই বলে দেব’, ‘রঙ্গিলা’, ‘সমুদ্রসন্তান’, ‘জোছনাবিহার’, ‘তোমার ভাঁজ খোল’, ‘চাঁদের জন্য গান’, ‘স্বপ্নবাজি’, ‘বায়োস্কোপ’সহ অনেক জনপ্রিয় গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সঞ্জীব চৌধুরীর নাম। ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সঞ্জীব চৌধুরী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনের টিভি আয়োজন

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
দুরন্ত টিভির ‘হৈ হৈ হল্লা সিজন ৩’ নাটকের দৃশ্য	ছবি: সংগৃহীত
দুরন্ত টিভির ‘হৈ হৈ হল্লা সিজন ৩’ নাটকের দৃশ্য ছবি: সংগৃহীত

আজ বড়দিন। খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠান।

রাত সাড়ে ১০টায় মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত হবে নাটক ‘দ্বিপ্রহর’। পিকাসো খুদার রচনায় এটি পরিচালনা করেছেন মারুফের রহমান। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন পার্থ শেখ ও আইশা খান। গল্পে দেখা যাবে, অনেক চেষ্টার পর চাকরি পেয়ে রাহাত গ্রামে যায় মাকে সারপ্রাইজ দিতে। মাকে তার প্রেমিকা মিতুর কথা জানায়। মিতু একই গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। মিতুর বাবা বিয়েতে আপত্তি করে না। তবে কঠিন এক শর্ত দেয়।

এনটিভিতে রাত সাড়ে ৯টায় দেখা যাবে নাটক ‘ফেরা’। রচনা ও পরিচালনায় পাভেল ইসলাম। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রান্তর দস্তিদার, অনিন্দিতা মিমি, সুষমা সরকার, পাভেল ইসলাম, ফাহমিদা শারমিন ফাহমি প্রমুখ।

আরটিভিতে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘এই রাত তোমার আমার’-এর বিশেষ পর্ব। গান শোনাবেন সাব্বির জামান ও রাকিবা ঐশী। রাত ৮টায় দেখা যাবে নাটক ‘চলো বদলে যাই’। রচনা ও পরিচালনা ইসতিয়াক আহমেদ রুমেল। অভিনয়ে ফারহান আহমেদ জোভান, কেয়া পায়েল প্রমুখ।

বড়দিন উপলক্ষে শিশুতোষ টিভি চ্যানেল দুরন্ত টিভি প্রচার করবে একাধিক অনুষ্ঠান। দুপুর ১২টায় থাকছে বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান ‘আজি শুভদিনে’। বেলা ১টা ও রাত ৯টায় দেখা যাবে নাটক ‘হৈ হৈ হল্লা সিজন ৩’-এর বিশেষ পর্ব। গল্পে দেখা যাবে, ডাক্তার সফদার চৌধুরী এবং তাঁর বাড়ির বিভিন্ন ফ্ল্যাটের শিশুদের মধ্যে চলে বড়দিন উদ্‌যাপনের বিশেষ আয়োজন। ঘটনাক্রমে সান্তা ক্লজের পোশাকসহ বড়দিনের কেনা সব গিফট ছিনতাই হয়ে যায়। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, শাহনাজ খুশী, শিশুশিল্পী কাজী আফরা ইভিলিনা, ইশরাক, সমাদৃতা প্রহর, আয়াজ মাহমুদ প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন পার্থ প্রতিম হালদার।

বেলা ২টায় প্রচারিত হবে রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘বানাই মজার খাবার মা-বাবা আর আমি’। এ পর্বের অতিথি হ্যানশেন লুকাস অধিকারী তমন ও তার মা। তারা আনন্দ করে, গল্প-আড্ডায় মেতে বড়দিনের স্পেশাল খাবার রান্না করে। পরিচালনা করেছেন আমিনা নওশিন রাইসা, সঞ্চালনায় রন্ধনশিল্পী আফিফা আখতার লিটা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সম্মানী না পাওয়ার অভিযোগ মতিন চৌধুরীর, অস্বীকার করলেন দীপন

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সংগীতশিল্পী মতিন চৌধুরী	ছবি: সংগৃহীত
সংগীতশিল্পী মতিন চৌধুরী ছবি: সংগৃহীত

প্রায় তিন দশক আগে যখন বগুড়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন, তখন ‘টিকাটুলীর মোড়ে একটা হল রয়েছে’ গানটি লিখেছিলেন সংগীতশিল্পী মতিন চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় এসে মামুন আকন্দের সংগীত পরিচালনায় গানটি রেকর্ড করেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত মতিন চৌধুরীর প্রথম অ্যালবাম ‘জীবন হলো সিগারেটের ছাই’-এ ছিল এই গান। গানটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়। সিনেমা মুক্তির আট বছর পর সম্প্রতি মতিন চৌধুরী জানালেন, ঢাকা অ্যাটাক-এ টিকাটুলীর মোড়ে গানটি করার জন্য তিনি কোনো অর্থ পাননি। পরিচালক দীপংকর দীপন তাঁকে বঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ মতিন চৌধুরীর।

মতিন চৌধুরী জানান, টিকাটুলীর মোড়ে গানটি ঢাকা অ্যাটাক সিনেমায় ব্যবহারের শর্ত হিসেবে ইউটিউব থেকে আয়ের অর্ধেক দাবি করেছিলেন তিনি। নির্মাতা তখন রাজি হলেও সে অনুযায়ী টাকা দেওয়া হয়নি তাঁকে। মতিন চৌধুরী বলেন, ‘দীপংকর দীপন সাহেব সিনেমায় গানটি ব্যবহারের জন্য তিন মাস আমাকে খুঁজেছেন। একসময় টঙ্গীতে আমার এক বন্ধুর স্টুডিওতে গিয়ে আমার নম্বর পান। এরপর সংগীত পরিচালক শাহীন কামাল ও মামুন আকন্দকে নিয়ে দীপংকর দীপনের অফিসে যাই। তিনি বলেন, গানটি ঢাকা অ্যাটাক সিনেমায় ব্যবহার করবেন। ভিডিওতে আমি থাকব। বিনিময়ে আমার কী চাহিদা জানতে চাইলে বলেছিলাম, আমার বেশি চাহিদা নেই। ইউটিউবে এই গানের ব্যবসা থেকে আমাকে অর্ধেকটা দিতে হবে। এটা স্ট্যাম্পে ডিড করতে হবে বলে জানাই। তিনিও রাজি হন।’

মতিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘এক মাস পর উনি ফোন করে বলেন, গানের শুটিং আছে, আমি যেন গ্রুপ নিয়ে এফডিসিতে যাই। সে সময়ও তাঁকে ডিডের কথা মনে করিয়ে দিই। উনি জবাব দেন, অবশ্যই ডিড করব, আপনি চলে আসেন। কথা অনুযায়ী এফডিসিতে দুই রাত শুটিং করলাম। কিন্তু ডিড আর করা হলো না। আমার সঙ্গে তাঁরা বেইমানি করেছেন। এই গান থেকে আমি কিছু পাইনি। অথচ, তাঁরা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। শুধু তা-ই নয়, দীপংকর সাহেব বলেছিলেন, আমাকে বিভিন্ন চ্যানেলে লাইভ গান করার সুযোগ করে দেবেন। সেটাও করেননি। আজ আমি লাখ লাখ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন দীপংকর সাহেব।’

ঢাকা অ্যাটাক সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেন সানী সানোয়ার। ২০২১ সালে সানী সানোয়ার পরিচালিত ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমায় মতিন চৌধুরী গেয়েছিলেন টিকাটুলীর মোড়ে গানের নতুন ভার্সন ‘পান্থপথের মোড়ে’। সে সময় ঢাকা অ্যাটাকের চুক্তির বিষয়টি প্রযোজককে জানিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে মতিন চৌধুরী বলেন, ‘তখন আমাকে বলেছিল দীপংকর দীপনের সঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করবেন। নতুন গানের জন্য আমাকে কিছু পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর কোনো সমাধান হয়নি।’

মতিন চৌধুরীর অভিযোগের বিষয়ে পরিচালক দীপংকর দীপনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই নির্মাতা। দীপংকর দীপন বলেন, ‘বিষয়টি মোটেও সত্য নয়। গানের জন্য সে সময় তাঁর পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে। আর ইউটিউবের বিষয়টি তিনি এখন কেন বলছেন, তা আমার জানা নেই। যখন ঢাকা অ্যাটাক তৈরি হয় তখন আমাদের দেশে ইউটিউবের এত প্রচলন ছিল না। এ নিয়ে আলোচনা হবে কীভাবে? আমি যখন তাঁকে টিকাটুলীর মোড়ে গানটি সিনেমায় ব্যবহারের প্রস্তাব দিই, তখন তিনি খুশি ছিলেন। তাঁর শুধু চাহিদা ছিল পর্দায় যেন তাঁকে দেখা যায়।’

দীপন আরও বলেন, ‘পারিশ্রমিকের বিষয়টি দেখভাল করেন প্রযোজক। ঢাকা অ্যাটাকের অন্য কুশলীদের মতো আমিও পারিশ্রমিক নিয়েছি। পারিশ্রমিক নিয়ে কোনো ঝামেলা হলে তিনি প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলবেন। আর যদি কোনো ঝামেলা থাকত তাহলে তো ঢাকা অ্যাটাকের পর মিশন এক্সট্রিম সিনেমায় মতিন চৌধুরী গাইতেন না। ওটা তো একই প্রযোজক নির্মাণ করেছিলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মঞ্চে আসছে শিশুতোষ নাটক ‘আনারসের ঢাকা সফর’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শিশুতোষ নাটক ‘আনারসের  ঢাকা সফর’ । ছবি: সংগৃহীত
শিশুতোষ নাটক ‘আনারসের ঢাকা সফর’ । ছবি: সংগৃহীত

শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ও নান্দনিক চর্চার প্ল্যাটফর্ম ঢাকা লিটল অপেরা। গত অক্টোবরে যাত্রা শুরু করা প্ল্যাটফর্মটি এবার মঞ্চে নিয়ে আসছে তাদের প্রথম নাটক। নাম ‘আনারসের ঢাকা সফর’। ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর মহিলা সমিতিতে বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিত হবে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন। সন্ধ্যা ৭টায় হবে দ্বিতীয় প্রদর্শনী। নাটকটি লিখেছেন আনজীর লিটন, নির্দেশনায় মনামী ইসলাম কনক, সহযোগী নির্দেশনায় আছেন মনিরুজ্জামান রিপন।

টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের একটি বাগানের আনারসের ঢাকায় আসার গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে নাটকটি। মধুপুরের বাগানে শিয়াল, কোকিল, কাক, ইঁদুর আর বিড়ালের খুনসুটি, দুষ্টুমির সঙ্গে এই বাগান ছেড়ে মানুষের কল্যাণে আনারসের বৃহত্তর আত্মত্যাগের গল্প নিয়েই এগিয়ে চলে আনারসের ঢাকা সফর।

কাওরানবাজারে বিক্রির পরে মানুষের পুষ্টি জোগাতে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায় আনারসগুলো। মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাওয়াই আনারসের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। আনারসগুলো বিক্রির মাধ্যমে একজন সাধারণ কৃষকের শ্রম, সংগ্রাম ও আশা-ভরসার গল্পকে প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সব আনারস বিক্রি হয়ে গেলেও দুটি আনারস আবার ফিরে আসে মধুপুরে। আনারস দুটির এই ফিরে আসা যেন শিকড়ের কাছেই ফিরে আসা। ওই আনারসের মাথার মুকুট থেকে আবারও নতুন বাগান গড়ে তোলে কৃষক ফুলগাজি।

ঢাকা লিটল অপেরার ডিরেক্টর মনিরুজ্জামান রিপন বলেন, ‘আনারসের ঢাকা সফর একটি বর্ণিল ও কল্পনাপ্রবণ নাট্য প্রযোজনা, যা গ্রামের জীবন ও শহরের সঙ্গে তার সংযোগকে তুলে ধরেছে। এই প্রযোজনার মধ্য দিয়ে শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে গল্প বলার একটি নতুন যাত্রা শুরু করল ঢাকা লিটল অপেরা।’

মনিরুজ্জামান রিপন আরও বলেন, ‘ঢাকা লিটল অপেরা শিশুদের সাংস্কৃতিক বিকাশ ও নান্দনিক চর্চার আদর্শ একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। শিশুদের প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত আয়োজন করবে নাটক, কবিতা আবৃত্তি, পাঠাভিনয়, নৃত্য ও বাচিকসহ নানা সৃজনশীল কার্যক্রম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত