Ajker Patrika

বড় আমদানিকারকদের অনেকে গ্রেপ্তার অথবা পলাতক, ফুরিয়ে যাচ্ছে খেজুরের মজুত

  • চাহিদা ৭০ হাজার টন, সরবরাহ মাত্র ২৮৯ টন
  • দুই বছর ধরেই কমছে আমদানি
  • সময় থাকতেই শুল্ক ও ট্যারিফ ভ্যালু নিয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আমদানিকারক

রোকন উদ্দীন, ঢাকা
বিভিন্ন ধরনের খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বিভিন্ন ধরনের খেজুরের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতা। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা।

রমজান মাসে দেশে ইফতার-সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ খেজুর। ধর্মীয় রীতির প্রতি সম্মান জানিয়ে অধিকাংশ রোজাদার খেজুর দিয়ে ইফতার করেন। এটি শুধু ধর্মীয় গুরুত্বই বহন করে না; বরং পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ, যা সারা দিন সিয়াম শেষে খেলে শরীরে জোগায় তাৎক্ষণিক শক্তি। সাহ্‌রিতেও অনেকে দু-চারটি খেজুর খেয়ে দিনের প্রস্তুতি নেন।

সারা বছর খেজুরের কমবেশি কদর থাকলেও প্রতিবছর রমজান এলেই এর চাহিদা একলাফে বাড়ে কয়েক গুণ। অথচ সে অনুযায়ী দেশে মেলে না সরবরাহ। দেশে উৎপাদিত না হওয়ার বিপরীতে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভরতাই এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়া আমদানিতে উচ্চ হারের ট্যারিফ ভ্যালু আরোপ এবং ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনা খেজুরের সরবরাহ-সংকট এবং দামে অস্বাভাবিকতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খেজুরের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। অন্যবারের মতো এবারও বদলায়নি পরিস্থিতি। বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ বছর আমদানিও অস্বাভাবিক কমে গেছে; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আসন্ন রমজানেও।

আমদানি কমায় বাড়ছে দুশ্চিন্তা

দেশে খেজুরের চাহিদা ১ লাখ টন। এর মধ্যে ৬৫-৭০ শতাংশই প্রয়োজন হয় রমজানে। বাকি মাসগুলোয় গড়ে খেজুর খাওয়া হয় ২ হাজার ৭২৭ টন করে। কাস্টমসের তথ্যমতে, ক্রমান্বয়ে খেজুরের আমদানি কমছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৮৮ হাজার ৫৬৭ টন আমদানি হলেও ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫১৫ টনে, যা প্রায় ২২ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮০ হাজার ৯১০ টন।

এর বিপরীতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানি হয়েছে মাত্র ২৮৯ টন। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ৭২ দশমিক ২৫ টন। এই অবস্থায় চাহিদার বিপরীতে খেজুরের মজুত এখন তলানিতে। রমজানের বাকি প্রায় সাড়ে তিন মাস। এই সময়ে ৭০ হাজার খেজুরের প্রয়োজন হলেও এখনো বড় পরিসরে আমদানি শুরু হয়নি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এবার আমদানি থেকে দূরেই থাকছে। কিছু মালিক পলাতক, কেউ কেউ হয়েছেন গ্রেপ্তার। বাকিদের আমদানি খতিয়ান খুবই নগণ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেজুর আমদানির তথ্য মেলেনি। অক্টোবরের চিত্রও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অগ্রগতির মধ্যে গত সপ্তাহে রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে, সেগুলোর আমদানি সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক খেজুরসহ সংশ্লিষ্ট পণ্যে নগদ মার্জিনের হার ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ব্যস, এতটুকুই। যদিও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, সরকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৫৬০ টন খেজুর আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, চলতি বছর নানা কারণে খেজুর আমদানি কমে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা না নিলে রমজানে খেজুর নিয়ে হাহাকার হতে পারে।

চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জান্নাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হলো খেজুর উৎপাদনের মৌসুম। অন্যান্য বছর আগে থেকেই আমদানি হতো। এ বছর তা হয়নি।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমদানি শুল্ক ও ট্যারিফ ভ্যালু বাড়ার কারণে খেজুরের বাজারে ব্যাপক চাপ পড়েছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খেজুরের ট্যারিফ ভ্যালু ছিল প্রতি টন ৬০০ ডলার, যার ভিত্তিতে শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে শুল্কহার ৫৮.৬০ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা আরও বাড়িয়ে ৬৩.৬০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ শুল্ক, ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম করসহ অন্যান্য চার্জ যোগ হয়ে চূড়ান্ত শুল্কহার খুব বেশি হয়ে গেছে।

ট্যারিফ ভ্যালুর জটিলতা

উচ্চ হারের ট্যারিফ বসানোর পর আমদানি আরও কমে গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খেজুরের ট্যারিফ ভ্যালু চারটি স্ল্যাবে ভাগ হয়েছে। এতে নিম্নমানের প্রতি টন খেজুরের ওপর ট্যারিফ ভ্যালু আরোপ করা হয় ১ হাজার ডলার। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম মাত্র ৪৫০-৫০০ ডলার। প্রতি টন ভালো মানের খেজুর ৮০০-১২০০ ডলারে পাওয়া গেলেও দেশে এর ট্যারিফ ভ্যালু বসানো হয়েছে ২ হাজার ৫০০ ডলার। একইভাবে সেরা মানের প্রতি টন খেজুরের ওপর ৪ হাজার ডলার ট্যারিফ ভ্যালু ধার্য করা হয়, যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম সেই ২ হাজার ৫০০ ডলারের মধ্যে। অপরদিকে মাঝারি মানের প্রতি টন খেজুর ১ হাজার ৫০০ ডলারে মিললেও এর ওপর ট্যারিফ ভ্যালু ধার্য হয় ২ হাজার ৭৫০ ডলার। ফলে এক কনটেইনার

খেজুর আনতে যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ লাখ

টাকা খরচ হতো, বর্তমানে তা বেড়ে ৪৮ লাখে পৌঁছেছে। খরচ বেশি হওয়ায় এরই মধ্যে অনেক ছোট আমদানিকারক ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বাজারেও সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে; যার প্রভাব পড়েছে দামে।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আমদানি হয় ২৫-৩০ ধরনের খেজুর

পাইকারি বাজার বাদামতলী ঘুরে জানা যায়, জাইদী, দাবাস, মেডজুল, আজওয়া, আম্বার, মাবরুম, মাশরুক, সাফাওয়ি বা কালমি, মরিয়ম, নাগালসহ বিভিন্ন মান ও দামের ২৫-৩০ ধরনের খেজুর আমদানি হয়। এসব খেজুর ইরাক, ইরান, জর্ডান, দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসে। এর বাইরে আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া থেকেও আমদানি হয়।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি ক্রয় করে জাইদী, দাবাস জাতের খেজুর, যার বড় রপ্তানিকারক দেশ ইরাক। এগুলোর দাম তুলনামূলক কম। আর সামর্থ্যবানেরা আজওয়া, আম্বার, মরিয়ম ইত্যাদি খেজুর বেশি ক্রয় করে। এসব উচ্চমূল্যের খেজুরের জন্য সৌদি আরবসহ অল্প কয়েকটি আরব দেশ সুপরিচিত।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভুইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষ অনেক আগেই খেজুরের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে। এখন সময় থাকতেই এগুলোর শুল্ক ও কর কয়েক মাসের জন্য তুলে দিয়ে ব্যাপক আমদানির সুযোগ করে দিতে হবে। শুল্কছাড়ের সুবিধা ভোক্তারা পাচ্ছেন কি না, তা-ও কঠোর মনিটরিং করতে হবে।

বাজার পরিস্থিতি, ক্রেতারা চাপে

২০২২ সাল পর্যন্ত নিম্ন আয়ের মানুষ ১০০ টাকা কেজিতে খেজুর খেতে পারত; যা বর্তমান বাজারে ২৫০-৫০০ টাকার বেশি। কিন্তু পরে হঠাৎ ট্যারিফ ভ্যালুর ও শুল্ক বাড়ার কারণে দাম বাড়তেই থাকে।

টিসিবির তথ্যমতে, এক বছরের ব্যবধানে বাজারে খেজুরের দাম ৭-১৫ শতাংশ বেড়েছে। আর রমজানের সাড়ে তিন মাস আগেই খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। উচ্চমানের খেজুর; যেমন আজওয়া, মরিয়ম, আম্বার, বর্তমানে ১২০০-১৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৫০০-৯০০ টাকার মধ্যে। গত রমজানের আগে খেজুরের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দাম বেঁধে দেয় সরকার। তখন অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাইদী খেজুরের দাম প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই দামে খেজুর বাজারে মেলেনি। মালিবাগ বাজারের ক্রেতা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, খেজুর বিলাসী পণ্য নয়। দাম বাড়ায় নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও চাপে পড়েছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি ও প্রস্তাব

যদি বর্তমান অবস্থায় শুল্কহার এবং ট্যারিফ ভ্যালু বহাল থাকে, তবে আগামী রমজানে খেজুরের চাহিদা পূরণে বড় সংকট তৈরি হবে। তখন পুরোনো এবং নিম্নমানের খেজুর নিয়েই কাড়াকাড়ি হতে পারে। আশঙ্কা প্রকাশ করে এরই মধ্যে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিদ্যমান ট্যারিফ ভ্যালু কমানো এবং শুল্কহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন। তাঁরা বলছেন, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে তার সুফল রমজানে মিলবে না। কারণ, জাহাজীকরণের পরও বিভিন্ন সোর্স থেকে খেজুর আসতে ৬০ দিন লেগে যায়। সব মিলিয়ে আমদানির জন্য তিন মাস হাতে রাখতে হয়। মার্চের শুরুতে রমজান শুরু হলে হাতে আছে মাত্র সাড়ে তিন মাস। এ ছাড়া উৎপাদনকারী দেশগুলোতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর খেজুরের মৌসুম থাকে। দামও কম থাকে। এ সময় আমদানি না করতে পারলে দাম বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুদ্দীন আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সরকারকে শুল্ক কমানোর এবং ট্যারিফ ভ্যালু যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেছি। যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে রমজানে খেজুরের দাম সহনীয় রাখা সম্ভব।’

পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘ট্যারিফ ভ্যালু দুই স্ল্যাবে নির্ধারণ করা উচিত। নিম্নমানের খেজুরের ক্ষেত্রে ৮০০-৯০০ ডলার এবং ভালো মানের ক্ষেত্রে ১৮০০-২০০০ ডলার হওয়া যৌক্তিক। শুল্কহার ২০ শতাংশে নামালে সরকার, ব্যবসায়ী, ক্রেতা—সবাই উপকৃত হবেন।

কী করছে সরকার

সরকারি সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রস্তাব নিয়ে তা যাচাই করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠিয়েছে। বিদ্যমান ট্যারিফ ভ্যালুকে ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রকৃত মূল্য অপেক্ষা অনেক বেশি মনে করছে ট্যারিফ কমিশনও। এমনকি খেজুর আমদানির ওপর আরোপিত অগ্রিম ও আগাম কর যৌক্তিক নয় বলে জানানো হয়েছে। তাই সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দাম কমাতে আরোপিত শুল্কায়ন মূল্য যৌক্তিক করা, শুল্কহারে ছাড় দেওয়া ও সমুদয় অগ্রিম প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে সরকারের কাছে।

কমিশনের উপপ্রধান (বাণিজ্য নীতি) মাহমুদুল হাসান এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এতে ভোক্তা, সরকার ও ব্যবসায়ী—সবাই স্বস্তি পাবে।’

অগ্রগতি কত দূর জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব (শুল্ক নীতি) মুকিতুল হাসান বলেন, ‘আমরা খেজুরের শুল্ক ও শুল্কায়ন মূল্য নিয়ে এরই মধ্যে একটা পর্যালোচনাসহ খেজুরের আমদানিতে নীতিগতভাবে কী পরিমাণ ছাড় দেওয়া যায়, তার একটা সারাংশ তৈরি করা হয়েছে। দ্রুতই সরকার এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তেল-পেঁয়াজে দাম বাড়তি, সবজিতে ফিরছে স্বস্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।
টাটকা সবজি কিনছেন একজন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজারে।

বাজারে একলাফে লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আর দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তবে এসব পণ্যের সরবরাহে তেমন কোনো সমস্যা নেই বাজারে। পুরোনো পেঁয়াজের সঙ্গে নতুন পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবজি, ডিম, মুরগি, আটা, চিনিসহ প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মানভেদে দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। নতুন পেঁয়াজের দাম অবশ্য তুলনামূলক কম। খুচরায় পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি।

জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পেঁয়াজ আমদানি না করেই বাজারের চাহিদা মিটে গেছে। এখন আগের মৌসুমের পেঁয়াজের মজুত একেবারেই শেষের দিকে। এই সময় পুরোনো পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে। তবে এটা বেশি দিন থাকবে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। চাহিদা অনুসার পেঁয়াজ রয়েছে।’

বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৭৯ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭১-১৭৪ টাকা লিটার।

বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো গত এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে বাজারে বাড়তি দামে তেল সরবরাহ করেছে। এখনো অনেক দোকানে আগের দামের তেল পাওয়া যায়। তবে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই বাড়তি দামের তেল রয়েছে।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত খুচরায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো ১২০-১৫০ টাকা কেজি, তবে চলতি সপ্তাহে দাম কমে ৭০-১০০ টাকা কেজিতে নেমেছে। এ ছাড়া শীতের সবজি হলেও শিমের দাম হঠাৎ বেড়ে ১৫০ টাকার ওপরে উঠেছিল।

সেই শিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম কমেছে প্রতিটিতে ১০ টাকা। দুই ধরনের কপিই পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে ভালো মানের ফুলকপি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে একটি কপি কিনতে ৪০-৬০ টাকা লেগেছিল।

দাম কমেছে টমেটোরও। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৪০ টাকা।

দেশি গাজরের সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে বাজারে, এতে দামও কমেছে। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। তবে আমদানির গাজর আগের মতোই ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা চলতি সপ্তাহে কমে ৭০-৮০ টাকায় নেমেছে। বাজারে আলুর দাম আগের মতোই প্রতি কেজি ২৫ টাকা রয়েছে।

আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস ডিমের দাম আরও কমেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ও বাদামি ডিমের দাম কমে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে নেমেছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০-১৩০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৫০ টাকা ডজন। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমেছে।

ডিমের সঙ্গে কমেছে ফার্মের মুরগির দামও। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূর ই আলম বলেন, ‘ডিম ও মুরগির বাজার স্বাভাবিক আচরণ করছে না। হঠাৎ দামের এত পতন হচ্ছে কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে ডিমের যে দাম, তা গত কয়েক বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম।’

ডিম-মুরগির সঙ্গে কিছুটা কমেছে রুই-কাতলা মাছের দামও। বাজারে চাষের এই মাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩২০-৪৫০ টাকা কেজি।

মুদিপণ্যের মধ্যে চিনির দাম আগে থেকেই কমেছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে নতুন করে কমেছে আটা, মসুর ডাল, ছোলার দাম। খোলা আটার দাম ২-৩ টাকা কমে ৪৫-৪৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। কেজিপ্রতি বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা। ছোলার দামও কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে ৯৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মামা-ভাগনে মুদিদোকানের বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি ব্যাপক বেড়েছে। তাই প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমছে। তবে ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরা ব্যাংকের ২৫০তম শাখার উদ্বোধন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

উত্তরা ব্যাংক পিএলসির একটি নতুন শাখার উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ব্যাংক রোড, দৌলতগঞ্জ বাজারে ব্যাংকের ২৫০তম লাকসাম শাখার উদ্বোধন করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আবুল হাশেম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল হাসান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. রবিউল হাসান এবং উপমহাব্যবস্থাপক ও আঞ্চলিক প্রধান (কুমিল্লা অঞ্চল) মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টানা চার মাস কমল রপ্তানি আয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়লেও পণ্য রপ্তানিতে ধাক্কার ধারা থামছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নভেম্বরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮৯ কোটি ১৫ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে এই আয় ছিল ৪১১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, টাকার অঙ্কে এই হ্রাসকৃত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৮১ লাখ ডলার।

এবারই প্রথম নয়, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া নিম্নমুখী ধারা নভেম্বরে এসে চতুর্থ মাসে পা দিল। জুলাইয়ের শক্তিশালী সূচনার পর রপ্তানি খাত যে ধারাবাহিক গতি অর্জন করেছিল, সেই গতি আগস্টেই থমকে যায়। ওই মাসে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। সেপ্টেম্বরেও পতন গভীর হয়—৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। অক্টোবরে সেই হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

জুলাইয়ের ব্যতিক্রমী সাফল্যের পর পরবর্তী চার মাস যেন একটানা ঢালু পথ। সেই জুলাইয়ে রপ্তানি আয় ছিল ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। কিন্তু এরপর প্রতি মাসেই কমতে কমতে নভেম্বরে এসে রপ্তানি আয়ের ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সার্বিক চিত্রটি বলছে, অর্থবছরের শুরুতে পাওয়া জোয়ারটি এখন চার মাসের টানা ভাটার মুখে দাঁড়িয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মিলিয়ে পাঁচ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ২০০২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার; যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাসের সার্বিক রপ্তানি আয়ের চিত্রও নামমাত্র।

নভেম্বরের সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে পোশাক খাতে, যেটি দেশের রপ্তানির প্রধান ভরসা। ওই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৩১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। এ সময় নিটওয়্যার খাতে আয় নেমেছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে, আর ওভেনে এসেছে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে নিটওয়্যার আয় ছিল ১৭৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার এবং ওভেন ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার।

পোশাকের বাইরে কৃষিপণ্যে রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি পতনের তালিকায় রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, হোম টেক্সটাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, জাহাজ, চিংড়ি ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং। এর মানে হচ্ছে, প্রচলিত এসব খাতেও মন্থরতা স্পষ্ট।

তবে সব বাজারে একই চিত্র নয়। কিছু গন্তব্যে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যা সামগ্রিক মন্দার মধ্যেও আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। উদীয়মান বাজারগুলোর মধ্যেও ইতিবাচক প্রবণতা স্পষ্ট—চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, সৌদি আরবে ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং স্পেনে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ প্রবণতা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যেন অনেকটাই ব্যতিক্রমী সাফল্য।

সব মিলিয়ে চিত্রটি দ্বিমুখী। একদিকে ঐতিহ্যগত প্রধান খাতগুলোতে পতন; অন্যদিকে কিছু নতুন বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত। তবে বড় প্রশ্ন রয়ে যায়, এই বাজার বৃদ্ধি কি পোশাকসহ প্রধান খাতের ধারাবাহিক মন্দাকে সামাল দিতে পারবে?

বর্তমান বাস্তবতা বলছে, বৈচিত্র্য বাড়ানোর পথে অনেক দূর যেতে হবে। উৎপাদন প্রতিযোগিতা, মূল্যের চাপ, বৈদেশিক অর্ডার সংকোচন এবং বিশ্ববাজারের অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে রপ্তানি খাতে সামনের পথ সহজ নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল সিগারেট কোম্পানি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৮
৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিল  সিগারেট কোম্পানি

পাবনার ইশ্বরদীভিত্তিক সিগারেট কোম্পানি ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযানে গিয়ে এই ফাঁকি ধরেছেন বলে আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের অবৈধ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে সম্প্রতি কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একটি দল ঈশ্বরদীতে অবস্থিত ইউনাইটেড টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

গোয়েন্দা দলের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও দীর্ঘদিন ধরে আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কার্যক্রম প্রদর্শন না করে গোপনে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। অভিযানে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯০ শলাকা জাল ব্যান্ডরোলযুক্ত সিগারেট জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য ৩৮ লাখ টাকারও বেশি। এসব সিগারেটের বিপরীতে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ২৯ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ১০ লাখ ২৯ হাজারটি অব্যবহৃত জাল ব্যান্ডরোল বা স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়, যা ব্যবহার করা হলে অতিরিক্ত ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া সম্ভব ছিল। প্রতিষ্ঠানটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০টি বৈধ ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করলেও তা ব্যবহার না করে জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি করছিল।

এনবিআর জানিয়েছে, সব সিগারেট ও উপকরণ আইনানুগভাবে জব্দ করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনিপ্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা দলিলাদির ভিত্তিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত