Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্কে বাংলাদেশের সর্বনাশ, ভারতসহ যাদের পৌষ মাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ৫৪
সব আমদানি পণ্যে বিভিন্ন মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
সব আমদানি পণ্যে বিভিন্ন মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিশানা ছিল চীন, তবে শিকার হলো প্রায় সবাই। তাঁর নতুন শুল্কনীতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো অনেক ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক অংশীদার চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’ প্রবাদটি যেন ফলছে এখানে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, কিছুটা চাপে পড়লেও এই শুল্কযুদ্ধ থেকে ফসল ঘরে তুলতে পারে ব্রাজিল, মিসর, মরক্কো, ভারত ও কেনিয়ার মতো কিছু দেশ। দেশগুলো একধরনের কৌশলগত সুবিধা পেতে পারে। তবে এ সুফল স্থায়ী হবে কি না, তা নির্ভর করবে ট্রাম্প প্রশাসনের পরবর্তী নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ আর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশের গতিপথের ওপর।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি মিত্র ও ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২০ শতাংশ বা তার বেশি হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের নতুন এই শুল্কনীতি ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ-যাত্রায় ‘রক্ষা’ পাওয়া দেশগুলোর একটি হলো ব্রাজিল। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মাত্র ১০ শতাংশ ‘পারস্পরিক’ আমদানি শুল্ক নিয়ে সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে ব্রাজিল নিট আমদানিকারক দেশ। চীন ও অন্যান্য বৃহৎ রপ্তানিকারকদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে কিছু দেশ যে সুযোগ নিতে পারে, তা চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে থাকা মরক্কো, মিসর, তুরস্ক ও সিঙ্গাপুর এখন বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর বিপর্যয় থেকে সুবিধা নিতে পারে। কারণ, এ দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে এবং ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ওপর যথাক্রমে ৩৭ শতাংশ ও ৪৬ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাজিল ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর মাত্র ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির তুলনায় অনেকটাই নমনীয়।

মিসরের টেক্সটাইল কোম্পানি টি অ্যান্ড সি গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান মাগদি তোলবা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু মিসরের ওপর শুল্ক আরোপ করেনি, অন্য অনেক দেশের ওপর আরও বেশি হারে শুল্ক বসিয়েছে। এটি মিসরের জন্য বড় সুযোগ এনে দিচ্ছে।

চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামকে মিসরের প্রধান প্রতিযোগী হিসেবে উল্লেখ করে তোলবা বলেন, ‘সুযোগটা একেবারে চোখের সামনে। এখন আমাদের শুধু এটাকে কাজে লাগাতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে তুরস্কের লোহা, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন অন্য দেশগুলোর ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে তুলনামূলকভাবে লাভবান হতে পারে। তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমের বোলাত এই শুল্ক পরিস্থিতিকে ‘সবচেয়ে খারাপের মধ্যে সেরা’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ, অন্য অনেক দেশের তুলনায় তুরস্কের ওপর শুল্কের হার অপেক্ষাকৃত কম।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মরক্কোর একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এশিয়ার সাবেক শক্তিধর অর্থনৈতিক দেশগুলোর ক্ষতির মধ্যে আপাতভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির। একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক এখন মরক্কোর জন্য একটি সুযোগ হয়ে এসেছে। যেসব বৈদেশিক বিনিয়োগকারী যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে চান, তাঁদের জন্য ১০ শতাংশ শুল্ক তুলনামূলক আকর্ষণীয় হতে পারে।

তবে ওই কর্মকর্তা ও অন্যান্য বিশ্লেষক সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ঝুঁকি এখনো বিদ্যমান। সম্প্রতি চীনা কোম্পানি গোশন হাইটেক ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি বড় বিনিয়োগ করছে মিসরে। এই টাকায় আফ্রিকার প্রথম গিগাফ্যাক্টরি নির্মাণ করা হবে। এটি ট্রাম্প ভালোভাবে না-ও নিতে পারেন।

মরক্কোর ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যানালাইসিসের অর্থনীতিবিদ রাশিদ আওররাজ বলেন, ‘মরক্কোর সিংহভাগ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে না হলেও শুল্কের সামগ্রিক ধাক্কা এবং মন্দার আশঙ্কা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্তে থাকা কেনিয়ার ওপর তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক আরোপ হলেও দেশটিতে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে; বিশেষ করে টেক্সটাইল উৎপাদকেরা আশাবাদী যে মোটা শুল্কে জর্জরিতদের তুলনায় তাঁরা একটু বেশি সুবিধা নিতে পারবেন।

একই ধরনের উদ্বেগ সিঙ্গাপুরেও দেখা যাচ্ছে। গতকাল সোমবার দেশটির শেয়ারবাজারে সূচক ৭ দশমিক ৫ শতাংশ পড়ে গেছে, যা ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে বড় পতন। আজ মঙ্গলবারও এই পতন অব্যাহত ছিল।

