কামরুল হাসান

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কেনাকাটা তখনো জমেনি। নিচতলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে লোকজন কম। পাঠাগারের সিঁড়ি ও প্রবেশমুখে অচেনা হকার, টুপিবিক্রেতা, চশমার ফেরিওয়ালা।সবারই শিকারি চোখ। কার জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। আশপাশের দোকানিদের উৎসুক দৃষ্টি। ফিসফাস শব্দ, ‘এরা কারা?’
২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির সকাল। অপেক্ষার জবাব মেলে একটু পরে। ক্লিন শেভ, রঙিন চশমা, সবুজ শার্ট পরা এক ব্যক্তি আসেন পাঠাগারের গেটে। হেঁটে চলে যান গেট অবধি। পেছন থেকে একজন চেনার চেষ্টা করেন, আরেকজন নাম ধরে ডাকেন। আগন্তুক কোনো কথা না বলে হাত বাড়ান। হাত মেলান একজন, কিন্তু তিনি থামেন না। সোজা চলে যান ওপরে পাঠাগারের ভেতরে। কী মনে করে আবার বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ান।
পাঠাগারের প্রথম টেবিলে বসে ছদ্মবেশী দুজন ক্যাপ্টেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে কর্নেল। আর অপেক্ষা নয়। সঙ্গীদের দিকে ইশারা করেন কর্নেল। শিকার হাতছাড়া হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে একটি রিভলবার এসে ঠেকে যায় আগন্তুকের পিঠে। এতক্ষণে তাঁর আর বুঝতে বাকি থাকে না, ধরা পড়ে গেছেন। গোয়েন্দাগিরির খেলায় এভাবেই হেরে যান জেএমবির মজলিশে সুরার সদস্য হাফেজ মাহমুদ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ ক্লু–শায়খ আবদুর রহমান সিলেটে আছেন। ব্যস, শুরু হয়ে যায় জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে পাকড়াওয়ের অভিযান।
বেলা পড়তে না পড়তেই ১০-১২টি গাড়ির বহর পথের লোকদের দুপাশে সরিয়ে দিয়ে ঝড়ের গতিতে ছুটতে থাকে সিলেট হাইওয়ে ধরে। গাড়ি থেকে কর্নেল আমাকে ফোন করেন, সেই চেনা আওয়াজ–‘ওস্তাদ ব্যাগ রেডি করেন। বড় কিছু হবে।’ যেকোনো বড় খবরে এভাবেই তিনি আমাকে আগাম ক্লু দিয়ে রাখেন।
রসিকতা করে ‘ওস্তাদ’ বলা সেই লোকটির নাম কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ, বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ। সেদিনও তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে। তবে বড় কোনো খবরের জন্য নয়, জীবন ও মৃত্যুর শূন্যরেখায় দাঁড়িয়ে, যখন বিডিআরের উন্মত্ত সৈনিকেরা নির্বিচারে গুলি করে কর্মকর্তাদের হত্যা করছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যই খুব সোজাসাপ্টা। কথায় কোনো প্যাঁচগোজ নেই, যা বিশ্বাস করেন বলেন। আর বন্ধুর জন্য দিলখোলা, নিবেদিতপ্রাণ। সেই ভাবনা থেকেই গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, তাও ২৫-২৬ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক সফরে গিয়ে। তখন আমি জনকণ্ঠে।
লম্বা ছিপছিপে এক মেজর। হাঁটলে মনে হয় যেন দূরের কাশবন। বাতাসে নুয়ে পড়ছে, তারপর আবার টানটান হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। খুবই হাসিখুশি, কোনো কিছুতেই রাখঢাক নেই। অল্পতেই ভাব জমে গেল। তারপর নিয়মিত যোগাযোগ, ফোনেই বেশি।
২০০৪ সালের প্রথম দিকে একদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিচতলায় লিফটের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পেছন থেকে সেই ডাক, `ওস্তাদ…।’ তাকিয়ে দেখি পোশাক পরা গুলজার উদ্দিন আহমেদ। বললেন, র্যাব নামে নতুন একটি বাহিনী হচ্ছে, তিনি সেখানে আসছেন। তত দিনে তিনি মেজর থেকে লে. কর্নেল হয়েছেন। র্যাবে এসে ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়ে গেল। র্যাব-৩-এর অধিনায়ক হলেন। গণমাধ্যমের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিকেলের দিকে চলে যেতাম উত্তরায়, কাজের ফাঁকে ফাঁকে গল্প করতাম। তাঁর জীবনের গল্প, বেড়ে ওঠার গল্প। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া মানুষটি কীভাবে ১৯৮৩ সালে পদাতিক রেজিমেন্টে কমিশন পেলেন, তারপর বিএমএ, সেনা সদর হয়ে মিশনে গেলেন—সেই সব গল্প। আর বলতেন স্ত্রী ফাতেমা সুলতানা, দুই মেয়ে তাসনিয়া ও লামিয়ার কথা। গল্পের সময় একটি সিগারেটের আগুন দিয়ে আরেকটি সিগারেট ধরাতেন। রিং করে ছুড়ে ফেলা সেই ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যেত ফেলে আসা দিনের স্মৃতি।
২০০৫ সালে র্যাব একটি গোয়েন্দা বিভাগ গঠন করে। গুলজার উদ্দিন সেই বিভাগের প্রথম প্রধান। হাটখোলায় র্যাব-৩-এর কার্যালয় ছেড়ে এলেন বিমানবন্দর এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরে। আমারও যাতায়াত বেড়ে গেল। ২০০৬ সালে একদিন শুনি তিনি পদোন্নতি পেয়েছেন। র্যাবে আর থাকছেন না। চলে গেলেন বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর)। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে মন খারাপের কারণ উবে গেল, তিনি আবার ফিরে এলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক হয়ে।
সারা দেশে তখন জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকে ডাকাতি শুরু করেছে জেএমবি। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬টি হামলায় ৭৩ জন নিহত আর প্রায় ৮০০ লোক আহত হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। শেষ পর্যন্ত দেশে-বিদেশের চাপের মুখে চারদলীয় জোট সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জঙ্গি নির্মূলের দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামেন গুলজার উদ্দিন। জঙ্গি দমন অভিযানে তিনি যে সাহস দেখাতেন, তা ছিল শিউরে ওঠার মতো।
এর মধ্যে একদিন একটি মজার ঘটনা ঘটে। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান তখন রিমান্ডে। দুপুরের দিকে র্যাব সদর দপ্তরে গিয়ে দেখি সবার মুখ-চোখ শুকনো। পুরো অফিস থমথমে। একেবারে অন্য রকম একটি পরিবেশ। কী হয়েছে, কেউ বলছে না। খুব ঘনিষ্ঠ একজনকে অনুরোধ করতেই যা বললেন, শুনে পিলে চমকে গেল। তিনি বললেন, শায়খ আবদুর রহমান রিমান্ডে থাকা অবস্থায় র্যাব হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। কীভাবে তিনি পালালেন? বললেন, ফজরের নামাজের জন্য সেলের তালা খুলে দেওয়া হয়। তখন অজু করার নাম করে পালিয়ে যান। মাথায় যেন বাজ পড়ল। এত বড় খবর কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। গেলাম তৎকালীন মহাপরিচালক আবদুল আজিজ সরকারের কাছে। তিনি যেন ভূত দেখলেন। গেলাম গুলজার উদ্দিনের কাছে। তিনি নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসলেন। দুই হাত ধরে খুব অনুরোধ করলেন খবরটা যেন প্রকাশ না হয়। অনুরোধে মানুষ ঢেঁকিও গেলে। ছোটবেলায় শোনা সেই প্রবাদ আমার জীবনেও সত্যি হলো। পেশাদার সংবাদকর্মীরা হয়তো এখন এসে উচিত-অনুচিত নিয়ে বিতর্ক করতে পারেন। কিন্তু বন্ধুত্বের কাছে আমাকে হার মানতে হলো। অবশ্য সেদিন বিকেলেই টঙ্গীর একটি স্থান থেকে আবদুর রহমান ধরা পড়েন।
সবকিছুতেই ভালো-মন্দ দিক থাকে। এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। তিনি আমাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন, একজন সংবাদকর্মীর জন্য যা খুবই জরুরি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে গুলজার উদ্দিন কর্নেল পদে পদোন্নতি পেলেন। চলে গেলেন ২০০৯ সালের জানুয়ারির দিকে। সিলেট থেকে একদিন ফোন করে বেড়াতে আসতে বললেন। বললাম, বড় ঘটনা ঘটুক, নিশ্চয় যাব। শুনে হো হো করে হাসলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবারের সকাল। নাশতা করা শেষ হয়নি, ফোন দিলেন প্রথম আলোর টেলিফোন অপারেটর সুফলা। পিলখানা থেকে কে একজন অফিসের নম্বরে ফোন করে বলেছেন সেখানে খুব গন্ডগোল হচ্ছে।
পিলখানায় সেদিন বিডিআরের বার্ষিক দরবার হওয়ার কথা। বিডিআরের কয়েকজন পরিচিত কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁদের ফোন দিলাম। কেউ ধরলেন না। গুলজার উদ্দিনের ফোন লাগাতার ব্যস্ত। একটু পর আবার সুফলার ফোন। বললেন, সেখানে গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। আশপাশের বাসিন্দারা বারবার ফোন করছেন। অফিসে ফোন দিয়ে সবাইকে ঘটনা জানাতে বললাম। নিজেও বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। হঠাৎ ফোন—গুলজার উদ্দিনের ফোন। ভয়ার্ত কণ্ঠ। বাঘের মতো সাহসী মানুষের এমন কণ্ঠস্বর শুনে চমকে গেলাম। কথা বলছেন নিচু গলায়—ফিসফিসিয়ে। বললেন, ‘বিদ্রোহী সৈনিকেরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে। বাঁচব কি না, জানি না। প্লিজ যাকে পারেন তাকে বলেন।’ শুনে রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। কী করব, কাকে ফোন দেব বুঝে উঠতে পারছি না। ফোন দিলাম ডিএমপির তখনকার কমিশনার নাঈদ আহমেদকে। তাঁর ফোন ব্যস্ত। র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে ফোন করতেই তিনি বললেন ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হচ্ছেন। ফোন দিলাম আইজিপি নূর মোহাম্মদকে।তাঁর গলা কাঁপছে। বললেন, তাঁর সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়ে ও জামাতা আটকা পড়েছে। মেয়ে বারবার ফোন করে কাঁদছে। আইজিপির কথায় অসহায়ের সুর। এরপর থেকে গুলজার উদ্দিনকে আর ফোনে পাইনি। অপেক্ষায় থেকেছি, ফোন আর বাজেনি।
পরের ইতিহাস সবারই জানা। বিদ্রোহের দুই দিন পর পিলখানার গণকবর থেকে অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে গুলজার উদ্দিনের লাশ পাওয়া যায়। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গুলজার উদ্দিনের বোন শম্পা আফরোজ আমাদের জানান, বিডিআর সদর দপ্তরের সামনে থেকে ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। বনানীর সামরিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
পিলখানায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের দিন এলেই বনানীর সামরিক কবরস্থানে যাই, মনটা ভারী হয়ে আসে। কয়েক বছর আগে একবার দেখি ছোট মেয়েকে নিয়ে গুলজার উদ্দিনের স্ত্রী কবরস্থানে। সালাম দিতেই বললেন, ‘আপনাকেও তো তিনি ফোন করেছিলেন, কই বাঁচাতে পারলেন না!’ তাঁর দুই চোখে পানি। আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, কোনো জবাব দিতে পারি না।
আসলেই, আমাদের মতো সাধারণ সংবাদকর্মীর বেশির ভাগ সময় চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। নিজেকে বড় অসহায় লাগে।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কেনাকাটা তখনো জমেনি। নিচতলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে লোকজন কম। পাঠাগারের সিঁড়ি ও প্রবেশমুখে অচেনা হকার, টুপিবিক্রেতা, চশমার ফেরিওয়ালা।সবারই শিকারি চোখ। কার জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। আশপাশের দোকানিদের উৎসুক দৃষ্টি। ফিসফাস শব্দ, ‘এরা কারা?’
২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির সকাল। অপেক্ষার জবাব মেলে একটু পরে। ক্লিন শেভ, রঙিন চশমা, সবুজ শার্ট পরা এক ব্যক্তি আসেন পাঠাগারের গেটে। হেঁটে চলে যান গেট অবধি। পেছন থেকে একজন চেনার চেষ্টা করেন, আরেকজন নাম ধরে ডাকেন। আগন্তুক কোনো কথা না বলে হাত বাড়ান। হাত মেলান একজন, কিন্তু তিনি থামেন না। সোজা চলে যান ওপরে পাঠাগারের ভেতরে। কী মনে করে আবার বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ান।
পাঠাগারের প্রথম টেবিলে বসে ছদ্মবেশী দুজন ক্যাপ্টেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে কর্নেল। আর অপেক্ষা নয়। সঙ্গীদের দিকে ইশারা করেন কর্নেল। শিকার হাতছাড়া হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে একটি রিভলবার এসে ঠেকে যায় আগন্তুকের পিঠে। এতক্ষণে তাঁর আর বুঝতে বাকি থাকে না, ধরা পড়ে গেছেন। গোয়েন্দাগিরির খেলায় এভাবেই হেরে যান জেএমবির মজলিশে সুরার সদস্য হাফেজ মাহমুদ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ ক্লু–শায়খ আবদুর রহমান সিলেটে আছেন। ব্যস, শুরু হয়ে যায় জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে পাকড়াওয়ের অভিযান।
বেলা পড়তে না পড়তেই ১০-১২টি গাড়ির বহর পথের লোকদের দুপাশে সরিয়ে দিয়ে ঝড়ের গতিতে ছুটতে থাকে সিলেট হাইওয়ে ধরে। গাড়ি থেকে কর্নেল আমাকে ফোন করেন, সেই চেনা আওয়াজ–‘ওস্তাদ ব্যাগ রেডি করেন। বড় কিছু হবে।’ যেকোনো বড় খবরে এভাবেই তিনি আমাকে আগাম ক্লু দিয়ে রাখেন।
রসিকতা করে ‘ওস্তাদ’ বলা সেই লোকটির নাম কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ, বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ। সেদিনও তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে। তবে বড় কোনো খবরের জন্য নয়, জীবন ও মৃত্যুর শূন্যরেখায় দাঁড়িয়ে, যখন বিডিআরের উন্মত্ত সৈনিকেরা নির্বিচারে গুলি করে কর্মকর্তাদের হত্যা করছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যই খুব সোজাসাপ্টা। কথায় কোনো প্যাঁচগোজ নেই, যা বিশ্বাস করেন বলেন। আর বন্ধুর জন্য দিলখোলা, নিবেদিতপ্রাণ। সেই ভাবনা থেকেই গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, তাও ২৫-২৬ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক সফরে গিয়ে। তখন আমি জনকণ্ঠে।
লম্বা ছিপছিপে এক মেজর। হাঁটলে মনে হয় যেন দূরের কাশবন। বাতাসে নুয়ে পড়ছে, তারপর আবার টানটান হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। খুবই হাসিখুশি, কোনো কিছুতেই রাখঢাক নেই। অল্পতেই ভাব জমে গেল। তারপর নিয়মিত যোগাযোগ, ফোনেই বেশি।
২০০৪ সালের প্রথম দিকে একদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিচতলায় লিফটের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পেছন থেকে সেই ডাক, `ওস্তাদ…।’ তাকিয়ে দেখি পোশাক পরা গুলজার উদ্দিন আহমেদ। বললেন, র্যাব নামে নতুন একটি বাহিনী হচ্ছে, তিনি সেখানে আসছেন। তত দিনে তিনি মেজর থেকে লে. কর্নেল হয়েছেন। র্যাবে এসে ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়ে গেল। র্যাব-৩-এর অধিনায়ক হলেন। গণমাধ্যমের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিকেলের দিকে চলে যেতাম উত্তরায়, কাজের ফাঁকে ফাঁকে গল্প করতাম। তাঁর জীবনের গল্প, বেড়ে ওঠার গল্প। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া মানুষটি কীভাবে ১৯৮৩ সালে পদাতিক রেজিমেন্টে কমিশন পেলেন, তারপর বিএমএ, সেনা সদর হয়ে মিশনে গেলেন—সেই সব গল্প। আর বলতেন স্ত্রী ফাতেমা সুলতানা, দুই মেয়ে তাসনিয়া ও লামিয়ার কথা। গল্পের সময় একটি সিগারেটের আগুন দিয়ে আরেকটি সিগারেট ধরাতেন। রিং করে ছুড়ে ফেলা সেই ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যেত ফেলে আসা দিনের স্মৃতি।
২০০৫ সালে র্যাব একটি গোয়েন্দা বিভাগ গঠন করে। গুলজার উদ্দিন সেই বিভাগের প্রথম প্রধান। হাটখোলায় র্যাব-৩-এর কার্যালয় ছেড়ে এলেন বিমানবন্দর এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরে। আমারও যাতায়াত বেড়ে গেল। ২০০৬ সালে একদিন শুনি তিনি পদোন্নতি পেয়েছেন। র্যাবে আর থাকছেন না। চলে গেলেন বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর)। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে মন খারাপের কারণ উবে গেল, তিনি আবার ফিরে এলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক হয়ে।
সারা দেশে তখন জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকে ডাকাতি শুরু করেছে জেএমবি। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬টি হামলায় ৭৩ জন নিহত আর প্রায় ৮০০ লোক আহত হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। শেষ পর্যন্ত দেশে-বিদেশের চাপের মুখে চারদলীয় জোট সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জঙ্গি নির্মূলের দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামেন গুলজার উদ্দিন। জঙ্গি দমন অভিযানে তিনি যে সাহস দেখাতেন, তা ছিল শিউরে ওঠার মতো।
এর মধ্যে একদিন একটি মজার ঘটনা ঘটে। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান তখন রিমান্ডে। দুপুরের দিকে র্যাব সদর দপ্তরে গিয়ে দেখি সবার মুখ-চোখ শুকনো। পুরো অফিস থমথমে। একেবারে অন্য রকম একটি পরিবেশ। কী হয়েছে, কেউ বলছে না। খুব ঘনিষ্ঠ একজনকে অনুরোধ করতেই যা বললেন, শুনে পিলে চমকে গেল। তিনি বললেন, শায়খ আবদুর রহমান রিমান্ডে থাকা অবস্থায় র্যাব হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। কীভাবে তিনি পালালেন? বললেন, ফজরের নামাজের জন্য সেলের তালা খুলে দেওয়া হয়। তখন অজু করার নাম করে পালিয়ে যান। মাথায় যেন বাজ পড়ল। এত বড় খবর কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। গেলাম তৎকালীন মহাপরিচালক আবদুল আজিজ সরকারের কাছে। তিনি যেন ভূত দেখলেন। গেলাম গুলজার উদ্দিনের কাছে। তিনি নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসলেন। দুই হাত ধরে খুব অনুরোধ করলেন খবরটা যেন প্রকাশ না হয়। অনুরোধে মানুষ ঢেঁকিও গেলে। ছোটবেলায় শোনা সেই প্রবাদ আমার জীবনেও সত্যি হলো। পেশাদার সংবাদকর্মীরা হয়তো এখন এসে উচিত-অনুচিত নিয়ে বিতর্ক করতে পারেন। কিন্তু বন্ধুত্বের কাছে আমাকে হার মানতে হলো। অবশ্য সেদিন বিকেলেই টঙ্গীর একটি স্থান থেকে আবদুর রহমান ধরা পড়েন।
সবকিছুতেই ভালো-মন্দ দিক থাকে। এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। তিনি আমাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন, একজন সংবাদকর্মীর জন্য যা খুবই জরুরি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে গুলজার উদ্দিন কর্নেল পদে পদোন্নতি পেলেন। চলে গেলেন ২০০৯ সালের জানুয়ারির দিকে। সিলেট থেকে একদিন ফোন করে বেড়াতে আসতে বললেন। বললাম, বড় ঘটনা ঘটুক, নিশ্চয় যাব। শুনে হো হো করে হাসলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবারের সকাল। নাশতা করা শেষ হয়নি, ফোন দিলেন প্রথম আলোর টেলিফোন অপারেটর সুফলা। পিলখানা থেকে কে একজন অফিসের নম্বরে ফোন করে বলেছেন সেখানে খুব গন্ডগোল হচ্ছে।
পিলখানায় সেদিন বিডিআরের বার্ষিক দরবার হওয়ার কথা। বিডিআরের কয়েকজন পরিচিত কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁদের ফোন দিলাম। কেউ ধরলেন না। গুলজার উদ্দিনের ফোন লাগাতার ব্যস্ত। একটু পর আবার সুফলার ফোন। বললেন, সেখানে গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। আশপাশের বাসিন্দারা বারবার ফোন করছেন। অফিসে ফোন দিয়ে সবাইকে ঘটনা জানাতে বললাম। নিজেও বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। হঠাৎ ফোন—গুলজার উদ্দিনের ফোন। ভয়ার্ত কণ্ঠ। বাঘের মতো সাহসী মানুষের এমন কণ্ঠস্বর শুনে চমকে গেলাম। কথা বলছেন নিচু গলায়—ফিসফিসিয়ে। বললেন, ‘বিদ্রোহী সৈনিকেরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে। বাঁচব কি না, জানি না। প্লিজ যাকে পারেন তাকে বলেন।’ শুনে রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। কী করব, কাকে ফোন দেব বুঝে উঠতে পারছি না। ফোন দিলাম ডিএমপির তখনকার কমিশনার নাঈদ আহমেদকে। তাঁর ফোন ব্যস্ত। র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে ফোন করতেই তিনি বললেন ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হচ্ছেন। ফোন দিলাম আইজিপি নূর মোহাম্মদকে।তাঁর গলা কাঁপছে। বললেন, তাঁর সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়ে ও জামাতা আটকা পড়েছে। মেয়ে বারবার ফোন করে কাঁদছে। আইজিপির কথায় অসহায়ের সুর। এরপর থেকে গুলজার উদ্দিনকে আর ফোনে পাইনি। অপেক্ষায় থেকেছি, ফোন আর বাজেনি।
পরের ইতিহাস সবারই জানা। বিদ্রোহের দুই দিন পর পিলখানার গণকবর থেকে অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে গুলজার উদ্দিনের লাশ পাওয়া যায়। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গুলজার উদ্দিনের বোন শম্পা আফরোজ আমাদের জানান, বিডিআর সদর দপ্তরের সামনে থেকে ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। বনানীর সামরিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
পিলখানায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের দিন এলেই বনানীর সামরিক কবরস্থানে যাই, মনটা ভারী হয়ে আসে। কয়েক বছর আগে একবার দেখি ছোট মেয়েকে নিয়ে গুলজার উদ্দিনের স্ত্রী কবরস্থানে। সালাম দিতেই বললেন, ‘আপনাকেও তো তিনি ফোন করেছিলেন, কই বাঁচাতে পারলেন না!’ তাঁর দুই চোখে পানি। আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, কোনো জবাব দিতে পারি না।
আসলেই, আমাদের মতো সাধারণ সংবাদকর্মীর বেশির ভাগ সময় চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। নিজেকে বড় অসহায় লাগে।
কামরুল হাসান

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কেনাকাটা তখনো জমেনি। নিচতলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে লোকজন কম। পাঠাগারের সিঁড়ি ও প্রবেশমুখে অচেনা হকার, টুপিবিক্রেতা, চশমার ফেরিওয়ালা।সবারই শিকারি চোখ। কার জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। আশপাশের দোকানিদের উৎসুক দৃষ্টি। ফিসফাস শব্দ, ‘এরা কারা?’
২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির সকাল। অপেক্ষার জবাব মেলে একটু পরে। ক্লিন শেভ, রঙিন চশমা, সবুজ শার্ট পরা এক ব্যক্তি আসেন পাঠাগারের গেটে। হেঁটে চলে যান গেট অবধি। পেছন থেকে একজন চেনার চেষ্টা করেন, আরেকজন নাম ধরে ডাকেন। আগন্তুক কোনো কথা না বলে হাত বাড়ান। হাত মেলান একজন, কিন্তু তিনি থামেন না। সোজা চলে যান ওপরে পাঠাগারের ভেতরে। কী মনে করে আবার বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ান।
পাঠাগারের প্রথম টেবিলে বসে ছদ্মবেশী দুজন ক্যাপ্টেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে কর্নেল। আর অপেক্ষা নয়। সঙ্গীদের দিকে ইশারা করেন কর্নেল। শিকার হাতছাড়া হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে একটি রিভলবার এসে ঠেকে যায় আগন্তুকের পিঠে। এতক্ষণে তাঁর আর বুঝতে বাকি থাকে না, ধরা পড়ে গেছেন। গোয়েন্দাগিরির খেলায় এভাবেই হেরে যান জেএমবির মজলিশে সুরার সদস্য হাফেজ মাহমুদ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ ক্লু–শায়খ আবদুর রহমান সিলেটে আছেন। ব্যস, শুরু হয়ে যায় জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে পাকড়াওয়ের অভিযান।
বেলা পড়তে না পড়তেই ১০-১২টি গাড়ির বহর পথের লোকদের দুপাশে সরিয়ে দিয়ে ঝড়ের গতিতে ছুটতে থাকে সিলেট হাইওয়ে ধরে। গাড়ি থেকে কর্নেল আমাকে ফোন করেন, সেই চেনা আওয়াজ–‘ওস্তাদ ব্যাগ রেডি করেন। বড় কিছু হবে।’ যেকোনো বড় খবরে এভাবেই তিনি আমাকে আগাম ক্লু দিয়ে রাখেন।
রসিকতা করে ‘ওস্তাদ’ বলা সেই লোকটির নাম কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ, বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ। সেদিনও তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে। তবে বড় কোনো খবরের জন্য নয়, জীবন ও মৃত্যুর শূন্যরেখায় দাঁড়িয়ে, যখন বিডিআরের উন্মত্ত সৈনিকেরা নির্বিচারে গুলি করে কর্মকর্তাদের হত্যা করছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যই খুব সোজাসাপ্টা। কথায় কোনো প্যাঁচগোজ নেই, যা বিশ্বাস করেন বলেন। আর বন্ধুর জন্য দিলখোলা, নিবেদিতপ্রাণ। সেই ভাবনা থেকেই গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, তাও ২৫-২৬ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক সফরে গিয়ে। তখন আমি জনকণ্ঠে।
লম্বা ছিপছিপে এক মেজর। হাঁটলে মনে হয় যেন দূরের কাশবন। বাতাসে নুয়ে পড়ছে, তারপর আবার টানটান হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। খুবই হাসিখুশি, কোনো কিছুতেই রাখঢাক নেই। অল্পতেই ভাব জমে গেল। তারপর নিয়মিত যোগাযোগ, ফোনেই বেশি।
২০০৪ সালের প্রথম দিকে একদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিচতলায় লিফটের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পেছন থেকে সেই ডাক, `ওস্তাদ…।’ তাকিয়ে দেখি পোশাক পরা গুলজার উদ্দিন আহমেদ। বললেন, র্যাব নামে নতুন একটি বাহিনী হচ্ছে, তিনি সেখানে আসছেন। তত দিনে তিনি মেজর থেকে লে. কর্নেল হয়েছেন। র্যাবে এসে ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়ে গেল। র্যাব-৩-এর অধিনায়ক হলেন। গণমাধ্যমের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিকেলের দিকে চলে যেতাম উত্তরায়, কাজের ফাঁকে ফাঁকে গল্প করতাম। তাঁর জীবনের গল্প, বেড়ে ওঠার গল্প। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া মানুষটি কীভাবে ১৯৮৩ সালে পদাতিক রেজিমেন্টে কমিশন পেলেন, তারপর বিএমএ, সেনা সদর হয়ে মিশনে গেলেন—সেই সব গল্প। আর বলতেন স্ত্রী ফাতেমা সুলতানা, দুই মেয়ে তাসনিয়া ও লামিয়ার কথা। গল্পের সময় একটি সিগারেটের আগুন দিয়ে আরেকটি সিগারেট ধরাতেন। রিং করে ছুড়ে ফেলা সেই ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যেত ফেলে আসা দিনের স্মৃতি।
২০০৫ সালে র্যাব একটি গোয়েন্দা বিভাগ গঠন করে। গুলজার উদ্দিন সেই বিভাগের প্রথম প্রধান। হাটখোলায় র্যাব-৩-এর কার্যালয় ছেড়ে এলেন বিমানবন্দর এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরে। আমারও যাতায়াত বেড়ে গেল। ২০০৬ সালে একদিন শুনি তিনি পদোন্নতি পেয়েছেন। র্যাবে আর থাকছেন না। চলে গেলেন বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর)। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে মন খারাপের কারণ উবে গেল, তিনি আবার ফিরে এলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক হয়ে।
সারা দেশে তখন জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকে ডাকাতি শুরু করেছে জেএমবি। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬টি হামলায় ৭৩ জন নিহত আর প্রায় ৮০০ লোক আহত হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। শেষ পর্যন্ত দেশে-বিদেশের চাপের মুখে চারদলীয় জোট সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জঙ্গি নির্মূলের দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামেন গুলজার উদ্দিন। জঙ্গি দমন অভিযানে তিনি যে সাহস দেখাতেন, তা ছিল শিউরে ওঠার মতো।
এর মধ্যে একদিন একটি মজার ঘটনা ঘটে। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান তখন রিমান্ডে। দুপুরের দিকে র্যাব সদর দপ্তরে গিয়ে দেখি সবার মুখ-চোখ শুকনো। পুরো অফিস থমথমে। একেবারে অন্য রকম একটি পরিবেশ। কী হয়েছে, কেউ বলছে না। খুব ঘনিষ্ঠ একজনকে অনুরোধ করতেই যা বললেন, শুনে পিলে চমকে গেল। তিনি বললেন, শায়খ আবদুর রহমান রিমান্ডে থাকা অবস্থায় র্যাব হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। কীভাবে তিনি পালালেন? বললেন, ফজরের নামাজের জন্য সেলের তালা খুলে দেওয়া হয়। তখন অজু করার নাম করে পালিয়ে যান। মাথায় যেন বাজ পড়ল। এত বড় খবর কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। গেলাম তৎকালীন মহাপরিচালক আবদুল আজিজ সরকারের কাছে। তিনি যেন ভূত দেখলেন। গেলাম গুলজার উদ্দিনের কাছে। তিনি নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসলেন। দুই হাত ধরে খুব অনুরোধ করলেন খবরটা যেন প্রকাশ না হয়। অনুরোধে মানুষ ঢেঁকিও গেলে। ছোটবেলায় শোনা সেই প্রবাদ আমার জীবনেও সত্যি হলো। পেশাদার সংবাদকর্মীরা হয়তো এখন এসে উচিত-অনুচিত নিয়ে বিতর্ক করতে পারেন। কিন্তু বন্ধুত্বের কাছে আমাকে হার মানতে হলো। অবশ্য সেদিন বিকেলেই টঙ্গীর একটি স্থান থেকে আবদুর রহমান ধরা পড়েন।
সবকিছুতেই ভালো-মন্দ দিক থাকে। এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। তিনি আমাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন, একজন সংবাদকর্মীর জন্য যা খুবই জরুরি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে গুলজার উদ্দিন কর্নেল পদে পদোন্নতি পেলেন। চলে গেলেন ২০০৯ সালের জানুয়ারির দিকে। সিলেট থেকে একদিন ফোন করে বেড়াতে আসতে বললেন। বললাম, বড় ঘটনা ঘটুক, নিশ্চয় যাব। শুনে হো হো করে হাসলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবারের সকাল। নাশতা করা শেষ হয়নি, ফোন দিলেন প্রথম আলোর টেলিফোন অপারেটর সুফলা। পিলখানা থেকে কে একজন অফিসের নম্বরে ফোন করে বলেছেন সেখানে খুব গন্ডগোল হচ্ছে।
পিলখানায় সেদিন বিডিআরের বার্ষিক দরবার হওয়ার কথা। বিডিআরের কয়েকজন পরিচিত কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁদের ফোন দিলাম। কেউ ধরলেন না। গুলজার উদ্দিনের ফোন লাগাতার ব্যস্ত। একটু পর আবার সুফলার ফোন। বললেন, সেখানে গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। আশপাশের বাসিন্দারা বারবার ফোন করছেন। অফিসে ফোন দিয়ে সবাইকে ঘটনা জানাতে বললাম। নিজেও বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। হঠাৎ ফোন—গুলজার উদ্দিনের ফোন। ভয়ার্ত কণ্ঠ। বাঘের মতো সাহসী মানুষের এমন কণ্ঠস্বর শুনে চমকে গেলাম। কথা বলছেন নিচু গলায়—ফিসফিসিয়ে। বললেন, ‘বিদ্রোহী সৈনিকেরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে। বাঁচব কি না, জানি না। প্লিজ যাকে পারেন তাকে বলেন।’ শুনে রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। কী করব, কাকে ফোন দেব বুঝে উঠতে পারছি না। ফোন দিলাম ডিএমপির তখনকার কমিশনার নাঈদ আহমেদকে। তাঁর ফোন ব্যস্ত। র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে ফোন করতেই তিনি বললেন ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হচ্ছেন। ফোন দিলাম আইজিপি নূর মোহাম্মদকে।তাঁর গলা কাঁপছে। বললেন, তাঁর সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়ে ও জামাতা আটকা পড়েছে। মেয়ে বারবার ফোন করে কাঁদছে। আইজিপির কথায় অসহায়ের সুর। এরপর থেকে গুলজার উদ্দিনকে আর ফোনে পাইনি। অপেক্ষায় থেকেছি, ফোন আর বাজেনি।
পরের ইতিহাস সবারই জানা। বিদ্রোহের দুই দিন পর পিলখানার গণকবর থেকে অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে গুলজার উদ্দিনের লাশ পাওয়া যায়। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গুলজার উদ্দিনের বোন শম্পা আফরোজ আমাদের জানান, বিডিআর সদর দপ্তরের সামনে থেকে ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। বনানীর সামরিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
পিলখানায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের দিন এলেই বনানীর সামরিক কবরস্থানে যাই, মনটা ভারী হয়ে আসে। কয়েক বছর আগে একবার দেখি ছোট মেয়েকে নিয়ে গুলজার উদ্দিনের স্ত্রী কবরস্থানে। সালাম দিতেই বললেন, ‘আপনাকেও তো তিনি ফোন করেছিলেন, কই বাঁচাতে পারলেন না!’ তাঁর দুই চোখে পানি। আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, কোনো জবাব দিতে পারি না।
আসলেই, আমাদের মতো সাধারণ সংবাদকর্মীর বেশির ভাগ সময় চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। নিজেকে বড় অসহায় লাগে।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কেনাকাটা তখনো জমেনি। নিচতলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে লোকজন কম। পাঠাগারের সিঁড়ি ও প্রবেশমুখে অচেনা হকার, টুপিবিক্রেতা, চশমার ফেরিওয়ালা।সবারই শিকারি চোখ। কার জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। আশপাশের দোকানিদের উৎসুক দৃষ্টি। ফিসফাস শব্দ, ‘এরা কারা?’
২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির সকাল। অপেক্ষার জবাব মেলে একটু পরে। ক্লিন শেভ, রঙিন চশমা, সবুজ শার্ট পরা এক ব্যক্তি আসেন পাঠাগারের গেটে। হেঁটে চলে যান গেট অবধি। পেছন থেকে একজন চেনার চেষ্টা করেন, আরেকজন নাম ধরে ডাকেন। আগন্তুক কোনো কথা না বলে হাত বাড়ান। হাত মেলান একজন, কিন্তু তিনি থামেন না। সোজা চলে যান ওপরে পাঠাগারের ভেতরে। কী মনে করে আবার বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ান।
পাঠাগারের প্রথম টেবিলে বসে ছদ্মবেশী দুজন ক্যাপ্টেন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে কর্নেল। আর অপেক্ষা নয়। সঙ্গীদের দিকে ইশারা করেন কর্নেল। শিকার হাতছাড়া হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে একটি রিভলবার এসে ঠেকে যায় আগন্তুকের পিঠে। এতক্ষণে তাঁর আর বুঝতে বাকি থাকে না, ধরা পড়ে গেছেন। গোয়েন্দাগিরির খেলায় এভাবেই হেরে যান জেএমবির মজলিশে সুরার সদস্য হাফেজ মাহমুদ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ ক্লু–শায়খ আবদুর রহমান সিলেটে আছেন। ব্যস, শুরু হয়ে যায় জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে পাকড়াওয়ের অভিযান।
বেলা পড়তে না পড়তেই ১০-১২টি গাড়ির বহর পথের লোকদের দুপাশে সরিয়ে দিয়ে ঝড়ের গতিতে ছুটতে থাকে সিলেট হাইওয়ে ধরে। গাড়ি থেকে কর্নেল আমাকে ফোন করেন, সেই চেনা আওয়াজ–‘ওস্তাদ ব্যাগ রেডি করেন। বড় কিছু হবে।’ যেকোনো বড় খবরে এভাবেই তিনি আমাকে আগাম ক্লু দিয়ে রাখেন।
রসিকতা করে ‘ওস্তাদ’ বলা সেই লোকটির নাম কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ, বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ। সেদিনও তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে। তবে বড় কোনো খবরের জন্য নয়, জীবন ও মৃত্যুর শূন্যরেখায় দাঁড়িয়ে, যখন বিডিআরের উন্মত্ত সৈনিকেরা নির্বিচারে গুলি করে কর্মকর্তাদের হত্যা করছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যই খুব সোজাসাপ্টা। কথায় কোনো প্যাঁচগোজ নেই, যা বিশ্বাস করেন বলেন। আর বন্ধুর জন্য দিলখোলা, নিবেদিতপ্রাণ। সেই ভাবনা থেকেই গুলজার উদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, তাও ২৫-২৬ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক সফরে গিয়ে। তখন আমি জনকণ্ঠে।
লম্বা ছিপছিপে এক মেজর। হাঁটলে মনে হয় যেন দূরের কাশবন। বাতাসে নুয়ে পড়ছে, তারপর আবার টানটান হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। খুবই হাসিখুশি, কোনো কিছুতেই রাখঢাক নেই। অল্পতেই ভাব জমে গেল। তারপর নিয়মিত যোগাযোগ, ফোনেই বেশি।
২০০৪ সালের প্রথম দিকে একদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিচতলায় লিফটের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পেছন থেকে সেই ডাক, `ওস্তাদ…।’ তাকিয়ে দেখি পোশাক পরা গুলজার উদ্দিন আহমেদ। বললেন, র্যাব নামে নতুন একটি বাহিনী হচ্ছে, তিনি সেখানে আসছেন। তত দিনে তিনি মেজর থেকে লে. কর্নেল হয়েছেন। র্যাবে এসে ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়ে গেল। র্যাব-৩-এর অধিনায়ক হলেন। গণমাধ্যমের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিকেলের দিকে চলে যেতাম উত্তরায়, কাজের ফাঁকে ফাঁকে গল্প করতাম। তাঁর জীবনের গল্প, বেড়ে ওঠার গল্প। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া মানুষটি কীভাবে ১৯৮৩ সালে পদাতিক রেজিমেন্টে কমিশন পেলেন, তারপর বিএমএ, সেনা সদর হয়ে মিশনে গেলেন—সেই সব গল্প। আর বলতেন স্ত্রী ফাতেমা সুলতানা, দুই মেয়ে তাসনিয়া ও লামিয়ার কথা। গল্পের সময় একটি সিগারেটের আগুন দিয়ে আরেকটি সিগারেট ধরাতেন। রিং করে ছুড়ে ফেলা সেই ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যেত ফেলে আসা দিনের স্মৃতি।
২০০৫ সালে র্যাব একটি গোয়েন্দা বিভাগ গঠন করে। গুলজার উদ্দিন সেই বিভাগের প্রথম প্রধান। হাটখোলায় র্যাব-৩-এর কার্যালয় ছেড়ে এলেন বিমানবন্দর এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরে। আমারও যাতায়াত বেড়ে গেল। ২০০৬ সালে একদিন শুনি তিনি পদোন্নতি পেয়েছেন। র্যাবে আর থাকছেন না। চলে গেলেন বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর)। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে মন খারাপের কারণ উবে গেল, তিনি আবার ফিরে এলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক হয়ে।
সারা দেশে তখন জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকে ডাকাতি শুরু করেছে জেএমবি। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬টি হামলায় ৭৩ জন নিহত আর প্রায় ৮০০ লোক আহত হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। শেষ পর্যন্ত দেশে-বিদেশের চাপের মুখে চারদলীয় জোট সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। জঙ্গি নির্মূলের দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামেন গুলজার উদ্দিন। জঙ্গি দমন অভিযানে তিনি যে সাহস দেখাতেন, তা ছিল শিউরে ওঠার মতো।
এর মধ্যে একদিন একটি মজার ঘটনা ঘটে। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান তখন রিমান্ডে। দুপুরের দিকে র্যাব সদর দপ্তরে গিয়ে দেখি সবার মুখ-চোখ শুকনো। পুরো অফিস থমথমে। একেবারে অন্য রকম একটি পরিবেশ। কী হয়েছে, কেউ বলছে না। খুব ঘনিষ্ঠ একজনকে অনুরোধ করতেই যা বললেন, শুনে পিলে চমকে গেল। তিনি বললেন, শায়খ আবদুর রহমান রিমান্ডে থাকা অবস্থায় র্যাব হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। কীভাবে তিনি পালালেন? বললেন, ফজরের নামাজের জন্য সেলের তালা খুলে দেওয়া হয়। তখন অজু করার নাম করে পালিয়ে যান। মাথায় যেন বাজ পড়ল। এত বড় খবর কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। গেলাম তৎকালীন মহাপরিচালক আবদুল আজিজ সরকারের কাছে। তিনি যেন ভূত দেখলেন। গেলাম গুলজার উদ্দিনের কাছে। তিনি নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে আমার পাশের চেয়ারে বসলেন। দুই হাত ধরে খুব অনুরোধ করলেন খবরটা যেন প্রকাশ না হয়। অনুরোধে মানুষ ঢেঁকিও গেলে। ছোটবেলায় শোনা সেই প্রবাদ আমার জীবনেও সত্যি হলো। পেশাদার সংবাদকর্মীরা হয়তো এখন এসে উচিত-অনুচিত নিয়ে বিতর্ক করতে পারেন। কিন্তু বন্ধুত্বের কাছে আমাকে হার মানতে হলো। অবশ্য সেদিন বিকেলেই টঙ্গীর একটি স্থান থেকে আবদুর রহমান ধরা পড়েন।
সবকিছুতেই ভালো-মন্দ দিক থাকে। এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। তিনি আমাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন, একজন সংবাদকর্মীর জন্য যা খুবই জরুরি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে গুলজার উদ্দিন কর্নেল পদে পদোন্নতি পেলেন। চলে গেলেন ২০০৯ সালের জানুয়ারির দিকে। সিলেট থেকে একদিন ফোন করে বেড়াতে আসতে বললেন। বললাম, বড় ঘটনা ঘটুক, নিশ্চয় যাব। শুনে হো হো করে হাসলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবারের সকাল। নাশতা করা শেষ হয়নি, ফোন দিলেন প্রথম আলোর টেলিফোন অপারেটর সুফলা। পিলখানা থেকে কে একজন অফিসের নম্বরে ফোন করে বলেছেন সেখানে খুব গন্ডগোল হচ্ছে।
পিলখানায় সেদিন বিডিআরের বার্ষিক দরবার হওয়ার কথা। বিডিআরের কয়েকজন পরিচিত কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁদের ফোন দিলাম। কেউ ধরলেন না। গুলজার উদ্দিনের ফোন লাগাতার ব্যস্ত। একটু পর আবার সুফলার ফোন। বললেন, সেখানে গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। আশপাশের বাসিন্দারা বারবার ফোন করছেন। অফিসে ফোন দিয়ে সবাইকে ঘটনা জানাতে বললাম। নিজেও বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। হঠাৎ ফোন—গুলজার উদ্দিনের ফোন। ভয়ার্ত কণ্ঠ। বাঘের মতো সাহসী মানুষের এমন কণ্ঠস্বর শুনে চমকে গেলাম। কথা বলছেন নিচু গলায়—ফিসফিসিয়ে। বললেন, ‘বিদ্রোহী সৈনিকেরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে। বাঁচব কি না, জানি না। প্লিজ যাকে পারেন তাকে বলেন।’ শুনে রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। কী করব, কাকে ফোন দেব বুঝে উঠতে পারছি না। ফোন দিলাম ডিএমপির তখনকার কমিশনার নাঈদ আহমেদকে। তাঁর ফোন ব্যস্ত। র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে ফোন করতেই তিনি বললেন ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হচ্ছেন। ফোন দিলাম আইজিপি নূর মোহাম্মদকে।তাঁর গলা কাঁপছে। বললেন, তাঁর সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়ে ও জামাতা আটকা পড়েছে। মেয়ে বারবার ফোন করে কাঁদছে। আইজিপির কথায় অসহায়ের সুর। এরপর থেকে গুলজার উদ্দিনকে আর ফোনে পাইনি। অপেক্ষায় থেকেছি, ফোন আর বাজেনি।
পরের ইতিহাস সবারই জানা। বিদ্রোহের দুই দিন পর পিলখানার গণকবর থেকে অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে গুলজার উদ্দিনের লাশ পাওয়া যায়। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গুলজার উদ্দিনের বোন শম্পা আফরোজ আমাদের জানান, বিডিআর সদর দপ্তরের সামনে থেকে ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। বনানীর সামরিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
পিলখানায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের দিন এলেই বনানীর সামরিক কবরস্থানে যাই, মনটা ভারী হয়ে আসে। কয়েক বছর আগে একবার দেখি ছোট মেয়েকে নিয়ে গুলজার উদ্দিনের স্ত্রী কবরস্থানে। সালাম দিতেই বললেন, ‘আপনাকেও তো তিনি ফোন করেছিলেন, কই বাঁচাতে পারলেন না!’ তাঁর দুই চোখে পানি। আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, কোনো জবাব দিতে পারি না।
আসলেই, আমাদের মতো সাধারণ সংবাদকর্মীর বেশির ভাগ সময় চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। নিজেকে বড় অসহায় লাগে।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
১৫ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
১৫ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
১৫ দিন আগে
রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।
গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কেনাকাটা তখনো জমেনি। নিচতলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে লোকজন কম। পাঠাগারের সিঁড়ি ও প্রবেশমুখে অচেনা হকার, টুপিবিক্রেতা, চশমার ফেরিওয়ালা।সবারই শিকারি চোখ। কার জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। আশপাশের দোকানিদের উৎসুক দৃষ্টি। ফিসফাস শব্দ, ‘এরা কারা?’
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
১৫ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
১৫ দিন আগে
রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’
কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’
যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কেনাকাটা তখনো জমেনি। নিচতলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে লোকজন কম। পাঠাগারের সিঁড়ি ও প্রবেশমুখে অচেনা হকার, টুপিবিক্রেতা, চশমার ফেরিওয়ালা।সবারই শিকারি চোখ। কার জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। আশপাশের দোকানিদের উৎসুক দৃষ্টি। ফিসফাস শব্দ, ‘এরা কারা?’
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
১৫ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
১৫ দিন আগে
রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।
মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।
প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।
কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।
তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।
বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।
মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।
প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।
কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।
তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কেনাকাটা তখনো জমেনি। নিচতলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে লোকজন কম। পাঠাগারের সিঁড়ি ও প্রবেশমুখে অচেনা হকার, টুপিবিক্রেতা, চশমার ফেরিওয়ালা।সবারই শিকারি চোখ। কার জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। আশপাশের দোকানিদের উৎসুক দৃষ্টি। ফিসফাস শব্দ, ‘এরা কারা?’
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
১৫ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
১৫ দিন আগে
রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী।
২৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।
ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।
ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।
পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পাঁচজন রিমান্ডে
মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।
ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।
ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।
পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পাঁচজন রিমান্ডে
মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে কেনাকাটা তখনো জমেনি। নিচতলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে লোকজন কম। পাঠাগারের সিঁড়ি ও প্রবেশমুখে অচেনা হকার, টুপিবিক্রেতা, চশমার ফেরিওয়ালা।সবারই শিকারি চোখ। কার জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। আশপাশের দোকানিদের উৎসুক দৃষ্টি। ফিসফাস শব্দ, ‘এরা কারা?’
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
১৫ দিন আগে
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’
১৫ দিন আগে
প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। এর পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু। প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন।
১৫ দিন আগে