Ajker Patrika

এশিয়ার চার দেশে বন্যা-ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়াল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
এশিয়ার চার দেশে বন্যা-ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়াল

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানি সোমবার ১ হাজার ১০০ ছড়িয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া বন্যাকবলিত এলাকার জীবিত ব্যক্তিদের সহায়তায় সেনা মোতায়েন করেছে। খবর এএফপির

অবিরাম বৃষ্টি গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা দ্বীপজুড়ে আর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল ও মালয়েশিয়ার উত্তরে তাণ্ডব চালায়। এই অঞ্চলে এখন বর্ষাকাল চলছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টি আরও ঘনীভূত ও ঝড় তীব্র হয়ে উঠছে।

নিঃশেষ না হওয়া বৃষ্টির ধারা অনেককে ছাদে আটকে ফেলে। নৌকা কিংবা হেলিকপ্টারের জন্য তারা অপেক্ষা করেছে দীর্ঘক্ষণ। গ্রামের পর গ্রাম সাহায্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সোমবার উত্তর সুমাত্রায় পৌঁছে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবো সুবিয়ান্তো বললেন, ‘সবচেয়ে খারাপটা পার হয়ে গেছে, আশা করি।’ তিনি বলেন, সরকারের ‘প্রথম কাজ এখন জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।’ বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া কয়েকটি এলাকায় তা জরুরি বলে তিনি জানান।

প্রাবোওর ওপর চাপ বাড়ছে। বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৫৯৩ জন নিহত হয়েছে, এখনো প্রায় ৪৭০ জন নিখোঁজ। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি উঠছে। তা সত্ত্বেও প্রাবো এখনো প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা চায়নি।

২০১৮ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির পর এটিই ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেই সুনামিতে সুলাওয়েসিতে ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। সরকার তিনটি যুদ্ধজাহাজ ও দুটি হাসপাতাল জাহাজ পাঠিয়েছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে। সেখানে এখনো বহু সড়ক চলাচলের অনুপযোগী।

উত্তর আচেহ অঞ্চলের বাসিন্দা ২৮ বছরের মিসবাহুল মুনির জানালেন, পানিতে গলা পর্যন্ত ডুবে তিনি পরিবারে ফিরেছেন। তার ভাষায়, ‘বাড়ির সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু পরনের কাপড়টাই আছে। অন্য জায়গায় অনেক মানুষ মারা গেছে। আমরা বেঁচে আছি, এটাই ভাগ্য।’

এদিকে শ্রীলঙ্কায় সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়া’-এর কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সেনা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।

সোমবার সরকারি হিসাবে অন্তত ৩৫৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ৩৬৬ জন। রাজধানী কলম্বোতে রাতভর পানি বেড়েছে। তবে বৃষ্টি থামায় ধীরে ধীরে পানি নামার আশা দেখা গেছে। কিছু দোকান ও অফিস আবার খুলেছে।

কলম্বো উপকণ্ঠের মানুষ এমন বন্যায় হতভম্ব। ডেলিভারি বয় দিনুশা সাঞ্জয়ার ভাষায়, ‘প্রতিবছর সামান্য জলাবদ্ধতা হয়। কিন্তু এবার যা হলো, তা অন্য কিছু। পানির পরিমাণই শুধু নয়, কী দ্রুত সব ডুবে গেল, সেটাই ভয়ংকর।’

কর্তৃপক্ষ জানায়, কেন্দ্রীয় পার্বত্য অঞ্চলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে এখন। কারণ, গাছপালা আর কাদায় বন্ধ হয়ে থাকা সড়কগুলো ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিসানায়েকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলছেন, এটি ‘দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগ’।

২০০৪ সালের সুনামির পর এই প্রথম শ্রীলঙ্কায় এত বড় ক্ষতি। তখন প্রায় ৩১ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল, গৃহহীন হয়েছিল ১০ লাখের বেশি।

থাইল্যান্ডে ক্ষোভ রোববার বিকেলে শ্রীলঙ্কায় বৃষ্টি থেমে যায়। তবু রাজধানীর নিচু এলাকাগুলো ডুবে ছিল। বড় ধরনের ত্রাণ অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। খাবারও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এক হেলিকপ্টার রোববার কলম্বোর উত্তরে বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট নিহত হন।

বর্ষাকাল প্রায় প্রতিবছরই ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা ডেকে আনে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এবার যে বন্যা দেখা গেছে, তা আরও ঘনীভূত করেছে একটি বিরল ক্রান্তীয় ঝড়। ঝড়টি সুমাত্রায় প্রচণ্ড বৃষ্টি নামিয়েছে।

তীব্র বৃষ্টিতে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে অন্তত ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার কর্তৃপক্ষ জানায়, গত এক দশকে দেশটিতে এটি অন্যতম প্রাণঘাতী বন্যা। সরকার ত্রাণ ব্যবস্থা চালু করেছে। কিন্তু সমালোচনা বাড়ছে। দুই স্থানীয় কর্মকর্তাকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পাশের দেশ মালয়েশিয়ায়ও প্রবল বৃষ্টি পেরলিস অঙ্গরাজ্যের বহু এলাকা ডুবিয়ে দিয়েছে। সেখানে দুজন মারা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...