Ajker Patrika

পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস: চবিতে শিক্ষক নিয়োগে ১৬ লাখ দাবি

মিনহাজ তুহিন, চবি
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২২, ২২: ৫০
পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস: চবিতে শিক্ষক নিয়োগে ১৬ লাখ দাবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের পর, এবার অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এর মধ্যে একটি ফোনালাপে প্রভাষক পদের এক প্রার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পিএসের অর্থ লেনদেনের বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতে শানা যায়। অপর একটিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করতে উপাচার্যের টাকার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী। 

এ ঘটনায় উপাচার্যের পিএসকে অপসারণ করে আগের কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

জানা যায়, গত বছরের ১৪ নভেম্বর ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য তিন সদস্যের বোর্ড বসে। বোর্ডে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞ না থাকা, আবেদনকারীদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী ও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া একাধিক প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও অপেক্ষাকৃত অযোগ্যদের সুপারিশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল আবেদনকারীদের। 

ফাঁস হওয়া ফোনালাপে উপাচার্যের ভাতিজা আজফার কামাল চৌধুরী শাওন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইলিয়াস সিদ্দিকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক শাখার কর্মচারী আহমদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। যদিও এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। 

ফাঁস হওয়া ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা একটা চক্রান্ত। আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আমরা ওই লোককে (আহমেদ হোসেন) জেলে দিয়েছি। রবীন (পিএস) তো নিজেই আগের জায়গায় চলে গেছে।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা খুব স্বচ্ছভাবে নিয়েছি। কিন্তু যাঁরা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁরা এসব করেছেন। আমরা শক্ত হাতে এসব দমন করছি।’

পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা এটা (নিয়োগ) রেফার ব্যাক করব। কোনো অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দিব না। কর্মচারী হোক আর যাই হোক, আমরা কাউকে ছাড় দিব না। আমি সৎভাবে কাজ করে বিতর্কিত হব কেন?’

তবে তদন্ত কমিটিতে কে কে আছেন জানতে চাইলে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে চাননি উপাচার্য।

এ দিকে ফোনালাপে নাম উঠে আসা কর্মচারী আহমদ হোসেনকে উপাচার্য জেলে দিয়েছেন দাবি করলেও তাঁকে দিব্যি ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। এমনকি ফোনালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহমদ হোসেন বলেন, ‘আমার মোবাইল ফোনটা হারিয়ে গেছে। আমি এসবের কিছুই জানি না।’ ফোন হারানোর জিডি করেছেন কি না জানতে চাইলে নেতিবাচক জবাব দেন তিনি।

অন্যদিকে চাকরিপ্রার্থী ওয়াক্কাসকে কল দিলে তাঁর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর উপাচার্যের পিএস রবীনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি জবাব দেননি।

প্রথম ফোনালাপ: উপাচার্যের সহকারী খালেদ মিসবাহুল মোকর রবীন ও নিয়োগপ্রার্থীর মধ্যে কথোপকথন—

রবীন: ম্যাডামের (উপাচার্য) সঙ্গে দেখা হলে তোমার কথা বলব। ম্যাডাম যেভাবে বলে সেভাবে হবে। 
নিয়োগপ্রার্থী: ঠিক আছে, আপনি একটু দয়া করে আমার বিষয়টা দেখবেন আরকি। 

রবীন: ঠিক আছে, ইনশাআল্লাহ। চট্টগ্রামের দেখেই তো আমি টান দিলাম (তোমাকে)। কিন্তু প্রেক্ষাপট বা বাস্তবতা হলো এগুলোই হচ্ছে সব জায়গায়। আমি তোমার ভাবির (রবীনের স্ত্রী) জন্যও চেষ্টা করেছি। কিন্তু গতবার আমি শুধু এটা (টাকা) দেইনি বলেই হয় নাই। আমি এখানেই আছি, অথচ আমার স্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছে। বর্তমানে সে সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে আছে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করি নাই বলেই হয়নি এটা। অন্যথায় এত দিনে হয়ে যেত। সোজা কথা এটাই।
নিয়োগপ্রার্থী: আপনি যে কারণে ভিকটিম হয়েছিলেন। আপনি যেহেতু এখন ম্যাডামের সঙ্গে আছেন, অন্য কেউ যেন এমন ভিকটিম না হয়, আমি আপনার কাছে এটা আশা করব আরকি। 

রবীন: আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। তবে বাস্তবতা যেটা, সেটা আমি তোমাকে ইঙ্গিত করলাম। 
নিয়োগপ্রার্থী: বুঝতে পেরেছি। আপনি যদি ম্যাডামের (উপাচার্য) সঙ্গে আমার সাক্ষাতের বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে আমি বিষয়টা দেখব ইনশাআল্লাহ। 

রবীন: ঠিক আছে। 

দ্বিতীয় ফোনালাপ:

চবি কর্মচারী: আপনি কি এখানে (চবিতে) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন? 
নিয়োগপ্রার্থী: আমি আবেদন করেছি। 

কর্মচারী: কোনো লবিং করেছেন কি? 
নিয়োগপ্রার্থী: আপনি কে বলছেন, আপনার পরিচয়টা দিলে সুবিধা হয়। 

কর্মচারী: আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টস থেকে বলছি। ১৪ তারিখ (১৪ নভেম্বর, ২০২১) আপনাদের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ পড়েছে। এখানে আপনার নাম দেখে ফোন করেছি, লবিং করছেন কি না, সেটা জানার জন্য। 
নিয়োগপ্রার্থী: লবিং বলতে আমাদের চট্টগ্রাম আনোয়ারা থানার একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে একটা ডিও লেটার নিয়েছিলাম। যাইহোক আপনার নাম কী? বাড়ি কোথায় আপনার? 

কর্মচারী: আমার নাম আহমদ হোসেন। বাড়ি এখানেই, হাটহাজারী। 
নিয়োগপ্রার্থী: এখন কীভাবে কী করা যায়, আমাকে পরামর্শ দিন। 

কর্মচারী: এখন তো আসলে লবিং ছাড়া কিছুই হবে না, এটা সবাই জানে। 
নিয়োগপ্রার্থী: আমি আরবি বিভাগের এক ভাই এবং আমাদের চবির এক স্যারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। ওনারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। এখন বাস্তবতা কী, সেটা তো জানি না। 

কর্মচারী: ঠিক আছে, এখানে চট্টগ্রামের দুইজন আছে ক্যান্ডিডেট, এর মধ্যে আপনি একজন। যাইহোক, যদি প্রয়োজন মনে করেন অ্যাডভান্স দিতে পারবেন, ফোন দিবেন আরকি। আর যেহেতু আপনার পরিচিত মানুষ আছে, দেখেন কী করা যায়। 

তৃতীয় ফোনালাপ: 

নিয়োগপ্রার্থী: আমাকে পদ্ধতিটা শিখিয়ে দিন, কার মাধ্যমে কী করতে হবে? 
কর্মচারী: একটা জিনিস আপনিও বুঝেন, আমিও বুঝি, সবাই বুঝে। বর্তমান পরিস্থিতিতে লেনদেন ছাড়া কোনো কিছুই হয় না। এ জন্য মন্ত্রীর সুপারিশ বলেন বা যার সুপারিশই বলেন, কোনো কিছুই কার্যকরী হবে না। কারণ সব জায়গায় টাকা লাগে। এখন কথা হলো, আপনাকে যদি ম্যাডামের (উপাচার্য) সঙ্গে বসিয়ে দিই, আর ম্যাডাম যদি রাজি হন, তাহলে আপনাকে অর্ধেক পেমেন্ট আগে দিয়ে ফেলতে হবে। আর বাকি অর্ধেক আপনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাওয়ার পর দিবেন। 

নিয়োগপ্রার্থী: কাকে দিতে হবে পেমেন্ট? ম্যাডাম কে? 
কর্মচারী: ম্যাডামকে না, ম্যাডাম কি সরাসরি (টাকা) নিবে নাকি? তা ছাড়া ম্যাডাম আবার মন্ত্রণালয়ে লাইন ঘাট সব ম্যানেজ করবেন। যাইহোক, এটা আমি জানি বলেই আপনাকে জানালাম। এখন আপনার যদি সম্মতি থাকে তাহলে আমি আলাপ করে দেখতে পারি। ম্যাডাম যদি রাজি হন, তাহলে আপনি অর্ধেক পেমেন্ট করবেন এবং পেমেন্ট যে করছেন সেটার একটা চেক অথবা ডকুমেন্ট দিতে হবে। কিন্তু ম্যাডাম যদি ‘না’ বলেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রীও যদি ব্যক্তিগতভাবে সুপারিশ করেন কোনো কাজ হবে না। এটাই শেষ কথা। কারণ ম্যাডাম নিজেও তো আসছেন অনেক টাকা খরচ করে। তবে এ সমস্ত কথা কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। তাহলে আপনারও বিপদ, আমারও বিপদ। এখন আপনার যদি সম্মতি থাকে এবং ম্যাডাম যদি রাজি হন, তাহলে একটা কন্ট্রাক্ট করা যায়। 

নিয়োগপ্রার্থী: বুঝতে পারলাম, অ্যামাউন্ট কত?
কর্মচারী: অ্যামাউন্ট হলো ১৬ (লাখ)। 

নিয়োগপ্রার্থী: তাহলে তো কঠিন অবস্থা। 
কর্মচারী: তৃতীয় শ্রেণির একটা চাকরির জন্য এখন ১০-১২ লাখ টাকা লাগে। চতুর্থ শ্রেণির, যেমন— মালি, প্রহরীর এসব চাকরির জন্য লাগে ৮ লাখ টাকা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলো সর্বোচ্চ সম্মানী পদ। কাজেই এখানে ১৬ লাখের কম দিলে হবে না। 

নিয়োগপ্রার্থী: কার মারফতে (মাধ্যমে) দিতে হবে টাকা? 
কর্মচারী: সেটা পরে জানাব। আগে আপনার যদি সম্মতি থাকে, তাহলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। যেভাবেই হোক আমি সেটা নেওয়ার ব্যবস্থা করব। 

নিয়োগপ্রার্থী: ঠিক আছে। 
কর্মচারী: যেহেতু চট্টগ্রামের বাহিরের মানুষ বেশি (নিয়োগপ্রার্থীদের মধ্যে)। চট্টগ্রামের মধ্যে আছেন আপনারা দুইজন। আর আমিও চাই যে চট্টগ্রামের একজনের হোক। চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে চট্টগ্রামের যারা তাদের পক্ষে থাকাটাই তো স্বাভাবিক। এ জন্য চট্টগ্রামের দুই জনকেই বলছি আমি এ বিষয়ে। 

নিয়োগপ্রার্থী: চট্টগ্রামের মধ্যে তো চার-পাঁচ জন আবেদন করছে। রেজাল্ট ভালো দুইজনের আরকি। 
কর্মচারী: ওরকম হলে তো আমরা জানতাম। শুধু আবেদন করলেই তো হবে না। রেজাল্ট ওতো ভালো হতে হবে। 

নিয়োগপ্রার্থী: ঠিক আছে। আমি দেখি, যদিও আমার জন্য এ টাকা ম্যানেজ করা কষ্টকর হয়ে যাবে। আমি গরিবের ছেলে। পড়াশোনা করেছি কষ্ট করে। 
কর্মচারী: যাইহোক, চিন্তাভাবনা করে জানাবেন। আর রেজাল্টও লাগবে। যার কারণে দুইটাই (রেজাল্ট এবং টাকা) প্রয়োজন। এখন এটা আপনার সম্মতির ওপর। এটা চাইলে বাইরের কাওকেও বলতে পারতাম।

নিয়োগপ্রার্থী: জ্বি, পারলে দিব, না পারলে সাধারণভাবে গিয়ে পরীক্ষা দিব আরকি। যদিও এত টাকা সংগ্রহ করা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। 
কর্মচারী: ঠিক আছে আপনি চিন্তাভাবনা করে দেখেন। 

চতুর্থ ফোনালাপ: ঢাবি ও চবির ফারসি বিভাগের দুই ছাত্রের কথোপকথন—

চবি ছাত্র: আব্দুল করিম (ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি) স্যারের রুমে ঢোকার আগে ওয়াক্কাসকে (আরও এক নিয়োগপ্রার্থী) বলে দিয়েছি যে, তোমাকে ভাইবাতে কী কী জিজ্ঞেস করেছে এটা বলবে না এবং ভিসি ম্যাডাম কী কী বলেছে, সেটাও বলবে না। কারণ সে পলিটিকস বোঝে না।  এ ছাড়া আমি আপনাকে ভাইবার সময় নিচে (প্রশাসনিক ভাবনের) জানিয়েছিলাম না যে, কথাবার্তা বলছেন কি না? এটা কেন বলছি জানেন? 

ঢাবি ছাত্র: কেন বলছেন?
চবি ছাত্র: কারণ ভিসি ম্যাডামের ভাতিজা (আফজার কামাল চৌধুরী শাওন) মান্নান ভাইকে (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের ল্যাব সহকারী) বলছে, চট্টগ্রামের যে ছেলেগুলো আছে, তারা লবিং করেছে কি না উনি জানেন না। মান্নান ভাইয়ের সঙ্গে আমার ২০ বছরের সম্পর্ক। উনি আমাকে বলেছে, চট্টগ্রামের কেউ আছে কি না? থাকলে ম্যানেজ করে দিতে পারতাম। তো আমি বলছি, চট্টগ্রামের একজন আছে আমাদের। আমি যোগাযোগ করে দেখি। সে জন্য আপনি কতটুকু লবিং করতে পারছেন বা পারেন নাই, সেটা তো আমি জানি না। ওই নিউজটা আপনাকে দিলাম। 

ঢাবি ছাত্র: জ্বি, বুঝতে পেরেছি। 

পঞ্চম ফোনালাপ:

চবি ছাত্র: ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াছ সিদ্দিকী ওয়াক্কাসকে (মুহাম্মদ ওয়াক্কাস-ভাইবা বোর্ডের সুপারিশ পাওয়া নিয়োগপ্রার্থীদের একজন) ফোন দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ওয়াক্কাস আমাকে কল দিয়ে বিষয়টি জানায়। আমি বললাম, সিদ্দিকী স্যার তো আমাদের কাছের মানুষ, কী বলেছে স্যার? সে বলল, স্যার একটা মোবাইল নম্বর দিয়েছে তাকে। নম্বরটা ওর কাছ থেকে নিয়ে দেখলাম যে, এটা রবীন স্যারের (ডেপুটি রেজিস্ট্রার খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন) নম্বর। পরে আমি ওয়াক্কাসকে রবীন স্যারের কাছে তাড়াতাড়ি যেতে বললাম। তা ছাড়া রবীন স্যার ভিসি ম্যামের কাছের মানুষ। 
ঢাবি ছাত্র: আচ্ছা, তারপর? 

চবি ছাত্র: ওয়াক্কাসকে আমি আগেই বলেছি, এখানে টাকা পয়সার যেহেতু একটা বিষয় আছে, টাকার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তুই যতটুকু দিতে পারবি, সেটা বলবি। রবীন স্যার কনফার্ম করে দিবে। পরে রবীন স্যার ওয়াক্কাসকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলেছে। আমি বিষয়টা ডিপার্টমেন্টের কোনো শিক্ষককেও বলতে নিষেধ করেছি। আপনিও এটা কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। 

ঢাবি ছাত্র: এখন ওয়াক্কাস কি ৫ লাখ টাকা দিতে পারবে? 
চবি ছাত্র: না, ও বোধহয় ৫ লাখ দিতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত