Ajker Patrika

রপ্তানি আয়

মার্কিন শুল্কে রপ্তানির পতন

  • মার্চের তুলনায় আয় কমেছে ১২৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার
  • ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রপ্তানি আয়ের রেকর্ড
  • রেকর্ড ধসেও ০.৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: আরব নিউজের সৌজন্যে
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: আরব নিউজের সৌজন্যে

চলতি অর্থবছরের মধ্যে এপ্রিল মাসে সর্বনিম্ন রপ্তানি আয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্যমতে, মাসজুড়ে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করে আয় করেছে ৩০১ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার; যা মার্চ মাসের তুলনায় ১২৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে ঈদের লম্বা ছুটি, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্কনীতি—এই দুই মিলে এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধস নেমেছে। শুধু মাসিক নয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের মধ্যে এই এপ্রিলেই সর্বনিম্ন রপ্তানি আয় রেকর্ড হয়েছে।

বিশ্বখ্যাত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট, আমাজন ও অন্যান্য মার্কিন রিটেইলাররা ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের আগেই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রেখেছে। ফলে এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে রপ্তানি অর্ডার কমে যায়। একই সঙ্গে দেশে ঈদের ছুটিতে অন্তত ১০-১২ দিন রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

এ বিষয়ে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, একদিকে ঈদের ছুটিজনিত দীর্ঘ কার্যবিরতি, অন্যদিকে বৈদেশিক বাজারে অর্ডার সংকোচন—এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবে রপ্তানি খাতে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার পরিণতিতে আয় কমবে, এমনটি অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল না।

তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা এর পেছনে আরও গভীর কারণ খুঁজে পেয়েছেন। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বায়ারদের অর্ডার থাকলেও গ্যাস-সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ নীতির কারণে মার্কিন ক্রেতারা অনেক আগেই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়েছে। এপ্রিল নাগাদ তাদের নতুন চাহিদা তেমন ছিল না। ফলে রপ্তানি আয় ধাক্কা খেয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্যমতে, অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ৩ হাজার ৬৬০ কোটি ৮৪ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। কিন্তু একক মাস হিসেবে এপ্রিলের আয় সবচেয়ে কম।

তবে আশার বিষয় হলো, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এপ্রিল মাসে সামান্য হলেও রপ্তানি আয় বেড়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় ছিল ২৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার, এবার তা বেড়ে হয়েছে ৩০১ কোটি ৬৮ লাখ, যা শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।

Capture

বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে মূলত ২৭ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। পোশাক খাত বরাবরের মতো রপ্তানির মূল ভরসা থাকলেও এ খাতেও গত মাসে বিশেষ গতি ছিল না। তৈরি পোশাক থেকে আয় এসেছে ২৩৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের খাত থেকে—৮ কোটি ৫ লাখ ডলার। হোম টেক্সটাইল, পাটজাত পণ্য, কৃষিপণ্য ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য খাত থেকেও আয় কমেছে।

এ বিষয়ে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ‘সরকার প্রচলিত ও অপ্রচলিত বাজার সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, সামনের মাসগুলোয় এই ধস কাটিয়ে আবার রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ফিরবে।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, একদিকে জ্বালানির সংকট, অন্যদিকে বৈশ্বিক শুল্কনীতি ও চাহিদা সংকোচন—এই ত্রিমুখী চাপে এখন রপ্তানি খাত এক অস্থির সময় পার করছে। এর মধ্যে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ না থাকলে ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

আত্মসমর্পণ করে দুই মামলায় জামিন পেলেন এনসিপির আখতার

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