ওসিবিসি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ সেলেনা লিং বলেন, বিনিয়োগকারীরা বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুরের মতো জায়গায় যেতে পারেন; কিন্তু এখানে এখনো স্থানীয় উৎপাদন ও কনটেন্ট-সম্পর্কিত কঠোর নীতিমালা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বা বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেলে আদতে কেউই জয়ী হবে না—সবই আপেক্ষিক।

মেব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ চুয়া হাক বিন বলেন, সিঙ্গাপুর বিশ্ব বাণিজ্যযুদ্ধে জিততে পারবে না; কারণ, দেশটি বিশ্ব বাণিজ্যের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল।

এদিকে ভারত ২৬ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়লেও এশীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। রয়টার্সের হাতে আসা এক সরকারি মূল্যায়নে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সটাইল, পোশাক ও পাদুকা খাতে অংশীদারত্ব বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির।

শুল্ক ঘোষণার পরপরই ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্যনীতির কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য সুযোগগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তারা অ্যাপলের আইফোন উৎপাদনের আরও বড় অংশ চীন থেকে ভারতে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। কারণ, শুল্ক পার্থক্য সুবিধা এনে দিতে পারে। যদিও ২৬ শতাংশ শুল্কেও যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম বেশ বাড়বে।

দক্ষিণ আমেরিকা এখনো রপ্তানির জন্য ও শস্য জাতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। সেখানেও আশাবাদ দেখা যাচ্ছে যে এই শুল্ক-সংকটের ফলে মার্কোসার ব্লক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বহুপ্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি নতুন করে আলোচনায় আসতে পারে।

ব্রাজিল এই আলোচনায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের বাদ দিয়ে ব্রাজিল থেকে বেশি সয়াবিন ও ভুট্টা কিনেছিল—তেমনটি আবারও ঘটতে পারে।

লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ মেক্সিকো অতীতে ট্রাম্পের রোষানলে পড়েছিল, এবার তুলনামূলক ভালোভাবেই রক্ষা পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা (ইউএসএমসিএ) চুক্তির কারণে তাদের বেশির ভাগ বাণিজ্যই সুরক্ষিত রয়েছে।

তবে আরবিসি ব্লুবের ইমার্জিং মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট গ্রাহাম স্টক বলেন, মেক্সিকান সম্পদগুলো এখন অন্যদের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। আর দিনশেষে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের অর্থনীতির বিরুদ্ধেই এক বড় আত্মঘাতী পদক্ষেপ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা 
রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কার এবং সব খাতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা (অটোমেশন) চালুর উদ্যোগের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের বাড়তি তৎপরতা সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। প্রতিমাসে রাজকোষের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে ঘাটতির ব্যবধান স্পষ্ট হচ্ছে এবং চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা বজায় আছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বা ১৩.৮৯ শতাংশ।

তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো—রাজস্ব আদায়ে বৃদ্ধি হয়েছে ১৫.১৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আদায় হয়েছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যের ধীরগতির কারণে রাজস্ব আদায় প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। তবে বছরের শেষ দিকে সাধারণত আদায় বাড়ে। করের আওতা বৃদ্ধি, কর পরিপালন জোরদার করা এবং ফাঁকি প্রতিরোধে এনবিআর সক্রিয়।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দাভাব, কাঠামোগত দুর্বলতা ও সক্ষমতার অভাব সরাসরি রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তা ছাড়া অর্থবছরের মাঝপথে লক্ষ্যমাত্রা একলাফে ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর কারণে বাস্তবতার সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার ব্যবধান আরও প্রকট হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। তবে ১০ নভেম্বর বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি তা ৫ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করে। ফলে বাকি সাত মাসে এনবিআরকে ৪ লাখ ৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকে। প্রধান কারণ হলো এনবিআরের সক্ষমতার চেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ। মানবসম্পদ, কারিগরি দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা পর্যাপ্ত নয়; পাশাপাশি করদাতা এবং করযোগ্য ব্যক্তির মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে, কর ফাঁকিও প্রচুর। বর্তমান ব্যবসায়িক মন্দা, খরচ বৃদ্ধি, আয় হ্রাস এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কমে যাওয়াও রাজস্ব আদায়ে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানো, অটোমেশন ও সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়ন করলে রাজস্ব ফাঁকি রোধ করে আদায় বাড়ানো সম্ভব।

সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, এনবিআরের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি প্রশাসনিক পদে বড় রদবদলের কারণে কার্যক্রম গোছাতে কিছুটা সময় লাগা স্বাভাবিক।

রাজস্ব খাত অনুযায়ী, ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। প্রথম পাঁচ মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা; ঘাটতি ৩ হাজার ৮১৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ৬.১৫ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১.৯৭ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আসে আয়কর খাতে। আদায় হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৮১ কোটি, লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ হাজার ৯৯৫ কোটি ২৫ লাখ; ঘাটতি ২০.১৯ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। কাস্টমস বা শুল্ক খাতে ৪২ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার ৯৭৯ কোটি ৫৬ লাখ; ঘাটতি ১৫.৯১ শতাংশ, তবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.২৮ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার অপরিহার্য। এনবিআরের মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রক্রিয়ার সরলীকরণ এবং অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আদালতের রায়ে ইতিহাস গড়লেন ইলন মাস্ক, সম্পদ ছাড়াল ৭০০ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৪
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

পে প্যাকেজ বা বেতন-ভাতাসংক্রান্ত একটি মামলার রায়ের পর টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের সম্পদ গত শুক্রবার রাতে ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে।

ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট মাস্কের ১৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের টেসলা স্টক অপশনগুলো পুনর্বহাল করার পরই তাঁর সম্পদে এই বিশাল উল্লম্ফন দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত বছর আদালত এই সুবিধাগুলো বাতিল করেছিলেন।

২০১৮ সালে মাস্কের যে বেতন প্যাকেজের মূল্য ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল, সেটিই গত শুক্রবার ডেলাওয়্যার সুপ্রিম কোর্ট পুনর্বহাল করেন। এর দুই বছর আগে নিম্ন আদালত ওই পারিশ্রমিক চুক্তিকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যা দিয়ে বাতিল করেছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছেন, ২০২৪ সালে দেওয়া যে সিদ্ধান্তে বেতনের প্যাকেজটি বাতিল করা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না এবং মাস্কের প্রতি অন্যায্য ছিল।

এর আগে চলতি সপ্তাহে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স শেয়ারবাজারে আসতে পারে—এমন প্রতিবেদনের পর মাস্কের সম্পদ ৬০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন।

এদিকে গত নভেম্বরে টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা আলাদাভাবে মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পারিশ্রমিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেন।

এটি করপোরেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেতন প্যাকেজ। বিনিয়োগকারীরা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসভিত্তিক এক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে মাস্কের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানান।

ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, মাস্কের বর্তমান সম্পদমূল্য গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের চেয়ে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। ল্যারি পেজ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পুঁজিবাজারে নথি জমা এখন এক ক্লিকে

দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর তথ্য জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ। একই তথ্য বারবার ছাপিয়ে আলাদা স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হতো। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সম্প্রতি চালু করেছে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম (এসএসএস)।

নতুন এই সিস্টেমের মাধ্যমে কোম্পানি ও ফান্ডগুলো মূল্য সংবেদনশীল ঘোষণা, আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য রেগুলেটরি ফাইলিং কাগজ ছাড়াই অনলাইনে জমা দিতে পারবে। এতে সময় ও খরচ কমার পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং ট্র্যাকিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ডিএসই সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্ম ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ দুটি নতুন মডিউল যুক্ত হওয়ায় এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তথ্য একই ডিজিটাল গেটওয়ে দিয়ে জমা দেওয়া সম্ভব। ফলে দ্বৈত সাবমিশনের ঝামেলা প্রায় সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে কাগুজে নথির ওপর নির্ভরতা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সাবমিশন শুধু সুবিধার বিষয় নয়, এটি বাজার শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার একটি কাঠামোগত পরিবর্তন।

ডিএসই জানায়, চায়নিজ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কাজ করে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়ানোর পর সিস্টেমটি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন ফিচার যুক্ত করা সহজ হবে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান বলেন, একক ডিজিটাল সাবমিশন পয়েন্ট চালু হওয়ায় ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপজনিত ভুল কমবে এবং তথ্য জমার প্রতিটি ধাপ ডিজিটালি যাচাইযোগ্য থাকবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের প্রভাব শুধু স্টক এক্সচেঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হতে যাচ্ছে কক্সবাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও নগদ লেনদেনমুক্ত (ক্যাশলেস) রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে দেশের প্রথম ‘ক্যাশলেস’ জেলা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই তথ্য জানান।

গভর্নর বলেন, ‘২০২৭ সালের মধ্যে দেশের অন্তত ৭৫ শতাংশ খুচরা লেনদেন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিকের হাতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।’

চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা শীর্ষক এই সভায় গভর্নর চট্টগ্রামকে দেশের ‘অর্থনৈতিক লাইফলাইন’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ভারী শিল্প এবং জ্বালানি অবকাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু এই চট্টগ্রাম। সিঙ্গাপুর, দুবাই বা হংকংয়ের মতো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংযোগ শক্তিশালী করতে হবে। তবেই এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।’

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করতে দেশের সব সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে শিগগিরই ২৪ ঘণ্টা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সিস্টেম চালু করা হবে বলে জানান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এটি একটি তাৎক্ষণিক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ব্যবস্থা যা বাণিজ্যের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ ছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএমই) এবং কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ও সহজ শর্তে ঋণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন গভর্নর। জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদনশীল খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বার, ব্যাংকার, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত