Ajker Patrika

সংস্কারের চাপে পিছিয়ে যাচ্ছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন

  • ১২০ দিন সময়সীমার ৪৭ দিন পার
  • ৯০ দিন আগে তফসিলের নিয়ম হলেও হাতে সময় ৭৩ দিন
  • গঠিত হয়নি নির্বাচনী বোর্ড
  • মধ্য ফেব্রুয়ারির আগে নির্বাচন অসম্ভব
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ১১
সংস্কারের চাপে পিছিয়ে যাচ্ছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন

বিভিন্ন রকম সংস্কার চাপে পিছিয়ে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সম্ভাব্য নির্বাচন আয়োজন। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার বিপরীতে আয়োজনের প্রস্তুতিতে ধীরগতি সেটিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর আগে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচিত কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনে নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দেয়। যদিও কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার দিনই রুটিনওয়ার্ক চালিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং ব্যবসা ও ব্যবসায়ী সহায়ক নতুন নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এফবিসিসিআইতে প্রশাসক বসায় সরকার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-১ শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করে বলা হয়, প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ১২০ দিনের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর প্রশাসক দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সে হিসাবে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে ফেডারেশনের নির্বাচিত কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বিদ্যমান বাস্তবতায় সরকার কর্তৃক মনোনীত প্রশাসক এখন এই গুরুদায়িত্বে। তবে সময়সীমার দৌড়ে ৪৭ দিন ইতিমধ্যে ফুরিয়ে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিন আগেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হয়। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রশাসককে এখন নির্বাচনের আয়োজনের চেয়ে সংগঠনের বিধিসহ ভেতরের বিভিন্ন রকম সংস্কার নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। অথচ মাত্র ৭৩ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনী বোর্ডই গঠন সম্ভব হয়নি। আর এখানেই যত শঙ্কা; যার মানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রশাসক যে গতিতে কাজ করছে, তাতে মনে হচ্ছে, সঠিক সময় নির্বাচন হবে না। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, বিধি সংস্কার করা যেমন জরুরি, তেমন নির্বাচন দ্রুত করাও জরুরি। কারণ, ব্যবসায়িক সমস্যাগুলো সমাধান ও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রয়োজন হয়।’

এদিকে দ্রুত সময় ফুরালেও এখনো সংগঠনের বিধি সংশোধনের কাজই শেষ হয়নি। ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ সদস্যদের একাংশের দাবি রয়েছে নির্বাচনের আগে সংগঠনকে সুচারুভাবে সংস্কারের। আরেক অংশ চায় দ্রুত নির্বাচন। সবার বিষয় বিবেচনা করেই কর্মপরিকল্পনা করছে এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান প্রশাসন। সংশ্লিষ্টদের দাবি অনুসারে সবার আগে বিধি পরিবর্তন করে যাতে সরাসরি নির্বাচন করা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে বোর্ড গঠন, তফসিল ঘোষণা এগুলো নির্ভর করছে বিধি সংশোধনের ওপর। সে হিসাবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে হতে পারে এফবিসিসিআইয়ের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন।

জানতে চাইলে এফবিসিসিআই প্রশাসক ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখন একটা খসড়া শিডিউল তৈরি করছি, এরপর আমরা নির্বাচনী বোর্ড গঠন করব; সেই সঙ্গে আপিল বোর্ডও গঠন করা হবে। চলতি মাসে এসব বোর্ড গঠন করব। তার আগে আমরা বিধিটা ফর্মুলেট করা যায় কি না, সেটা দেখছি। ব্যবসায়ীরা যেসব সংস্কার দাবি দিয়েছিল, ইতিমধ্যে তার আলোকে বিধি সংশোধনের সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেটা চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে এলে আমরা নির্বাচনের কাজ শুরু করতে পারব।’

মোটাদাগে তিনটি সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসক। টানা দুই মেয়াদের বেশি নির্বাচনের নিয়ম বাতিল করা, পরিচালকদের সংখ্যা কমিয়ে আনা ও মনোনীত পরিচালক নিয়োগ প্রথা বাতিল করে সব পদে সরাসরি নির্বাচন করা। এর আগে বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের ব্যানারে বেশ কিছু ব্যবসায়ী ফেডারেশনের নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কার দাবি জানান। তাঁরা বলেন, এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী নির্বাচনের আগেই সংগঠনটির অধিভুক্ত সব অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারের নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তাঁদের দাবি, গত ১৫ বছরে দেশের অধিকাংশ বাণিজ্য সংগঠনে সীমাহীন দলীয়করণ হয়েছে। বর্তমানে অনেক চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন এবং অনেকে পলাতক। এ অবস্থায় আগে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন করা জরুরি। তাঁরা সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালক পদে সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের কাছে গঠিত কমিটির কোনো জবাবদিহি নেই। সরাসরি নির্বাচন হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ৮০ থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রস্তাবে তাঁরা বলেন, চেম্বার গ্রুপ থেকে ১৫ জন ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ২৫ জন পরিচালক হবেন। এ ছাড়া সহসভাপতির সংখ্যা সাতজন থেকে কমিয়ে তিনজন করার পরামর্শ দেন তাঁরা।

ফেডারেশনের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য হাজী এনায়েতুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করে পর্ষদের ১ নম্বর সদস্য হয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও অনেক মিটিং বা কমিটিতে আমাকে রাখা হতো না। কারণ, আমি দলীয় লেজুড়বৃত্তি করতে পারিনি। তাই ফেডারেশনের সংস্কার খুবই জরুরি। যদিও আমি পরিচালক পদ হারিয়েছি; কিন্তু তারপরও আমি সংস্কার চাই। এতে ভবিষ্যতে ফেডারেশন রাজনীতিমুক্ত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত