Ajker Patrika

আইএমএফের চাপে করছাড় কমতে পারে

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৯: ১৫
আইএমএফের চাপে করছাড় কমতে পারে

এবারও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে পড়ছে রাজস্ব বাজেট। আইএমএফের চাপেই রাজস্ব ক্ষতি কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আসছে বাজেটে ব্যাপক করছাড় তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এরই মধ্যে ব্যক্তিগত কর, ক্ষুদ্রঋণ, রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়), জ্বালানি, অর্থনৈতিক অঞ্চল, আইসিটি, পোশাক খাতসহ বেশ কিছু খাত চিহ্নিত করে এনবিআর একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব খাতে বছরে অন্তত ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়।

এর বাইরেও আর কোন কোন খাতে কীভাবে ছাড় তুলে দেওয়া হবে, সেটি নিয়ে এখন কাজ করছে সংস্থাটি। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, করছাড়ের কারণে চলতি অর্থবছরেও অন্তত ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে বলে এনবিআরের ধারণা। আসছে বাজেটে রেমিট্যান্স ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ভাতায় কর বসানো এবং ব্যক্তির বিভিন্ন কর রেয়াত বাতিল করতে আইএমএফ বেশি চাপ দিচ্ছে। 

জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট তৈরির কাজ গুছিয়ে আনছে এনবিআর। গত কয়েক মাসে ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা শেষ করেছে। বেশির ভাগ বৈঠকেই প্রতিনিধিরা নিজ নিজ খাতের পক্ষে আরও করছাড় চেয়েছেন। তবে মূলত আইএমএফের শর্তের কারণেই করছাড় তোলার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।

আইএমএফ চায়, সামনের অর্থবছরেই ব্যক্তি করদাতা, করপোরেট করদাতাসহ যেসব খাতে বছরের পর বছর ধরে বিপুল অঙ্কের করছাড় দেওয়া হচ্ছে, সেসব তুলে দেওয়া হোক। এনবিআরও তাই হিসাব করে দেখছে, ছাড়ের ফলে কত রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এনবিআর এরই মধ্যে জানতে পেরেছে, বিভিন্ন কর রেয়াতের ফলে ব্যক্তিগত করদাতা পর্যায়েই বছরে অন্তত ৪০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। আর করপোরেট আয়কর খাতে রাজস্ব ক্ষতি হয় ৮৫ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। ব্যক্তি করদাতা ও করপোরেট আয়করের উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ক্ষতির মধ্যে রেমিট্যান্সেই করছাড় ১১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ক্ষুদ্রঋণে ছাড় ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ-জ্বালানি প্রতিষ্ঠানকে করছাড় দেওয়া হয় ৮ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। রপ্তানিমুখী পোশাক ও বস্ত্র খাতে করছাড় ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।

কর বিভাগের হিসাবমতে, ছাড়ের কারণে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকায়।
জানা যায়, এনবিআরের সদস্য ইকবাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা করছাড়ের ফলে সৃষ্ট রাজস্ব ক্ষতির হিসাব খতিয়ে দেখছেন। তাঁরা এনবিআরকে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছেন। এ নিয়ে আরও কাজ হচ্ছে। 

কর অব্যাহতি বিভাগের সদস্য ইকবাল হোসেন অবশ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করছাড় কোন খাতে কতটুকু তুলে দেওয়া হবে, কারা ছাড় পাবে আর কারা পাবে না–এসব ঠিক করা এ বিভাগের কাজ নয়। আইএমএফের চাওয়ার বিষয়ে কী পলিসি নেওয়া হচ্ছে, এটাও আমার এখতিয়ার নয়। এটা দেখে আয়কর নীতি শাখা। করছাড় কী হবে না হবে, এটা ঠিক করবে নীতি শাখা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটা নির্দিষ্ট বছরে কত ছাড় হয়েছে, তাকে বেঞ্চমার্ক ধরে হিসাব করছি। তবে আমি মনে করি, যেখানে করছাড় দরকার, সেখানে দিতে হবে। আর যেখানে দরকার নেই, সেখানে দেওয়া হবে না। আমরা স্টাডি করে দিচ্ছি। পুরো স্টাডি এখনো শেষ হয়নি।’ 

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আমদানি কড়াকড়ির কারণে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্য উদারীকরণ নীতির ফলে সরকার চাইলেই শুল্ক থেকে বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবে না। তাই সামনে নজর দেওয়া হবে আয়কর খাতে। এ জন্য আইএমএফের পরামর্শে এনবিআর খতিয়ে দেখতে চাইছে, কোন খাতে কত রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে আর এসব ক্ষতি কমিয়ে আনতে কোন খাতে কেমন করছাড় দিতে হবে।

সূত্রমতে, শিল্প খাতকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর অব্যাহতি বা প্রণোদনা দেওয়া হবে না। সেটির সময়সীমা হতে পারে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের আয়ের ওপরও কর বসানো হতে পারে। 

একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ চাইলেও কিছু স্পর্শকাতর খাতে করছাড় রাতারাতি তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যে আছে রেমিট্যান্স, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প, আইসিটি ইত্যাদি। তবে আসছে বাজেটে ব্যক্তি করদাতার বিভিন্ন কর রেয়াত কমানো হতে পারে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাসের বাইরেও বিভিন্ন ভাতার ওপর কর আরোপ করা হতে পারে। এ ছাড়া ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক করদাতারা বিভিন্ন খাতে দানের পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিমাণ করছাড় পেয়ে থাকেন, সেগুলোও পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ থাকছে। 

আয়কর বিশেষজ্ঞ ও এনবিআরের সাবেক আয়কর নীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রেমিট্যান্সের ওপর কর রেয়াত তুলে দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এটা হলে আত্মঘাতী হবে। এমনিতেই হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে যদি কর বসানো হয়, তাহলে এটা কোনোভাবেই ভালো হবে না। তবে পোশাকশিল্পসহ অন্য কিছু খাত রয়েছে, যেগুলোর ওপর অল্প অল্প করে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য কর বসানো যেতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

ডলার এখন রেমিট্যান্স, রপ্তানি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই বাজারে ডলার হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সবাই চুপ। এই ডলারের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি পুরো বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে ডলার কিনছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুধু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বর মাসে কেনা ডলারের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৯২ কোটি ডলার এবং চলতি অর্থবছর ধরে মোট কেনা হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাইয়ে প্রথম ডলার কেনা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, আগস্টে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ, সেপ্টেম্বরেই তা বেড়ে ৯২ কোটি ৯০ লাখে পৌঁছায়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে অবশ্য অনেকটাই কমে ১৪ কোটি ২০ লাখ এবং ৫ কোটি ৪০ লাখে নেমে আসে। ডিসেম্বরেই তার বড় উল্লম্ফন ঘটে, কেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২ কোটি ১০ লাখ ডলারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকিং চ্যানেলের শক্তিশালীকরণ এবং অনলাইনে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ হওয়ায় ব্যবসার আড়ালে ডলার পাচার কমেছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে জমে থাকা অতিরিক্ত ডলার ক্রয় করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তুলনায় এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেতার ভূমিকায়, যেখানে অতীতের বছরগুলোতে বড় অঙ্কে বিক্রি হতো। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ এ ছিল ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন, ২০২৩-২৪ এ ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন এবং ২০২৪-২৫ এ ১ দশমিক ১২৪ বিলিয়ন ডলার। এই পরিবর্তন বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ১৩১ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ বিলিয়ন ডলার, আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম। অনলাইনে বাজার নজরদারি এবং ওভার/আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে আসায় পণ্যের আড়াল থেকে ডলার পাচারও অনেক কমেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এর ফলে আমদানি, বিনিয়োগ ও বাজার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে।’

সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, পাচার কমে আসা—সব মিলিয়ে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলার বিক্রেতা নয়; বরং ক্রেতার ভূমিকায়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনবিআর কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে টাকা দাবি, সতর্কবার্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের দপ্তরের ব্যক্তিগত সহকারী মো. কাউসারের নাম ভাঙিয়ে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা দিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, প্রতারকেরা মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে ফোন, মেসেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। তবে মো. কাউসারের সঙ্গে এ কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সর্বসাধারণকে এই প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ এ ধরনের ফোনকল বা বার্তার সম্মুখীন হলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

জিডিতে মো. কাউসার উল্লেখ করেন, ২৩ ডিসেম্বর এনবিআরের উপ-কর কমিশনার রইসুন নেসা (বর্তমানে যুগ্ম কর কমিশনার) তাঁকে জানান, কাউসারের নাম ব্যবহার করে ০১৭০১৮৯০৩৮৭ নম্বর থেকে কল করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ আছে’ উল্লেখ করে টাকা দাবি করা হয়। বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয় ০১৩২৮০৮৩২১৬ নম্বরে। পরে দেখা যায়, একই চক্র আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই কৌশলে অর্থ আদায় করার চেষ্টা করেছে। পরে কাউসার জানতে পারেন আরও অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে একই নম্বর থেকে টাকা দাবি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা কে বা কারা তাঁর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করছে, তা জানা নেই বলে উল্লেখ করেন কাউসার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর অঞ্চল-কুষ্টিয়ার পরিদর্শী রেঞ্জ-৪-এর যুগ্ম কর কমিশনার রইসুন নেসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে কাউসারের নামেই ফোন করে। আমি বিষয়টি কাউসারকে জানাই। পরে আর ফোন করেনি। কোনো কথাও হয়নি।’

জানতে চাইলে মো. কাউসার বলেন, কোনো একটা চক্র এটা করছে। এর আগে চেয়ারম্যান স্যারের হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে টাকা চেয়েছিল বিভিন্নজনের কাছ থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এল আরও ৫৭ হাজার টন গম

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৫৬ হাজার ৮৯০ টন গম নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। আজ রোববার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় নগদ ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে এই গম আমদানি করা হয়েছে। জি-টু-জি চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রথম চালানে ৫৬ হাজার ৮৯০ টন গম দেশে এসেছে। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১৩৪ টন চট্টগ্রাম বন্দরে এবং অবশিষ্ট ২২ হাজার ৭৫৬ টন মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। গমের নমুনা পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে আরেক চুক্তিতে (জি-টু-জি) এরই মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি সম্পন্ন হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

জামায়াত-এনসিপির প্রার্থী হওয়ার চেয়ে লং স্ট্যান্ডিং পজিশন ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ: মাহফুজ আলম

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত